সময়ের প্রয়োজনে জিরো কার্বন স্থাপনা

জিরো কার্বনকে কীভাবে সংজ্ঞায়িত করা হবে তা নিয়ে রয়েছে নানা মতভেদ, রয়েছে অনেক সংজ্ঞায়ন। কিন্তু খুব সহজভাবে একে চিনতে নিচের ডায়াগ্রামই যথেষ্ট-

এই গ্রাফটি জিরো কার্বন স্থাপনার ক্ষেত্রে কীভাবে বাস্তবায়িত করা যায় কিংবা লক্ষ্যে পৌঁছানো যায়, সেটি প্রকাশ করে।

জিরো কার্বন স্থাপনার ক্ষেত্রে সাধারণত তিনটি বিষয়কে অধিক গুরুত্ব দেওয়া হয়। এগুলো হলো-

১। Fabric Performance স্থাপনার আচ্ছাদন যেমন পার্শ্বদেয়াল, ছাদ, মেঝে ইত্যাদি Energy Standard মেনে চলছে কি না এবং U-Value নিশ্চিত করছে কি না।

২। Low Carbon Heat and Power Technologies (উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন বয়লার, ফটোভোলটিক প্যানেল, সোলার হট ওয়াটার ইত্যাদির ব্যবহার নিশ্চিতকরণ।

৩। কার্বন নির্গমন (Carbon emission) কমানো এবং অতিরিক্ত শক্তির উৎপাদন ও পরবর্তী সময়ে ব্যবহার নিশ্চিতকরণ।

অনেক বড় স্থাপনার ক্ষেত্রে যখন স্থাপনার আচ্ছাদন, Fabric এবং low Carbon Energy Technologies প্রয়োজনীয় শক্তির অপচয় রোধ করতে পারে না, তখন সাধারণত মধ্য থেকে ওপরের স্তরে অবস্থান করে।

Allowable Solution-এর মাধ্যমে শক্তির অপচয় কমানো সম্ভব। তবে সে ক্ষেত্রে একটি কার্বন ফান্ড করা হয়ে থাকে, যা সাধারণত ডেভেলপার কিংবা স্থানীয় সরকার করে থাকে, যার ফলে সামগ্রিক অর্থনৈতিক উন্নয়ন সম্ভব। এগুলোর মধ্যে রয়েছে-

১। হিট নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণ (Heat Network Extension)

২। ছোট পরিসরের হাইড্রা (Hydro)

৩। বায়ো ডাইজেশন প্লান্ট 

৪। এলইডি লাইটিং

৫। CHP Plant-এর উন্নত সংস্করণ

৬। Wind Power

৭। বিদ্যুৎচালিত যানবাহন এবং চার্জিংস্টেশন।

এই সাতটি বিষয় সাধারণত বড় বড় শিল্পকারখানা, যেখানে শক্তির অপচয় বেশি হয়, সেখানে বিদ্যমান থাকলে অপচয় কম হয়। এখানে জিরো কার্বন স্থাপনার কয়েকটি উদাহরণ লক্ষ করলে বিষয়টি সম্পর্কে আরও ভালোভাবে বোঝা যাবে।

স্ট্যান্ডিংস কোট‍‍, হরসাম

উদাহরণ : ১ (Abbey Walk, Storrington) মোট পরিবারের সংখ্যা-১২। সে ক্ষেত্রে ক্ষেত্রফল ৮০-১০৫ বর্গমিটার। স্থাপনার আচ্ছাদনের নির্মাণ উপকরণ-

কাঠের নির্মিত স্থাপনা

বাতাস চলাচলে Air Light করা।

সর্বদিক থেকে এমনকি ভেতরের বায়ুপ্রবাহের তাপমাত্রা একটি স্থিতিশীল অবস্থায় রাখার জন্য Service Pipe লাইন সু থেকেও খুব সতর্কতার সঙ্গে ব্যবহার করা হয়েছে। যেমন- বাইরের ঠান্ডা বাতাস কোনো ছিদ্র পথে ভেতরে প্রবেশ করতে না পারে। এবং Fabric Specification Standard থেকে এর পরীক্ষিত মান কিছুটা ওপরে, যা স্থাপনা Monitoring-এর মাধ্যমে পরিমাপ করা হয়েছে। সেখানে বহিঃস্থ দেয়ালের U value = 0.15w/m2k ছাদ এবং মেঝের U value = 0.10w/m2k Thermal bridging Y value = 0.06 air পারমিয়াবিলিটি এর role = 3.0 m3/h/m2@50pa এবং এই স্থাপনার ক্ষেত্রে যেসব বিষয় প্রতিস্থাপন করা হয়েছে। সেগুলো হলো-

  • উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন গ্যাস বয়লাব
  • থার্মাল স্টোর সমন্বিত সোলার হট ওয়াটার
  • মেকানিক্যাল বায়ুপ্রবাহ সিস্টেম
  • ১০০% কর্ম শক্তি ব্যবহারসম্পন্ন গিনোকমজা।

