আদি মানুষ গুহায় বাস করত। সভ্যতার শুরুতে প্রকৃতি আর হিংস্র জানোয়ারের হাত থেকে নিজেদের রক্ষা করতে মানুষ মাটির নিচে গুহা বানিয়ে সেখানেই থাকত। ঘর বানাতে শেখার পর মানুষ গুহা ছেড়ে মাটির ওপরে থাকতে শুরু করল। বিশ্বের অধিকাংশ মানুষ ভুলেই গিয়েছিল আদি পুরুষদের সেই প্রতিকূল পরিবেশে বসবাসের কথা। কেবল ভোলেনি অস্ট্রেলিয়ার ক্যুবার পেডিরা। তারা এখনো মাটির নিচে বাস করে বিশ্ববাসীকে তাক লাগিয়ে দিয়েছে। বলা যায়, এটিই পৃথিবীর একমাত্র মাটির তলার নগরী।
জায়গাটার নাম ক্যুবার পেডি। এটি হচ্ছে পৃথিবীর একমাত্র মাটির তলার নগরী। প্রাযুক্তিক উৎকর্ষতার এই যুগেও মাটির নিচে বসবাস অবাস্তব শোনালেও বিষয়টি শতভাগ সত্য। অস্ট্রেলিয়ার বিখ্যাত নগরী অ্যাডিলেড থেকে প্রায় ৮৪৬ কি.মি. দূরে উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের মরুভূমিতে ক্যুবার পেডির অবস্থান। সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয় হলো- ক্যুবার পেডি এক সময় শতভাগ জনমানবশূন্য ছিল। এখনো এটি মানুষের বসবাস উপযোগী নয়। কারণ, গ্রীষ্মে এখানকার তাপমাত্রা ৫০ ডিগ্রি সেলসিয়াসে উঠে। আবার শীতকালে তাপমাত্রা নেমে আসে শূন্য ডিগ্রিরও নিচে। এমন অবস্থায় মানুষের পক্ষে মানিয়ে নেয়া সত্যি কঠিন। আর সেই সঙ্গে ধূলি ঝড়, পানির কষ্ট ইত্যাদি তো রয়েছেই। তাই ক্যুবার পেডিতে মানুষ বসবাস করবে এটি ছিল কল্পনারও অতীত।
কল্পনাতীত এই বিষয়টিই একসময় বাস্তব হয়ে ওঠে। সব প্রতিকূলতা সত্ত্বেও ক্যুবার পেডিতে গড়ে উঠেছে অত্যাধুনিক একটি শহর। যে শহরটি মাটির ওপরে নয়, নিচে অবস্থিত। আধুনিক নগরীর সুবিধাসংবলিত ক্যুবার পেডিতে রয়েছে রেস্তরাঁ, বইয়ের দোকান, গির্জা, গলফ ক্লাব, বিনোদন কেন্দ্র, ব্যাংক, আর্ট গ্যালারি, মার্কেট কমপ্লেক্স। পৃথিবীর যেকোনো আধুনিক শহরের সঙ্গে পাল্লা দেয়ার মতো সবই আছে সেখানে।

তবে এখানকার এই জাঁকজমক একদিনে গড়ে উঠেনি। এর পেছনে রয়েছে মজার এক গল্প। এ ক্যুবার পেডির পাথুরে জমির সাথে মিশেছিল বিশেষ এক ধরনের রত্ম। এই রতেœর নাম ‘ওপাল’। এই জায়গাটার বিশেষত্ব প্রথম আবিষ্কার করেন উইল হাচিসন নামের ১৪ বছরের এক কিশোর। ঘটনাটা ঘটেছিল ১৯১১ সালে। এই মজার আবিষ্কারের আগে এখানকার বাসিন্দা বলতে ছিল মরুভূমির সাপ, বিষাক্ত পোকামাকড়, টিকটিকি আর ইমু পাখি। কিন্তু ওপালের অস্তিত্ব আবিষ্কার বদলে দিতে শুরু করল ক্যুবার পেডিকে।
ওপাল আবিষ্কারের পর বহু রত্মলোভী পাড়ি জমাল এখানে। রত্নের সন্ধানে শুরু হলো খোঁড়াখুঁড়ি। আস্তে আস্তে ক্যুবার পেডির বাণিজ্যিক গুরুত্ব বাড়তে লাগলো। ক্যুবার পেডি নামকরণের পেছনেও রয়েছে ছোট একটি ইতিহাস। এখানকার আদিবাসীরা মাইনারদের খোঁড়াখুঁড়ি দেখে তাদের ভাষায় জায়গার নাম দিয়েছিল কুপা সিটি। যার অর্থ মাটিতে সাদা মানুষের গর্ত। কালের বিবর্তনে সেটাই বদলে গিয়ে ক্যুবার পেডি হয়ে যায়। সব মরুভূমিতেই দিনে প্রচন্ড গরম আর রাতে হাড় কাঁপানো ঠান্ডা থাকে। মাটির