পয়োনিষ্কাশন পরিশোধন

পয়োনিষ্কাশন পরিশোধনের মূল উদ্দেশ্য পরিবেশবান্ধব পদ্ধতিতে বর্জ্য পদার্থ নিষ্কাশন, যাতে কারও কোনো ক্ষতি না হয়ে পরিবেশ থাকে সুস্থ ও নিরাপদ। পয়োনিষ্কাশন পরিশোধন এমন একটি প্রক্রিয়া, যা পরিত্যক্ত পানি এবং শিল্পকারখানায় উৎপন্ন বর্জ্য থেকে বিশেষ প্রক্রিয়ায় দূষিত পদার্থকে সরিয়ে ফেলে। পদার্থটি হতে পারে ভৌত, রাসায়নিক কিংবা বায়োলজিক্যাল। বর্তমানে উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করে সম্ভব হচ্ছে পরিত্যক্ত বর্জ্য, যা পয়ঃপ্রণালিতে মজুদ থাকে সেগুলো দূর করে বিশুদ্ধ পানি তৈরির। এর প্রকৃষ্ট দৃষ্টান্ত সিঙ্গাপুর। এটিই একমাত্র দেশ, যেখানে উন্নত প্রযুক্তিসহযোগে দূষিত বর্জ্য মিশ্রিত পানিকে বিশুদ্ধ করা হচ্ছে বিশাল পরিসরে।

পয়োনিষ্কাশনের উৎস যত

আবাসিক কাজে ব্যবহার্য তরল বর্জ্য নর্দমা দিয়ে নিষ্কাশিত হয়। এ ছাড়া বাণিজ্যিক ও শিল্প-কারখানা থেকে অনবরত বের হচ্ছে বিষাক্ত বর্জ্য। এমন কিছু স্থান রয়েছে, যেখানে আবাসিক ভবনের পয়োনিষ্কাশিত দূষিত পানির সঙ্গে শিল্প-কারখানার বাণিজ্যিক এলাকার পরিত্যক্ত পানি যুক্ত হয়, যা পরবর্তী সময়ে নালা বেয়ে নদী বা বসতবাড়ির কাছাকাছি এসে জমা হচ্ছে। সাধারণত গৃহস্থালির কাজে ব্যবহৃত পানি আলাদা হচ্ছে দুই ভাগে। একটি গ্রে-ওয়াটার এবং অপরটি ব্লাকওয়াটার নামে পরিচিত। গ্রে-ওয়াটার ব্যবহার করা হয় মূলত বাগান এবং টয়লেট পরিষ্কারে।

ঝড়-বৃষ্টির পরে সৃষ্ট পানি মিশতে পারে পয়োনিষ্কাষিত পানির সঙ্গে। উনিশ শতকের শেষের দিকে এবং বিংশ শতাব্দীর প্রথম দিকে গ্রামাঞ্চলে যৌথ পানির ব্যবহার শুরু হয়। যৌথ পয়োনিষ্কাশিত পানি ব্যবহারে প্রয়োজন অনেক বড় আকারের পরিশোধন ব্যবস্থার। ঝড়-বৃষ্টির সময় পানির ঢল পয়োনিষ্কাশিত পানির সঙ্গে মিশে পরিশোধন ব্যবস্থার পানিকে উপচে ফেলে। যৌথ পয়োনিষ্কাশন প্রণালি থেকে স্যানেটারি পয়োনিষ্কাশন সাধারণত ছোট আকারের হয়। এটার ডিজাইন এমনভাবে করা হয় যাতে ঝড়-বৃষ্টির পানির সঙ্গে মিশে যেতে না পারে।

বৃষ্টির পানির ঢলের সঙ্গে সাধারণত মিশে মাটি, ভারী ধাতু, জৈব পদার্থ, জীবজন্তুর পরিত্যক্ত বর্জ্য, তেল ও গ্রিজ। এ সময় বৃষ্টির পানির সাহায্যে নির্দিষ্ট একটি সময়ে বর্জ্য অপসারণ করা হতো। কিন্তু পরবর্তী সময়ে ময়লা আবর্জনাযুক্ত পানি অপসারণে ফিল্টার, ভরটেক্স সেপারেটর ব্যবহার করে পানি পৃথক করার পর তলদেশে যে কঠিন পদার্থ জমত, সেটা আবার সরানো হতো বিশেষ ব্যবস্থায় শিল্প-কারখানার বর্জ্য অপসারণ পদ্ধতি অনুযায়ী।

