বিশ্বের সবচেয়ে ঘনবসতিপূর্ণ নগরের অন্যতম রাজধানী ঢাকা। এখানে নগরায়ণ ও শিল্পায়ন ঘটছে দ্রুতগতিতে। এর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে দুর্ঘটনা ও দুর্যোগ। এসব ক্ষেত্রে অগ্নিঝুঁকির মাত্রাটা অনেক বেশি। ডিসেম্বর থেকে মে মাস, দেশে এ সময়ে প্রাকৃতিক আবহাওয়া থাকে অগ্নিকাণ্ডের অনুকূলে। কেননা এ সময়ে আবহাওয়া হয় শুষ্ক ও উষ্ণ। আর তাই বাসগৃহ, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, শিল্প-কারখানা ছাড়াও অগ্নিকাণ্ডের ঝুঁকি থাকে বহুতল ভবনেও। এসব অগ্নিকাণ্ডে ঘটে প্রচুর প্রাণহানি, ক্ষয়ক্ষতি হয় অর্থ-সম্পদের।
অগ্নিকাণ্ডের কারণ
ইদানীং বহুতল ভবনে বিভিন্ন বৈদ্যুতিক, গ্যাসীয় ও যান্ত্রিক অনুষঙ্গের ব্যবহার বাড়ায় বাড়ছে অগ্নিকাণ্ডের হার। এ ছাড়া ভবনের ভেতর ও বাইরে দাহ্য পদার্থ দিয়ে তৈরি উপকরণের ব্যবহার সমস্যাটিকে আরও প্রকট করে তুলছে। মানুষ ভবনের সৌন্দর্য বাড়াতে গিয়ে কাঠ, প্লাইউড, পিভিসি, ডিজিটাল ব্যানার ও কাচ ব্যবহার করছে। এসবের ব্যবহার ঝুঁকি বাড়াচ্ছে অগ্নিকাণ্ডের। আর যেসব স্থানে দাহ্য পদার্থ বেশি পরিমাণে থাকে, সেসব স্থানে একবার আগুন লাগলে তা দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। যেমন গার্মেন্টস ফ্যাক্টরিতে প্রচুর কাপড় স্তূপ করে রাখা থাকে, যা কি না দাহ্য এবং সহজে আগুন ছড়িয়ে পড়তে সাহায্য করে।

ফায়ার সার্ভিস সূত্রমতে, গত কয়েক বছরের অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা পর্যালোচনা করে দেখা যায়, সর্বাধিক অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে বৈদ্যুতিক গোলযোগ বা শর্টসার্কিট থেকে। গতবছর শর্টসার্কিটজনিত অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে প্রায় ছয় হাজার। এ ছাড়া সিগারেটের আগুন, রান্নার চুলা, শিশুদের আগুন নিয়ে খেলা, যন্ত্রাংশের সংঘর্ষজনিত কারণেও অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটছে। অথচ বহু কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত বাণিজ্যিক ভবন, মার্কেট, গার্মেন্টসে ন্যূনতম অগ্নিনির্বাপণ-ব্যবস্থা না থাকা, ঢাকার রাস্তাগুলোর অপ্রশস্ততা, ফায়ার সার্ভিসের নানা সংকট-সীমাবদ্ধতা; আর প্রচলিত আইনের প্রতি উপেক্ষা এসবই অগ্নিকাণ্ডের ঝুঁকি বাড়াচ্ছে বহু গুণ।
প্রধান কারণ অপরিকল্পিত ঢাকা
অপরিকল্পিত নগরায়ণ ও যথাযথ নিয়ন্ত্রণব্যবস্থার অভাবেই অগ্নিকাণ্ডের মতো ঘটনা বাড়ছে। অপ্রতুল অগ্নিনির্বাপক-ব্যবস্থার কারণে শুধু রাজধানীতেই কোটি মানুষ রয়েছে অগ্নিঝুঁকিতে। কারণ, বৃহত্তর ঢাকা শহরে মাত্র ১১টি ফায়ার স্টেশন রয়েছে, যা বিপুল জনগোষ্ঠীর এ শহরে অগ্নিনিরাপত্তায় খুবই নগণ্য। তা ছাড়া রাজধানীতে অধিকাংশ বহুতল ভবনই যথাযথ নিয়ম মেনে করা হয়নি। রাখা হয়নি ওসব ভবনে জরুরি দুর্ঘটনা মোকাবিলার কোনো ব্যবস্থাও। ফলে অগ্নিকাণ্ডসহ জরুরি দুর্ঘটনা মোকাবিলায় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ সামান্যই অবদান রাখতে পারছে।
