বিপ্লবের লাল নিশান রেড স্কয়ার

লাল বিপ্লবের রং, যুগে যুগে রুশদের সংগ্রামী হতে শিখিয়েছে এই রং। রংটিকে তারা যেমন ধারণ করেছে স্বীয় বুকে, তেমনি ঐতিহাসিক বিভিন্ন স্থাপনাকে রাঙিয়েছে লালের আবিরে। তাদের এই রং-প্রীতি এমন যে রাশিয়ার সবচেয়ে জনপ্রিয় স্থানটির নামকরণও এই রঙেরই নামে। বিখ্যাত এই স্থানটির নাম রেড স্কয়ার। এটি রাশিয়ার রাজধানী মস্কোর বিখ্যাত এক নগর চত্বর বা চক। ঐতিহাসিকভাবে এটি কিতে গোরোদ বা চায়না টাউন নামেও পরিচিত। রাশিয়াবাসীর কাছে আকর্ষণীয় স্থানটি বিপ্লবের প্রতীক; অত্যন্ত প্রিয়। শুধু দেশটির অধিবাসীদের কাছেই নয়, সারা বিশ্বের মানুষের কাছে এটি জনপ্রিয় পর্যটনকেন্দ্র। অন্য কোনো জায়গা রাশিয়াকে এত সুন্দরভাবে উপস্থাপন করতে পারেনি। পুরো চত্বরটি একটি লাল ইটের ময়দান আর এর চারপাশ ঘিরে রয়েছে বিখ্যাত গির্জা, মার্কেট, বিশ্ববিদ্যালয়, নাট্যমঞ্চ, লাইব্রেরিসহ আনুষঙ্গিক স্থাপনা। চকটির ঐতিহাসিক গুরুত্ব উপলব্ধি করে ইউনেসকো ১৯৯০ সালে রেড স্কয়ার ও সংলগ্ন ক্রেমলিনকে তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়নের (বর্তমানে রাশিয়া) অত্যধিক গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা হিসেবে বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থানের মর্যাদা প্রদান করে।

ক্রেমলিন ভবনের চিত্রকর্ম

ঐতিহাসিক এই চকটি আয়তনে খুব একটা বড় নয়। বলা চলে বড়সড় লম্বাকৃতির কোনো খেলার মাঠ। আয়তন প্রায় আট লাখ স্কয়ার ফুট (৭৩ হাজার স্কয়ার মিটার)। এটি মস্কোর কেন্দ্রীয় চত্বরও বটে। এখানকার সঙ্গে পুরো রাশিয়ার যোগাযোগব্যবস্থা অত্যন্ত চমৎকার। শহরের যেকোনো স্থান থেকে চকে আসা যায় খুব সহজেই। দুনিয়ার সেরা স্থাপনার মিলনস্থল এই চত্বরটিকে কেন্দ্র করেই। ত্রিমাত্রিক আয়তনের চকটিতে রয়েছে পাঁচটি ফটক ও ২৯টি টাওয়ার। তবে এখানকার সবচেয়ে আকর্ষণীয় স্থাপনা বিখ্যাত গির্জা দ্য ক্যাথেড্রল অব সেইন্ট ব্যাসিল ও ক্রেমলিন। এর পাশেই একটি সাদা পাথরের প্লাটফর্ম। মস্কোর প্রথম পাবলিক লাইব্রেরিও এখানেই। রাশিয়ার বিখ্যাত সুপার মার্কেট গুম চকটির বেশ জনপ্রিয় স্থান, যার নির্মাণকাল ১৮৮৯-৯৩। সত্তর ও আশির দশকে সোভিয়েত ইউনিয়ন থাকাকালে সমগ্র দেশের মধ্যে এটিই ছিল সবচেয়ে বড় সুপার মার্কেট। তাই এটিকে ভেলকি টর্গ (বিখ্যাত মার্কেট) বলা হতো। রাশিয়ার ঐতিহ্যবাহী নানা পণ্যসম্ভারের দেখা মেলে এই মলেই। মস্কোর প্রথম পাবলিক লাইব্রেরি ও মস্কো বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থানও এখানেই। ১৮৭৫-৮৩ সালে নির্মিত পিটার্সবার্গের বিখ্যাত ঐতিহ্যবাহী জাদুঘর দ্য স্টেট হিস্টোরিক্যাল মিউজিয়াম (নির্মাণ) স্কয়ারের উত্তরের শেষ প্রান্তে অবস্থিত। জাদুঘরে রয়েছে রাশিয়ার নানা জানা অজানা ইতিহাসের তথ্য-উপাত্ত। অন্যদিকেই লেনিন মিউজিয়াম। কালো পাথরে মোড়া রাস্তার খুব কাছেই সোভিয়েত ইউনিয়নের প্রতিষ্ঠাতা ভ্লাদিমির ইলিচ লেলিনের সমাধি। আরও কিছুটা পথ এগিয়ে গেলে দেখা মিলবে যুদ্ধে নিহত অজানা সব সৈনিকের স্মৃতিসৌধ। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে যে সব সোভিয়েত সেনারা প্রাণ দিয়েছেন দেশ রক্ষায়, তাঁদের স্মৃতিতে নির্মিত এই সৌধ। সোভিয়েত আমলে দেশি-বিদেশি নেতারা মস্কোয় এলে লেনিন সমাধির পরে দ্বিতীয় যে স্থানে অতি অবশ্যই যেতেন তা হলো এই অজানা সেনাদের স্মৃতিসৌধে। এ ছাড়া রয়েছে মার্কেট, থাকার ভবন, গির্জা, নাট্যমঞ্চ ইত্যাদি। ক্রেমলিনের পূর্বে রয়েছে এখানকার দৃষ্টিনন্দন মস্কভা নদী। দর্শনীয় এসব জায়গা দেখার সব ধরনের সুযোগ-সুবিধার জন্য আছে বিলাসবহুল সব হোটেল। এখানকার একটি পেইন্টিং হাউসে রয়েছে পৃথিবীখ্যাত চিত্রশিল্পীদের চিত্রকর্ম।

