ব্যবসা যখন মানবসেবা

ভৈরব নদীপারের ছোট্ট শহর নওয়াপাড়া। তবে আয়তনে ছোট হলে কী হবে, এখানকার নিত্যকর্মব্যস্ততা ও ব্যবসায়িক গুরুত্ব দেশের অনেক বড় শহরকেও হার মানায়। যশোর জেলার অভয়নগর থানাধীন এ শহরটি দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম শিল্পনগরী। এ শহরের প্রাণকেন্দ্র নূরবাগে অবস্থিত ‘মেসার্স নিউ ছবেদ আলী ট্রেডার্স’-এর কর্ণধার শেখ কামরুজ্জামান এলাকার একজন সফল ব্যবসায়ী। আকিজ সিমেন্ট কোম্পানি লিমিটেডের আঞ্চলিক বিক্রয় কর্মকর্তা আজম মোহাম্মদ ড্যানির সহায়তায় বন্ধন-এর ‘সফল যাঁরা কেমন তাঁরা’র এ পর্বের সফল জন তিনি।

ব্যবসায়ী কামরুজ্জামানের জন্ম ১৯৭৫ সালের ১১ সেপ্টেম্বর, যশোর জেলার অভয়নগর থানার রাজঘাটে। বাবা মরহুম শেখ ছবেদ আলী ও মা মোছা. নূরজাহান বেগম। চার ভাই ও পাঁচ বোনের মধ্যে কামরুজ্জামান সবার ছোট। ১৯৯৩ সালে নওয়াপাড়া মডেল স্কুল থেকে মাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। খেলাধুলার প্রতি বরাবরই ছিল প্রবল আকর্ষণ। তাই পরে আত্মপ্রকাশ একজন ফুটবল খেলোয়াড় হিসেবে। নিয়মিত খেলতেন যশোর ও খুলনা ফুটবল লিগে। ঠিকাদারি পেশার সঙ্গেও ছিল সম্পৃক্ততা। ২০০৫ সালে নূরবাগে বাবার প্রতিষ্ঠিত ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে শুরু সিমেন্ট ব্যবসার। আকিজ সিমেন্ট বিক্রির মাধ্যমেই শুরু হয় নির্মাণসামগ্রীর ব্যবসা। এখন পর্যন্ত ওই একটি পণ্য নিয়েই ব্যবসায়িকভাবে এগিয়ে চলেছেন।

ব্যবসায়ী কামরুজ্জামান আকিজ সিমেন্ট কোম্পানি লিমিটেডের একজন এক্সক্লুসিভ রিটেইলার। তিনি কোম্পানিটির যশোর-১ টেরিটরির সর্বোচ্চ বিক্রেতা। বিগত দুই বছর তিনি যশোর সদর ও অভয়নগর থানার সেরা বিক্রেতা নির্বাচিত হয়েছেন। এমন সাফল্যের স্বীকৃতিস্বরূপ আকিজ সিমেন্টের পক্ষ থেকে উপহার হিসেবে পেয়েছেন টেলিভিশন, ফ্রিজ, রাইসকুকার, ওয়াটার ফিল্টার, নগদ টাকাসহ নানা সামগ্রী। এ ছাড়া তিনি সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড, ইন্দোনেশিয়া ও শ্রীলঙ্কায় ভ্রমণ করেছেন। পালন করেছেন ওমরাহ হজ। ব্যবসায়িক ব্যস্ততায় সর্বত্র যেতে না পারলেও সম্প্রতি ঘুরে এসেছেন নেপাল থেকে। আর কয়েক দিন পরেই যাবেন থাইল্যান্ড। ব্যবসার মুনাফালব্ধ অর্থে কিনেছেন নিজের ব্যক্তিগত গাড়ি। তাঁর ব্যবসায়িক সহযোগী ম্যানেজার মো. লিটন আর প্রতিষ্ঠানের বেশ কিছু শ্রমিক-কর্মচারী। বেশ কিছু ব্যবসায়িক ও সামাজিক সংগঠনের সঙ্গেও জড়িত কামরুজ্জামান। তিনি রাজঘাট খাঁ বাড়ি জামে মসজিদের সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক, নোয়াপাড়া বাজার কমিটি, নোয়াপাড়া ইনস্টিটিউট অব রোটারি পাবলিকের একজন সাম্মানিক সদস্য।

