পানি বিশুদ্ধকরণ যন্ত্রের সাতসতেরো

বিশুদ্ধ পানির অপর নাম জীবন। কিন্তু নগরে বিশুদ্ধ পানির সংকট চরমে। নাগরিকদের পানির সংস্থান নিশ্চিত করতে নগরে ওয়াসা ও পানি উন্নয়ন বোর্ড ভূ-তল, নদী, খাল প্রভৃতি উৎস থেকে পানি সরবরাহ করে থাকে। এই পানি বিভিন্ন কারণে দূষণের শিকার হয়ে পানের অযোগ্য হয়ে পড়ে। পানি দূষণমুক্ত করে নিরাপদ রাখতে সাধারণত ফুটানো হয়। কিন্তু ব্যস্ত নগরজীবনে সেটাও অনেক সময় বাড়তি ঝামেলার। আর তাই পানি বিশুদ্ধকরণে ব্যবহার বাড়ছে পানিশোধন যন্ত্র, যা ওয়াটার ফিল্টার বা পিউরিফায়ার নামে পরিচিত।

শুধু নগরেই নয়, গ্রামেও বাড়ছে যন্ত্রটির ব্যবহার। কারণ, নলকূপের পানিতে থাকে মরিচা, ব্যাকটেরিয়া ও অন্যান্য ভারী ধাতু, যা অনেক সময় ফুটালেও যায় না। সেক্ষেত্রে পরিশোধক যন্ত্রটি বেশ কার্যকর। পানিতে অদ্রবণীয় যেসব পদার্থ থাকে, ফিল্টার তা আলাদা করে দেয় সহজেই। প্রতিটি ফিল্টারে পানি কয়েকটি স্তরে পরিশোধিত হয়। ফিল্টারের মধ্যে থাকা গোলাকার বলের স্তর ভেদ করে পানি চুইয়ে নিচের স্তরে পড়ে। এ সময়ে বড় কোনো ময়লা থাকলে তা ওপরেই থেকে যায়। ছাঁকন হয়ে আসা দ্বিতীয় স্তরের পানি পরবর্তী স্তরগুলোর পাথর ও কাঁকরের ভেতর দিয়ে পরিশোধিত হয়ে ফিল্টারের নিচের অংশে জমা হয়। উল্লেখ্য, সাধারণ ফিল্টারে তিন স্তরে এবং বৈদ্যুতিক ফিল্টারে পাঁচ থেকে ছয় স্তরে পানি পরিশোধিত হয়।

ওয়াটার ফিল্টার ও ফিল্টারের নানা যন্ত্রাংশ

বাড়ছে পানি বিশুদ্ধকরণ যন্ত্রের ব্যবহার। নিঃসন্দেহে তা আপনার পরিবারের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় যুক্তিসংগত বিনিয়োগ। তবে আপনাকে অবশ্যই যন্ত্রটির ব্যবহারে যত্নশীল হতে হবে। খেয়াল রাখতে হবে যন্ত্রটিকে পরিচ্ছন্ন রাখার বিষয়েও। সাধারণ ফিল্টার ৩০০ গ্যালন পানি পরিশোধন করতে পারে। তাই হিসাব রাখুন প্রতিদিন আপনি কতটুকু পানি ব্যবহার করছেন। নির্দিষ্ট সময় অন্তর আপনার ফিল্টারটি পরিবর্তন করুন। যদি না করে থাকেন, তাহলে ফিল্টারটি নোংরা ও বিবর্ণ হয়ে যাবে। ফলে, পানি পরিবাহিত হতে যেমন বাড়তি সময় লাগবে, তেমনি জীবাণুমুক্ত পানি পাওয়ার সম্ভাবনাও কমে যাবে। প্রতিদিন পানি পাল্টে দিন। আর সপ্তাহে একবার ফিল্টারের সব অংশ ডিটারজেন্ট বা লেবুপানি দিয়ে পরিষ্কার করে নিন। তবে রিভার্স অসমোসিস ফিল্টার নিয়মিতভাবে ব্লিচ দিয়ে পরিষ্কার করাটা অত্যন্ত জরুরি। আপনি যদি তিন স্তরবিশিষ্ট ফিল্টার ব্যবহার করেন, তাহলে অন্তত দুই মাস পর পর এর পিপি পাল্টাতে হবে। নেট ও কার্বন পাল্টাতে হবে ছয় মাস পর পর। অন্যদিকে, পাঁচ স্তরবিশিষ্ট বিশুদ্ধকরণ যন্ত্রের ক্ষেত্রে দুই মাস অন্তর পিপি ও নেট পরিবর্তন করতে হবে। এ ছাড়া ফিল্টারের বাড়তি সুরক্ষায় আপনি ইলেকট্রনিক ইন্ডিকেটর সংযুক্ত করতে পারেন। এই ক্ষুদ্র যন্ত্রাংশটি রং পরিবর্তনের মাধ্যমে আপনাকে জানাবে কখন ফিল্টার কিট পরিবর্তন করতে হবে। সেই সঙ্গে কানেকশন বা সংযোগের ব্যাপারেও নির্দেশনা দেবে। আপনি নিজেই প্লাম্বিং পরিবর্তন করতে চাইলে সে ক্ষেত্রে আপনার কাজকে অপেক্ষাকৃত সহজ করে তুলবে বিশেষ এই যন্ত্রাংশটি।

