কদম মোবারক মসজিদটি চট্টগ্রামের সবচেয়ে প্রাচীন মসজিদগুলোর একটি। মোগল সম্রাট মোহাম্মদ শাহের শাসনামলে ফৌজদার মোহাম্মদ ইয়াসিন খান ১৭২৩ খ্রি. এই মসজিদটি নির্মাণ করেন। মসজিদটির নির্মাণকাজ শুরু হয় ১৭১৯ সালে। তিনি নিজের খরচে চট্টগ্রাম শহরে এই মসজিদ নির্মাণ করেন। প্রিয় নবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর একজোড়া পবিত্র পদচিহ্নবিশিষ্ট শিলাখন্ড মদিনা থেকে এবং আউলিয়াকুলের শিরোমণি হজরত আব্দুল কাদের জিলানির একজোড়া পবিত্র পদচিহ্ন বর্তমান ইরাকের রাজধানী থেকে সংগ্রহ করে এই মসজিদে স্থাপন করেন। এমন মূল্যবান নিদর্শনের কারণে এই মসজিদটি খুব জনপ্রিয় এবং আকর্ষণীয়। দূর-দূরান্ত থেকে শুধু এই পদচিহ্ন দেখার উদ্দেশ্যে এখানে হাজার হাজার দর্শনার্থী জমায়েত হন। ধর্মপ্রাণ মুসলিমরা আসেন প্রিয় নবীর পায়ের চিহ্ন দেখতে। অনেকে আসেন নবীর পা ধোয়া পানি মাথায় মেখে; খেয়ে নিজের পাপ, রোগমুক্তিসহ মনের ইচ্ছা পূরণের জন্য। এ ছাড়া, সেখানে রয়েছে আব্দুল কাদের জিলানির কদম মোবারকের ফলক। দুজন মহান ব্যক্তির কদম মোবারকের ফলক এখানে থাকায় মসজিদটির নামকরণ করা হয় ‘কদম মোবারক জামে মসজিদ’।
মসজিদের প্রবেশদ্বারটি বেশ চোখে পড়ার মতো সুন্দর। পাশে বড় দুটি থামের দ্বারা ভর দিয়ে খুব সুন্দর করে কারুকার্য করা প্রবেশদ্বারটি। মাথার ওপরে মাঝখানে চারটি ছোট গম্বুজ ও দুই পাশে দুটি ছোট মিনার রয়েছে। এবং প্রবেশদ্বারের দুই পাশে ছোট দেয়াল দিয়ে পরিবেষ্টন করা হয়েছে। রাস্তা থেকে ওপরের দিকে সিঁড়ির ব্যবস্থা করা হয়েছে। এই মসজিদের আকৃতি মূলত আয়তাকার। ছাদে তিনটি গম্বুজ রয়েছে। মাঝখানের গম্বুজ যথারীতি বড় এবং পাশের যে দুটি গম্বুজ রয়েছে, সেগুলো অপেক্ষাকৃত ছোট। মসজিদটির চার কোনায় চারটি অষ্টভুজাকৃতির তিনটি স্তরবিশিষ্ট মিনার স্থাপিত। এ মিনারগুলোর প্রতিটির মাথায় আছে আরও কিছু ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র গম্বুজ ও একদম শীর্ষে গোলাকার শীর্ষালংকরণ (finial)। অন্য সব মোগল মসজিদের মতোই আয়তাকার এই মসজিদের কক্ষের উত্তর ও দক্ষিণ দিকে রয়েছে একটি করে পার্শ্বকক্ষ। মূল নামাজখানার ছাদে আছে তিনটি গম্বুজ এবং এর পার্শ্বকক্ষ দুটি খিলান ছাদ দিয়ে ঢাকা। মসজিদের বাইরের দিকের মাপ হচ্ছে ১৩ মি. × ৭.৪২ মি.। এর সঙ্গে বাড়তি পার্শ্বকক্ষ দুটির দৈর্ঘ্য ২৩.১৬ মিটার। মসজিদের পূর্ব দিকে এক বড় মাঠ ছিল।

মসজিদের বাইরের দেয়াল অলংকৃত হয়েছে কুলুঙ্গির মোটিফে। এক সারিতে সাজানো ও দুটি অষ্টভুজাকৃতির বুরুজবেষ্টিত কদম মোবারক মসজিদের সম্মুখভাগ দেখতে খুবই সুন্দর। মূল মসজিদগৃহের দরজা মোট পাঁচটি। তিনটি দরজা সামনের দেয়ালে ও একটি করে দরজা পার্শ্বকক্ষের সঙ্গে সংযুক্ত। এই দরজাগুলো দিয়ে পাশের কক্ষগুলোতেও প্রবেশ করা যায়। সঙ্গে জানালাও আছে। যথারীতি মিহরাবের অবস্থান পশ্চিম দেয়ালে। মসজিদের ভেতরের দেয়ালগুলো আয়তাকার নানারকম দৈর্ঘ্যরে খোপ বা প্যানেল ও কুলুঙ্গি বা তাক দিয়ে অলংকৃত। মসজিদ তিনটি অংশে বিভক্ত এরং পশ্চিম দেয়ালের মাঝামাঝি একটি কেন্দ্রীয় মিহরাব রয়েছে। বর্তমানে মসজিদ ঘিরে তৈরি হয়েছে মাদ্রাসা, মক্তব, ছাত্রাবাস ইত্যাদি। ফলে এর আশপাশে অনেক আধুনিক স্থাপনা তৈরি হয়ে মূল মসজিদ ঢাকা পড়ে গেছে।
ব্রিটিশ আমলে আন্দরকিল্লা শাহি জামে মসজিদকে ব্রিটিশেরা অস্ত্রাগার হিসেবে ব্যবহার করত। ফলে সেই মসজিদে নামাজ আদায় করা যেত না। এ জন্য এই মসজিদে সবাই নামাজ আদায় করতে আসত। মসজিদটি যখন বানানো হয় তখন ৫ কাতারে মোট ১০০ জন মুসল্লি নামাজ আদায় করতে পারতেন। বর্তমানে নামাজের জন্য নতুন ভবন তৈরি হয়েছে।
– বিজয়া চৌধুরী
প্রকাশকাল: বন্ধন ১৬৭ তম সংখ্যা, জুলাই ২০২৪