কর্মময় জীবনই সম্মানজনক

বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমের নদী বিধৌত শিল্পনগরী খুলনা। প্রাকৃতিক বন, মৎস্য সম্পদ, কল-কারখানায় সমৃদ্ধ এই নগরের একজন স্বনামধন্য নির্মাণপণ্য ব্যবসায়ী মো. আব্দুল মালেক। শের-এ-বাংলা রোড, খুলনার ‘একতা এন্টারপ্রাইজ’-এর স্বত্বাধিকারী যিনি। বন্ধন-এর নিয়মিত আয়োজন ‘সফল যাঁরা কেমন তাঁরা’ পর্বে এবার জানাব এ ব্যবসায়ীর সাফল্য-রহস্য।

সহযোগিতায় ছিলেন আকিজ সিমেন্ট কোম্পানির সিনিয়র টেরিটরি ম্যানেজার মো. তহিদুল ইসলাম সরকার

ব্যবসায়ী মো. আব্দুল মালেকের জন্ম ১৯৫৪ সালে চাঁদপুর জেলায়। বাবা মরহুম হাফেজ ওসমান গনি ও মা মরহুমা মাহমুদা বেগম। বাবা ছিলেন খুলনার একটি মসজিদের ইমাম। সে সুবাদে পরিবারের সদস্যরা স্থায়ী হন খুলনায়। তখন পড়তেন স্কুলে; কিশোর বয়স। সে বয়সেই তাঁকে নামতে হয় জীবনযুদ্ধে। নানা প্রতিকূলতা ও ঘাত-প্রতিঘাত পেরিয়ে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন সফল একজন নির্মাণপণ্য ব্যবসায়ী হিসাবে। এখন তিনি আকিজ সিমেন্ট কোম্পানির, খুলনা টেরিটরির সর্ব্বোচ বিক্রেতা। বর্তমানে তাঁর ব্যবসাসম্ভারে রয়েছে সিমেন্ট, গ্যাস ও চুলা। এছাড়াও রয়েছে মৎস্য ঘের।

মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী সময়। দূর্ভিক্ষ কবলিত দেশের মত, আব্দুল মালেকের পরিবারটিও দিন কাটছিল অভাব-অনটনে। বছর কয়েক আগেই গত হয়েছেন বাবা। সংসারের দায়টা তখন ভায়েদের কাধে। উপযুক্ত চাকুরি না পেয়ে নিরুপায় হয়ে বড় ভাই শিপইয়ার্ডে রাজমিস্ত্রীর কাজ নেন আর তিনি হন তাঁর সহযোগি মিস্ত্রী (জোগালে)। কিন্তু কাজটি প্রতিদিন পাওয়া যেতো না। ফলে সিদ্ধান্ত নেন পরিবহন সেক্টরে কাজের। বিনা পারিশ্রমিকে কয়েক মাসের চেষ্টায় গাড়ি চালানো শেখেন। মাসখানের মধ্যে মোটর-পরিবহনে পেয়ে যান একটি চাকরিও। ১৯৭৬ সাল থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত করেন চাকরিটি। পরবর্তীতে চাকরি ছেড়ে ২টি পরিবহন ট্রাক কেনেন, যার একটি চালাতেন তিনি। সারা বাংলাদেশ ঘুরতে হতো; বাড়ছিল বয়সও। দীর্ঘ সময় পরিবহন জগতে বিচরণের পর তাই চাচ্ছিলেন কোথাও থিতু হতে। এ সময়ই বড় ভাই তাঁকে সিমেন্ট ব্যবসার পরামর্শ দেন। ব্যবসাটির ব্যবসায়িক সম্ভাবনা উপলব্ধি করে ২০০৯ সালে পরিচিত একটি সিমেন্ট দোকানে বিনিয়োগ করেন, ব্যবসা শেখার উদ্দেশ্যে। কিন্তু সেখানে বিনিয়োগের পরে পড়েন হুমকির মুখে, পাচ্ছিলেন না কোন পারিশ্রমিকও। অবশেষে ২০১০ সালে একটি দোকান নিয়ে এককভাবে শুরু করেন সিমেন্ট ব্যবসা।

