বেঁচে থাকার জন্য প্রতিদিনই কিছু না কিছু খেতে হয়। শুধু তাই নয়, জীবনকে সুন্দরভাবে সাজাতে ও রাঙাতে প্রয়োজন নানা ধরনের সামগ্রী। এতে কিছু থাকে প্রয়োজনীয় আবার কিছু অপ্রয়োজনীয়। এই ধরা যাক বাজার থেকে আম কেনা হলো। তা খাওয়ার পর এর খোসা ও আটি ঠিকই ফেলে দেয়া হয়। আবার এক প্যাকেট বিস্কুট কিনে এর খালি প্যাকেটটিও ফেলে দেয়া হয়। তবে দুটি কিন্তু এক জিনিস নয়। এর একটি পচনশীল অন্যটি অপচনশীল এবং তা পরিবেশের জন্য হুমকিস্বরূপ। প্রতিদিন লাখ লাখ টন এ ধরনের বর্জ্য পদার্থ জমা হচ্ছে নগরীতে। এটা নিঃসন্দেহে একটি সমস্যার বিষয়। কিন্তু উন্নত দেশগুলো ঠিকই এগুলোকে পরিণত করেছে সম্পদে। আমাদের দেশের বর্জ্য ব্যবস্থাপনার হালচাল সম্পর্কে কতিপয় বিষয় আলোকপাত করা হলো।
বর্জ্য পদার্থ
আমাদের দৈনন্দিন জীবনের নানা ধরনের উচ্ছিষ্ট ই-বর্জ্য পদার্থ। চকলেটের খোসা, পেন্সিল কাটার ময়লা, মাছের কাটা থেকে শুরু করে কলকারখানার দূষিত রাসায়নিক পদার্থ এ সবকিছুই বর্জ্য পদার্থ। প্রতিটি গৃহ, অফিস, দোকানসহ বিভিন্ন জায়গা থেকে এ বর্জ্যরে উৎপত্তি। এর মধ্যে কিছু ভয়াবহ ও ভিন্নধর্মী বর্জ্যও রয়েছে। যেমন হাসপাতালের বর্জ্য, পশুজবাই বা মৃতদেহই বর্জ্য, কলকারখানার বর্জ্য ইত্যাদি। এসব বর্জ্য পদার্থ পানি, মাটি, বাতাস, জনস্বাস্থ্য এমনকি সমগ্র পরিবেশকে দূষিত করে।
বর্জ্য পদার্থের উৎসস্থল
দৈনন্দিন বর্জ্য
নিজ গৃহ, রাস্তা বা ফুটপাতে, অফিস, দোকান ইত্যাদি জায়গাতে প্রতিনিয়ত আমরা কত কিছু ব্যবহার করছি। সিগারেটের ফিল্টার, ম্যাচের কাঠি, পানের পিক, থুথু, বাদামের প্যাকেট ইত্যাদি সামগ্রিগুলো আমরা নানাভাবে যেখানে সেখানে যত্রতত্রভাবে প্রতিনিয়ত ফেলি। এগুলো এখন স্বাভাবিক বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। এভাবে যে প্রতিদিন কত বৈর্জ্য উৎপাদন হয় তার কোনো ইয়ত্তা নেই। তবে প্রতিদিন আমাদের খাদ্যদ্রব্রের উচ্ছিষ্ট হিসেবে অধিক আবর্জনার সৃষ্টি হয়। এর বেশিরভাগই আবার সম্পদে পরিণত করা যায়।

কলকারখানার বর্জ্য
কলকারখানা সৃষ্ট বৈর্জ্য পরিবেশের জন্য বেশ ক্ষতিকর। কারণ এর অধিকাংশই বিষাক্ত রাসায়নিক দ্রব্য। এগুলো নদী, খাল-বিল, জলাশয়, কৃষিজমি ইত্যাদিতে মিশে চরম ক্ষতির সৃষ্টি করছে। একদিকে এখান থেকে যেমন কালো ধোঁয়া বের হয়ে বাতাস দূষিত করে অন্যদিকে রাসায়নিক বর্জ্য পানি, ফসল ও জনস্বাস্থ্যের মারাÍক ক্ষতি করে।
হাসপাতাল বর্জ্য