প্রায় প্রতিদিনই ঢাকা শহরে গার্মেন্টস ফ্যাক্টরি, বস্তি, বিপণি বিতান ও ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটছে। এতে বিপুল আর্থিক লোকসানের সঙ্গে সঙ্গে ঘটছে প্রাণহানির ঘটনাও। স্বাধীনতার আগে ঢাকার অগ্নিনিরাপত্তা নিশ্চিত রাখতে ২৬টি জলাধার ছিল। বর্তমানে তার একটিরও অস্তিত্ব নেই। ফায়ার ফাইটিং সিস্টেমের ওপর হাউজিং অ্যান্ড বিল্ডিং রিচার্স ইনস্টিটিউট (এইচবিআরআই) পরিচালিত এক সমীক্ষায় জানা যায়, অগ্নিনিরাপত্তার স্বার্থে রাজধানীর শতকরা ৮০ ভাগ ভবনেই স্যান্ড টাব নেই। ৮২ থেকে ৯৫ ভাগ সুউচ্চ ভবনে লাগানো হয়নি স্মোক ডিটেক্টর ও হিট ডিটেক্টর। ৬২ ভাগেরও বেশি ভবনেই নেই ফায়ার অ্যালার্ম। শুধু তা-ই নয়, জরুরি পরিস্থিতিতে সুউচ্চ ভবনগুলোর আন্ডারগ্রাউন্ডে পর্যাপ্ত পানি সংরক্ষণেরও ব্যবস্থা রাখা হয়নি। তা ছাড়া রাজধানীর অনেক জায়গাতেই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটলে জরুরিভাবে ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি পৌঁছার মতো রাস্তাও বেদখল হয়ে আছে। ফলে ফায়ার সার্ভিস অনেক ক্ষেত্রেই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনাস্থলে যথাসময়ে পৌঁছাতে পারে না। রাজধানীতে বর্তমানে ৭ তলা থেকে ২৫ তলা পর্যন্ত উঁচু ভবনের সংখ্যা দুই হাজারেরও বেশি। কিন্তু এসব বহুতল ভবন নির্মাণে কোনোটিতেই যথাযথ বিল্ডিং কোড অনুসরণ করা হয়নি। অনেক ক্ষেত্রেই নির্মিত ভবনগুলো অনুমোদিত উচ্চতার চেয়েও অতিরিক্ত উচ্চতায় নির্মাণ করা হয়েছে।

একই সমীক্ষা রিপোর্ট মতে, সুউচ্চ ভবনগুলোর শতকরা ৮১ ভাগে ইকসটিংগুইশার (অগ্নিনির্বাপণযন্ত্র), ধোঁয়া নির্ণয়ক রয়েছে শতকরা ১৭ দশমিক ১৪ ভাগে, তাপ নির্ণয়ক রয়েছে ৮ দশমিক ৫৭ ভাগে, রশ্মি নির্ণয়ক রয়েছে দশমিক ৯৫ ভাগে এবং ইন্টারকম (অভ্যন্তরীণ নিজস্ব যোগাযোগ) রয়েছে ৬০ ভাগ ভবনে।
ভবনগুলোর মধ্যে শতকরা ৭৯ ভাগে ইলেকট্রিসিটি সাবস্টেশন থাকলেও নিয়ম মেনে মাত্র ১৮ ভাগ ভবনে ইলেকট্রিসিটি সাব স্টেশন করা হয়েছে। জরুরি বহির্নির্গমন ব্যবস্থা রয়েছে পাঁচ দশমিক ৭১ ভাগ ভবনে আর আগুন লাগলে দ্রুত বের করে আনাতে সক্ষম দুই দশমিক ৮৬ ভাগ ভবনে ফায়ার লিফট রয়েছে। নিজস্ব অগ্নিনির্বাপক রয়েছে ১১ দশমিক ৪৩ ভাগ ভবনে, জরুরি হেলিকপ্টার অবতরণের ব্যবস্থা রয়েছে ১৫ দশমিক ২৪ ভাগ ভবনে আর ৫০ হাজার গ্যালনের নিচে পানির ধারণক্ষমতাসম্পন্ন ভবনের হার ৩১ দশমিক ৪৩ ভাগ।
ঢাকা শহরে একটু বড় ধরনের অগ্নিকাণ্ড হলেই তা সামাল দেওয়ার অবস্থা নেই। ফলে ঘটছে শত শত লোকের অকারণ প্রাণহানি। ২০০৫ থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত প্রতিবছরই ঢাকা শহরের কোনো না কোনো বহুতল ভবন বা গার্মেন্টসে মারাত্মক অগ্নিকাণ্ড ঘটায় পুড়ে মরেছে মানুষ। এ থেকে স্পষ্টত বোঝা যায়, এগুলো ভবন নির্মাণ-ক্রটি ও অগ্নিনির্বাপণের ব্যবস্থা না থাকার কারণেই ঘটেছে। কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে ঢাকার ‘বিউটিফিকেশন’ করা হলেও নগরবাসীর মৌলিক সমস্যাগুলো রয়েই গেছে। ঠিক তেমনিভাবে রাজউক, ঢাকা সিটি করপোরেশন থাকার পরও ঢাকা বাড়ছে অপরিকল্পিতভাবে। সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞদের মতে, এটিই ঢাকায় ঘন ঘন অগ্নিকাণ্ডের প্রধান কারণ।