উদাহরণ : ২ Stardings Court, Horsham স্থাপনাটিতে প্রায় ৩৮টি বাসা তৈরি করা হয়েছে এবং সাধারণত মেঝের ক্ষেত্রফল ১২১ বর্গমিটার। স্থাপনাটিতে ইনসুলেটেড প্যানেল সিস্টেম কাজে লাগানো হয়েছে, যার মাধ্যমে Air Lightness এবং জিরো থার্মাল ব্রিজিংয়ের ব্যবস্থাপনা করা হয়েছে। সমগ্র স্থাপনাটিতে নিখুঁত Detailing করা হয়েছে, যা বিভিন্ন ক্ষেত্রে শক্তির অপচয় রোধ করতে পারে।

এ্যাবে ওয়াক স্টোরিংটন, সোলার ল্যাম্প পোস্ট ও এ্যাবে ওয়াক স্টোরিংটন

সব থেকে বড় যে বিষয়টি এই স্থাপনায় Optimised Passive Solor সিস্টেম ব্যবহৃত হয়েছে এর ওরিয়েন্টেশনে, যা শক্তি উৎপাদনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে এবং এই স্থাপনার Fabric Specification লক্ষ করলে দেখা যায়, সেটা Energy Starnd-কে Follow করে বহিঃস্থ ছাদ, দেয়াল এবং মেঝের U value = 0.08 থেকে 0.11 w/m2/k, জানালার U value = 0.8 w/m2/k (থ্রিপন gladget), থার্মাল ব্রিজিং Y value = 0.02 w/m2/k, বাতাসের পারমিয়াবিলিটির মান ≤ 0.6m3/h/m2@50.pa..

(উদাহরণ দুটি শীতপ্রধান আবহাওয়ার জন্য প্রযোজ্য)
একটি স্থাপনা Tero Carbon কি না সেটি দেখার জন্য Dueling Emission Rate (DER) পরিমাপ করা অত্যন্ত প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ, যা নকশা প্রণয়ন করার সময় SAP কিংবা Energy মডেলিংয়ের মাধ্যমে নিরূপণ করা সম্ভব। অন্য দিকে নির্মিত একটি স্থাপনায় Data Loger-এর মাধ্যমে বর্তমানে কতটা শক্তি অপচয় হচ্ছে, সেটিও মনিটরিং করা সম্ভব। অনেক সময় একটি স্থাপনা তৈরি হয়ে যাওয়ার পর বিষয়টি নিয়ে অনেকেই চিন্তিত হয়ে পড়ে কিংবা Energy Demand কমানোর জন্য Retrofiting বা পুনর্নির্মাণের চিন্তা করে থাকে কিন্তু যদি নকশা প্রণয়নের সময় থেকে Energy Serigon Monitoring করা হয়, তাহলে হয়তো ভালো ফল পাওয়া সম্ভব। কারণ, পুনর্নির্মাণ করলে অর্থ এবং সময় পুরোটাই অপচয় হতে পারে। এবং আমাদের দেশের জন্য এটি বিশেষভাবে প্রযোজ্য। ইংল্যান্ড, স্কটল্যান্ড কিংবা ওয়ালসে কোনো মালিক ডেভেলপার কোন বাড়ি অথবা স্থাপনা বিক্রি করতে চাইলে Property-এর সকল Documents-এর সঙ্গে স্থাপনার Energy Demand Certificate ও প্রদান করে থাকে, অথচ আমাদের দেশে এর কোনে সিস্টেম নেই, যা শক্তি অপচয় রোধে একান্তভাবে প্রয়োজন। কারণ শুধু, স্থাপনাগুলো থেকে আমরা প্রতিবছর প্রায় ৪০ শতাংশ শক্তির অপচয় রোধ করতে পারি। Tero Carbon Construction-এর আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে প্রাকৃতিক কিংবা দুর্যোগের কথা চিন্তা করে এর উপকরণ ব্যবহার করা, যেমন এমন কোনো উপকরণ ব্যবহার করা যাবে না, যা আগুন লাগতে সাহায্য করে। আমাদের দেশের জন্য সব থেকে যেটি প্রথমে করতে হবে স্থাপনাগুলোর জন্য একটি ক্যাটাগরিভিত্তিক Carbon Compliance প্রণয়ন করতে হবে এবং সেখানে Standard Carbon Emission-এর সীমাবদ্ধতা লিপিবদ্ধ করতে হবে। সেই সঙ্গে টার্গেট নির্ধারণ করতে হবে, যার মাধ্যমে আগামী ২৫ বছরের মধ্যে হয়তো কার্বন অপচয় রোধে বাংলাদেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। আর সবাই যদি সোচ্চার হয় তাহলে সেই দিনটি বোধ হয় আর খুব বেশি দূরে নয়, যখন আমরা Plus O2 Community-এর কথা ভাবতে পারব এবং সীমাবদ্ধ শক্তিকে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য কাজে লাগাতে পারব।

প্রকাশকাল: বন্ধন ৪০ তম সংখ্যা, আগস্ট ২০১৩

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top