হাসপাতাল রোগ-জীবাণুর আধার। এখানে বিভিন্ন ধরনের রোগী থাকে। তাদের মলমূত্র, রক্ত, কফ ইত্যাদি থেকে নানা রকম রোগ-জীবাণু ছড়ায়। এসব রোগীদের ব্যবহƒত সিরিঞ্জ, সুজ, ব্যান্ডেজ, তুলা ইত্যাদি সঠিকভাবে না ফেলে যেখানে সেখানে ফেলে রাখা হয়। এটা মানব দেহের জন্য চরম হুমকি। এগুলো মাটির নিচে পুঁতে রাখার কথা থাকলেও তা মানা হয় না। এগুলো পরিবহনেও আলাদা গাড়ি ও বর্জ্য ব্যবস্থা থাকার নিয়ম। আনেক হাসপাতাল, ক্লিনিক এসব নিয়ম মানে না। সাধারণ বর্জ্যরে সাথে তারা হাসপাতালের জীবাণুভরা বর্জ্যগুলোকে ফেলে। বিষয়টিকে গুরুত্বসহকারে বিবেচনা করা উচিত।
ই-বর্জ্য
এই সমস্যাটি খুব বেশি উপলব্ধি করা না গেলেও, উন্নত বিশ্বে এগুলো বেশ মাথা ব্যাথার কারণ। কারণ তারা প্রযুক্তিগত দিক দিয়ে অনেক উন্নত। বিশ্বে দিন দিন নিত্যনতুন প্রযুক্তি আবিষ্কৃত হচ্ছে। ফলে পুরনো যন্ত্রপাতিগুলো কোনো কাজে লাগছে না। এটার পুনঃব্যবহারও বেশ জটিল। সমস্যাটি আমাদের দেশেও ধীরে ধীরে দেখা দিচ্ছে। এ সমস্যা এখনই মোকাবেলা করা প্রয়োজন।
কোরবানি পশু জবাই বর্জ্য
ঈদ-উল-আজহায় পশু কোরবানি দেয়া মুসলমানদের ঐতিহ্য। ফলে এ সময় লাখ লাখ পশু ঢাকাসহ সারা দেশে কোরবানি দেয়া হয়। ফলে প্রতি বছরই সঠিক ব্যবস্থাপনার অভাবে ঢাকা মহানগরীসহ সর্বত্র কোরবানি পশুর রক্ত ও উচ্ছিষ্টাংশে মারাÍক পরিবেশ দূষণের সৃষ্টি করে। যদি যথাযথ ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে আমাদের কোরবানির পশু নির্ধারিত স্থানে জবাই করা হয় তাহলে একদিকে যেমন পরিবেশ দূষণ রোধ হবে অন্যদিকে জবাই পরবর্তী উচ্ছিষ্টাংশসমূহকে সম্পদে রূপান্তরিত করাও সম্ভব যাবে।
বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় কিছু সুপারিশ
- যেখানে সেখানে ময়লা না ফেলা।
- ময়লা ফেলতে ডাস্টবিন ব্যবহার করা।
- পলিথিনের ব্যবহার বন্ধ করা।
- সুষ্ঠু বর্জ্য ব্যবস্থাপনার সুফল ও অব্যবস্থাপনার কুফল সম্পর্কে ব্যাপক জনসচেতনতা তৈরি করা।
- গৃহস্থালী, ব্যবসা এবং শিল্পক্ষেত্র থেকে আবর্জনা সংগ্রহ করা।
- আবর্জনা জমা করার স্থান পর্যন্ত সেগুলোকে সঠিকভাবে বহন করে নিয়ে যাওয়া।
- আবর্জনা জমা স্থানের রক্ষণাবেক্ষণ করা।
- রাস্তা ঝাঁড়– দেয়া এবং মাঝে মাঝে ধুয়ে দেয়া।
- বিভিন্ন স্থানে ডাস্টবিনের ব্যবস্থা করা।
- রাস্তা থেকে মৃত পশুপাখি সরিয়ে ফেলা।
- সরকারি ও বেসরকারিভাবে বর্জ্যকে সম্পদে রূপান্তরে কার্যকরী উদ্যোগ গ্রহণ করা।
- কোরবানি ছাড়াও পশু জবাইয়ের ক্ষেত্রে এলাকাভিত্তিক স্লটার হাউস (কসাইখানা) করা।
- কোরবানির পশু জবাইয়ের স্থানগুলো জীবাণুনাশক দ্বারা দ্রুত পরিষ্কার করা।