রাশিয়ার সাড়া জাগানো কুচকাওয়াজ

এই রেড স্কয়ারকে ঘিরেই মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে সমগ্র রাশিয়ার ইতিহাস। চত্বরটিকে ‘রেড স্কয়ার’ নামকরণ করা হয় সপ্তদশ শতকে। রুশ শব্দ ক্রান্সনি (krasnaya) অর্থাৎ লাল কিংবা সুন্দর থেকেই এসেছে নামটি। ইটের লাল রং অথবা সমাজতন্ত্রের লাল রঙের মধ্যকার সম্পর্কের জন্যই রেড স্কয়ার নামকরণ করা হয়েছে, সবার ধারণা এমন হলেও অনেক ঐতিহাসিক এর সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করেন। কারণ, দূর অতীতে সেখানে সাদা রঙের স্থাপনা ছিল। সোভিয়েত ইউনিয়নের তৎকালীন শাসক তৃতীয় ইভানের শাসনামলে ১৪০০ সালের শেষের দিকে এই এলাকাটিতে বিভিন্ন স্থাপনা গড়ে ওঠে। এখানে বেশ কয়েকবার বহিঃশত্রুর আক্রমণ ও ভয়াবহ  অগ্নিকাণ্ড ঘটেছিল। ১৫৫৭ সালে তাতারেরা এলাকাটি আক্রমণ করে এলাকাটিকে জ্বালিয়ে দেয়। এমনকি বিখ্যাত এই এলাকাটি একসময় ছিল বস্তিবাসীর দখলে। জেল পালানো দাগী আসামি, অপরাধী, মদ্যপ, খুনিসহ ভয়ঙ্কর সন্ত্রাসীদের আস্তানা ছিল এখানে। ১৭ শতকে স্কয়ারের সব কাঠের স্থাপনা বিলুপ্ত করা হয় এবং গড়ে তোলা হয় নতুন সব স্থাপনা। মূলত স্কয়ারটি স্বরূপে আবির্ভূত হয় বিংশ শতকে।

চকটি পৃথিবীর বিখ্যাত ব্যক্তিদের মমির আবাসস্থল হিসেবে চিহ্নিত। যোসেফ স্ট্যালিনের মরদেহ এই চকেই সংরক্ষিত ছিল। বলশেভিক পার্টির প্রতিষ্ঠাতা ভ্লাদিমির ইলিস লেনিনের জীবনাবসানের পর তাঁর মরদেহ মমি করে রাখা হয় স্কয়ারে বিশেষভাবে নির্মিত সমাধিকক্ষে।  কিন্তু পরে তা স্থানান্তরিত হয় এবং ক্রেমলিন প্রাচীরের কাছে কোনো রকম আনুষ্ঠানিকতা ছাড়াই সমাহিত করা হয়। সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর থেকেই রেড স্কয়ার থেকে লেনিনের মমি সরানোর চেষ্টা চলছে। প্রতিবছর কমরেড লেনিনের প্রয়াণ দিবসে জমাট কুয়াশা ও কনকনে ঠান্ডাকেও উপেক্ষা করে রক্তলাল পতাকা, ব্যানার, ফেস্টুন প্রভৃতি হাতে তার অগণিত ভক্ত শ্রদ্ধা জানাতে হাজির হয় এই চকে। বিস্ময় জাগে তাক লাগানো তারুণ্যের ভিড় দেখে। সারা বিশ্বের লেলিনভক্তরা রাশিয়ায় আসবে অথচ এই স্কয়ারে আসবে না এমনটি ঘটে না বললেই চলে।