পরিচলনব্যবস্থার সামগ্রিক দৃশ্যপট

নর্দমার মাধ্যমে নিষ্কাশিত তরল বর্জ্য পরিশোধন করা হয় খুব কাছাকাছি জায়গায়। এটি এমন একটি বিকেন্দ্রিক ব্যবস্থা, যেখানে রয়েছে সেপটিক ট্যাংক, বায়োফিল্টার অথবা অ্যায়িরোবিক পরিশোধনপ্রক্রিয়া। এগুলো সংগৃহীত হয় পাইট নেটওয়ার্কের মাধ্যমে পাম্পের সহায়তায় মিউনিসিপ্যাল পরিশোধন প্ল্যান্টে। অর্থাৎ সব বর্জ্য নেওয়া হয় এককেন্দ্রিক ব্যবস্থাপনায়। পয়োনিষ্কাশনব্যবস্থা পরিশোধনের পদ্ধতি সচরাচর স্থানীয় পর্যায়ে সম্পন্ন হয়। তবে শিল্প-কারখানার বর্জ্য পরিশোধনে করা হয় বিশেষ ব্যবস্থা।

পয়োনিষ্কাশন পরিশোধনব্যবস্থা পরিচালিত হয় মূলত তিনটি ধাপে-

প্রাথমিক পরিশোধনে সাময়িকভাবে পয়োনিষ্কাশিত বর্জ্য বেসিনে রাখা হয়, যেখানে অপেক্ষাকৃত ভারী উপাদান নিচে জমা হয় আর তেল, গ্রিজ বা হালকা উপাদানগুলো ওপরে ভাসমান থাকে। যে বর্জ্যগুলো নিচে জমে থাকে এগুলোসহ ভাসমান উপাদানকে এখান থেকে সরিয়ে ফেলে অবশিষ্ট তরল মিশ্রিত বর্জ্যকে দ্বিতীয় ধাপে পরিশোধনের জন্য পাঠানো হয়।

দ্বিতীয় ধাপের পরিশোধন প্রক্রিয়ায় সব ধরনের মিশ্রিত ও ভাসমান বায়োলজিক্যাল বর্জ্য পদার্থ অপসারণ করা হয়। দ্বিতীয় স্তরের পরিশোধনে মাইক্রো অর্গানিজমকে নিয়ম অনুযায়ী সরিয়ে ফেলা হয়। মাইক্রো অর্গানিজমবিহীন অবশিষ্ট পরিত্যক্ত পানিকে পরিশোধনের তৃতীয় ধাপে পাঠানো হয়।

তৃতীয় ধাপের পরিশোধনে মূলত প্রথম ধাপে এবং দ্বিতীয় ধাপে যা পরিশোধন করা যায়নি, শুধু সেই বর্জ্য মিশ্রণকে সরিয়ে পরিষ্কার পানি বের করার ব্যবস্থা করা হয়।

প্রাক-পরিশোধন

পয়োনিষ্কাশনব্যবস্থায় বিভিন্ন স্থান থেকে আসা শক্ত ও ভারী বর্জ্য পরিত্যক্ত দ্রবণের যে  উপাদান থাকে, প্রথমে তা সরিয়ে নেওয়া হয়। কেননা যদি এসব ভারী বস্তু বা শক্ত বর্জ্য সরিয়ে ফেলা না হয় তবে তা চলন্ত অবস্থায় মেশিনকে বিকল করে দিতে পারে। তা ছাড়া এতে পাইপলাইনে চলাচল ব্যাহত হয়ে লাইন অকেজো হওয়ার আশঙ্কা থাকে।

স্ক্রিকিং 

পয়োনিষ্কাশনে সৃষ্ট বর্জ্য মিশ্রিত পানি থেকে প্রথমে বড় ধরনের পরিত্যক্ত দ্রব্য যেমন- টিনের ক্যান, র‍্যাগ, কাঠি, প্লাস্টিকের প্যাকেট ইত্যাদি সরিয়ে ফেলা হয় বড় বড় খোপবিশিষ্ট ছাঁকনির সাহায্যে। ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় এ ধরনের কাজ করা হয় স্বয়ংক্রিয় যান্ত্রিক পদ্ধতিতে। আবার অপেক্ষাকৃত কম ঘনত্বপূর্ণ স্থানে রয়েছে ছোট প্ল্যান্ট অথবা আধা স্বয়ংক্রিয় যান্ত্রিক ব্যবস্থা। চিরুনির মতো দাঁতবিশিষ্ট উপকরণে স্রোতের মধ্যে ভেসে আসা সব পরিত্যক্ত দ্রব্যগুলো সরানো হয়। যদি এই পদ্ধতিতে বেশির ভাগ বর্জ্য পদার্থ সরিয়ে ফেলা না হয় তাহলে এসব চলমান বর্জ্য পরিশোধন প্ল্যান্টের বিভিন্ন যন্ত্রাংশে সমস্যার সৃষ্টি করে প্ল্যান্ট বন্ধ করে দেয়।