নিজ দোকান প্রতিষ্ঠার পর আর পিছন ফিরে তাকাতে হয়নি আব্দুল মালেককে। শুরুতে অন্য ব্র্যান্ডের সিমেন্ট বিক্রি করলেও এক পর্যায়ে আকিজ সিমেন্ট বিক্রি শুরু করেন। মাত্র ৫০ ব্যাগ দিয়ে যাত্রাশুরু। এক দিনের মধ্যেই সম্পূর্ণ সিমেন্ট বিক্রি হয়ে যায়। এরপর বিক্রি হতে থাকে প্রচুর পরিমানে সিমেন্ট। গুণগতমানের এ পণ্যটি তাঁকে এনে দেয় অনন্য ব্যবসায়িক সাফল্য। পণ্যটি বিক্রিতে তিনি ক্রমেই খুলনার সর্বোচ্চ বিক্রেতা হয়ে ওঠেন। অভূতপূর্ব ব্যবসায়িক সাফল্যে কোম্পানির পক্ষ থেকে পেয়েছেন মাইক্রো ওভেন, ক্রোকারিজ সামগ্রী, স্মার্ট ফোন, স্বর্ণালংকার, নগদ টাকা প্রভৃতি। এ ছাড়াও কোম্পানির পক্ষে ভ্রমণ করেছেন কক্সবাজার, শ্রীমঙ্গল, সুন্দরবনসহ বিভিন্ন দর্শনীয় স্থান।

ব্যবসায়ী আব্দুল মালেক ও ছেলে রাইহান আহমাদ

মো. আব্দুল মালেক আজ একজন সফল ব্যবসায়ী। কিন্তু সহজে আসেনি এমন সাফল্য। নেপথ্যে রয়েছে তাঁর সততা, মেধা, দূরদৃষ্টি ও সীমাহীন পরিশ্রমের উপাখ্যান। দ্রুততম সময়ের মধ্যে তিনি নির্মাণ প্রকল্পগুলোতে সিমেন্ট ডেলিভারি দেন। অর্ডার পাওয়ার পর বিন্দুমাত্র দেরি নয়; হোক দিন কিংবা রাত! অন্য সাইটে পণ্য পৌঁছার পর ডেলিভারির গাড়ী আসতে দেরি হলে, অনেক সময় তিনি নিজে সাইকেলে করে সিমেন্ট পৌছেঁ দেন। সীমিত মুনাফা পেলেই পণ্য বিক্রিতে দ্বিধা করেন না। ফলে তাঁর দোকানটি বেশি বড় না হলেও আশেপাশে বড় বড় নির্মাণপণ্যের দোকানের থেকেও বিক্রি হয় বেশি। এখন তাঁর ইচ্ছা পাশ্ববর্তী কোয়ে বাজারে আরো একটি বড় শোরুম দেওয়ার পাশাপাশি রডের ব্যবসায় সম্পৃক্ত হওয়া।

ব্যবসায়ী মো. আব্দুল মালেক বিয়ে করেন ১৯৮৮ সালে। স্ত্রী সুফিয়া বেগম। এ দম্পত্তির ২ ছেলে ১ মেয়ে। বড় ছেলে রাইহান আহমাদ, আরবী বিষয়ে স্নাতোকোত্তর সম্পন্ন করে বাবার ব্যবসায় সহযোগিতা করছে, মেঝো ছেলে আব্দুর রহমান মোহাম্মদ নগর কাওমি মাদ্রাসায় মাওলানা পড়ছে এবং ছোট মেয়ে শারমিন সুলতানা উম্মে হাবিবা মহিলা মাদ্রাসা থেকে মাওলানা সম্পন্ন করেছে।

একনজরে
ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের নাম:
একতা এন্টারপ্রাইজ
স্বত্বাধিকারীর নাম: মো. আব্দুল মালেক
অবস্থান: শের-এ-বাংলা রোড, খুলনা
ব্যবসা শুরু: ২০১০ সালে
নির্মাণপণ্য: সিমেন্ট, গ্যাস ও চুলা।

মাহফুজ ফারুক

প্রকাশকাল: বন্ধন ১৪৭ তম সংখ্যা, নভেম্বর ২০২২

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top