নিচে কিছুটা গেলেই অন্যরকম হয়ে যায় সবকিছু। পৃথিবী নিজেই যেন একটা প্রাকৃতিক এয়ারকন্ডিশনার। তাই মাটির নিচে গড়পড়তা সহনশীল একটা তাপমাত্রা পাওয়া যায় সারা বছরই। অন্য দিকে খোঁড়াখুঁড়ির জন্য মাইনারদের দিনের বেশিরভাগ সময়ই কাটাতে হয় মাটির নিচে। তাই, সেখানে থাকার ঘরটাও বানিয়ে নিলে মন্দ কি! মাটির নিচে থাকলে ধূলিঝড় থেকেও বাঁচা যাবে। শুরু হলো মাটির নিচে বসতি বানানো।
এভাবেই গড়ে উঠেছে ক্যুবার পেডি। শুধু থাকার জায়গা নয়, তৈরি হয়েছে বিদ্যুৎ ব্যবস্থা, পানি সমস্যার সমাধান। পানির ব্যাপারে ক্যুবার পেডির জনগণ ভীষণ সচেতন। মরুভূমিতে পানির অভাবের কারণে তারা গোসল ও ধোয়ামোছার ব্যবহৃত পানি রিসাইকেলের মাধ্যেমে সদ্ব্যবহার করে অন্যান্য কাজে। তবে এসব অসুবিধা সত্ত্বেও আজকের ক্যুবার পেডি এতটাই জমজমাট যে, অস্ট্রেলিয়ার অনেক ট্যুরিস্টই এক ঝলক দেখে যান জাগয়াটিকে। আর স্থানীয় বাসিন্দাদের তো কথাই নেই! বেশ কয়েকজন ক্যুবার পেডিবাসী অন্যত্র বসবাসের সিদ্ধান্ত নিয়েও কিছুকাল বাইরে কাটিয়ে আবার ফিরে এসেছে ক্যুবার পেডিতে।
তবে নিজেদের প্রয়োজনের জন্য তৈরি করা শহটির মাটির নিচের ঘর-বাড়িগুলোই এখন হয়ে উঠেছে পর্যটকদের প্রধান আকর্ষণ। আরামদায়ক উষ্ণতার সঙ্গে বিনোদনের খোঁজে দূরদূরান্ত থেকে লোকজন গ্রীষ্মকালে উত্তপ্ত হয়ে ওঠা এই শহরটিতেই ছুটে আসতে শুরু করে। অদ্ভুত সুন্দর এই পাতাল নগরী যে কাউকেই মুগ্ধ করবে।
আদি মানুষ গুহায় বাস করত। সভ্যতার শুরুতে প্রকৃতি আর হিংস্র জানোয়ারের হাত থেকে নিজেদের রক্ষা করতে মানুষ মাটির নিচে গুহা বানিয়ে সেখানেই থাকত। ঘর বানাতে শেখার পর মানুষ গুহা ছেড়ে মাটির ওপরে থাকতে শুরু করল। বিশ্বের অধিকাংশ মানুষ ভুলেই গিয়েছিল আদি পুরুষদের সেই প্রতিকূল পরিবেশে বসবাসের কথা। কেবল ভোলেনি অস্ট্রেলিয়ার ক্যুবার পেডিরা। তারা এখনো মাটির নিচে বাস করে বিশ্ববাসীকে তাক লাগিয়ে দিয়েছে। বলা যায়, এটিই পৃথিবীর একমাত্র মাটির তলার নগরী।
জায়গাটার নাম ক্যুবার পেডি। এটি হচ্ছে পৃথিবীর একমাত্র মাটির তলার নগরী। প্রাযুক্তিক উৎকর্ষতার এই যুগেও মাটির নিচে বসবাস অবাস্তব শোনালেও বিষয়টি শতভাগ সত্য। অস্ট্রেলিয়ার বিখ্যাত নগরী অ্যাডিলেড থেকে প্রায় ৮৪৬ কি.মি. দূরে উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের মরুভূমিতে ক্যুবার পেডির অবস্থান। সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয় হলো- ক্যুবার পেডি এক সময় শতভাগ জনমানবশূন্য ছিল। এখনো এটি মানুষের বসবাস উপযোগী নয়। কারণ, গ্রীষ্মে এখানকার তাপমাত্রা ৫০ ডিগ্রি সেলসিয়াসে উঠে। আবার শীতকালে তাপমাত্রা নেমে আসে শূন্য ডিগ্রিরও নিচে। এমন অবস্থায় মানুষের পক্ষে মানিয়ে নেয়া সত্যি কঠিন। আর সেই সঙ্গে ধূলি ঝড়, পানির কষ্ট ইত্যাদি তো রয়েছেই। তাই ক্যুবার পেডিতে মানুষ বসবাস করবে এটি ছিল কল্পনারও অতীত।