- ড্রেন ও নর্দমা নিয়মিত পরিষ্কার করা

বর্জ্যরে সঠিক ব্যবস্থাপনায় নাগরিকের কর্তব্য
আমরা যেভাবে আমাদের বাড়ড়িঘর পরিষ্কার রাখি, ঠিক একইভাবে আমাদের নগরীকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে আমাদের কিছু দায়িত্ব ও কর্তব্য রয়েছে। ইসলাম মতে, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ঈমানের অঙ্গ। কথাটি বিবেচনায় রেখে আমাদের আশপাশ, পাড়া, মহল্লা, শহর এমনকি দেশ পরিষ্কার রাখতে আমরা নিজেদেরকে শামিল করতে পারি। এটা করতে আপনাকে এমন কোনো কষ্ট করতে হবে না। এই যেমন-
- নিজ বাড়িঘর আশপাশ পরিষ্কার রাখতে হবে।
- বাগান পরিষ্কার করতে হবে।
- যেখানে সেখানে ময়লা না ফেলে তা সঠিক স্থানে ফেলা।
- বাড়ি মেরামত করে তার উচ্ছিষ্টাংশ ডাস্টবিনে ফেলতে হবে।
- ভবন নির্মাণে আরও সচেতন হওয়া।
- রাস্তা বা ফুটপাতে কোনো অবর্জনা ফেলা যাবে না।
- স্কুলে বাচ্চাদের এ ব্যাপারে সচেতন করতে হবে।
- কোথাও অধিক ময়লা থাকলে স্থানীয় ওয়ার্ড কার্যালয়ে কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগে যোগাযোগ করতে হবে।
বর্জ্য পদার্থ থেকে সম্পদ
আমরা যত চেষ্টাই করি দৈনন্দিন নানা বর্জ্যরে হাত থেকে মুক্তি নেই। তবে এগুলোকে প্রক্রিয়াজাতকরণের মাধ্যমে সম্পদে পরিণত করা যায়। বিশ্বের অনেক দেশ আবর্জনা থেকে বিদ্যুৎ, জ্বালানি, সার, খেলনা ইত্যাদি নানা ধরনের জিনিস তৈরি করছে। ফলে একদিকে যেমন সম্পদের পুনঃব্যবহার হচ্ছে, অন্যদিকে অর্থনৈতিকভাবেও তারা লাভবান হচ্ছে। আমাদের দেশেও বিভিন্নভাবে তা প্রয়োগ করা যেতে পারে। যেহেতু এদেশ কৃষি নির্ভর, সেহেতু আবর্জনা থেকে সার উৎপাদন বেশ সম্ভাবনাময় একটি বিষয়। তাছাড়া এই সার হবে সবুজ, কেমিক্যালমুক্ত ও পরিবেশবান্ধব। বায়োগ্যাস প্লান্টের মাধ্যমে বর্জ্য দিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদনের সম্ভাবনাও কম নয়। প্রয়োজন শুধু কার্যকরী উদ্যোগ। এদেশে বিপুল বেকার জনগোষ্ঠীকে কাজে লাগানো যাবে যদি ফেলে দেয়া বিভিন্ন সামগ্রী থেকে খেলনা বা অন্যান্য ঘর সাজানোর জিনিস তৈরি করা যায়। ফেলে দেয়া প্লাস্টিক বোতল, ক্যান ইত্যাদি দিয়ে নৌকা, প্লাস্টিক সামগ্রীসহ নানারকম সামগ্রী তৈরি করা খুব কঠিন কিছু না। বর্তমান যুগ যেহেতু ইন্টারনেটের যুগ। এর সাহায্য নিয়ে যে কেউ সক্ষম হবে এসব দ্রবাদি তৈরিতে।
ডাম্পিং পয়েন্ট হিসেবে গোটা ঢাকাকে বোঝালেও হয়তো ভুল কিছু হবে না, কারণ শহরটাই ময়লা আবর্জনার স্তূপে ভরা।
বর্জ্যপদার্থ কিভাবে পরিবেশকে দূষিত করে সেই সম্বন্ধে কিছু বলুন ?
