প্রবাদ আছে ‘যদি জোটে একটা পয়সা খাদ্য কিনিও ক্ষুধার লাগি, যদি জোটে দুটি পয়সা ফুল কিনিও হে অনুরাগী।’ সবুজে থাকতে, সবুজে বাঁচতে আর পরিবেশের সৌন্দর্য বাড়াতে গার্ডেনিং বা বনায়ন হতে পারে অন্যতম মাধ্যম। ইট, কাঠ, কনক্রিটের যান্ত্রিক এই নগরের রূপ বদলে সবুজায়ন করতে ১৯৯৮ সাল থেকে নিরন্তনভাবে কাজ করছে গার্ডেন সেন্টার। প্রতিষ্ঠানটির কর্ণধার তারেক রহমান। বাবা মতিউর রহমান দেশে ল্যান্ডস্কেপ ডিজাইনের বাস্তবিক রূপের রূপকার। তিনি ছিলেন আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত একজন হর্টিকালচারিস্টও। তখনো কিন্তু দেশে শুরু হয়নি গার্ডেনিং বিপ্লব। তারেক রহমানের এ পথে চলার উৎসাহটা এসেছে উদ্যানতত্ত্ববিদ বাবার কাছ থেকেই।
ল্যান্ডস্কেপ ডিজাইন
কোনো নির্মাণ কাঠামোর নির্মাণশৈলীতে গার্ডেনিং বা বাগানের অবস্থানটা কেমন হবে, অর্থাৎ কাঠামোটির বাস্তবিক ও নান্দনিক সৌন্দর্য বাড়ানোর যাবতীয় কাজ ল্যান্ডস্কেপ ডিজাইনের মধ্যে পড়ে। আমাদের দেশে ল্যান্ডস্কেপ আর্কিটেক্টের ওপর পড়াশোনা থাকলেও ল্যান্ডস্কেপ ডিজাইনের ওপর নেই। ল্যান্ডস্কেপ আর্কিটেক্টরা বিল্ডিং তৈরির ক্ষেত্রে নগর পরিকল্পনা, শহর ও আঞ্চলিক পার্কগুলোর ওপর বিশেষ নজর দেন।

ল্যান্ডস্কেপ গার্ডেনিং ডিজাইন দুভাবে করা যায়
ইনডোর গার্ডেন ডিজাইন
আউটডোর গার্ডেন ডিজাইন।
প্রয়োজনটা যে কারণে
নির্মাণ কাঠামোর সৌন্দর্যবৃদ্ধিতে
যেকোনো স্থাপনার শতকরা ৬০ থেকে ৭০ ভাগ নান্দনিক সৌন্দর্য বাড়াতে দরকার গার্ডেনিং। দেশীয় গাছের সুষ্ঠু ব্যবহারের মাধ্যমে নিজ দেশের সংস্কৃতিকে অক্ষুণ্ণ রেখে বিদেশের কাছে দেশীয় ভাবমূর্তিকে তুলে ধরতে ল্যান্ডস্কেপ গাডের্নিং প্রয়োজন। বিশেষজ্ঞদের মতে, যেকোনো শহরে শতকরা ২৫ ভাগ সবুজ থাকা উচিত। যেখানে ঢাকা শহরে শতকরা ৫ ভাগও নেই। গার্ডেনিংয়ের মাধ্যমে লুপ্ত প্রায় নৈঃসর্গিক সবুজ ফিরিয়ে আনা সম্ভব।
মূল্য বাড়াতে
ভালো গার্ডেনিং বা বনায়ন সুন্দর পরিবেশ সৃষ্টির মাধ্যমে স্থাপনাটির মূল্য বাড়িয়ে তোলে। শপিংমলে গার্ডেনিং তথা বিভিন্ন ধরনের গাছ লাগানো থাকলে ক্রেতারা সেখানে যেতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে। তদুপরি, গার্ডেনিংয়ের মাধ্যমে যেমন অ্যাপার্টমেন্ট, বাণিজ্যিক স্থাপনার সৌন্দর্য বাড়িয়ে এর মূল্য বৃদ্ধি করা যায়।