কল্পনাতীত এই বিষয়টিই একসময় বাস্তব হয়ে ওঠে। সব প্রতিকূলতা সত্ত্বেও ক্যুবার পেডিতে গড়ে উঠেছে অত্যাধুনিক একটি শহর। যে শহরটি মাটির ওপরে নয়, নিচে অবস্থিত। আধুনিক নগরীর সুবিধাসংবলিত ক্যুবার পেডিতে রয়েছে রেস্তরাঁ, বইয়ের দোকান, গির্জা, গলফ ক্লাব, বিনোদন কেন্দ্র, ব্যাংক, আর্ট গ্যালারি, মার্কেট কমপ্লেক্স। পৃথিবীর যেকোনো আধুনিক শহরের সঙ্গে পাল্লা দেয়ার মতো সবই আছে সেখানে।
তবে এখানকার এই জাঁকজমক একদিনে গড়ে উঠেনি। এর পেছনে রয়েছে মজার এক গল্প। এ ক্যুবার পেডির পাথুরে জমির সাথে মিশেছিল বিশেষ এক ধরনের রত্ম। এই রতেœর নাম ‘ওপাল’। এই জায়গাটার বিশেষত্ব প্রথম আবিষ্কার করেন উইল হাচিসন নামের ১৪ বছরের এক কিশোর। ঘটনাটা ঘটেছিল ১৯১১ সালে। এই মজার আবিষ্কারের আগে এখানকার বাসিন্দা বলতে ছিল মরুভূমির সাপ, বিষাক্ত পোকামাকড়, টিকটিকি আর ইমু পাখি। কিন্তু ওপালের অস্তিত্ব আবিষ্কার বদলে দিতে শুরু করল ক্যুবার পেডিকে।

ওপাল আবিষ্কারের পর বহু রত্মলোভী পাড়ি জমাল এখানে। রত্নের সন্ধানে শুরু হলো খোঁড়াখুঁড়ি। আস্তে আস্তে ক্যুবার পেডির বাণিজ্যিক গুরুত্ব বাড়তে লাগলো। ক্যুবার পেডি নামকরণের পেছনেও রয়েছে ছোট একটি ইতিহাস। এখানকার আদিবাসীরা মাইনারদের খোঁড়াখুঁড়ি দেখে তাদের ভাষায় জায়গার নাম দিয়েছিল কুপা সিটি। যার অর্থ মাটিতে সাদা মানুষের গর্ত। কালের বিবর্তনে সেটাই বদলে গিয়ে ক্যুবার পেডি হয়ে যায়। সব মরুভূমিতেই দিনে প্রচন্ড গরম আর রাতে হাড় কাঁপানো ঠান্ডা থাকে। মাটির নিচে কিছুটা গেলেই অন্যরকম হয়ে যায় সবকিছু। পৃথিবী নিজেই যেন একটা প্রাকৃতিক এয়ারকন্ডিশনার। তাই মাটির নিচে গড়পড়তা সহনশীল একটা তাপমাত্রা পাওয়া যায় সারা বছরই। অন্য দিকে খোঁড়াখুঁড়ির জন্য মাইনারদের দিনের বেশিরভাগ সময়ই কাটাতে হয় মাটির নিচে। তাই, সেখানে থাকার ঘরটাও বানিয়ে নিলে মন্দ কি! মাটির নিচে থাকলে ধূলিঝড় থেকেও বাঁচা যাবে। শুরু হলো মাটির নিচে বসতি বানানো।
এভাবেই গড়ে উঠেছে ক্যুবার পেডি। শুধু থাকার জায়গা নয়, তৈরি হয়েছে বিদ্যুৎ ব্যবস্থা, পানি সমস্যার সমাধান। পানির ব্যাপারে ক্যুবার পেডির জনগণ ভীষণ সচেতন। মরুভূমিতে পানির অভাবের কারণে তারা গোসল ও ধোয়ামোছার ব্যবহৃত পানি রিসাইকেলের মাধ্যেমে সদ্ব্যবহার করে অন্যান্য কাজে। তবে এসব অসুবিধা সত্ত্বেও আজকের ক্যুবার পেডি এতটাই জমজমাট যে, অস্ট্রেলিয়ার অনেক ট্যুরিস্টই এক ঝলক দেখে যান জাগয়াটিকে। আর স্থানীয় বাসিন্দাদের তো কথাই নেই! বেশ কয়েকজন ক্যুবার পেডিবাসী অন্যত্র বসবাসের সিদ্ধান্ত নিয়েও কিছুকাল বাইরে কাটিয়ে আবার ফিরে এসেছে ক্যুবার পেডিতে।
তবে নিজেদের প্রয়োজনের জন্য তৈরি করা শহটির মাটির নিচের ঘর-বাড়িগুলোই এখন হয়ে উঠেছে পর্যটকদের প্রধান আকর্ষণ। আরামদায়ক উষ্ণতার সঙ্গে বিনোদনের খোঁজে দূরদূরান্ত থেকে লোকজন গ্রীষ্মকালে উত্তপ্ত হয়ে ওঠা এই শহরটিতেই ছুটে আসতে শুরু করে। অদ্ভুত সুন্দর এই পাতাল নগরী যে কাউকেই মুগ্ধ করবে।
মেহেদী হাসান
প্রকাশকাল: বন্ধন ২৫ তম সংখ্যা, মে ২০১২