পাথর, বালু, কাঁকরের মতো ক্ষুদ্র কণা অপসারণ

প্রাক-পরিশোধনের মধ্যে বালু বা কাঁকর চ্যানেল থাকতে পারে। পয়োনিষ্কাশন বর্জ্যরে গতিবেগ নিয়ন্ত্রিত হয় বালু, গ্রিট বা টুকরো কাচের দ্বারা, যা উপাদানসমূহকে জমে থাকতে সহায়তা করে। ছোট স্যানেটারি স্যুয়ারেজ সিস্টেমে পাথর, কাঁকর ইত্যাদির জন্য চেম্বারের প্রয়োজন না হলেও বড় আকারের প্ল্যান্টে অবশ্যই এসব অপসারণ করা প্রয়োজন। ক্ষুদ্র কণা বা কাঁকর অপসারণের জন্য সাধারণত তিন ধরনের চেম্বার থাকে- হরিজেন্টাল চেম্বার, অ্যারিয়েটেড গ্রিট চেম্বার এবং ভরটেক্স গ্রিট চেম্বার।

ফ্লো-ইকুলাইজার

দ্বিতীয় স্তরের পরিশোধনের জন্য সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন ক্ল্যারিফায়ার। এটা নিশ্চিত করে বর্জ্য মিশ্রণের গতিবেগ যাতে সমমাত্রায় থাকে। ইকুলাইজেশন বেসিন ব্যবহৃত হয় সাময়িক স্টোরেজের জন্য যখন ভেজা দ্রব্যগুলোর গতিবেগ বেশি থাকে। বেসিনগুলোর প্রয়োজন সাময়িক ব্যবহারের জন্য অর্থাৎ যখন প্ল্যান্টের রক্ষণাবেক্ষণের কাজ চলতে থাকে। ফ্লোইকুলাইজেশন বেসিনের বহির্গমনের রাস্তা থাকে অনেক। কারণ, সেখানে পরিষ্কার করার জন্য রয়েছে অনেক বাইপাস লাইন। এতে রয়েছে অ্যারিয়েটর ব্যবস্থাও।

পয়োপরিশোধন প্ল্যান্ট

চর্বি-জাতীয় পদার্থ এবং গ্রিজ অপসারণ 

বড় প্ল্যান্টে নর্দমার মাধ্যমে নিষ্কাশিত তরল চর্বি এবং গ্রিজ অপসারণে তা প্রেরণ করা হয় বড় ট্যাংকে। সেখান থেকে ভাসমান চর্বি-জাতীয় পদার্থগুলো স্কিমারের দ্বারা অপসারণ করা হয়। ট্যাংকের নিচে ক্লেয়ার দ্বারা বাতাস দেওয়া হয়, যাতে ভাসমান বর্জ্য থেকে চর্বি সহজেই আলাদা করা হয়। অনেক প্ল্যান্টে প্রাথমিকভাবে ক্লারিফায়ারসহ যান্ত্রিক কাজ করে এমন সারফেস স্কিমার ব্যবহার করা হয় চর্বি এবং গ্রিজ সরিয়ে নিতে।

প্রাথমিক পরিশোধন

প্রাথমিক থিতানো স্তরে পয়োনিষ্কাশন তরল বড় আকারের ট্যাংকে প্রেরণ করে, যাকে সাধারণত প্রাথমিক থিতানো বেসিন, প্রাথমিক থিতানো ট্যাংক অথবা প্রাথমিক থিতানো ক্লারিফায়ার নামে অভিহিত করা হয়। ট্যাংকগুলো ব্যবহার করা হয়, যাতে নোংরা ঘন তৈল বা চর্বি-জাতীয় পদার্থ কিছু সময়ের জন্য পরিবর্তনহীন অবস্থায় থাকে। পরবর্তী সময়ে সেখান থেকে গ্রিজ ও চর্বি স্কিমারের সাহায্যে তুলে নেওয়া হয়। প্রাথমিক সেটেলিং ট্যাংকে যান্ত্রিক স্ক্রেপার (scraper)-এর সাহায্যে বিরতিহীন সংগ্রহ হয় ঘন তেল ও চর্বি, যা হোপারের মাধ্যমে কোনো ট্যাংকে জমা করা হয়। পরবর্তী সময়ে তা পাম্প করে পরিশোধন ব্যবস্থাপনায় পাঠানো হয়।