হেদায়েতুল ইসলাম হেলাল : সাধারণ অর্থে, যেকোনো বর্জ্যই যদি আমরা কাজে না লাগায় অন্তত ডাম্পিংয়ের জন্যও সেটাই পরিবেশের জন্য ক্ষতিকারক। প্রকৃতপক্ষে আমরা নিজেরাই বিভিন্নভাবে বর্জ্যপদার্থ দ্বারা পরিবেশকে দূষিত করে চলেছি প্রতিনিয়ত। একটা অফিসে গড়ে প্রতিদিন ৩০০ গ্রাম বর্জ্য জমা হয়। আর এসব বর্জ্য নির্দিষ্ট স্থানে না ফেলার কারণে প্রতিনিয়ত আমরা আমাদের অফিসের পরিবেশকে নোংরা করে চলেছি।
বাইরে আমরা নানা ধরনের মুখরোচক প্যাকেটজাত খাবার খাই যেমন চিপস্, আইসক্রিম, বিস্কুট, চানাচুরের প্যাকেট ইত্যাদি যেগুলো পলিথিন জাতীয় এবং এই পলিথিন জাতীয় বস্তু পরিবেশের জন্য মারাÍক ক্ষতিকর। পাশাপাশি তা পরিবেশ বিপর্যয়ের জন্য হুমকিস্বরূপ। কারণ পলিথিন ব্যাগ মাটিতে ফেলার পর তা মাটিতে বিলিন হয়ে যায় না। কারণ এতে ব্যাকটেরিয়া আক্রমণ করতে পারে না। ফলে এর পঁচনও ঘটে না। এসব পলিব্যাগ বহুদিন মাটিতে পড়ে থাকলে এক সময় তা মাটির কিছুটা গভীরে চলে যায় এবং গাছের মূলে পানি পৌঁছাতে বাঁধা সৃষ্টি করে। পরবর্তীতে সেখানে চাষাবাদ বা বৃক্ষরোপণ করলে তা পরিপুষ্ট হয় না। কারণ বৃক্ষ বা চারা গাছ তাদের মূল বা শিকড় দ্বারা মাটি থেকে যে খাবার গ্রহণ করে পলিব্যাগ তাতে বাঁধা সৃষ্টি করে। এ কারণে দেখা যায়, যে সিটি করপোরেশন ডাম্পিং পয়েন্ট এলাকায় গাছপালা বড় হয় না।
আজকাল সব ধরনের কলকারখানা দেশের নদীগুলোর পাড় ঘেঁসে গড়ে ওঠার কারণ হলো কলকারখানার বর্জ্যগুলো যেন সহজেই নদীগর্ভে প্রেরণ করা যায়। কিন্তু এসব কলকারখানার বিশেষ করে কেমিক্যাল কারখানাগুলোর বর্জ্য নদীর পানিতে প্রেরণের ফলে সেখানকার মাছ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। সেই মাছ খেয়ে আবার আমরা নিজেরা রোগাক্রান্ত হচ্ছি। নদীতে গোসল বা সেই পানি দিয়ে হাত মুখ ধোয়ার কাজ ও রান্না-বান্নার কাজে ব্যবহার করার ফলে আমাদের শরীরে দেখা দিচ্ছে নানা ধরনের চর্ম রোগ।
আমাদের দেশের হাসপাতালগুলোর বর্জ্যগুলো সঠিকভাবে জীবাণু মুক্ত না করে যেখানে সেখানে ফেলার কারণেও নানাভাবে সেগুলো পরিবেশেকে দূষিত করে চলেছে। এছাড়া বর্তমানে চাষাবাদের ক্ষেত্রে কীটনাশক বা রাসায়নিক সার ব্যবহারের ফলেও ব্যাপকভাবে পরিবেশ দূষিত হচ্ছে।
সবচেয়ে ক্ষতিকর ও বিপজ্জনক বর্জ্য কি কি?
হেদায়েতুল ইসলাম হেলাল : আসলে প্রকৃতির বাইরের বস্তুগুলোই ক্ষতিকারক। একটা দেশের পানির সাথে সেই দেশের মানুষের চরিত্র জড়িত। সেক্ষেত্রে বলা যায় আমাদের দেশের নদী প্রবাহের সাথে কলকারখানার রাসায়নিক পদার্থ, যে বর্জ্য পদার্থ প্রতিনিয়ত নদীর আপন গর্ভে নিপাতিত হচ্ছে সেটাকেই সবচেয়ে বেশি ভয়ংকর বলে আমি মনে করি। এছাড়া পলিথিন ব্যাগ, হাসপাতালের অবশিষ্ট বর্জ্য এবং ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থানের ডাম্পিং পয়েন্ট এলাকার বর্জ্যও মারাÍক ক্ষতিকারক।
ঢাকা সিটি করপোরেশন ডাম্পিং পয়েন্ট এলাকা পরিবেশের জন্য কতটা ভয়ানক ?