ঢাকায় প্রচুর বহুতল-বাণিজ্যিক ভবন নির্মাণ করা হচ্ছে ন্যূনতম অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা না নিয়েই। এ ভবনগুলোর নকশা অনুমোদনের জন্য ফায়ার সার্ভিসের মহাপরিচালকের ছাড়পত্র নেওয়ার বিধান থাকায় সবাই নকশায় অগ্নি প্রতিরোধে নানা ব্যবস্থা রাখেন, যা পরে বাস্তবায়িত হয় না। অথচ এই নকশা লঙ্ঘনের দায়ে ফায়ার সার্ভিস কর্তৃপক্ষের ভবনটি ‘অগ্নিনির্বাপণের ক্ষেত্রে অনুপযোগিতার কারণে ব্যবহার উপযোগী নয়, এমন ঘোষণা দেওয়া ছাড়া কিছুই করতে পারে না। রাজধানী ঢাকায় দিন দিন অগ্নিঝুঁকি বাড়ছে। শুধু বহুতল ভবনের অগ্নিকাণ্ড নয়, বস্তি থেকে শুরু করে বাণিজ্যিক ও আবাসিক ভবনসহ সর্বত্রই এ ধরনের দুর্ঘটনা ঘটছে।

অগ্নিনির্বাপক ব্যবস্থা নেই অধিকাংশ বহুতল ভবনে
১৯৯৬ সালের পর থেকে দেশে বহুতল ভবনের সংখ্যা বাড়তে থাকে। অনেক ক্ষেত্রেই যে ধরনের ব্যবহারের কথা উলেখ করে বহুতল ভবনের অনুমোদন নেওয়া হচ্ছে, বাস্তবে তা মানা হচ্ছে না। ঢাকা শহরের ৯৭ শতাংশ বহুতল ভবনে অগ্নিনির্বাপণের পূর্ণাঙ্গ ব্যবস্থা নেই। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই রয়েছে শুধু অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র, যার ব্যবহার সম্পর্কে অজ্ঞ সিংহভাগ মানুষ। সরকারের হাউজিং অ্যান্ড বিল্ডিং রিসার্চ ইনস্টিটিউট এবং সেন্টার ফর আরবান স্টাডিজের (সিইউএস) সর্বশেষ জরিপে রয়েছে এসব তথ্য। রাজধানীর সুউচ্চ (হাইরাইজ) ভবন নির্মাণে এক-তৃতীয়াংশের ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের অনুমোদন নেই। হাইরাইজগুলোতে অগ্নি নির্বাপণব্যবস্থার নাজুক অবস্থায় ভয়াবহ ঝুঁকিতে রয়েছে রাজধানী ঢাকা। রাজধানীতে মোট হাইরাইজের সংখ্যা দুই হাজার ১৫০টি। অন্যদিকে ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের হিসাব বলছে, এ পর্যন্ত তাদের কাছ থেকে নির্মাণের জন্য ছাড়পত্র নিয়েছে এক হাজার ৪০৭টি ভবন। রাজউকের ছাড়পত্রের জন্য পৃথক যে ১০টি সংস্থার ছাড়পত্রের প্রয়োজন হয়, সেগুলোরর মধ্যে ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তর একটি। অথচ অগ্নিনির্বাপণের কোনো ব্যবস্থা না রেখেই রাজধানী ঢাকায় গড়ে উঠেছে ৭৪৩টি ভবন।
উপেক্ষিত আইন
অগ্নিকাণ্ড প্রতিরোধে রয়েছে সরকার প্রণীত আইন, সুপারিশমালা কিন্তু মানা হচ্ছে না কোনোটাই। নানাভাবে আইনকে এড়িয়ে যাওয়া হচ্ছে নতুবা লঙ্ঘন করা হচ্ছে। এসব দেখার যেন কেউ নেই।
অগ্নি প্রতিরোধ ও নির্বাপণ আইন ২০০৩-এর ৭ নম্বর ধারায় আছে, ‘(ফায়ার সার্ভিসের) মহাপরিচালকের ছাড়পত্র ছাড়া কোনো বহুতল বা বাণিজ্যিক ভবন নির্মাণের নকশা অনুমোদন বা অনুমোদিত নকশার সংশোধন করা যাবে না। এ ছাড়া প্রতি কারখানার জন্যও লাইসেন্স গ্রহণ করতে হবে। যার কোনো শর্তপূরণে ব্যর্থ হলে অন্যূন ছয় মাসের কারাদণ্ড ও ইহার অতিরিক্ত অর্থদণ্ডেও দণ্ডনীয় হইবেন।’

বিল্ডিং কোড অনুযায়ী সাত তলার ওপরের ভবনগুলোকে বহুতল ভবন বলে উলেখ করা হয়। এসব ভবনের অগ্নিনির্বাপণ করার জন্য ৫০ হাজার গ্যালন থেকে এক লাখ গ্যালন পর্যন্ত পানির মজুদ রাখার বিধান রয়েছে। অগ্নিনির্বাপণের সময় প্রতি ৩০ গ্যালন ব্যবহারের পর ২০ গ্যালন পানি পূর্ণ হবে এমন প্রক্রিয়া অনুসরণ করে পানির রিজার্ভ গড়ার কথা বলা হয়েছে। কিন্তু আদৌ এসব ব্যবস্থা অনুসরণ করেন না ভবন মালিকেরা।