বিনোদনের ক্ষেত্র হিসেবে
হতাশা দূর করে মন ভালো করতে বাগানের মতো ভালো কিছু হতে পারে না। অ্যাপার্টমেন্টগুলোতে ছোট ছোট পাত্রে ফুল অথবা বাহারি গাছ লাগিয়ে তৈরি করা যেতে পারে গার্ডেনিং। আর এ ক্ষেত্রে সহায়ক ভূমিকা রাখতে পারেন একজন ল্যান্ডস্কেপ ডিজাইনার।
গার্ডেন সেন্টারের যত কার্যক্রম
গার্ডেন সেন্টার পেশাদার একটা প্রতিষ্ঠান। যারা প্রতিটা প্রজেক্টকে গুরুত্বসহকারে নেয়। সাইড অ্যানালাইসিস থেকে শুরু করে কী কী গাছ লাগাবে, ছোট-বড় ফুল, ফল, বাহারি গাছ, ঘাস, ঝরনা, ড্রেনেজ সিস্টেম, পানি দেওয়ার আউট লেটের দিকনির্দেশনা, কোথায় বড় গাছ, কোথায় ছোট গাছ লাগাতে হবে সবকিছুই ঠিক করে দেয়। প্রজেক্ট এর শুরু থেকে পাঁচ বছর পর কী হবে তা থ্রিডির মাধ্যমে প্রত্যেক গ্রাহকের কাছে তুলে ধরে।
গার্ডেনিংয়ের সম্পূর্ণ কাজ শেষ হওয়ার পরে রক্ষণাবেক্ষণসহ অন্যান্য কারিগরি সহায়তা দেওয়া হয়।
গার্ডেন সেন্টারের রয়েছে দুটি নিজস্ব নার্সারি। ক্রেতাদের জন্য উৎপাদন করে দেশি-বিদেশি ফুল, ফলের বাহারি গাছ।
রাসায়নিক সারের পরিবর্তে জৈব সার ব্যবহার করে। এর ফলে গাছ, মাটি, জীব-বৈচিত্র্য ও পরিবেশের কোনো ক্ষতি হয় না।
নিজস্ব তত্ত্ব¡াবধায়নে উন্নতমানের ফুলের বীজ আমদানি করে।
তারা উৎপাদনের জন্য সি উইড (সামুদ্রিক শৈবাল) ব্যবহার করে।

যেকোনো বাগানে ঋতুর বৈচিত্র্যের সঙ্গে সঙ্গে সারা বছর বাগানে ফুল ফুটিয়ে রাখাটা গার্ডেন সেন্টারের বড় চ্যালেঞ্জ। যেমন শীতকালে গাঁদা, সিলভিয়া, পিটুনিয়া, ডায়ানথাস, হলিহক, মোরগফুল, প্যানজি ইত্যাদি ফোটে। আবার শীত শেষে বসন্ত এলেই বাগানে ফুটতে থাকে পলাশ, শিমুল, বাগানবিলাস ইত্যাদি ফুল। বর্ষায় ফোটে জিনিয়া, বোতামফুল, জারুল, বাগানবিলাস প্রভৃতি ফুল।
গার্ডেন সেন্টার কয়েকটি সেক্টরে তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকে।
ফার্টিলাইজার সেক্টর
গার্ডেন সেন্টার এশিয়ার লেইলি গ্রুপের প্রথম সারির কোম্পানি হিসেবে কাজ করে, যেটা আমেরিকার অ্যামিরিসাউড ইন্ক থেকে উন্নতমানের ফুলের বীজ নিয়ে আসে। গার্ডেন সেন্টার গাছের খাবার অর্থাৎ অলগা-৬০০ ব্যবহার করে। যার ফলে রাসয়নিক সার ও কীটনাশক প্রয়োগ হ্রাস, গাছের শাখা-প্রশাখা বৃদ্ধি, মাটির গুণাগুণ, ফলন ও মান বৃদ্ধি এবং গাছের রক্ষক হিসেবে কাজ করে। এটি পরিবেশবান্ধব এবং ব্যবহারও সহজ।
ভেজিটেবল সিড সেক্টর
গার্ডেন সেন্টার টমেটো, ফুলকপি, মূলা, বাঁধাকপি, পেঁপে, বেগুন, শসা, লাউ, মরিচ ইত্যাদির বীজ সংরক্ষণ ও সরবরাহ করে থাকে।