ব্যবসায়ী কামরুজ্জামানের বাবা ছিলেন একজন বিশিষ্ট সমাজসেবক ও অত্র এলাকার সাবেক চেয়ারম্যান। প্রায় ৩০ বছর তিনি ছিলেন জুরিবোর্ডের সদস্য। ওই অঞ্চলে শিক্ষার প্রসারে যাঁর অবদান অসাধারণ। প্রতিটি ছেলেমেয়ে যেন লেখাপড়া শিখে জ্ঞানের আলোয় আলোকিত হতে পারে সে লক্ষ্যে নিজের জমিতে চারটি প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন। শুধু তা-ই নয়, শিক্ষার্থীরা যেন নিয়মিত ক্লাস করে সে ব্যাপারেও সচেষ্ট ছিলেন সব সময়। এ ছাড়া রাজঘাটের জামে মসজিদটির প্রতিষ্ঠাতা তিনি। পাশাপাশি ছিলেন এলাকার ধান, চাল, পাট, শলাকা প্রভৃতি আড়তজাত পণ্যের সফল ব্যবসায়ী। তাঁর এমন ব্যবসায়িক সাফল্য ও মানবসেবামূলক মনোভাব কামরুজ্জামানকে একজন সফল ব্যবসায়ী হতে উদ্বুদ্ধ করে। বাবা ও পরিবারের এমন সুনাম থাকায় ব্যবসায় বাড়তি কিছু সুবিধাও পেয়েছেন তিনি। তবে তাঁর সফলতার মূলে রয়েছে কঠোর পরিশ্রম ও সততা। প্রায় প্রতিদিনই সকালে বেরিয়ে খুঁজে বের করেন কোথায় চলছে নির্মাণকাজ। এতে কোনো ধরনের নির্মাণত্রæটি থাকলে অথবা নিম্নমানের পণ্য ব্যবহৃত হলেই নির্মাতাকে ত্রæটি ধরিয়ে দেন; ভালো পণ্য ব্যবহারে আগ্রহী করে তোলেন। এমন কর্মকান্ডে ক্রেতারা তাঁর প্রতি অত্যন্ত সন্তুষ্ট। সিমেন্ট ক্রয়ে তাঁর প্রতিষ্ঠানকেই বেছে নেন তাঁরা।

পরিবারের সাথে ব্যবসায়ী কামরুজ্জামান

ব্যবসায়ী কামরুজ্জামান বিয়ে করেছেন ২০০৫ সালে। সহধর্মিণী আফরোজা পারভিন। সুখী এ দম্পতির দুই মেয়ে ও এক ছেলে। বড় ছেলে মুশফিক আহমেদ রাজঘাট কিন্টারগার্টেন স্কুলে চতুর্থ শ্রেণিতে ও মেজো মেয়ে মাসুকা জামান নওয়াপাড়া মডেল স্কুলে কেজি ওয়ানে পড়ে। ছোট মেয়ে মারিশা জামানের বয়স দেড় বছর। কামরুজ্জামান যখন ব্যবসা নিয়ে ব্যস্ত, তখন আফরোজা পারভিনের সময় কাটে ছেলেমেয়েদের নিয়ে অথবা বাড়ির কাজে। প্রায় ১০ বিঘা জায়গার ওপর তাঁদের বাড়ি। বাড়িকে ঘিরে রয়েছে পুকুর, বিভিন্ন ফুল-ফলের গাছ আর অদূরেই বিশাল খোলা মাঠ। আত্মীয়স্বজন এলে বাগান প্রাঙ্গণে পিকনিকের আয়োজন করা হয়। ব্যবসার ফাঁকে কামরুজ্জামানও সঙ্গী হন এমন বিনোদনে। ব্যবসায়িক ব্যস্ততার মাঝে পরিবারের সদস্য আর আত্মীয়দের সান্নিধ্যে খুঁজে পান মানসিক যত প্রশান্তি।

মাহফুজ ফারুক

প্রকাশকাল: বন্ধন ৭৬ তম সংখ্যা, আগস্ট ২০১৬

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top