এ ছাড়া ভবন নির্মাণের সময় বাংলাদেশ ন্যাশনাল বিল্ডিং কোড, ঢাকা মহানগরের ইমারত নির্মাণ বিধিমালা ঠিকমতো অনুসরণ করছেন না বহুতল ভবনের মালিকেরা। আইনে ভবনগুলোতে পর্যাপ্ত অগ্নিনির্বাপক, জরুরি নির্গমনব্যবস্থা, ফায়ার লিফট, ফায়ার অ্যালার্ম, দমকল বাহিনী সহজেই যেন আগুন নেভাতে পারে, সে রকম ব্যবস্থা রাখার কথা বলা আছে। কিন্তু ভবন নির্মাণকারী ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানগুলো এ শর্তগুলো মানছে না। এ ছাড়া বাংলাদেশ ন্যাশনাল বিল্ডিং কোডে বহুতল ভবনে ঢোকার রাস্তা ২০ ফুট চওড়া করার কথা বলা আছে। কিন্তু বেশির ভাগ ভবন মালিক এ নিয়মও মানছে না।
বহুতল ভবনের জন্য ফায়ার এস্কেপ, প্রঙ্কলার সিস্টেম ইত্যাদি অত্যাবশ্যকীয়। ফায়ার এস্কেপ সিস্টেম ছাড়া কোনো বহুতল ভবন নির্মাণ করা যাবে না- এই মর্মে স্পষ্ট নির্দেশনা আছে বাংলাদেশ ন্যাশনাল বিল্ডিং কোড (বিএনবিসি)-এ। কিন্তু তারপরও এটা অমান্য করে তৈরি হচ্ছে একের পর এক বিপজ্জনক বহুতল ভবন।
১৯৬৫ সালে প্রণীত কারখানা আইনের চতুর্থ অধ্যায় পুরোটাই নিরাপত্তা-বিষয়ক। এ অধ্যায়ের ২২(৩) ধারায় স্পষ্ট উল্লেখ আছে, ‘কোনো কারখানার কোনো ঘরের মধ্যে কোনো লোক উপস্থিত থাকা পর্যন্ত ওই ঘর থেকে বের হওয়ার দরজা তালাবদ্ধ বা অন্যভাবে শক্ত করে আটকিয়ে রাখা যাবে না।’
১৯৯৭ সালে গার্মেন্টসসমূহের অগ্নিকাণ্ড প্রতিরোধে আন্তমন্ত্রণালয় সভায় একটি সুপারিশমালা প্রণীত হয়। সুপারিশের উল্লেখযোগ্য দিক ছিল প্রতি গার্মেন্টসের ৬% কর্মচারী সমন্বয়ে অগ্নিনির্বাপক দল গঠন, এদের পরিচিতির জন্য ভিন্ন রঙের পোশাক প্রদান, পরিদর্শকের উপস্থিতিতে মাসে ন্যূনতম একবার মহড়া অনুষ্ঠান, ফায়ার অ্যালার্ম স্থাপন, কারখানা অভ্যন্তরে ধূমপান-রান্নাবান্না বন্ধ করা, ফায়ার সার্ভিসের ন্যূনতম একজন অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে অগ্নিনির্বাপক কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগদান ও প্রতি কারখানায় আসা-যাওয়ার জন্যে ন্যূনতম দুটি ও অগ্নিনির্বাপণের জন্য একটি সিঁড়ি স্থাপন।

সিংহভাগ গার্মেন্টসে এই আইনগুলোর কোনোটিই মানা হয় না। গার্মেন্টসগুলোতে কেবল নামকাওয়াস্তে ছয় মাসে বা বছরে একবার মহড়া অনুষ্ঠিত হয়। মোট তিনটি সিঁড়ি স্থাপনের কথা থাকলেও চার-পাঁচতলার এমন গার্মেন্টসও আছে, যেখানে একটি মাত্র সিঁড়ি রয়েছে। অভিযোগ আছে, গার্মেন্টসগুলোতে কয়েকটি ফায়ার এসটিংগুইশার স্থাপন করা হয় কেবল আইওয়াশের জন্য। তাও আবার মেয়াদোত্তীর্ণ নিয়মিতভাবে না বদলিয়ে বদলানো হয় মেয়াদোত্তীর্ণের তারিখ লেখা স্টিকারটি।
ঘটছে ভয়াবহ সব অগ্নিকাণ্ড