দ্বিতীয় ধাপে পরিশোধন

দ্বিতীয় ধাপে পরিশোধনের জন্য এমনভাবে ডিজাইন করা হয়, যা মানুষের পরিত্যক্ত খাদ্য, সাবান এবং ডিটারজেন্ট থেকে তৈরি হয়। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে মিউনিসিপ্যাল প্ল্যান্ট দ্বারাই অ্যারোবিক বায়োলজিক্যাল পদ্ধতিতে এ ধরনের পরিশোধন করা হয়।

দ্বিতীয় ধাপে পরিশোধনের ক্ষেত্রে রয়েছে দুইটি ভাগ-

জমে থাকার জন্য পয়োনিষ্কাশন বর্জ্য

জমে থাকা বর্জ্য অপসারণের জন্য বিভিন্ন পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়। এর মধ্যে ট্রিকলিং ফিল্টার, বায়োটাওয়ার এবং রোটেটিং বায়োলজিক্যাল কন্ট্রাক্টরকে  অন্তর্ভুক্ত। এ ধরনের বর্জ্য উৎপন্ন হয় পরিবেশ থেকে, যা পয়োনিষ্কাশন বর্জ্যরে উপরিভাগে থাকে।

ভাসমান অবস্থায় জমে থাকা বর্জ্য

এটা সাধারণত সক্রিয় নর্দমার আবর্জনাতে প্রাণীদেহের বর্জ্যে পাওয়া যায়। সনাতন পদ্ধতিতেই ফিল্টারের মাধ্যমে মূলত সক্রিয় অবস্থায় বর্জ্যসহ অন্যান্য জৈব পদার্থ পরিশোধন করা হয়। এটা দ্বিতীয় ধাপের পরিশোধন ব্যবস্থার মতো যেখানে ফিল্টার ভর্তি থাকে ফিল্টার উপাদানে, যার ওপর পরিত্যক্ত পানি ফেলা হয়। যদি বড় ধরনের অবকাঠামোতে এমন ব্যবস্থা, তবে সেখানে ক্লোয়ার ব্যবহার করা হয়। এভাবে যে পানিটা পাওয়া যায় তা সনাতন পদ্ধতিতে সৃষ্ট পরিশোধন থেকে অনেক বেশি সমৃদ্ধ।

ফিল্টারের মাধ্যমে আসলে কম পরিমাণ ভাসমান জৈব পদার্থ সরানো সম্ভব। ফিল্টারের বর্জ্যগুলো পরবর্তী সময়ে সেডিমেনটেশন ট্যাংকে পাঠানো হয়, যাকে দ্বিতীয় ক্ল্যারিফায়ার বা সেটেলিং ট্যাংক বলা হয়।

অ্যাকটিভেটেড স্লাডজ

এ পদ্ধতি মূলত পদার্থকে একটি বিশেষ উপাদান তৈরিতে বাধ্য করে, যা আদর্শ পরিবেশ সৃষ্টি করতে পারে। এখানে অ্যামোনিয়া থেকে নাইট্রাইট এবং নাইট্রেট মূলত নাইট্রোজেন গ্যাসে পরিণত হয়।

অ্যায়িরোবিক গ্রানুলার স্লাডজ

অ্যাকটিভেটেড স্লাডজ পদ্ধতির পর এটা অ্যায়িরোবিক গ্রানুলার পদ্ধতিতে পাঠানো হয় অ্যাকটিভেটেড স্লাডজ সুবিধার জন্য। যেমন- বেশি পরিমাণ বায়োমাস নিয়ন্ত্রণে কাজ করবে অতিরিক্ত স্লাডজ যা ভালোভাবে থিতানোতে দারুন কার্য়করী।

সারফেস অ্যারিয়েটেড বেসিন (লেগুন)