ক্রেমলিন ভবন

স্কয়ারটিকে রাশিয়ার পবিত্র ও আশীর্বাদপুষ্ট স্থান হিসেবে মনে করা হয়। এই স্কয়ারকে রাশিয়ার পর্যটনের প্রাণ বলা হয়। বেশ কয়েক যুগ ধরে মস্কোর অন্যতম বাণিজ্যকেন্দ্র ও গণজমায়েত হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে এই চকটি। পর্যটকদের  মুখর পদচারণ, বিয়েসহ বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠান, বিজনেস কনফারেন্স এ সবকিছুরই কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে চকটি। আর এসব আচার-অনুষ্ঠান শেষে ক্লিক ক্লিক শব্দে শুরু হয় ফটো তোলার হিড়িক। রাতে চকটি হয়ে পড়ে জনশূন্য। তখন ক্রেমলিন ও সেন্ট ব্যাসিলের ফ্লাডলাইটের আলোয় তারাভরা আকাশের নিচে রচিত হয় এক নৈসর্গিক পরিবেশ। স্কয়ারটি দেশটির জন্য হয়ে উঠেছে বেশ লাভজনক স্থান। প্রতিনিয়তই অনুষ্ঠিত হচ্ছে চোখ ধাঁধানো কনসার্ট। লিংকন পার্ক, শাকিরা, স্করপিয়ন, রজার ওয়াটারস, রেড হট চিলি পেপার্সসহ বিশ্ববিখ্যাত ব্যান্ড দল ও তারকাদের গানে মুখরিত হয় জায়গাটি। বিখ্যাত ব্যান্ড বিটলসও পারফর্ম করেছে এখানে। বিশেষ করে নতুন বছরকে স্বাগত জানাতে হাজির হয় বিশ্ববিখ্যাত সব তারকা। নববর্ষ বরণের সময়ে হাজার হাজার আতশবাজিতে মুখরিত হয়ে ওঠে চকটি। এ ছাড়া সারা বছর নানা সিনেমা, ডকুমেন্টারি ও অন্যান্য শুটিং লেগেই থাকে এখানে।

সারা বিশ্বে এটি বিখ্যাত প্যারেড গ্রাউন্ড হিসেবেও পরিচিত। সোভিয়েত ইউনিয়নের বিশাল সেনাবাহিনী সুশৃঙ্খল কুচকাওয়াজই মূলত জায়গাটিকে নতুন পরিচিতি দেয়। বিশ্বের ইতিহাসে অত্যন্ত সাড়া জাগানো মিলিটারি প্যারেড এই স্কয়ারেই অনুষ্ঠিত হয়। প্রথমটি ৭ নভেম্বর ১৯৪১ সালে জার্মানি সেনাকে হটিয়ে দেওয়ার পর। অন্যটি ১৯৪৫ সালে তাদের পরাজিত করে বিজয় দিবসের প্যারেডে। এ ছাড়া সোভিয়েত ইউনিয়ন থাকাকালীন মে দিবস, বিজয় দিবস, অক্টোবর বিপ্লব দিবসে কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠিত হতো। ২০১০ সালে মস্কোর বিজয় দিবসের ৬৫তম বার্ষিকীতে ফ্রান্স, পোল্যান্ড, যুক্তরাজ্য এবং যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাহিনী কুচকাওয়াজে অংশ নিয়ে সৃষ্টি করে এক নতুন ইতিহাস।

