শাহ নিয়ামত উল্লাহ ওয়ালী মসজিদ

শাহ নিয়ামত উল্লাহ ওয়ালী মসজিদ মোগল আমলে নির্মত মসজিদগুলোর মধ্যে অন্যতম। ধারণা করা হয়, এটি মোগল আমলে তৈরি হওয়া সবচেয়ে প্রাচীন মসজিদ। এই মসজিদটি বাংলাদেশের প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের তালিকাভুক্ত গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা। রাজশাহীর চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ থানার অধীনে অবস্থিত এই মসজিদটি দেখতে বেশ দৃষ্টিনন্দন। ছোট সোনা মসজিদ থেকে এই মসজিদটি মাত্র আধা কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। আর এই মসজিদে আছে তাহাখানা কমপ্লেক্স এবং সঙ্গে আছে শাহ নিয়ামত উল্লাহ ওয়ালীর দরগা, কবরস্থান ইত্যাদি।

এই মসজিদে গম্বুজ আছে তিনটি। নামাজের জন্য কক্ষ আছে একটি। মোগল আমলে তাহাখানা বলে একটা ব্যাপার ছিল। তখন শাসকেরা তাঁদের শাসন করা অঞ্চলে যখন আসতেন, তখন বিশ্রামের জন্য যে প্যালেসগুলো বা যে বাড়িগুলো ব্যবহার নির্মাণ করতেন, সেগুলোকে বলা হতো তাহাখানা। তাহাখানার পাশেই মসজিদ ও শাহ নিয়ামত উল্লাহ উয়ালীর সমাধি। এটা থেকে ধারণা করা যায়, মোগল সুলতান শাহ সুজার তত্ত্বাবধানে মসজিদটি তৈরি হয়েছিল। তবে এই সম্পর্কে তেমন কোনো প্রামাণ্য দলিল হাতে পাওয়া যায় না। সাধারণত মসজিদের গায়ে প্রামাণ্য দলিল হিসেবে শিলালিপি থাকে। শিলালিপিতে ইতিহাস অঙ্কিত থাকে। কিন্তু এই মসজিদটিতে তেমন কোনো শিলালিপি পাওয়া যায়নি। শাহ সুজা ছিলেন বাংলার সুবাদার। তিনি মোগল সম্রাট শাহজাহানের দ্বিতীয় সন্তান। শাহ সুজা ১৬৪৯ থেকে ১৬৬০ পর্যন্ত বাংলা শাসন করেছিলেন। তিনি বেশ স্থাপত্য অনুরাগী শাসক ছিলেন, যাঁর সময়কালে ঢাকা এবং আশপাশে বেশকিছু স্থাপনা নির্মাণ করা হয়েছিল বলে প্রমাণ পাওয়া গিয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বিখ্যাত স্থাপনাটা আমাদের সবার চেনা-জানা ‘বড় কাটরা’। এ ছাড়া লালবাগ মসজিদ, ধানমন্ডির শাহি ঈদগাহ তৈরি করা হয়েছিল সেই আমলে। তৈরি করা হয়েছিল ‘বড় কাটরা’, ‘হোসেনী দালান’, ‘চুরিহাটা মসজিদ’ ইত্যাদি। কুমিল্লার শাহ সুজা মসজিদ ও একই সময়েই তৈরি করা হয়েছিল।

শাহ নিয়ামত উল্লাহ ওয়ালী মসজিদ ও সংলগ্ন প্রাঙ্গণ। ছবি:বিডিইনবাউন্ড

অবকাঠামোগতভাবে শাহ নিয়ামত উল্লাহ ওয়ালী মসজিদটি একটি আয়তাকার ভবন, যা তিনটি গম্বুজবিশিষ্ট। এর সামনের দিকে তিনটি দরজা রয়েছে। মাঝের দরজাটি তুলনামূলক বড়, ঠিক যেমন মোগল স্থাপনাগুলোতে দেখা যায়। শাহ নিয়ামত উল্লাহ মাজারটি এই স্থাপনার সবচেয়ে প্রাচীন অংশ। পুরো সমাধিক্ষেত্র এবং মসজিদটি উঁচু ভিতের ওপর অবস্থিত। আসলে এই সমাধিক্ষেত্রটি একটি বর্গাকৃতি গম্বুজবিশিষ্ট ইমারত। এর প্রতিটা দিক ৪৯ ফুট করে। মাঝখানের কক্ষটি ২১ বর্গফুট এলাকাজুড়ে অবস্থিত। মূল কক্ষের চারদিকে ঘিরে রয়েছে টানা বারান্দা। মূল মাজার কক্ষের চারদিকে একটি করে দরজা রয়েছে। বর্তমানে দক্ষিণ দিকের দরজাটি ছাড়া বাকিগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। মূলত সমাধিক্ষেত্রটির গম্বুজটি চার দেয়াল এবং স্ল্যাবের ওপর বসানো। এই সমাধিক্ষেত্রের পূর্ব-পশ্চিম-দক্ষিণে তিনটি খিলানযুক্ত মোট ১২টি দরজা রয়েছে। এ জন্য এর নাম ঐতিহাসিক ক্যানিংহাম দিয়েছিলেন ১২ দুয়ারী। প্রতি দেয়ালে তিনটি করে প্রবেশপথ ছিল বলে মাজার শরিফকে বারোদুয়ারিও বলা হয়। এই এলাকায় গেলে হুট করে মনে হয় চলে এসেছি উত্তর প্রদেশ অথবা ভারতের দিল্লির কোনো অঞ্চলে। হালকা গোলাপি ভবনের সৌন্দর্যে হারিয়ে যায় দুই চোখ। কী সুন্দর সেই আমলের এই স্থাপনা, এটা না দেখে বুঝতে পারাও কঠিন।

কুমিল্লার বিখ্যাত শাহ সুজা মসজিদ
মোগলদের ঐতিহ্য বহনকারী ইমারতগুলোর মধ্যে কুমিল্লাহ শাহ সুজা মসজিদ নিঃসন্দেহে সবার ওপরের সারিতে স্থান নেবে। কুমিল্লা জেলার মোগলটুলি এলাকার শাহ সুজার মসজিদ একটা গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা, যা মোগল যুগের ঐতিহ্যকে ধারণ করে। মোগলদের শাসনকালীন সম্রাট শাহজাহানের দ্বিতীয় পুত্র সম্রাট সুজা ক্ষমতায় ছিলেন ১৬৩৯ থেকে ১৬৬০

বিজয়া চৌধুরী

প্রকাশকাল: বন্ধন ১৬৫ তম সংখ্যা, মে ২০২৪

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top