বেশির ভাগ বায়োলজিক্যাল অক্সিডেশন পদ্ধতি শিল্প-কারখানার পরিত্যক্ত পানি পরিশোধনের জন্য ব্যবহৃত হয়, যেখানে অক্সিজেন এবং মাইক্রোবায়াল কার্যক্রম সক্রিয় থাকে। সারফেস অ্যারিয়েটেড বেসিনে শতকরা ৮০ থেকে ৯০ ভাগ বায়োলজিক্যাল অক্সিডেশন সরানো হয় ১ থেকে ১০ দিনের মধ্যে। মোটরচালিত অ্যারিয়েটর পরিত্যক্ত পানির ওপর ভাসমান অবস্থায় থাকে।

অ্যারিয়েট বেসিনে অ্যারিয়েটরের দুইটি কাজ করে। একটি বায়োলজিক্যাল অক্সিডেশনের বিক্রিয়ার জন্য যে পরিমাণ বাতাসের প্রয়োজন তা সরবরাহ করা যাতে ভালোভাবে মিশ্রণটি মিশতে পারে। অপরটি অক্সিজেন, পরিত্যক্ত পানি এবং মাইক্রোবেসের সংস্পর্শে আসা। অ্যারিয়েটেড বেসিনে একই পারফরম্যান্স লেবেল পাওয়া যায় না অ্যাকটিভেটেড স্লাডজ ইউনিটের মতো। বায়োলজিক্যাল অক্সিডেশন প্রসেস তাপমাত্রার ক্ষেত্রে খুব স্পর্শকাতর এবং তা ০ সে. ও ৪০ সে. মধ্যে রাখা হয়। বায়োলজিক্যাল বিক্রিয়া বাড়ে তাপমাত্রা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে। বেশির ভাগ সারফেস অ্যারিয়েটেড ভেসেলে পরিচালিত হয় ৪ সে. এবং ৩২ সে.-এর মধ্যে।

তৃতীয় স্তরের পরিশোধন

তৃতীয় ধাপের পরিশোধনে দ্বিতীয় স্তরের বর্জ্য পদার্থ নিয়ে আরও বেশি পরিসরে পরিশোধন করা হয়, যা সর্বশেষে সমুদ্র, নদী, হ্রদ বা জলাধারে ফেলে দেওয়া হয়। যেকোনো পরিশোধন প্ল্যান্টে তৃতীয় স্তরের পরিশোধন কাজটি করা হয়। কারণ, যদি সেটাতে কীটনাশক জাতীয় কিছু থাকে তবে তা দূরীভূত হবে। এটাই কিন্তু সর্বশেষ পদ্ধতি। তাই এটাকে ইফ্লুয়েন্ট পলিসিং বলা হয়।

ফিল্টার 

বালু ছাঁকনির কাজ করে। বালু দ্বারা ছাঁকনির পর বেশির ভাগ অবশিষ্টাংশ, যা ভাসমান অবস্থায় থাকে তা ছাঁকা হয়ে যায়। অ্যাকটিভেটেড কার্বন ব্যবহার করে ফিল্টার করলে বেশির ভাগ বিষাক্ত পদার্থের অবশিষ্টাংশ সরানো যায়।

লেগুনিং

লেগুনিং পদ্ধতিতে পুকুরের মতো বিরাট এলাকাজুড়ে সব ধরনের বর্জ্যরে অবশিষ্টাংশ ফেলা ও থিতানো হয়।লেগুনগুলো উচ্চমাত্রায় বায়ুজীবী এবং মাইক্রোফেইটস (microphetes) সম্পৃক্ত। ছোট আকারের ফিল্টার যেমন ডেপনিয়া (daphnia) এবং স্পাইসিস অব রোটিফিরা (rotifera) বিশেষভাবে সাহায্য করে পরিশোধনে বিশেষত ছোট আকারের মসৃণ কণা অপসারণে।

