বাথরুমের সৌন্দর্যে

একটি ঝকঝকে সুন্দর ইন্টেরিয়রই হোক অথবা শৈল্পিক অন্দরমহল, বাথরুম ডেকোরেশনের অন্যতম অনুষঙ্গ। যেকোনো বাসার বাথরুমই প্রকাশ করে সেই বাড়ির বাসিন্দার রুচিবোধ। বাথরুমের বেসিন, কমোড, শাওয়ার সিস্টেম, বাথটাব, আয়না সাজানোর সময় একটা নির্দিষ্ট রীতি মেনে চলা ভালো। অনেকেই হয়তো জানেন না যে কীভাবে রীতি অনুযায়ী সঠিকভাবে বাথরুমকে সাজাবেন। সে জন্য অবশ্যই একজন স্থপতি অথবা ইন্টেরিয়র ডিজাইনারের পরামর্শ নেওয়া ভালো। গোসলের জায়গাটা সবচেয়ে শেষে রাখা ভালো, যাতে গোসলের সময় পুরো বাথরুমটা ভিজে না যায়। এ ছাড়া বাথটাব, শাওয়ার ট্রে অথবা শাওয়ার সিস্টেম ঘিরে শাওয়ার কার্টেন ব্যবহার করতে পারেন। আজকাল বাথটাবের সঙ্গেই ফিক্সড গ্লাস থাকে, যাতে গোসলের সময় পানি এসে বাথরুম ভিজে একটা অস্বস্তিকর পরিবেশের সৃষ্টি না হয়। বাথরুমে জায়গা থাকলে শাওয়ার এনক্লোজারও লাগাতে পারেন। বাথরুমের বেসিনের কাউন্টার টপটাতে মার্বেল বা গ্রানাইট ব্যবহার করতে পারেন। আপনার নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস সাজিয়ে রাখুন বেসিন কাউন্টারে। কাউন্টারের নিচের অংশে ওয়াটারপ্রুফ মেটারিয়ালের কেবিনেট বানিয়ে নিতে পারেন। এতে করে পাইপও দেখা যাবে না এবং আপনি বিভিন্ন প্রয়োজনীয় জিনিস সেখানে রেখে দিতে পারবেন। বাথরুমের খালি দেয়ালে গ্লাসের শেলফ অথবা কর্নার কেবিনেট লাগাতে পারেন। যেখানে আপনি সব সময় ব্যবহার করেন না অথচ প্রয়োজনীয় জিনিসগুলো রেখে দিতে পারেন সযত্নে। যেমন তোয়ালে, কসমেটিক্স, ফার্স্ট এইড বক্স, পারফিউম, হেয়ার ড্রায়ার, এয়ার ফ্রেশনার, মোম ইত্যাদি। বাথরুমের টাইলস নির্বাচন করার ক্ষেত্রে বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত। এমন টাইলস লাগান সেটা যেন পিচ্ছিল না হয়, যা কি না বাচ্চা বা বয়স্কদের জন্য খুবই বিপজ্জনক। বাথরুম ছোট হলে গাঢ় রঙের টাইলস ব্যবহার না করাই ভালো।

সে ক্ষেত্রে হালকা রঙের টাইলস বেছে নিতে পারেন। বিশেষ করে সাদা, অফহোয়াইট, ক্রিম রঙের টাইলস বাথরুমের জন্য খুবই উপযুক্ত। গাঢ় রঙের টাইলসের ব্যবহারে বাথরুম আরও ছোট দেখাবে। কালো, গাঢ় নীল অথবা মেরুন রঙের টাইলস বাথরুমের ক্ষেত্রে যতটা সম্ভব এড়ানোই ভালো। এ ধরনের টাইলসের ওপর সাবানের দাগ সহজে বসে যায় এবং পরিষ্কার করাও কঠিন। বাথরুমে ঢোকার মুখে লাগান সুদৃশ্য বেসিন এবং ঝকঝকে আয়না। আজকাল বাজারে অনেক ডেকোরেটিভ আয়না পাওয়া যায়। আর আপনি যদি মনে করেন যে নিজেই পছন্দ করে ফ্রেম বানিয়ে নেবেন আয়নার জন্য, সেটাও মন্দ হয় না। অনেক রকম মেটারিয়াল আছে, সেগুলো আপনি অনায়াসেই আয়নার ফ্রেমের জন্য ব্যবহার করতে পারবেন। মেটারিয়াল নির্বাচন করার সময় অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে সেটা যেন ওয়াটারপ্রুফ হয়। বাথরুম ছোট হলে বেসিনের ওপর একটু বড় সাইজের আয়না লাগালে বাথরুম বড় দেখাবে। বাজারে আজকাল আয়নাসহ বিভিন্ন ধরনের কেবিনেট বেসিনও পাওয়া যায়। আপনি যদি ছোট বাথরুমের জন্য ওয়াল মাউন্ট কেবিনেট বেসিন নির্বাচন করেন, তাহলে খুবই ভালো হয়। ফ্লোর যত বেশি দেখা যাবে, বাথরুমটাকে তত বেশি বড় মনে হবে। তোয়ালে ঝোলানোর জন্য রিং বা টাওয়াল রেল বসাতে ভুলবেন না। ন্যাচারাল লাইটিং বাথরুমের জন্য সবচেয়ে উপযুক্ত। কিন্তু অনেক বাথরুমেই দেখা যায় জানালাটা ছোট থাকে অথবা একটু উঁচুতে থাকে, সে ক্ষেত্রে বাথরুমে খুব বেশি আলো হয় না। এই অবস্থায় আপনি ন্যাচারাল লাইটিংয়ের সঙ্গে আর্টিফিসিয়াল লাইটিংয়ের ব্যবহারও করতে পারেন। বাথরুমের মাঝখানে সিলিং লাইট লাগাতে পারেন, যার আলো পুরো বাথরুমে ছড়াবে এবং সূর্যের আলোর ঘাটতি অনেকটাই পূরণ করবে। বাথরুমে কমপক্ষে দুটো লাইট লাগানো ভালো। গোসলের জায়গায় ওয়াটারপ্রুফ বাল্ব এবং আয়নার ওপর শেডিং দেওয়া উজ্জ্বল আলোর লাইট ব্যবহার করুন। 

বাথরুমের আয়না এবং জানালার গ্লাস ক্লিনার দিয়ে সব সময় পরিষ্কার রাখা ভালো। বাথটাব এবং বেসিন পরিষ্কার করার জন্য গরম পানিতে সামান্য লিকুইড ডিটারজেন্ট মিশিয়ে সেটা দিয়ে পরিষ্কার করে নিতে পারেন। স্বাস্থ্যকর পরিবেশের জন্য বাথরুম প্রতিদিন একবার পরিষ্কার করা অত্যন্ত জরুরি। আপনি যদি ফুল বা গাছ পছন্দ করেন, তাহলে বাথরুমের শেলফের ওপর ইনডোর প্লান্টস অথবা কিছু তাজা ফুল রেখে দিতে পারেন।

ফারজানা গাজী

স্বত্বাধিকারী ও ডিজাইনার 

ফারজানা’স ব্লিস্ 

প্রকাশকাল: বন্ধন ৩৫ তম সংখ্যা, মার্চ ২০১৩

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top