কুষ্টিয়ার মোহিনী মিল ঐতিহ্যের সলুক-সন্ধান

শিল্প-সংস্কৃতির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসেবে শিল্পকারখানা স্থাপত্য, প্রত্নসম্পদ সামাজিক, স্থাপত্যিক, প্রযুক্তিগত, প্রত্নতাত্ত্বিক এবং ঐতিহাসিক মূল্যবোধের উন্মেষ ঘটায়। শিল্পে ঐতিহ্যগত পণ্যকে একটি গতিশীল প্রক্রিয়া হিসেবে দেখা হয়। শিল্পপণ্য যেমন আর্থসামাজিক উন্নয়ন ঘটায় তেমনি আমাদের সমসাময়িক ও প্রাসঙ্গিক জ্ঞানকে ত্বরান্বিত করে। আর এই উন্নয়নকে কেন্দ্র করে তখন একটি সাংস্কৃতিক বলয় গড়ে ওঠে। কুষ্টিয়ার মোহিনী মিল, এই শিল্পকারখানা স্থাপত্য ও প্রত্নসম্পদকে কেন্দ্র করে এই উপমহাদেশে গড়ে উঠেছিল উন্নয়ন ও সাংস্কৃতিক বলয়। কিন্তু বর্তমানে এই ঐতিহ্যবাহী মিলটি অবলুপ্তির দ্বারপ্রান্তে। মোহিনী মিলটির হালহকিকত তুলে ধরছেন স্থপতি সৈয়দ আবু সালেক

ভারত উপমহাদেশের বস্ত্রশিল্পের অগ্রদূত
মোহিনী মিল কুষ্টিয়া জেলা সদরে গড়াই নদের তীরে বড় বাজারে অবস্থিত। তৎকালীন পূর্ব বাংলার সর্বপ্রথম ও একমাত্র বস্ত্রশিল্প প্রতিষ্ঠান হিসেবে মিলটি শুধু অর্থনীতির বিচারই নয়, পুরো বাংলার মর্যাদাও বৃদ্ধি করেছিল। মিলটির উৎপাদিত সুতা দিয়ে তৈরি শাড়ি, ধুতি, মার্কিন ও সালু কাপড়ের সুখ্যাতি ছিল পুরো ভারতবর্ষে। সমসাময়িককালে অন্যান্য বস্ত্রকলের তুলনায় মোহিনী মিলের উৎপাদন অনেক বেশি মানসম্পন্ন ছিল বলে কালক্রমে এটি দেশের অন্যতম সেরা কাপড়ের কলে পরিণত হয়েছিল। সচল অবস্থায় মোহিনী মিল সমগ্র এশিয়ায় সর্ববৃহৎ কাপড় কলের স্বীকৃতি লাভ করে। এ মিলে প্রায় ৩ হাজার ২০০ শ্রমিক কর্মচারী দ্বারা দৈনিক ৫০ থেকে ৫৫ হাজার গজ কাপড় উৎপাদিত হতো। সেই সঙ্গে কুষ্টিয়ায় প্রায় সাড়ে ৩ হাজার পরিবারকে জীবন-জীবিকার নিশ্চয়তা দিতে সক্ষম হয়েছিল। উৎপাদিত অতিমিহি, মিহি, মাঝারি ও মোটা শাড়ি, ধুতি, ‘লং ক্লথ’ কাপড়, উন্নতমানের নকশা করা শাড়ি কাপড় বাংলার সীমা ছাড়িয়ে ভারতীয় উপমহাদেশ এর বিভিন্ন অঞ্চলে ব্যাপক চাহিদা লাভ করেছিল। পাশাপাশি কুষ্টিয়ার বস্ত্রকল শ্রমিকদের কর্মদক্ষতার গৌরবও ছড়িয়ে পড়েছিল সর্বত্র।