১৯৯৫ সালে কলাবাগান, ১৯৯৭ সালে বাসাবোর ঝিলপাড়, ২০০১ সালে শাহজাহানপুর, ২০০৪ সালে শাঁখারীবাজার, ২০০৫ সালে সাভারের বাইপাইলে (স্পেকট্রাম গার্মেন্টস), ২০০৬ সালে তেজগাঁওয়ের ফিনিক্স ভবন, ২০০৭ সালে কাওরান বাজারের বিএসইসি ভবন, ২০০৯ সালে পান্থপথে বসুন্ধরা সিটি, ২০১০ সালে মহাখালীতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এনইসিটিবি ভবন, মোহাম্মদপুরের জাপান গার্ডেন সিটি, টঙ্গীতে গরীব অ্যান্ড গরীব গার্মেন্টস ও নিমতলীতে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড, ২০১১ সালে গাজীপুরে হামীম গ্রুপের গার্মেন্টস ফ্যাক্টরিতে অগ্নিকাণ্ড অতঃপর ২০১২ সালে সাভারের আশুলিয়ার নিচিন্তপুরের ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে ১২৮ জনের মর্মান্তিক মৃত্যু সবই ঘটছে অগ্নিকাণ্ডের কারণে।
ভবন নির্মাণে অগ্নিনির্বাপণ সতর্কতা
পূর্বসতর্কতা
অগ্নিকাণ্ডের পর আগুন নেভানো বা উদ্ধারকাজের চেয়ে অগ্নিকাণ্ড, যাতে না ঘটে সেই সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেওয়াই বেশি জরুরি। ভবনে অগ্নিকাণ্ড নিরসনে যেসব পূর্বসতর্কতামূলক ব্যবস্থা থাকা দরকার। তা হলো-
ভবনে ফায়ার অ্যালার্ম ব্যবস্থা থাকাটা খুবই জরুরি। একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ ধোঁয়ার সংস্পর্শে অ্যালার্ম বাজতে শুরু করে ভবনের বাসিন্দাদের সতর্ক করে দেয়।

ভবনের বিভিন্ন অংশে যদি ভবনের নকশা ঝোলানো থাকে, সেখানে দেখানো থাকবে আগুন লাগার পর বেরিয়ে যাওয়ার জরুরি সিঁড়ি কোথায় আছে এবং গ্যাস সিলিন্ডার ইত্যাদি কোথায় কোথায় রয়েছে। এসব নকশা থাকলে আগুন লাগলে মানুষ ইতঃস্তত দিগ্ভ্রান্ত হয়ে ছুটোছুটি না করে সহজেই ভবন থেকে বেরিয়ে নিজেদের রক্ষা করতে পারবে।
আগুন লাগলে কী কী করা উচিত এবং সাবধানে ভবন থেকে বেরিয়ে যাওয়ার উপায়গুলো পোস্টার আকারে ছাপিয়ে ভবনের বিভিন্ন জায়গায় ঝুলিয়ে রাখলে মানুষ সহজেই বিষয়গুলো সম্পর্কে জানতে পারবে।
ভবনে যত ধরনেরই সতর্কতামূলক ব্যবস্থা থাকুক না কেন, যদি প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা না থাকে তবে এগুলো যথাসময়ে কার্যকরভাবে ব্যবহার করা যাবে না। এটি মূলত নিয়মিত প্রশিক্ষণ পদ্ধতি, যেখানে শেখানো হয় ফায়ার অ্যালার্ম বাজলে কী করে সাবধানে ভবন থেকে বেরিয়ে যেতে হয়।
স্থাপত্য নকশার ক্ষেত্রে, এমনভাবে নকশা করা যেতে পারে, যাতে কিছু সতর্কতামূলক প্ল্যানিংয়ের মধ্যেই থাকে। যেমন লিফট, সিঁড়ি এগুলোকে একত্র করে ডিজাইন করা এবং অগ্নিপ্রতিরোধক দরজা ব্যবহার করা, যাতে আগুন লাগলে দরজাটি বন্ধ করে দেওয়া যায় এবং যতক্ষণ না লিফট কোরে আগুন লাগবে ততক্ষণ লিফটকেও জরুরি বহির্গমন পথ হিসেবে ধরা যায়।
ভবনের নির্মাণসামগ্রীর ওপরেও অগ্নিকাণ্ড প্রতিরোধ অনেকাংশে নির্ভর করতে পারে। যে নির্মাণসামগ্রীর অগ্নি প্রতিরোধ ক্ষমতা বেশি, সেসব সামগ্রী ব্যবহার করলে ভবনে সহজে আগুন ছড়াতে পারবে না।
উদ্ধার পদ্ধতি
জরুরি বহির্গমন সিঁড়ি
সাধারণত ফ্যাক্টরি ভবনে অগ্নিকাণ্ড ঘটলে একটি জরুরি সিঁড়ি দিয়ে সবাইকে নিচে নামিয়ে দেওয়া হয়। সিঁড়িটির প্রস্থ থাকে ২.৫ ফুট, যাতে একজন একজন করে লাইন ধরে নামতে পারে এবং উল্টো দিক থেকে কেউ যেন উঠে আসতে না পারে। এর দুই পাশে দেয়াল থাকে, যাতে কেউ টপকাতে গিয়ে একজনের ওপর আরেকজন পড়ে মারা না যায়। তবে এই সিঁড়িটি তখনই কার্যকর হবে, যখন মাসে অন্তত একবার ফায়ার ড্রিল করা হবে। নতুবা এটি হবে একটি মৃত্যুফাঁদ। আমাদের দেশে অধিকাংশ ক্ষেত্রে বাণিজ্যিক ভবনে বা ফ্যাক্টরিতে জরুরি বহির্গমন সিঁড়ি স্টোর হিসেবে ব্যবহৃত হয়। ফলে কোনো সময়েই সেটি জরুরি সিঁড়ি হিসেবে ব্যবহৃত হতে পারে না।