সংক্রামক রোগ-জীবাণু নাশকরণ

পানিবাহিত সংক্রামক রোগ-জীবাণু কমাতে পরিশোধিত পানির প্রয়োজন। কারণ যে পানি পরিত্যক্ত হিসেবে ফেলে দেওয়া হয়, পরবর্তীতে সেই পানি পান করা, গোসল করা, এমনকি জমিতে ব্যবহার করা হয়। তাই এটার পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা নির্ভর করে পরিত্যক্ত পানি পরিশোধনের ওপর। রোগ-জীবাণু নাশকরণ নির্ভর করে কী পরিমাণ ধ্বংসকারী কেমিকেল প্রয়োগ করা হয়েছে, কী ধরনের রোগ-জীবাণু এবং আবহাওয়ার গতি প্রকৃতির ওপর। সাধারণত যেসব কার্যকরণে রোগ-জীবাণুনাশক ব্যবহার করা হয়। তার মধ্যে ওজোন (O3), ক্লোরিন, আলট্রাভায়োলেট রে, সোডিয়াম হাইপোক্লোরাইট প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য। কোরামিন খাওয়ার পানিতে ব্যবহার করা হয় বিভিন্ন স্তরে ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ অতিক্রমের পর পরিশোধিত পানি রিসাইকেলের জন্য, পরবর্তীতে যা কৃষিকাজে ব্যবহার করা হয়। এই পানি আবার পরিশোধনের মাধ্যমে মানুষ তাঁর দৈনন্দিন কাজে ব্যবহার্য করতে পারে।

গন্ধ নিয়ন্ত্রণ

পয়োনিষ্কাশন পরিশোধনের সময় একধরনের গন্ধ পাওয়া যায়, যা থেকে ধারণা পাওয়া যায় সেটি বীজ দূষণমূলক কি না। আগে পয়োনিষ্কাশন বর্জ্যরে পরিশোধনের সময় নোংরা দূষিত গন্ধসহ হাইড্রোজেন সালফাইড থাকত। বড় ধরনের এ জাতীয় প্রসেস প্ল্যান্ট গ্রামাঞ্চলে বেশি দেখা যেত, যেখানে গন্ধ দূর করতে কার্বন রি-অ্যাকটর, বায়োস্লিম, সামান্য পরিমাণ ক্লোরিন ডোজিং ও তরল বর্জ্য ঘূর্ণায়নের মাধ্যমে বায়োলজিক্যালি করা হতো এবং ব্যবহৃত হতো মেটাবোলাইজ (metabolige) গ্যাস। গন্ধ নিয়ন্ত্রণের অন্যান্য পদ্ধতি মধ্যে রয়েছে আয়রন লবণ, হাইড্রোজেন পার-অক্সাইড, ক্যালসিয়াম নাইট্রেট ইত্যাদি।

উন্নত দেশে পয়োনিষ্কাশন পদ্ধতিতে পানি পরিশোধন 

বিশ্বে খুব কমসংখ্যক জাযগায় দেখা যায় পরিত্যক্ত পানি জমা করে সেই পানিকে পরিশোধন করা হচ্ছে। অনেক উন্নত দেশে গৃহ ও শিল্প-কারখানায় পরিত্যক্ত পানি পরিশোধন ছাড়াই বা প্রাথমিক পরিশোধন করার পর ফেলে দেয়া হয়। ল্যাটিন আমেরিকায় প্রায় ১৫% জমানো পরিত্যক্ত পানি পরিশোধন প্ল্যান্টের সাহায্যে পরিশোধন করা হয়। ভেনিজুয়েলায় প্রায় ৯৭ শতাংশ পরিত্যক্ত পয়োনিষ্কাশন পানি কোনো পরিশোধন ছাড়াই ফেলে দেওয়া হয়। মধ্যপ্রাচ্যে ইরানের রাজধানী তেহরানে জনসংখ্যার বেশির ভাগই সম্পূর্ণ পরিশোধন ছাড়াই শহরের ভূ-অভ্যন্তরে পানির আঁধারে সরাসরি ফেলে দেয়। ইরানের তৃতীয় বৃহত্তম শহর ইসফাহামে প্রায় পয়োনিষ্কাশনের বর্জ্যরে পরিশোধন প্রায় ১০০ বছর আগে থেকেই শুরু হয়েছিল। ইসরায়েলে ৫০ শতাংশ কৃষিকাজে ব্যবহৃত পানি ব্যবহার করা হয় পয়োনিষ্কাষিত পানি পুনরুদ্ধার করে। ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা রয়েছে সেখানে পরিশোধিত পানির পরিমাণ বাড়ানো। আর এভাবে ক্রমেই বিশ্বে বাড়ছে পরিশোধিত পানির চাহিদা।

প্রকৌশলী মহিউদ্দীন আহমেদ

তথ্যসূত্র : ইন্টারনেট

প্রকাশকাল: বন্ধন ৪৭ তম সংখ্যা, মা‍র্চ ২০১৪

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top