পেস্টিসাইড সেক্টর
গাছের পোকামাকড় মারার ক্ষেত্রে গার্ডেন সেন্টার কেমিক্যালের পরিবর্তে পেস্টিসাইড ব্যবহার করে। এ ছাড়া ফ্লাওয়ার সেক্টরের মাধ্যমে ফুলের বীজ সংরক্ষণ ও সরবরাহ, ডেভেলপমেন্ট সেক্টরের মাধ্যমে বিল্ডিংয়ের সার্বিক কাজ করে থাকে।
সফল প্রকল্পসমূহ
গার্ডেন সেন্টার ৫০০-র বেশি প্রকল্পের কাজ সফলভাবে শেষ করেছে। এর মধ্যে সাভার নিউমার্কেট, রয়েল পার্ক রেসিডেন্স ব্লু ওয়াটার গার্ডেন হোটেল, লং বিচ হোটেল (কক্সবাজার), কাকরাইল রেসিডেন্সিয়াল গার্ডেন, গ্রামীণফোন হেড অফিস, ফ্যান্টাসি কিংডম, ইস্ট কোম্পানি লিমিটেড, অস্ট্রেলিয়ান হাইকমিশন, এ কে এইচ গামের্ন্টস, শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, এয়ারপোর্ট রোড থেকে রোকেয়া সরণি পর্যন্ত সড়কের সৌন্দর্যবর্ধন গার্ডেন সেন্টারের উল্লেখযোগ্য কাজ।

চলমান প্রকল্প
অনন্ত গ্রুপের ফ্যাক্টরি, অনন্ত গ্রুপের চেয়ারম্যানের বাসভবন, বাটা শু কোম্পানি ফ্যাক্টরি, বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক কনফারেন্স সেন্টার, ধুসাই হোটেল অ্যান্ড রিসোর্ট, ঢাকা সিটি কনকর্ড, মিন্টু রোড, প্রিয় প্রাঙ্গণের চেয়ারম্যানের বাসভবন, টি এস ফ্যাক্টরি প্রভৃতির গার্ডেনিংয়ের কাজ করছে গার্ডেন সেন্টার।
পুরস্কার
২০০৬ সালে ন্যাশনাল বিউটিফিকেশন অ্যাওয়ার্ড অর্জন করেছে গার্ডেন সেন্টার। এ ছাড়া জেনেভার ইন্টারন্যাশনাল কোয়ালিটি কনভেনশনের সেঞ্চুরি ইন্টারন্যাশনাল কোয়ালিটি অ্যাওয়ার্ডে গোল্ড ক্যাটাগরিতে গার্ডেন সেন্টার পেয়েছে সম্মানসূচক পদক। এ ছাড়া গার্ডেন সেন্টার রয়েল হর্টিকালচার সোসাইটি, ইউকের সদস্য হিসেবে কাজ করছে। গার্ডেন সেন্টার অ্যাসোসিয়েশন অব প্রফেশনাল ল্যান্ডস্কেপ ডিজাইনারের (ইউএসএ) সাম্মানিক সদস্যও।
তারেক রহমানের জন্ম ঢাকায়। বাবা মতিউর রহমান আর মা সামসুর নাহার। তিনি বর্তমানে ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব গার্ডেন ডিজাইন ইউকের ডিপ্লোমা ইন গার্ডেনের ওপর পড়াশোনা করছেন। তাঁর ভবিষ্যৎ স্বপ্ন গার্ডেনিং শিল্পকে ব্র্যান্ডিং করা। এখনকার ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে এ সম্পর্কে সঠিক ধারণার মাধ্যমে প্রতিটি ঘরে ছোট-বড় বাগান গড়ে তুলতে উৎসাহিত করে তোলা।

যোগাযোগ
হাউজ-২৪৮, রোড-১৯, ধানমন্ডি, ঢাকা ১২০৯
টেলিফোন: ৯১১৫৬৯২, ৮১১২০০০।
মোবাইল: ০১৭১১৫২৮৯৫৪, ০১১৯৯০০৭৮৭১।
ই-মেইল : [email protected]
ওয়েবসাইট : www.gardencentrebd.com
তানজিনা আফরিন ইভা
প্রকাশকাল: বন্ধন ৩৬ তম সংখ্যা, এপ্রিল ২০১৩