হাত-পা ছেড়ে পানিতে ভেসে বেড়াতে কার না ভালো লাগে! গোসলের সময় মাথাটা পানিতে গুঁজে রেখে, চোখ বন্ধ করে শ্বাসটা কিছুক্ষণের জন্য বন্ধ করে জীবনকে একটু ভিন্নভাবে ভাবায় আছে ক্ষণিকের আনন্দ। তবে এ আনন্দ ও স্বাদটুকু সহজে পাওয়া যায় না শহুরে এ নাগরিক জীবনে। দালানকোঠার নগরে স্বস্তির নিশ্বাস ফেলাটাও রীতিমতো কঠিন যেখানে, সেখানে সমুদ্র স্নান, পুকুরে সাঁতার তো কল্পনাতীত। তবে একেবারেই কি কল্পনাতীত! ফ্ল্যাটবাড়িতে পুকুর আর সমুদ্র স্নানের আনন্দ দিতে বিশেষজ্ঞদের উদ্ভাবন আধুনিক ‘বাথটাব’। উত্তরাধুনিক বিশ্বে বসবাসরত মানুষের কাছে ক্রমেই জনপ্রিয় হয়ে উঠছে ‘বাথটাব’ পদ্ধতি। ‘বাথটাব’ ব্যবহার করে ব্যস্ত এ নগরীতে নিজস্ব ফ্ল্যাটেই আপনি পেতে পারেন সমুদ্র স্নানের আনন্দ। সময়ের চাহিদার সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিতে বন্ধন-এর এবারের অ্যাকসেসরিজ ‘ফ্ল্যাটবাড়ির বাথটাব’।
বাথ ও টাব মিলে ‘বাথটাব’। বাথটাব একটি বড় পাত্র বিশেষ, যেখানে একজন কিংবা দুজন মানুষের গোসলের উপযোগী পানি রাখা হয়। অধিকাংশ আধুনিক বাথটাব অ্যাক্রাইলিক বা ফাইবার গ্লাসে তৈরি। এ ছাড়া স্টিল ও কাস্ট আয়রনও বাথটাবে বিকল্প উপাদান হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
১৯ শতকের শেষার্থে বাথটাবের জনপ্রিয়তা বেশি হলেও ১৮ শতকে আবিষ্কৃত হয় এটি। স্কটিশ বংশোদ্ভূত মার্কিন নাগরিক ডেভিড ডানবার বিক যুক্তরাষ্ট্রের মিশিগান অঙ্গরাজ্যের ডেট্রয়েটে আলেকজান্ডার ম্যানুফ্যাকচারিং কোম্পানিতে কাজের সময় ১৮৮০ সালে কাস্ট আয়রনে বাথটাব তৈরি করেন। ডেভিড ডানবার বিকই হচ্ছেন বাথটাবের আবিষ্কারক।

পরবর্তী সময়ে বাথটাবের ডিজাইন করা হয় হল্যান্ডে। এরপর বাথটাবের ডিজাইনে আগ্রহ দেখায় চীন। এরই ধারাবাহিকতায় এরপর তা ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ে ইংল্যান্ডে। ইংল্যান্ডের অভিজাত শ্রেণিতে ব্যাপক জনপ্রিয়তা পায় বাথটাব। ক্র্যান কোম্পানি ১৯২৮ সালে বাথরুমে ব্যবহারের জন্য আমেরিকার মার্কেটে বাথটাব বাজারজাতকরণ শুরু করে।