মোহিনী লজ

ঘটনার আবর্তে মোহিনী মিল
কুষ্টিয়ার বিখ্যাত ব্যক্তি তৎকালীন ভারতীয় সিভিল সার্ভিসের মেধাবী অফিসার মোহিনী মোহন চক্রবর্তী ১৯০৮ সালে মোহিনী মিলস অ্যান্ড কোম্পানি লিমিটেড নামে এই কাপড়ের মিলটি প্রতিষ্ঠা করেন। মাত্র আটটি কল নিয়ে শুরু হয় উৎপাদন। পরে ১৯২০ সালের দিকে এর শ্রমিক সংখ্যা ৩ হাজারে উন্নীত হয়। প্রায় ১০০ একর জায়গাজুড়ে পুরো মিলটি। এ সময় এখানে উন্নত মানের সুতা, মোটা শাড়ি, ধুতি, বেডশিট, তোয়ালে, হাসপাতালে ব্যবহৃত গজ, ব্যান্ডেজ, ধূসর ও রঙিন বর্ণের সুতা তৈরি হতো। মোহিনী মিলের মার্কিন ও শাড়ি কাপড়ের ব্যাপক চাহিদা ছিল। ধীরে ধীরে মিলটি দেশের বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের অন্যতম মাধ্যম হয়ে ওঠে। মিলটি হতে ভারত, নেপাল, পাকিস্তান, বার্মায় প্রচুর পরিমাণে সুতার রপ্তানি হতো। ১৯২০ সালে ব্রিটিশ সরকার এ দেশের শিল্পের ওপর বৈষম্যপূর্ণ এক্সাইজ ডিউটি আরোপ করে এবং এই মিলকে সুতা আমদানির জন্য ৫ শতাংশ কাস্টমস ডিউটি পরিশোধ করতে হয়।

১৯৩০ সালের মধ্যেই মোহিনী মিলের আরেকটি ইউনিট গড়ে ওঠে কলকাতার বেলঘড়িয়ায়। ১৯৪৭ সালের দেশভাগের পর স্বভাবতই মিলটি পাকিস্তানের দখলে আসে। এ সময় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন ৩৫.৬২ লাখ টাকা মুনাফা করে এবং ২৫ শতাংশ লভ্যাংশ ঘোষণা করে। মিলে তখন ৪৮ হাজার ৪৬০ স্পিনডল (সুতা কাটার টাকু) ও ৯৭৫টি তাঁতকল ছিল। মিলটিতে বড় ধাক্কা আসে ১৯৬৫ সালের ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের পর। তৎকালীন পাকিস্তান সরকার মিলটিকে শত্রু সম্পত্তি ঘোষণা করে মিলের মালিকদের দেশ ছাড়া করে এবং এর বেশির ভাগ জায়গা-জমি, যন্ত্রপাতি, স্কুল, মন্দির, খেলার মাঠ, পুকুর, মার্কেট, হাসপাতাল সবই পূর্ব পাকিস্তান শিল্প উন্নয়ন করপোরেশনের হাতে দিয়ে দেওয়া হয়। এরপর হতে মিলটির পতন শুরু হয়। ১৯৬৭ সালে মিলটি লোকসান গুনতে থাকে এবং মিলে উৎপাদন বন্ধ ঘোষণা করা হয়। মিলের অভ্যন্তরে শুরু হয় শ্রমিক অসন্তোষ ও অরাজকতা। এরপর মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে মিলটি একেবারেই বন্ধ হয়ে যায়। ১৯৭২ সালে পুনরায় শুরু হলেও অত্যধিক লোকসানের কারণে ১৯৮২ সালে তা বন্ধ করে দেওয়া হয়। এরপর মিলটি কয়েক দফায় ব্যক্তিমালিকানায় চলে যায় নিলামের মাধ্যমে। এরপরও কাক্সিক্ষত ও গুণগত উৎপাদন না হওয়ায় ১৯৮৮ সালে মিলটি আবার বন্ধ ঘোষণা করা হয়। ১৯৯১, ২০০৯ ও ২০১১ সালে মিলটি আবার বিক্রি হয় এবং বর্তমানে মিলটি বন্ধ আছে।

