অন্দরসজ্জায় কাঠের বিকল্প

কিছুটা ব্যতিক্রমী অন্দরসাজের মাধ্যমে বাড়িকে সাজানো যায় ছবির মতো করে। নান্দনিক আসবাবপত্র, রঙ, ওয়াল ট্রিটমেন্ট, ফলস সিলিং ও আলোর নানা রকমের রহস্যময় উপস্থিতিতেই পাল্টে যেতে পারে আপনার অন্দরমহলের পুরো চেহারাটাই। ভালোলাগা, ভালোবাসায় ভরা সাধের বাড়িটি হয়ে উঠতে পারে আপনার সবচেয়ে পছন্দের স্থান। কিছু বাড়ি থাকে যেখানে ঢুকলেই মনে হয় এটার অনেক গল্প আছে। ঠিক এ রকমই একটি ফ্ল্যাটের ডিজাইন করেছেন ডিজাইন হাউস ডিসেফের ডিজাইনার ও সাউথইস্ট ইউনিভার্সিটির লেকচারার স্থপতি লতিফা সুলতানা। তার ডিজাইনে ফুটে উঠেছে আধুনিক আর নান্দনিকতার এক চমৎকার সমন্বয়। ক্রিয়েটিভিটি এবং এক্সপেরিমেন্টের মাধ্যমে কিভাবে সাজিয়েছেন এই বাড়িটিকে, পাঠকদের জন্য আজ এই শৈল্পিক অন্দরসাজের বিশেষ আলোচনা। 

বাড়ির সাজসজ্জা অনেকটাই নির্ভর করে বাড়ির জায়গার পরিসরের উপর। জায়গা যত বড়, সাজসজ্জা ততটাই সাবলীল। বাড়ির বাসিন্দার রুচি আর ব্যক্তিগত পছন্দ অপছন্দ সব সময়ই প্রতিফলিত হয় বাড়ির অন্দরসাজে। পাশাপাশি শিল্পীর হাতের ছোঁয়ায় এটি পূর্ণতা লাভ করে। ক্লায়েন্টের পছন্দমতো ডিজাইন ধারণা নিয়ে স্থপতি লতিফা সুলতানা এর সাজসজ্জার কাজটি করেছেন মনের মাধুরী মিশিয়ে। অন্দরমহলের কালার স্কিম নিয়ে নানা রকমের পরীক্ষা করে চলেছেন ইন্টেরিয়র ডিজাইনাররা প্রতিনিয়ত। মনোক্রোমেটিক রঙ স্কিম অথবা কনট্রাস্টিং নানা রকমের কালার স্কিম হরহামেশাই চোখে পড়ে। হালকা রঙের সাথে উজ্জ্বল রঙের ব্যবহার পুরো বাড়িটিকে ফুটিয়ে তুলেছে চোখ জুড়ানো ক্যানভাসের মতো, সঙ্গে অনন্য অনুষঙ্গে স্বতঃস্ফ‚র্ত আবেদন। 

এই বাড়িটির বিশেষত্ব হলো নানা রঙের উষ্ণ ও নান্দনিক উপস্থিতি। ভারসাম্য রক্ষা করতে হালকা রঙের সঙ্গে গাঢ় রঙের ব্যবহার সৃষ্টি করেছে নতুনত্ব। বাড়িটিকে বড় দেখাতে অফ হোয়াইটের তিনটি শেডের রঙ বেছে নেওয়া হয়েছে বেশিরভাগ দেয়ালের জন্য। 

শোবার ঘর

সারাদিন কর্মব্যস্ততার পর বিশ্রামের জায়গাটিই শোবার ঘর বা বেডরুম। পাঁচতারা হোটেলের আমেজ দিতে বেডরুমের সাজসজ্জায় আনা হয়েছে আভিজাত্য। প্রতিটি আসবাবপত্র তৈরিতে কম্পোজিশনের ব্যবহারকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে যাতে গতানুগতিকতা থেকে ভিন্নতা পায়। ড্রেসিং ইউনিট তৈরি করা হয়েছে স্টোরেজ ও বুকসেলফের সমন্বয়ে। ঘরটিকে বড় দেখাতে ক্যাবিনেটের পাল্লায় ব্যবহার করা হয়েছে ফুললেংথ আয়না। বাড়ির কর্তা বই পড়তে ভালোবাসেন, তাই সবখানেই চেষ্টা করা হয়েছে বই রাখার ব্যবস্থা। রঙের ক্ষেত্রে অফ হোয়াইট ও ওয়ালনাট রঙকে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। সাথে ম্যাচিং পর্দা দিয়েছে ভিন্ন আমেজ। 