বাথটাবের প্রধান উপাদান ফাইবার। এই ফাইবারের মাধ্যমেই বাথটাব স্ববলে জনপ্রিয়তা কুড়াচ্ছে। বাথটাব সাধারণত বাথটাব ও জিকুজি, এই দুই ধরনের। উন্নত দেশে বাড়ির আঙিনা ও ছাদে বাথটাব বসানো হলেও বাংলাদেশে সাধারণত বাথরুমেই বেশির ভাগ বাথটাব ও জিকুজি বসানো হয়। বিদেশি বাথটাবের পোশাকী নাম ‘জিকুজি’। জিকুজি সাধারণ ইতালি থেকে আমদানি করে থাকে বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা। সরকারি আমলা, ব্যবসায়ী ও বিত্তবান প্রবাসীরা তাঁদের বাড়িতে বাথটাব ব্যবহার করেন। জিকুজিতে কয়েক স্তরের পানির কল থাকে। সঙ্গে লাগানো থাকে মোটর। জিকুজিতে একদমই আয়রন জমে না।
বাথটাব স্থাপন পদ্ধতি ও ব্যবহারবিধি
১ হাজার ২০০ বর্গফুট আকৃতির যেকোনো বাড়িতে বাথটাব ও জিকুজি স্থাপন করা যায়। বিভিন্ন মাপের বাথটাব পাওয়া যায় বাজারে। যেমন: ৩০-৮৪ ইঞ্চি, সাত ফুট বাই আড়াই ফুট, ছয় ফুট বাই আড়াই ফুট। দেশি বাথটাব আবার দুই ধরনের। ১. শাওয়ার ট্রে ২. বাথটাব। ২৭ ইঞ্চি বাই ২৭ ইঞ্চি ও ৩১ ইঞ্চি বাই ৩১ ইঞ্চি পরিমাপের বাথটাব শাওয়ার ট্রে নামে পরিচিত। আর ৫৩ ইঞ্চি বা ৫ ফুট ৩ ইঞ্চি পরিমাপের বাথটাব হলো বাথটাব। প্রতি চার মিলি বাথটাবের মূল্য ৩ হাজার ৮০০ টাকা, এই দামে বাজারে বিক্রি হয় এখন। এর চেয়ে বড় নিতে চাইলে আগে থেকে সিরামিকের দোকানে অর্ডার করতে হয়।
দেশি-বিদেশি সব বাথটাই কমপক্ষে ৪০ লিটার পানি ধারণে সক্ষম। আয়তনভেদে আরও বেশি পানি রাখা যায়। জিকুজির মধ্যে অধিকাংশই সাদা বা হোয়াইট রঙের। এ ছাড়া অফহোয়াইট, লাইট ব্লু, লাইট পিংক রঙের জিকুজিও বাজারে পাওয়া যায়। জিকুজি পাঁচ থেকে সাত ফুট হয়ে থাকে। চীন, থাইল্যান্ড, ইতালি ও দুবাই থেকে আনা হয় এসব জিকুজি।
বাথটাবের দরদাম
দেশি বাথটাবের দাম সর্বনিম্ন ৩ হাজার ৮০০ আর সর্বোচ্চ ৮০ হাজার টাকা। আর বিদেশি বাথটাব সর্বনিম্ন ৬০ হাজার আর সর্বোচ্চ ৩ লাখ টাকা। বিদেশি বাথটাবের রয়েছে একাধিক সুবিধা। যেমন-শরীর ম্যাসাজ করা যায়, এতে নদী ও সাগরের মতো ঢেউ উঠে, যা দেহ ও মনে দেয় অনাবিল প্রশান্তি। একই সঙ্গে শরীরের ধারণ ও সহ্য ক্ষমতা অনুযায়ী গরম ও ঠান্ডা পানির ব্যবহার করা যায় সুবিধামতো।

প্রাপ্তিস্থান
বাংলামোটর, হাতিরপুল, গ্রিনরোড, মিরপুর, বনানী, উত্তরাসহ দেশের নামকরা সব স্যানিটারির শোরুমে।
মনের শখ মেটাতে আর গোসলে আনন্দ খুঁজতে সাধ্যানুযায়ী আপনিও ব্যবহার করতে পারেন বাথটাব। কৃত্রিম এ আবিষ্কারে খুঁজে নিন জীবনের ক্ষণিক কিন্তু অনাবিল আনন্দকে।
মোহাম্মদ রবিউল্লাহ
HYPERLINK “mailto:[email protected]” [email protected]
তথ্যসূত্র
আল-আমান সিরামিকস ও টাইলস, বাঁধন টাইলস ও সিরামিকস, লাইফান, উইকিপিডিয়া
প্রকাশকাল: বন্ধন ৭৩ তম সংখ্যা, মে ২০১৬