মোহিনী মিলের বিজ্ঞাপন

মিলে বস্ত্র তৈরির প্রক্রিয়া
প্রথমত, মিলটিতে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে তুলা আসত এবং তা প্রচলিত চরকার মাধ্যমে সুতায় রূপান্তরিত হতো। এরপর সুতাগুলোকে সুতা কাটার টাকুতে পেঁচানো হতো ওয়েভিংয়ের জন্য প্রস্তুত করতে। পরবর্তী সময়ে, স্পিনিং মেশিন বাইরে থেকে আমদানি করা হয়। এখানকার তৈরি সুতা উপমহাদেশের বিভিন্ন বস্ত্রকলে জোগান ও দক্ষিণ এশিয়ার বহু দেশে রপ্তানি করা হতো। পরবর্তী সময়ে সুতা তৈরি লাভজনক না হওয়ায় বাইরে থেকে সুতা আমদানি করা শুরু হয়। দ্বিতীয়ত, ওয়েভিংয়ের জন্য টাকুগুলোকে হ্যান্ডলুম বা তাঁতকলে স্থাপন করা হতো। মিলটির জন্য তখন ব্রিটেন থেকে আনা হয় প্রায় ২০০টি পিতলের হ্যান্ডলুম। তাঁতকলে ওয়েভিং শেষে তৈরি কাপড় যেত ডায়িংয়ের জন্য। এখানে প্রয়োজনমতো রং মেশানো হতো। ডায়িং শেষে তৈরি কাপড়গুলো বাংলাসহ সমগ্র উপমহাদেশে ছড়িয়ে পড়ত। প্রয়োজনমতো সুতা ও কাপড় গোডাউনে সংরক্ষণ করা হতো। হ্যান্ডলুম ও স্পিনিং মেশিনগুলো চালানোর জন্য প্রয়োজনীয় বিদ্যুৎ উৎপাদন হতো এই মিলটিতেই। স্টিম ব্যবহার করে বয়লারে টারবাইন ঘোরানোর মাধ্যমে বিদ্যুৎও উৎপাদিত হতো।

মিল ঘিরে শ্রমিক ও স্থানীয়দের সেতুবন্ধন
এই মিলটি বহু মানুষের জীবন-জীবিকার উৎস মূলে ছিল। মিলটিকে ঘিরে স্থানীয় শ্রমিক ও স্থানীয়দের মধ্যে গড়ে উঠেছিল সেতুবন্ধন। এলাকার মানুষের জীবনমান উন্নয়ন এবং আর্থসামাজিক ও সাংস্কৃতিক সম্পর্ক এ মিলটিকে কেন্দ্র করে আবর্তিত হতো। এটি বংশপরম্পরায় অনেক প্রজন্মের সংযোগ ঘটিয়েছিল। এ ছাড়া মিলটির বস্ত্র উৎপাদন প্রক্রিয়াটি সমসাময়িক প্রযুক্তি ব্যবহারকে চিত্রিত করে। ফ্যাক্টরি শেডগুলো সোনালি সময়ের সাক্ষ্য বহন করে। মিল কর্তৃপক্ষ অত্র এলাকায় একটি নাট্য হল তৈরি করে করে, যা মোহিনী মোহন থিয়েটার নামে পরিচিত। এখনো থিয়েটারটি প্রতিবছর বিভিন্ন নাটকের আয়োজন করে।

মোহিনী মিলের বর্তমান হালচাল
মিলের প্রায় ১০০ বিঘা জায়গার মধ্যে কারখানা আছে প্রায় ২৮ বিঘার ওপর। ওই জমিতে চারটি মসজিদ, চারটি মন্দির, একটি স্কুল, একটি কলেজ, খেলার মাঠ, একটি দাতব্য হাসপাতাল রয়েছে। আরও রয়েছে স্টাফ কোয়ার্টার, বাংলো, থিয়েটারসহ অন্যান্য স্থাপনা। বেশ কিছু জমি ও স্থাপনা বিভিন্ন প্রভাবশালীর দখলে রয়েছে। বিএমআরআই ইউনিট বন্ধ। এর বহু শেড টিন ও লোহার তৈরি বলে মরিচা পড়ে নষ্ট হচ্ছে। দীর্ঘদিন বন্ধ থাকায় বেশির ভাগ যন্ত্রপাতি অকার্যকর হয়ে পড়েছে। এই যন্ত্রগুলোর মধ্যে হালকা ও ভারী যন্ত্রাংশ, তাঁতকল, স্পিনিং মেশিন ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। বর্তমানে মিলটি পরিত্যক্ত ধ্বংসপ্রাপ্ত ও ভগ্নস্তূপে পরিণত হতে চলেছে। এর কিছু ভবন ভেঙে পড়েছে। কিছু নষ্ট মেশিন ও পরিত্যক্ত ঝুঁকিপূর্ণ ভবন ছাড়া কিছুই অবশিষ্ট নেই।