প্রতিরোধ পদ্ধতি
আগুন নির্বাপণের জন্য পানির উৎস
ভবনের অভ্যন্তরে
সাধারণত ভবনের ছাদে পানির ট্যাংক থাকে। এই ট্যাংক থেকে হোস পাইপ এনে প্রতিটি তলায় সংযুক্ত করা যায় এবং এ থেকে অগ্নিকাণ্ডের সময়ে পানি সরবরাহ করা যায়।
ভবনের একতলায় পানির ট্যাংক রাখা হয়। ম্যানুয়াল বা অটোমেটিক পাম্পের সাহায্যে পানি ওপরে তোলা হয়। এটি পানির অন্যান্য উৎসের সঙ্গে মিলে অগ্নি নির্বাপণে সাহায্য করে।
স্প্রিংকলার পদ্ধতিতে কয়েকটি স্প্রিংকলার ছাদের নিচে লাগানো থাকে এবং এগুলো নির্দিষ্ট পরিমাণ ধোঁয়া শনাক্ত করতে পারে। এই পরিমাণ ধোঁয়ার বেশি হলেই ওপর থেকে ঝরনার মতো স্বয়ংক্রিয়ভাবে পানি ঝরতে থাকে। সাধারণত বাণিজ্যিক ভবনে বা হোটেলে স্প্রিংকলার পদ্ধতি থাকে। যেসব জায়গায় ইলেকট্রনিক্স থাকে বা যেসব স্থানে এমন জিনিসপত্র থাকে যা পানির স্পর্শে নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা থাকে, সেখানে সিলিন্ডার থেকে লিভার চাপ দিয়ে পাউডার স্প্রে করা হয়।
ভবনের বাইরে থেকে
আগুন নির্বাপণকারী দল নির্দিষ্ট পরিমাণ পানি নিয়ে এসে পাইপের সাহায্যে আগুনে পানি নিক্ষেপ করে। উঁচু ভবনের ক্ষেত্রে ক্রেন বা মই ব্যবহার করা হয়। ভবনের বারান্দার গ্রিল না থাকলে নির্বাপণকারী দল বারান্দায় দাঁড়িয়ে আগুন নেভানোর পদ্ধতিকে সহজ করতে পারে। ভবনের কাছাকাছি যাওয়ার প্রতিবন্ধকতা থাকলে বাইরে থেকেই পানি ছুঁড়ে মারা হয়, সে জন্য ভবন বানানোর সময় অনাকাক্সিক্ষত পরিস্থিতির কথা মাথায় রেখে পর্যাপ্ত ফাঁকা জায়গা রাখা উচিত ভবনের চারপাশে।
কোনো কোনো ক্ষেত্রে উন্নত বিশ্বে রাস্তার পাশে আগুন নেভানোর জন্য একদম আলাদা পানির লাইন থাকে, যা থেকে নিরবচ্ছিন্ন পানি সরবরাহ করা যায়। এ পদ্ধতি আগে দেখা যেত, কিন্তু বর্তমানে বাংলাদেশে অপরিকল্পিতভাবে বাড়ি নির্মাণের ফলে সেটা কার্যকর করা যাচ্ছে না।
গ্যাসের কার্যকারিতা
ভবনের করিডর বা লবি যে স্থান সবাই একসঙ্গে ব্যবহার করে, সেখানে গ্যাস সিলিন্ডার রাখা হয়। সিলিন্ডারের একটি লিভারে চাপ দিলে আগুনের ওপর স্প্রে হয়, সেই ব্যবস্থা এখন প্রায় সব আধুনিক ভবনে থাকলে ব্যক্তিগত ভবনে এর ব্যবহার খুব একটা দেখা যায় না। আগুন নেভানোয় এর গুরুত্ব অনেক।
উন্নত বিশ্বে বাইরে থেকে গ্যাস কার্ট্রিজ ছুড়ে দেওয়া হয় আগুনের ওপর। আগুনের তাপে সেটি বিস্ফোরিত হয় এবং গ্যাস ছড়িয়ে পড়ে আগুন নিভে যায়। যেখানে কার্বন ডাই-অক্সাইড গ্যাসে অসুবিধা হওয়ার আশঙ্কা থাকে সেখানে হ্যালোজেন গ্যাস ব্যবহার করা হয়।
লক্ষণীয় আরও যা যা