রাশিয়ার স্থাপত্যের ইতিহাসে মাস্টার পিচ হিসেবে স্বীকৃত ক্রেমলিন ওয়ালের অবস্থানও এই চকে। লালরঙা বিখ্যাত এই ক্রেমলিন প্রাচীরজুড়ে রয়েছে চোখ ধাঁধানো নানা পেইন্টিংস ও  প্লাস্টিক আর্ট। মূল ক্রেমলিন ভবনটি অবশ্য বর্তমানে রুশ প্রেসিডেন্টের বাসভবন হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। প্রাচীরটি ক্রেমলিনকে রেড স্কয়ার থেকে কিছুটা পৃথক করেছে, যার পাশ দিয়েই বয়ে গেছে মস্কোভা নদী। রুরিক রাজবংশের ষোড়শ শতকের কুখ্যাত শাসক ইভান দ্য টেরিবল নামে খ্যাত চতুর্থ ইভানের সময়েই এই দুর্গপ্রাসাদটি নির্মাণ করা হয়। রাশিয়ার ইতিহাসের বিভিন্ন সময়ে নানা পরিস্থিতিতে সুরক্ষিত এই দুর্গটি হাতবদল হয়েছে সর্বশেষ দুটি রাজবংশ ও সরকারের মধ্যে। ক্রেমলিন ভবনে রয়েছে বিশাল এক ক্লক টাওয়ার। এর চ‚ড়া সরু ঘোরানো সিঁড়ি বেয়ে উঠে গেছে প্রায় ৮০ মিটার উঁচুতে। টাওয়ারে রয়েছে বিশাল এক ঘণ্টা। এই ঘণ্টা এতই বিশাল যে এর ঘণ্টাধ্বনি ছড়িয়ে পড়ে পুরো এলাকায়। প্রতিবছর তীব্র ঠান্ডাকে উপেক্ষা করে এই ঘণ্টাধ্বনির মাধ্যমেই নতুন বছরকে স্বাগত জানায় রাশিয়াবাসী। ঐতিহাসিক এই স্থাপত্যের ধাপে ধাপে রয়েছে অপরূপ প্রদর্শনী। এতে ক্রেমলিনের ৮০০ বছরের ইতিহাসের প্রতিফলন ঘটে। দর্শন-চত্বরের আগেই দর্শকেরা চতুর্দশ শতকে প্রথম পাথরের গির্জা নির্মাণের সময় থেকে বিভিন্ন সময়ে ক্রেমলিনের ভূভাগে তৈরি ভবনগুলোর স্থাপত্য ও অলংকরণ সংরক্ষিত হয়েছে। এখানে দর্শনার্থীদের জন্য ব্যবহৃত হচ্ছে আধুনিক মাল্টিমিডিয়া, যার সাহায্যে বিভিন্ন এফেক্ট সৃষ্টি করে দর্শকদের নিয়ে যাওয়া হয় এক ঐতিহাসিক যুগে। ক্রেমলিনের বিভিন্ন যুগের দৃশ্য দেখার সুযোগ শুধু এখানেই মেলে। ইভান ভেলিকি ঘণ্টামিনারই ভবনটির সবচেয়ে দর্শক প্রিয় স্থান।

দ্য ক্যাথেড্রল অব সেইন্ট ব্যাসিল

রেড স্কয়ারের সবচেয়ে আকর্ষণীয় স্থান হিসেবে বিবেচিত দ্য ক্যাথেড্রল অব সেইন্ট ব্যাসিল। এমন নান্দনিক স্থাপনা পুরো রাশিয়ায় বিরল এমনকি বিশ্বস্থাপত্যেও। বর্তমানে দেশটির সংস্কৃতিতে এটি দুটি নামে পরিচিত। ‘চার্জ অব ইন্টারসেশন অন দ্য মোট’ এবং ‘টেম্পল অব ব্যাসিল দ্য ব্লেসড’। এটা রাশিয়ার মহাপবিত্র একটি গির্জা, যা গির্জা রক্ষাদেবী ‘দা মাদার অব গড’ নামেও স্বীকৃত। নির্মিত হয় ১৫৫৫-৬১ সালে। এটি রাশিয়ার স্থাপত্যকে অনেক সমৃৃদ্ধ করেছে। কিন্তু এই আকর্ষণীয় স্থাপত্যের স্থপতি কে তা কিন্তু অজানা। তবে ইতিহাস থেকে ঘেঁটে ধারণা করা হয় দুজন স্থপতি বারমা এবং পন্তনিক-এর স্থপতি ছিলেন। রাশিয়ার অফিসিয়াল ঐতিহ্য সংরক্ষণ কেন্দ্রও এটাই সমর্থন করে। গির্জাটি বেশির ভাগ অংশই পাথরে নির্মিত। তবে দেয়াল তৈরিতে ব্যবহার করা হয় লাল ইট. যার ব্যাসার্ধ (২৮দ্ধ১৪দ্ধ৮ সেমি.)। নির্মাণে সর্বত্রই দক্ষ পেশাদারির প্রমাণ মেলে। এর নকশা, মাপজোক, এর ইটের কাজকে যত দূর সম্ভব খোলা রাখা হয়েছে। প্রয়োজনে পাথরের ব্যবহারও করা হয়েছে। ভেতরে ও বাইরে সবখানেই ইটের ব্যবহার লক্ষণীয়। এর বিভিন্ন পাথর  জার্মানি ও পার্শ্ববর্তী অন্যান্য দেশ থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে। তবে এটির স্থাপত্য কৌশলে এশিয়ান স্থাপত্য ঐতিহ্যকে অনুকরণ করা হয়েছে। তবে আদি ট্রিনিটি গির্জাটি ১৫৮৩ সালে ভয়াবহ এক অগ্নিকাণ্ডে পুড়ে যায়। এটাকে আবার ১৫৯৩ সালে পুনর্নির্মাণ করা হয়। মূল গির্জাকে ঘিরে একে একে নয়টি গম্বুজ বা টাওয়ার গড়ে তোলা হয়। সবচেয়ে উঁচু টাওয়ারটি হচ্ছে বেল টাওয়ার।