হেদায়েতুল ইসলাম হেলাল : আমার নিজের একটা বাস্তব ঘটনা, ঢাকার ডাম্পিং পয়েন্ট অর্থাৎ ডেমরার মাতুয়াইলে আমরা একটা বিশেষ কাজে গিয়েছিলাম। সেখানে উপলদ্ধি করতে পারলাম, ওই অঞ্চলের মানুষেরা নানা রোগে আক্রান্ত। শ্বাসকষ্ট, চুলকানি এ জাতীয় রোগ বেশি। শ্বাস নিচ্ছে ব্যাকটেরিয়া। ওই অঞ্চলের মাছি যদি শরীরে বসে, তবে সেখানে চুলকানি শুরু করে। ওই এলাকার বাতাসটা বর্জ্যরে কারণে দূষিত হয়ে থাকার ফলে এমনটি হচ্ছে। সেখানে গাছপালা খুব বাড়ে না। কারণ পলিব্যাগের কারণে প্রয়োজনীয় পানি শোষণ করতে পারে না। আর যদি একটু বড় হয় তাহলে গাছ হেলে পড়ে। কারণ মাটিতে শেকড় ভালভাবে আকড়ে ধরতে পারে না।
হাসপাতালের পরিত্যক্ত বর্জ্য পরিবেশের জন্য কতটা ক্ষতিকারক?
হেদায়েতুল ইসলাম হেলাল : প্রকৃতপক্ষে আমাদের দেশের হাতেগোনা মাত্র কয়েকটি হাসপাতাল ছাড়া অধিকাংশ হাসপাতালের অবশিষ্ট বর্জ্যই নিরাপদভাবে জীবাণুনাশক ব্যবস্থা ছাড়াই মাটিতে ফেলা রাখা হয়। অনেক সময় দেখা যায় মাটিতে পুঁতে রাখাও হয় না। যার ফলে সেখানকার পরিবেশ হয়ে ওঠে মারাÍক হুমকির সম্মুখিন। এসব এলাকাতে কাকসহ অন্যান্য গবাদিপশু, পাখি ও কুকুরের আনাগোনা দেখতে পাওয়া যায়। এদের মাধ্যমে সেখানকার রোগ-জীবাণু সারা এলাকাব্যাপী ছড়িয়ে পড়ে। যার ফলে ওই এলাকাতে দেখা যায় এ্যাজমা, চর্মরোগসহ নিত্যনতুন সব রোগের জš§ হয় এবং ওই জাতীয় রোগীর সংখ্যা ওই এলাকাতে বেশি।
আমাদের দেশের ই-বর্জ্য (ইলেকট্রিক বর্জ্য) সম্বন্ধে কিছু বলুন ?
হেদায়েতুল ইসলাম হেলাল : ই-বর্জ্য বা ইলেকট্রিক বর্জ্য বলতে আমরা প্রকৃতপক্ষে বুঝি ব্যবহার অযোগ্য কম্পিউটার, টেলিভিশন, রেডিও, মোবাইলফোন, ল্যাপটপ, টিভি মনিটর, রেফ্রিজারেটর, বৈদ্যুতিক ইস্ত্রী ইত্যাদি ইলেকট্রিক্যাল ও ইলেকট্রনিক্স পদার্থ। যেগুলোর ব্যবহার বর্তমানে সর্বত্র। এসব পদার্থ ব্যবহার অযোগ্য হলেই আমরা সেগুলোকে পুঁজি করে বাসগৃহের এক কোণায় ফেলে রাখি। যার ফলে আমাদের সমাজে ই-বর্জ্যরে পরিমাণ দিনে দিনে বৃদ্ধি পাচ্ছে।
টেকসই বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করতে কি কি পদক্ষেপ নেয়া যেতে পারে ?
হেদায়েতুল ইসলাম হেলাল : সবার আগে আমাদের নিজেদেরকে সচেতন হতে হবে। পাশাপাশি সরকারি উদ্যোগ তো থাকতেই হবে। তবে নিজেরা সচেতন থাকলেই সরকারের সহযোগিতা পাওয়াও একটি টেকসই বর্জ্য ব্যবস্থাপনাময় দেশ হিসেবে নিজেদের প্রমাণ করা অনেকটা এগিয়ে যাবে।
উন্নত দেশের বর্জ্য ব্যবস্থাপনার তুলনায় আমাদের দেশের বর্জ্য ব্যবস্থাপনার চিত্র কেমন বলে আপনি মনে করেন ?