আগুন যাতে না লাগে সে জন্য বসতবাড়ি, অফিস, ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান, কারখানায় অগ্নি প্রতিরোধের ব্যবস্থা রাখতে হবে। এ ছাড়া রান্নার পর চুলার আগুন নিভিয়ে ফেলুন। খোলা বাতির ব্যবহার পরিহার করতে হবে। ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি আসার আগ পর্যন্ত আগুন নেভানোর জন্য নিজেদের চেষ্টা করতে হবে। বাসার বৈদ্যুতিক সংযোগগুলো মাসে অন্তত একবার করে পরীক্ষা করতে হবে, প্রয়োজন হলে পুরোনো সংযোগ পরিবর্তন করে নিতে হবে। রাসায়নিক ও জ্বালানি পদার্থ ব্যবহারের ক্ষেত্রে বিশেষ সাবধান হতে হবে। ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানে ধূমপান সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করে দিতে হবে নইলে আলাদা ব্যবস্থা রাখতে হবে। শিল্প-কারখানায় প্রচুর পানি ও অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র রাখতে হবে। সম্ভব হলে অগ্নিকাণ্ড মোকাবিলায় প্রশিক্ষিত লোক রাখা যেতে পারে। বড় শিল্প-কারখানায় প্রতি মাসে ফায়ার সার্ভিসের সহায়তায় অগ্নিনির্বাপণ মহড়ার ব্যবস্থাও করতে হবে। আগুন লাগার সঙ্গে সঙ্গে অবশ্যই বৈদ্যুতিক সংযোগের মেইন সুইচ বন্ধ করে দিতে হবে। ফায়ার সার্ভিসের টেলিফোন নম্বর চোখের সামনে দেয়ালে লিখে রাখতে পারেন, যাতে আগুন লাগার সঙ্গে সঙ্গে খবর দিতে পারেন। আপনার শরীরে বা পরনের কাপড়ে আগুন লাগলে দৌড় না দিয়ে মাটিতে গড়াগড়ি দিন। এতে আগুন নিভে যাবে। বাসায় বা অফিসে যেখানেই আগুন লাগুক না কেন, ঘাবড়ে যাবেন না। বরং মাথা ঠান্ডা রেখে কী করতে হবে সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলুন। প্রতিষ্ঠানের সব জায়গা আবর্জনামুক্ত রাখতে হবে। আগুন যাতে না লাগে তার জন্য প্রতিষ্ঠানের কঠোর নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। অপ্রয়োজনীয় কাগজপত্র একটা নির্দিষ্ট মেয়াদ শেষে নষ্ট করে ফেলুন। কারণ, এগুলো থেকে আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। চুলার ওপর ভেজা লাকড়ি বা কাপড় শুকাতে দেবেন না এবং ইস্তিরিতে বৈদ্যুতিক সংযোগ রেখে কখনো কোথাও যাবেন না। যেকোনো সময় এখান থেকে আগুন লেগে যেতে পারে।

জনবল সরিয়ে নেওয়া
- বাড়িতে বা অফিসে যদি আগুন লাগে, ফায়ার সার্ভিসের জন্য বসে না থেকে নিজেরা লোক অপসারণ শুরু করে দিতে পারেন। আর আপনি নিজেও যদি আক্রান্ত হয়ে পড়েন তবে নিচের বিষয়গুলো খেয়াল রাখবেন :
- আগুন লাগলে লিফট ব্যবহার করা যাবে না। যেকোনো সময় লিফট বন্ধ হয়ে বিপদে পড়তে পারেন।
- ছাদে না উঠে সবাইকে নিচের দিকে নামতে হবে। নামার সময় জরুরি নির্গমনের পথ ব্যবহার করতে হবে।
- ওপর থেকে নিচে লাফ দেওয়া যাবে না।
- জরুরি অবস্থায় নিরাপত্তাকর্মীদের টর্চ ব্যবহার করতে হবে।
- আগুন যেহেতু ঊর্ধ্বমুখী, তাই প্রথমে যে তলায় আগুন সে তলা এবং পর্যায়ক্রমে ওপরের ও সর্বশেষে নিচের তলার লোক নামাতে হবে।
- আগুনে আক্রান্ত লোকজন উদ্ধারে অবশ্যই প্রতিবন্ধী, শিশু ও সন্তানসম্ভবা নারীকে অগ্রাধিকার দেওয়া উচিত। এরপর বৃদ্ধ লোক ও মহিলাদের উদ্ধার করতে হবে। তবে প্রতিটি জীবনই মূল্যবান।
আগুনে পুড়ে গেলে যা করবেন
- আক্রান্ত ব্যক্তিকে এমনভাবে শুইয়ে দিতে হবে, যাতে তার পুড়ে যাওয়া অংশ খোলা থাকে। তারপর জগ বা মগে ঠান্ডা পানি বা বরফ পানি এনে পোড়া জায়গায় ঢালতে হবে, যতক্ষণ না তার জ্বালা-যন্ত্রণা কমে এবং ক্ষতস্থানের গরমভাবও কমে না যায়।
- আক্রান্ত স্থানটি ফুলে যাওয়ার আগে ঘড়ি বেল্ট, আংটি (যদি থাকে), কাপড় খুলে ফেলবেন।