বসার ঘর

বাড়িটির আসবাবপত্রের ক্ষেত্রে জ্যামিতিক ফর্মের প্রাধান্য বেশি। লিভিং রুমই বলেন বা বসার ঘরÑ অতিথি আপ্যায়নের প্রধান স্থান এটি। একটু ভিন্নতা আনতে লিভিং রুমের একটি দেয়ালে লাগানো হয়েছে স্যান্ডস্টোন এবং অন্য একটি দেয়ালে প্রাধান্য পেয়েছে বোর্ড দিয়ে তৈরি আকর্ষণীয় কম্পোজিশন। রঙের ক্ষেত্রে গাঢ় অফ হোয়াইট, হালকা অফ হোয়াইট এবং কমলা রঙকে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। ডুকো, এনামেল পেইন্ট ও পলিশের ব্যবহারের মাধ্যমে দেওয়া হয়েছে নান্দনিক রূপ। পুরো বাড়ির আসবাবপত্রের কথা মাথায় রেখে সামঞ্জস্য রক্ষা করতে এই ঘরের আসবাবপত্রের ক্ষেত্রে বেছে নেওয়া হয়েছে ওয়ালনাট কালার। ঘরটিতে যেহেতু কমলা রঙকে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে তাই সোফার আপহোলস্ট্রিতে ব্যবহার করা হয়েছে কমলা রঙের ফেব্রিকস। স্নিগ্ধতা বজায় রাখতে পর্দা নির্বাচন করা হয়েছে অফ হোয়াইট রঙের। শোপিসের শৌখিনতার প্রকাশে বোর্ড দিয়ে তৈরি করা হয়েছে সিøম ওয়াল ক্যাবিনেট, সাথে ম্যাচিং ফলস সিলিং। বিভিন্ন দেয়ালে ম্যাচিং পেইন্টিংস যোগ করেছে বাড়তি সৌন্দর্য। 

যেহেতু কমলা রঙের ছোঁয়া দেওয়া হয়েছে বসার ঘরে, তাই এর সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে ডাইনিং রুমে ঢোকার পথে বার্জারের অরেঞ্জ ইলোসন ব্যবহার করা হয়েছে। এর মূল উদ্দেশ্য হলো বিমে ব্যবহৃত রঙের রিপিটেশনের ব্যালেন্স করার জন্য। ডাইনিং রুম থেকে লিভিং রুমে যাওয়ার পথে গ্লাস পাল্লায় কাঠের পার্টিশন ব্যবহার করা হয়েছে প্রাইভেসি রক্ষার জন্য। লিভিং রুমের সাথে মিল রেখে ডাইনিং রুমের ওয়াশ এরিয়াতে ব্যবহার করা হয়েছে স্যান্ডস্টোন, সাথে সাদা ক্যাবিনেট।

বাচ্চাদের রুম

একটু ভিন্ন মাত্রা আনতে বাচ্চাদের রুমটিতে ব্যবহার করা হয়েছে সবুজ রঙ। বাচ্চারা যেহেতু অনেক বেশি প্রাণবন্ত, তাই তাদের ঘরটিকে উচ্ছ¡াসপূর্ণ রাখার জন্য এই সবুজের ছোঁয়া। ছোট ছোট সেলফ তৈরি করা হয়েছে তাদের পছন্দের অনুষঙ্গ রাখার জন্য, সাথে মডার্ন ও কাস্টমাইজ ক্যাবিনেটের ব্যবস্থা। 

লাইটিং

বাসার ওপেন স্পেস ও ভেন্টিলেটিং সিস্টেম থাকায় বাইরে থেকে যথেষ্ট আলো আসতে পারে। তাই প্রাকৃতিক আলোর সঙ্গে আর্টিফিসিয়াল আলোর সংমিশ্রণে তৈরি করা হয়েছে রহস্যময় পরিবেশ। পুরো বাসার ফলস সিলিংয়ে ব্যবহার করা হয়েছে ডিফিউজ ও স্পট লাইট। 

যেহেতু প্রতিটি বাড়ির অন্দরসাজে একটি বিশেষ থিম থাকে তাই এই বাড়িটির মূল থিম হলো খরচ বাঁচাতে কাঠের বিকল্পে বোর্ডের ব্যবহার এবং নান্দনিকতার স্পর্শ দিতে নানা রঙের খেলা। আপনিও একটি বিশেষ থিম এবং দক্ষ ইন্টেরিয়র ডিজাইনারের পরামর্শ নিয়ে নিমিষেই বদলে ফেলতে পারেন আপনার অন্দরমহল জাদুর কাঠি অথবা ম্যাজিকের মতো। 

ফারজানা গাজী

স্বত্বাধিকারী ও ডিজাইনার

ফারজানা’স ব্লিস

www.farzanasbliss.com

প্রকাশকাল: বন্ধন ২৯ তম সংখ্যা, সেপ্টেম্বর ২০১২

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top