হেদায়েতুল ইসলাম হেলাল : সবার আগে আমি বলতে চায় জার্মানির কথা, যেখানে বর্জ্যপদার্থের পরিমাণ ১ শতাংশ। অবাক হলেও এটা সত্য। এর সবচেয়ে বড় কারণ সেখানকার জনগণ খুবই সচেতন। শুধু জার্মানই নয়, বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সাথে আমাদের তুলনা করা নিছক পাগলামি। আমাদের দেশ পুরোটাই তো একটা ডাম্পিং পয়েন্ট।
বর্জ্যকে কিভাবে সস্পদে পরিণত করা যায় ?
হেদায়েতুল ইসলাম হেলাল : শুধু বর্জ্য পদার্থই নয়, সে বর্জ্য হোক আর যাই হোক না কেন, যেকোনো বস্তুই যদি আমরা কাজে না লাগায়, ফেলে রাখি তাহলে সেটা হবে পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর। অনেক সুন্দর জিনিসও ফেলে রাখলে এক সময় তা নষ্ট হয়ে যায়। আবার অনেক ব্যবহার অযোগ্য বস্তু দিয়েও আকর্ষণীয় কিছু তৈরি করা যায়। যেমন পানির কথাই ধরা যাক। পানি যদি প্রবাহমান হয় তাহলে তা থেকে কোন গন্ধ হবে না। আর যদি প্রবাহিত না হয়ে এক জায়গায় বদ্ধ হয়ে যায় তাহলে তা থেকে গন্ধের সৃষ্টি হবে।

আমাদের দেশের বা বাইরের মোবাইল ফোন বা বাসগৃহে ব্যবহার করা ইলেকট্রিক কোম্পানিগুলোর সাথে এমন চুক্তিবদ্ধ হওয়া উচিত যেন ব্যবহার অযোগ্য পণ্যগুলো বিনিময় করে একই কোম্পানির নতুন আরেকটা পণ্য পাওয়া যায়। এতে আমাদের সমাজে ই-বর্জ্যরে পরিমাণ অনেক কমে আসবে। পণ্যদ্রব্যের ব্যবহার স্বল্পমেয়াদি না করে দীর্ঘমেয়াদি ব্যবহারের মনমানসিকতা সৃষ্টি করতে হবে।
জাপানে এক সময় ব্যবহার অযোগ্য ল্যাপটপের মনিটর দিয়ে টেলিভিশন তৈরি করা হয়েছিল। তাই আমাদেরও ব্যবহার অযোগ্য বস্তুর বিকল্প ব্যবহারের চিন্তা ধারার বিকাশ ঘটাতে হবে।
ইতালিয়ান একটি কোম্পানি পলিব্যাগের ভয়াবহতার কথা ভেবে ভুট্টা প্রক্রিয়াজাত করে এক ধরনের বিশেষ পলিব্যাগ তৈরি করেছিলেন, যা ছিল পরিবেশবান্ধব, পঁচনশীল।
বিশ্বের কোনো এক দেশের ব্যক্তি ফেলে দেয়া পানির বোতল দিয়ে তৈরি করেছিলেন ২-৫ জন আরোহণযাগ্য নৌকা। বর্জ্যকে সম্পদ হিসেবে পরিণত করার এমন বহু ইতিহাস বিশ্বে অগণিত রয়েছে।
আপনার প্রতিষ্ঠান এ ব্যাপারে কি কি পদক্ষেপ নিয়েছে ?
হেদায়েতুল ইসলাম হেলাল : আসলে আমাদের প্রধান লক্ষ্য মানুষের মাঝে এ সম্পর্কিত জ্ঞানদান করে তাদেরকে সচেতন করা। আমরা মাত্র যাত্রা শুরু করলাম। বিভিন্ন চিন্তা ধারা আমাদের রয়েছে। ওয়েস্ট পেপার দিয়ে আমরা ভবিষ্যতে কাপম্যাট, গ্লাস ম্যাট, রকমারি শো-পিস ইত্যাদি তৈরি করব। এছাড়াও আমাদের বেশকিছু পরিকল্পনা রয়েছে। আশা করা যায়, খুব তাড়াতাড়ি এগুলো বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে।
মারুফ আহমেদ
প্রকাশকাল : বন্ধন ২৬ তম সংখ্যা, জুন ২০১২