রকমফের
বাজারে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের পানি বিশুদ্ধকরণ যন্ত্র পাওয়া যায়। সবগুলোর পিউরিফিকেশন বা বিশুদ্ধকরণ পদ্ধতি এক নয়। পিউরিফায়ারগুলো সাধারণত গরম, ঠান্ডা, ইউভি (আলট্রাভায়োলেট), ইউএফ (আলট্রাফিলট্রেশন) প্রযুক্তির হয়ে থাকে। এগুলো ছাড়াও বাজারে রয়েছে রিভার্স অসমোসিস সিস্টেম বা (RO) প্রযুক্তি। শতভাগ নিশ্চয়তাসম্পন্ন এই রিভার্স অসমোসিস প্রযুক্তির পিউরিফাইয়ারগুলো বাড়ি বা প্রতিষ্ঠানে পানির সরবরাহ লাইনে যুক্ত করার মাধ্যমে পানি বিশুদ্ধ করা যায়। অফিস বা ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের জন্য চাইলে নিতে পারেন ইউভি প্রযুক্তির ওয়াটার ফিল্টার। এ ধরনের ফিল্টার আপনাকে ঘণ্টায় ৪০ থেকে ১০০ লিটার পর্যন্ত বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ করতে পারবে। দেশি ও বিদেশি উভয় ধরনেরই পানি বিশুদ্ধকরণ যন্ত্র রয়েছে বাজারে। এগুলোর মধ্যে- পিওরইট, মিয়াকো, নোভা, ড্রিংকইট, কেন্ট, ডেলকোল, বাজাজ, জেসিএল, এভারপিওর, সেঞ্চুরি, সেনির, মাৎসু, সিঙ্গার জায়গা করে নিয়েছে ক্রেতা চাহিদার শীর্ষে। বিদেশি ফিল্টারের মধ্যে কোরিয়া, চীন ও মালয়েশিয়ার প্রস্তুতকৃত ফিল্টার বহুল প্রচলিত ও জনপ্রিয়।

রিভার্স অসমোসিস ফিল্টার ও ইউভি প্রযুক্তির ওয়াটার ফিল্টার

দরদাম
ফিল্টারের পানি ধারণক্ষমতা, গুণগত মান ও ব্র্যান্ডের ওপর নির্ভর করে দাম নির্ধারিত হয়। ৮ লিটার পানি ধারণক্ষমতাসম্পন্ন ফিল্টার পাওয়া যাবে, ১ হাজার থেকে ২ হাজার ৫০০ টাকার মধ্যে। ১৫ লিটারের ফিল্টার পেতে পারেন ১ হাজার ৮০০ থেকে ৩ হাজার টাকার মধ্যে। ২৩ লিটারের ফিল্টারের মূল্য পড়বে ২ হাজার ২০০ থেকে ৪ হাজার ৫০০ টাকার মধ্যে। এ ছাড়া অপেক্ষাকৃত বেশি ধারণক্ষমতাসম্পন্ন ফিল্টার আপনি পাবেন ৫ হাজার থেকে ১০ হাজার টাকার মধ্যে। বহুল জনপ্রিয় আন্ডার সিন্ক ফিল্টারের গড়পরতা দাম পড়বে প্রায় ১৪ হাজার টাকা। পানি আর্সেনিকমুক্ত করার ক্ষমতাসম্পন্ন রিভার্স অসমোসিস ফিল্টারের মূল্য ৪২ হাজার টাকা। বিশুদ্ধকরণ স্তরের ওপর নির্ভর করেও মূল্যের পার্থক্য দেখা যায়। এক স্তরবিশিষ্ট ফিল্টারের দাম পড়বে ১ হাজার ৫০০ টাকা। তিন ও পাঁচ স্তরবিশিষ্ট ফিল্টার পাবেন যথাক্রমে ৩ হাজার ৫০০ ও ৫ হাজার টাকায়। এ ছাড়া পাঁচ স্তরবিশিষ্ট বৈদ্যুতিক ওয়াটার ফিল্টারের দাম শুরু ৯ হাজার ৫০০ টাকা থেকে। বড় ইন্ডাস্ট্রিয়াল ওয়াটার পিউরিফাইয়ারগুলোর দাম প্রায় ৮০ হাজার টাকা পর্যন্ত। এ ছাড়া ফিল্টারের বিভিন্ন যন্ত্রাংশ যেমন- সাদা কার্টিজ, মিনারেল স্টোন, কর্ক, সিরামিক ছাঁকনি, কল আলাদাভাবে কিনতে পারবেন ৮০ থেকে ৫৫০ টাকার মধ্যে।

প্রাপ্তিস্থান
ঢাকার নিউমার্কেট, এলিফ্যান্ট রোড, বসুন্ধরা সিটি, মিরপুর, উত্তরা, গুলিস্তান, রামপুরা, স্টেডিয়াম ও বায়তুল মোকাররম মার্কেটসহ সারা দেশের প্লাস্টিক ও গেরস্থালী সামগ্রীর শোরুম ও ইলেকট্রনিকস সামগ্রী বিক্রয়কেন্দ্রে পাওয়া যাবে পানি বিশুদ্ধকরণের প্রয়োজনীয় এই অনুষঙ্গটি।

শ্রাবন্তী সুমা

প্রকাশকাল: বন্ধন ৭৬ তম সংখ্যা, আগস্ট ২০১৬

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top