সময়ের ফ্রেমে মোহিনী মিল। ছবি: দ্য ডেইলি স্টার

শিল্পকারখানা স্থাপত্য
অত্যন্ত দুঃখের বিষয়, একসময়ের গৌরব ও অর্থনীতির অন্যতম মূল চালিকাশক্তি এই মিলটির ইতিহাস-ঐতিহ্যেও গুরুত্ব আমরা নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতে পারিনি। মিলটির অবকাঠামোগুলোকে আমরা সংরক্ষণ করতে পারিনি এবং এখনো এগুলোকে ইন্ডাস্ট্রিয়াল হেরিটেজ ও আর্কিওলজি হিসেবে ঘোষণা করা সম্ভব হয়ে ওঠেনি। মোহিনী মিলের মাস্টারপ্ল্যান থেকে দেখা যায়, সড়কপথে ঢোকার জন্য মোহিনী মোহন চক্রবর্তী রোড, লালন শাহ রোড ও কবি আজিজুর রহমান সড়ক (বর্তমান নাম) দিয়ে মিলটিতে প্রবেশ করা যেত। মিলটির পুরো জায়গার প্রায় শতকরা ৭০ ভাগ জায়গায় ছিল খালি স্থান; বাকি অংশে ফ্যাক্টরি, স্টাফ কোয়ার্টার, গোডাউন, বয়লার, ডায়িং শেডসহ অন্যান্য ভবন ছিল। এ ছাড়া একটি দাতব্য হাসপাতাল ভবনসহ বেশ কিছু মন্দির, মসজিদ, স্কুল ইত্যাদি ভবন ছিল, যা এখনো বর্তমান। মিলটির কাছাকাছি গড়াই নদের ক‚ল ঘেঁষে রেললাইন এবং নিকটবর্তীতে জগতি রেলস্টেশন রয়েছে, যা মিলটিকে কলকাতার সঙ্গে রেলপথে সংযুক্ত করেছিল। ইস্টবেঙ্গল রেলওয়ে অথরিটি এখানে প্রথম মালদা থেকে জগতি স্টেশন পর্যন্ত রেলপথ স্থাপন করেছিল। এই জগতি স্টেশনই এই বঙ্গের প্রথম স্টেশন, যা মিলটির দ্রæত বিকাশে হয় দারুণ সহায়ক। ভারত থেকে কয়েকটি রিজার্ভ বগি আসত মিলটির তৈরি সুতা নেওয়ার জন্য। গড়াই নদের দক্ষিণ-পশ্চিম অংশ ও দক্ষিণ-পূর্ব অংশের শ্রমিকদের বিশাল আবাসিক এলাকা গড়ে উঠেছিল মিলটিকে কেন্দ্র করে। পুরো মিলটির ভেতরে মানুষ্য নির্মিত বেশ কয়েকটি বড় জলাশয় রয়েছে, যা বস্ত্র প্রক্রিয়াকরণে ব্যবহৃত হতো। যদিও কালের পরিক্রমায় অনেক জলাশয় ভরাট হয়ে গেছে কিন্তু এখনো একটি বড় জলাশয় রয়েছে, যা তৎকালীন মিলটির বিদ্যুৎ উৎপাদনের কাজে লাগত। এ ছাড়া মিলটি গড়াই নদের পাশে হওয়ার কারণে কাঁচামাল আনতে ও বিপণনের জন্য নদীপথ ব্যবহার করা হতো।

