দক্ষিণে পদ্মা, পূর্বে মেঘনা আর উত্তরে ধলেশ্বরী নদীঘেরা ঐতিহাসিক এক জনপদ বিক্রমপুর। নবম থেকে পনেরো শতক পর্যন্ত এ বঙ্গভূমি শাসনে ছিল বৌদ্ধ, সেন, পাল, পাঠান ও মুসলিম শাসকেরা। সে সময়ে এখানে চলেছে শিক্ষা, সংস্কৃতি, শিল্প, সাহিত্যচর্চার শ্রেষ্ঠ ঐক্যধারা ও দারুণ উদারনীতি। আর এই নদীবিধৌত উর্বর ভূমিতে জন্মেছিলেন বিজ্ঞানী স্যার জগদীশ চন্দ্র বসু, অতীশ দীপংকর, দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাস, মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়সহ অসংখ্য কৃতী সন্তান। রাজা বিক্রমাদিত্যের বিক্রমপুরের শৌয-বীর্যের অনেক কিছুই কালের গর্ভে হারিয়ে গেলেও প্রতœতাত্তি¡ক খননে এখন উন্মোচিত হচ্ছে মাটির নিচে লুকানো হাজার বছরের ইতিহাস, ঐতিহ্য, স্থাপনা, প্রত্নসম্পদসহ ঐতিহাসিক নানা নিদর্শন। অগ্রসর বিক্রমপুর তথা মুন্সিগঞ্জ শহরের সিপাহিপাড়ার সফল একজন নির্মাণপণ্য ব্যবসায়ী মো. সাইফুল ইসলাম উজ্জ্বল। ‘চিটাগং স্টিল হাউস’-এর স্বত্বাধিকারী তিনি। আকিজ সিমেন্ট কোম্পানি লিমিটেডের আঞ্চলিক বিক্রয় কর্মকর্তা মো. মাহাবুব রহমানের সহযোগিতায় কথা হলো তাঁর সঙ্গে। জানা গেল তাঁর সাফল্যের নানা দিক। বন্ধন-এর ‘সফল যাঁরা কেমন তাঁরা’ পর্বে এবার থাকছে সফল এ ব্যবসায়ীর সাফল্যকথন।
ব্যবসায়ী মো. সাইফুল ইসলাম উজ্জ্বলের জন্ম ১৯৮১ সালের ২৪ জুন, মুন্সিগঞ্জ জেলার কাগজীপাড়া, মিরকাদিমে। বাবা হাজি মো. শাহাদাৎ হোসেন ও মা হাজি নূরজাহান বেগম। দুই ভাই এক বোনের মধ্যে সবার বড়। মিরকাদিম হাজি আমজাদ আলী উচ্চবিদ্যালয় থেকে ১৯৯৭ সালে মাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পর পাড়ি জমান জাপানে। সেখানে কাজ করতেন অটোমোবাইল পার্টস ফ্যাক্টরিতে। বিদেশে থাকলেও সেখান থেকেই ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন দেশে। নারায়ণগঞ্জের পাগলায় দোকান প্রতিষ্ঠা করেন নির্মাণপণ্যেও, যা দেখাশোনা ও পরিচালনা করতেন তাঁরই ছোট ভাই মো. তাজুল ইসলাম। প্রবাসে থেকেও ব্যবসা-সংক্রান্ত যাবতীয় দিকনির্দেশনা দিতেন। প্রায় ছয় বছর পর দেশে ফেরেন। মনোযোগী হন ব্যবসার পরিসর বাড়াতে। এরই ধারাবাহিকতায় জেলা শহরের অন্যতম প্রাণকেন্দ্র সিপাহিপাড়ায় প্রতিষ্ঠা করেন নির্মাণপণ্যের আরও দুটি শোরুম।
সাইফুল ইসলাম ব্যবসায়িক পরিবারের সন্তান। বাবার ছিল ধান-চালের ব্যবসা। ফলে ব্যবসা-বিষয়ক জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা দুটোই ছিল তাঁর। ফলে ব্যবসা পরিচালনা ও উন্নয়নে যা হয় দারুণ সহায়ক। এ ছাড়া জাপানে থাকাকালীন তাঁর অভিজ্ঞতা সহায়ক হয় ক্রেতাদের সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়তে আর পণ্য বিক্রিতে। খুচরা ও পাইকারি দুভাবেই তিনি পণ্য বিক্রি করেন। তাঁর সুব্যবহার এলাকায় সুবিদিত। আকিজ সিমেন্ট বিক্রিতে মুন্সিগঞ্জের সেরা বিক্রেতা তিনি। এ ছাড়া একটি স্টিল কোম্পানির বেস্ট সেলার। সাফল্যের স্বীকৃতিস্বরূপ বিভিন্ন কোম্পানি থেকে পেয়েছেন ফ্রিজ, ওয়াশিং মেশিন, ট্যাব, মোবাইল, নগদ টাকাসহ নানা সামগ্রী। এ ছাড়া আকিজ সিমেন্ট ও অন্য কোম্পানির পক্ষ থেকে ভ্রমণ করেছেন মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড ও নেপাল। দেশে ঘুরেছেন কক্সবাজার ও সুন্দরবন। নিজের ব্যবসার পাশাপাশি দেখেন বাবার ব্যবসাও। ম্যানেজার প্রশান্ত দে সামলাচ্ছেন তাঁর তিনটা শোরুম আর দুইটা গোডাউন। ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত আরও প্রায় ১৫ জন শ্রমিক-কর্মচারী।

ব্যবসায়ী সাইফুল ইসলামের বিয়ে করেন ২০০৯ সালে। সহধর্মিণী সোনিয়া আক্তার। এ দম্পতির দুই ছেলে। বড় ছেলে আবু সাইদ বসুন্ধরা কিন্ডারগার্টেন স্কুলে প্রথম শ্রেণিতে পড়ছে এবং ছোট ছেলে আবু সুফিয়ানের বয়স মাত্র তিন মাস। যৌথ পরিবারে থাকেন। ছোট ভাই মো. তাজুল ইসলামের জন্ম ১৯৮২ সালের ১১ সেপ্টেম্বর। স্ত্রী নাদিয়া আক্তার। তাঁদের মো. ইয়াহ্ইয়া নামে দুই মাস বয়সী ছেলে রয়েছে। ব্যবসার পাশাপাশি সাইফুল ইসলাম এলাকার নানা সামাজিক কর্মকান্ডের সঙ্গে জড়িত। তিনি সিপাহিপাড়া বাজার কমিটির সদস্য। এ ছাড়া তিনি দক্ষিণ কাগজীপাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়, মসজিদ ও আরবিয়া ইসলামিয়া মাদ্রাসার ম্যানেজিং কমিটির সম্মানিত সদস্য।
প্রত্যেক ব্যবসায়ী নিজ ব্যবসার উন্নয়নে বেছে নেন কিছু কৌশল। ব্যবসায়ী সাইফুল ইসলামও এর ব্যতিক্রম নন। তবে তাঁর বড় কৌশল সততা। আর এই একটি মাত্র গুণের কারণেই ক্রেতারা তাঁকে বিশ্বাস করেন; ভালোবাসেন। দূর-দূরান্তের ক্রেতারাও তাঁর দোকান থেকেই পণ্য কেনেন। কারণ একটাই, তাঁদের বিশ্বাস পণ্য কিনে তাঁরা প্রতারিত হবেন না কখনোই।
মাহফুজ ফারুক
প্রকাশকাল: বন্ধন ৭৩ তম সংখ্যা, মে ২০১৬