- পুড়ে যাওয়া অংশে যদি কাপড় লেগে থাকে তবে সেটা না টেনে বাকি কাপড় কেটে সরিয়ে ফেলুন।
- পরিষ্কার জীবাণুমুক্ত ব্যান্ডেজ বা কাপড় দিয়ে ক্ষতস্থান হালকা করে বেঁধে দিতে হবে।
- যদি মুখে কোথাও পুড়ে যায় তবে পানি দিয়ে ঠান্ডা করতে হবে যতক্ষণ না ক্ষতস্থান ঠান্ডা হয় ও ব্যথা কমে।
- মুখ ঢাকার কোনো প্রয়োজন নেই। পরিষ্কার জীবাণুমুক্ত কাপড় দিয়ে এমনভাবে মাস্ক তৈরি করতে হবে, যাতে নাক, মুখ ও চোখ খোলা রেখে মুখ ঢাকা যায়।
- পোড়া জায়গা দিয়ে শরীরের প্রয়োজনীয় পদার্থ বের হয়ে যায়, যার ফলে আক্রান্ত ব্যক্তি শকে চলে যেতে পারে। অর্থাৎ তার রক্তচাপ কমে যায়, হৃৎপিণ্ডের স্পন্দন কমে যায় এবং শ্বাস-প্রশ্বাস ব্যাহত হয়। এ অবস্থায় যত তাড়াতাড়ি সম্ভব চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যাবেন। চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী দ্রুত ব্যবস্থা নিতে হবে।
অগ্নিঝুঁকি হ্রাসে কতিপয় করণীয়
- সমন্বিত নীতিমালার ভিত্তিতে বহুতল ভবনের অনুমোদন দেওয়া।
- ভবনের নকশা সংশ্লিষ্ট বিভাগ কর্তৃক ছাড়করণের পর নির্মাণ ও অনুমতি সাপেক্ষে ব্যবহারের জন্য চালু করা।
- ভবনের পাশে যথেষ্ট পরিমাণে ফাঁকা জায়গা রাখা।
- ভবনের পাশে জলাশয় রাখা।
- সড়কে ট্রাফিক ব্যবস্থা স্বাভাবিক থাকবে কি না যাচাই সাপেক্ষে বহুতল ভবন নির্মাণের অনুমোদন দান।
- বহুতল ভবনের অভ্যন্তরে অগ্নিনির্বাপণের সব ব্যবস্থা রাখা ও নিয়মিত মহড়ার ব্যবস্থা করা।
- বস্তি এলাকার পাশে পানির ব্যবস্থা রাখা ও বস্তিবাসীকে নিয়ে নিয়মিত মহড়া করা।
- সরু রাস্তায় প্রবেশের উপযোগী ফায়ার সার্ভিস গাড়ির ব্যবস্থা করা।
- ফায়ার সার্ভিসের উন্নয়ন করা।
- স্কুল-কলেজসহ সকল সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে নিয়মিত অগ্নিনির্বাপণ মহড়া করা।
অগ্নিঝুঁকি কমাতে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীদের সঙ্গে জনসাধারণেরও অংশগ্রহণ প্রয়োজন। এ জন্য অগ্নিনির্বাপণ ও প্রতিরোধে জনসচেতনতা সৃষ্টির পাশাপাশি স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী তৈরিরও উদ্যোগ নিচ্ছে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স কর্তৃপক্ষ। কারণ, মানুষের সচেতনতা ও স্বেচ্ছাসেবকদের নিষ্ঠাকে কাজে লাগিয়ে অগ্নিকাণ্ডের মতো পরিস্থিতি দ্রুত নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব। বিগত কয়েক বছরে সংঘটিত অনেক অগ্নিকাণ্ডের ঘটনাস্থলে ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি পৌঁছার আগেই স্থানীয় জনসাধারণ আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয়েছে। জনসচেতনতার কারণেই এটা সম্ভব হয়েছে। এটি প্রমাণ করে, আগুন প্রতিরোধে জনসচেতনতা খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।
নগর ঢাকা অগ্নিঝুঁকি থেকে মুক্ত নয়। বহুতল ভবন নির্মাণে ফায়ার কোডের অনুসরণ আর মানুষের সচেতনতাই পারে অগ্নিকাণ্ড প্রতিরোধ করতে। নিয়মের প্রতি শ্রদ্ধা, আনুগত্য আমাদের জীবনের নিরাপত্তাকে বাড়িয়ে দিতে পারে অনেকখানি।
প্রকাশকাল: বন্ধন ৩৫ তম সংখ্যা, মার্চ ২০১৩