মোহিনী মিলে যে শেডগুলো অবশিষ্ট রয়েছে এর মধ্যে ওয়েভিং শেড (প্রায় ৪২০ মি. x ৮০০ মি.), গোডাউন (প্রায় ৩৫০ মি. x ৮৫০ মি.), ডায়িং শেড (প্রায় ৩০০ মি. x ১৫০ মি.), স্পিনিং শেড (প্রায় ৩৫০ মি. x ৮৫০ মি.)-সহ বেশ কিছু অন্যান্য ব্রিটিশ আমলে নির্মিত ভবনসমূহ উল্লেখযোগ্য। প্রায় সব ফ্যাক্টরি শেড লাল ইটের দেয়াল দিয়ে ঘেরা এবং ছাদের লোহার ফ্রেমের ওপরে টিন দিয়ে ঢাকা ছিল। মূল ফ্যাক্টরি ভবনটির ছাদ হলো উঁচু-নিচু, জিগজাগের মতো। এর কারণ হচ্ছে শেডগুলোতে আলোর প্রবেশের জন্য। বেশির ভাগ শেডের দেয়ালে সারি সারি জানালা রয়েছে। কালক্রমে লোহার অবকাঠামোতে মরিচা পড়ে ক্ষয় হয়ে বেশ কিছু জায়গা খসে পড়েছে। শেডের মাঝখানে লোহার কলাম ব্যবহার করা হয়েছে। অন্যান্য ভবনের ছাদে ব্রিটিশ আমলের চুন-সুরকি ও কড়িবর্গার ছাদ ব্যবহারের কারণে তা এখনো টিকে আছে। এখানে বয়লারের সঙ্গে চিমনি ও স্টিম টারবাইনের পানির পাইপগুলো রয়েছে, সঙ্গে ওভারহেড ট্যাংকের অবকাঠামো ইত্যাদি এখনো টিকে আছে। তবে তা মরিচা পড়ে নষ্ট হওয়ার পথে। এভাবে একসময়ের অর্থনীতিকে শাসন করা এই বস্ত্র কারখানা এখন অবলুপ্তির পথে। এই মিলে ব্রিটিশ কলোনিয়াল স্টাইলে তৈরি উল্লেখিত বেশ কিছু ভবনসহ যেসব শেড রয়েছে, তা বর্তমানে ঝুঁকিপূর্ণ। মোহিনী মিলের স্টাফ কোয়ার্টার ভেঙে পড়েছে। যে ভবনগুলো টিকে আছে, তা সংরক্ষণ করা এখন অত্যন্ত জরুরি।

নষ্ট হচ্ছে মোহিনী মিলের যন্ত্রাংশ

শিল্পকারখানা প্রত্নসম্পদ
এই মিলের বহু হ্যান্ডলুম বা তাঁতকল, স্পিনিং, ডায়িং মেশিনসহ বিভিন্ন সুতা কাটার চরকা, টাকু ও যন্ত্রাংশ এখনো অবশিষ্ট রয়েছে, যা অবলুপ্তির পথে। বয়লার ও টারবাইনের যন্ত্রাংশ, পানির পাইপ, পানির ট্যাংক, চিমনি, পুরোনো যানসহ বহু লোকোমোটিভ রয়েছে, যা ভবিষ্যৎ প্রজন্ম ও আগ্রহী গবেষকদের দারুণ শিক্ষা ও জ্ঞানলাভের মাধ্যম হয়ে উঠতে পারে। তাই এসব পরিত্যক্ত শিল্পপ্রত্ন সম্পদ সংরক্ষণ জরুরি।

স্থাপনা ও লোকোমোটিফগুলো সংরক্ষণ করা জরুরি
মোহিনী মিলের বর্তমান পরিত্যক্ত স্থাপনা ও লোকোমোটিফগুলো শুধু অতীত বস্ত্রশিল্পের স্বর্ণ উজ্জ্বল ইতিহাসই স্মরণ করিয়ে দেয় না বরং আর্থসামাজিক উন্নয়নেও তৎকালীন সমসাময়িক জ্ঞানও শিক্ষা দেয়। আমাদের এই স্থাপনাগুলোকে শিল্পকারখানা স্থাপত্য ও প্রতœতত্ত¡ হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান ও সার্বিকভাবে সংরক্ষণ করতে হবে। যাতে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম ও আগ্রহী গবেষকগণ যেন জানতে পারে আমাদের অতীত প্রযুক্তি ও সাংস্কৃতির ইতিহাস। মোহিনী মিল শুধু আমাদের দেশেই নয় বরং পুরো দক্ষিণ এশিয়ার গৌরব ছিল। বহু দেশে মোহিনী মিলের তৈরি কাপড় রপ্তানি হতো।

স্থপতি তাবাসসুম সুলতানার ভাবনা ও ডিজাইনে আধুনিক মোহিনী মিলের চিত্র

লেখক: সহকারী অধ্যাপক, স্থাপত্য বিভাগ, মিলিটারি ইনস্টিটিউট অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি

প্রকাশকাল: বন্ধন ১৬৪ তম সংখ্যা, মে ২০২৪

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top