সেইন্ট ব্যাসিলের গির্জাটিকে এমনভাবে নির্মাণ করা হয়েছে যেন দেখলেই মনে হয় বিশাল প্রজ্বলিত অগ্নিকুণ্ডের শিখা আকাশপানে ধেয়ে চলেছে। গম্বুজগুলোতে যতসম্ভব উজ্জ্বল রং ব্যবহার করা হয়েছে। লাল, সবুজ, সাদা ও সোনালি রঙের ব্যবহারই বেশি। ধারণা করা হয়, রংধনুর সঙ্গে মিল রাখতেই এমনটি করা। তবে এর তিনটি ডোমকে ১৬ শতাব্দীর পরে ও ১৭ শতাব্দীর শুরুর দিকে সাধারণ কাঠামোয় তৈরি করা হয়। এর ছাদকে তাঁবুর মতো করে স্টিল দিয়ে ঢেকে দেওয়া হয়েছিল, যা পরবর্তী সময়ে নয়টি মিনারে অগ্নিশিখার আদল দেওয়ার জন্য কনক্রিট ব্যবহার করা হয়। এই মিনারগুলোর ছোট, বড় ও মাঝারি এই তিন আদলের হওয়াই অগ্নিশিখার ব্যাপারটি সহজেই বোঝা যায়। এর লম্বা গম্বুজটির উচ্চতা ৪৬ মিটার কিন্তু মেঝের আয়তন মাত্র ৬৪ স্কয়ার মিটার। গির্জার ভেতরে একটি সরু করিডর রয়েছে, যার পুরোটাতেই বিভিন্ন নকশা আঁকা। বাইরে ও ভেতরে বলতে গেলে প্রায় সবখানেই নান্দনিক ডিজাইনের ছড়াছড়ি। পুরো দেয়ালেই চোখ ধাঁধানো কারুকাজ। প্রথম দুই তলার নকশা দেখে মনে হয় যেন ফ্লোরাল ডিজাইনের গয়না। গম্বুজে ব্যবহৃত হয়েছে ভিন্নধর্মী টাইলস। লাল-সবুজের টাইলসই বেশি ব্যবহার করা হয়েছে। এর গম্বুজ, আর্চ, ছাদ ও  পিলারের কারুকাজ এতই নান্দনিক যে কেউ চাইবে একের পর এক ছবি তুলতে।

মস্কোভা নদীসংলগ্ন ক্রেমলিন প্রাচীর

রাশিয়া তথা সোভিয়েত ইউনিয়নের ইতিহাসের নানা উত্থান-পতনের নীরব সাক্ষী এই স্কয়ার। এখানেই সংঘটিত হয়েছে শোষকের বিরুদ্ধে শোষিতের অধিকার আদায়ের সংগ্রাম। বারবার রক্তে রঞ্জিত হয়েছে এই চত্বর। এটা রুশদের নতুন করে বাঁচতে শেখায়। তাই রুশ সরকার এর অবকাঠামোগত উন্নয়নে বেশ তৎপর। এখনো নেওয়া হচ্ছে নানা পরিকল্পনা। কারণ, চকটি শুধু রাশিয়ার নয়, বিশ্ব ঐতিহ্যেরও ধারক। 

মারুফ আহমেদ

প্রকাশকাল: বন্ধন ৩৬ তম সংখ্যা, এপ্রিল ২০১৩

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top