আহসান রেসিডেন্স

বর্তমান প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশে বেশ সৌন্দর্যমন্ডিত ও নিপুণ স্থাপত্যকলা প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে। প্রতিদিন এই সংখ্যা বাড়ছে। বাড়ি বা অঙ্গন ডিজাইনের প্রয়োজনীয়তা অনুভব না করা জনগোষ্ঠী স্বাধীনতার ৫০ বছর পর বুঝতে পারছে, স্থপতিদের দিয়ে ডিজাইন করালে সেই বাড়ির নান্দনিকতা ও সৌন্দর্য যেকোনো ভবনের চেয়ে বেশি হয়। স্থপতির নিজের চিন্তা ও চেতনা এই ভবনের ডিজাইনে অনুষঙ্গ হিসেবে কাজ করে, যা ভবনটিকে করে তোলে অতুলনীয়। তা ছাড়া স্থপতি সেই নির্দিষ্ট ভবনের ডিজাইন অন্য কোথাও করেন না বলে ভবনটি হয়ে ওঠে একদম অন্য রকম। অন্য কোনো ভবনের মতো হয় না বলে ভবনটিকে দেখেই চোখ ও মনের প্রশান্তি নেমে আসে।

স্থাপনাকে ঘিরে জল-সবুজের স্নিগ্ধতা

এই আড্ডা দেওয়ার স্থানগুলো ডিজাইন করতে গিয়ে এসব স্থান স্থপতিরা খেয়াল করেছেন যে আমাদের ভবনগুলোতে বসবাসের জায়গাগুলোর সঙ্গে টেরাসের এক গভীর সংযোগ আছে। আর এই কনসেপ্টকে কেন্দ্র করে স্থপতিরা পরিবারের জ্যেষ্ঠ সদস্যদের ঘরটাকে রেখেছেন টেরেসের পাশে। সঙ্গে সেখান থেকে দেখা যায় সুইমিংপুল ও বাগান। রুমের স্ট্যাগার লে-আউট হিসেবে পুরো পরিবারের সবচেয়ে প্রিয় জায়গা হিসেবে এটাকে ডিজাইন করা হয়েছে। পুরো বাড়ির এমফেসিস হিসেবে এটা বেশ কার্যকর ভূমিকা রেখে চলেছে। ঘরের ভেতর থেকে বাইরের আঙিনা ও উঠান, সঙ্গে অন্যান্য অংশ দেখা যাচ্ছে। এখানেই বসে সবাই আড্ডা দিচ্ছেন, পরিবারের গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে এখানেই। এভাবেই বন্ধনে আবদ্ধ সব সদস্য।

পুরো ভবনটা যেভাবে একটা মূল ফর্ম থেকে ভেঙে গিয়ে গঠিত হয়েছে, তা আসলেই চমৎকার। সলিড ও ভয়েডের কারুকাজ সবখানে। পুরোটা একঘেয়ে ভাব থেকে ভেঙেচুরে অন্য রকম এক আবেশ তৈরি করেছে। পশ্চিমে আছে ইটের ঝালরের ব্যবহার, যা আলো-ছায়াকে একাকার করে প্রবেশ করিয়েছে স্থাপনায়।

পরিবারের একেবারে নিজস্ব স্পেস ডিজাইনের ক্ষেত্রে বেশ সাবধানতা অবলম্বন করা হয়েছে। বিভিন্নভাবে বাড়িটিতে স্ক্রিন তৈরি করা হয়েছে। একই সঙ্গে এটা যে একটা পর্দা হিসেবে কাজ করছে তা নয়, এটি একই সঙ্গে আলো-ছায়ার খেলা তৈরিতেও ভ‚মিকা রাখছে। রাখছে তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে বিশেষ ভ‚মিকা। এই কাজগুলো পুরো বিল্ডিংয়ের প্রতিটি গ্রিডেই দেখতে পাওয়া যায়। ধর্মীয় কারণে বা আর্থসামাজিক ব্যবস্থায় আমাদের বসবাসের কক্ষগুলোতে আমাদের নিজেদের পরিবারের মধ্যেই নানাভাবে পর্দা বা স্ক্রিনের ব্যবহার লক্ষণীয়। আমাদের অন্দরমহলের গল্পগুলো আমরা বাইরে আনতে চাই না। তেমনভাবে চাই না যেন বাইরের কোলাহল ঘরের ভেতর প্রবেশ করুক। আবার ভেতর থেকে বাহির পরিষ্কার দেখা যাক অন্যদিকে বাইরে থেকে আমাদের অন্দরের কিছুই তেমন দেখা না যাক। স্ক্রিনের মূল কনসেপ্ট এটাই। স্ক্রিনের মাধ্যমে আমাদের বাইরের পৃথিবী থেকে স্থাপনার ভেতরটা একটা নিয়ন্ত্রিত মাধ্যমে সংযুক্ত, যা এই ভবনটিকে অনন্য করে তুলেছে।

টিপিক্যাল আরবান ডিজাইনগুলোতে যেমন দেখা যায়, সে রকম করে এই ভবনটি তৈরি হয়নি। লম্বা ও বড় টেরাস যোগ করা হয়েছে এখানে। এই সব টেরাস থেকে বাইরের প্রকৃতি বেশ ভালোভাবে দেখা যায়। বাইরের আবহাওয়া থেকে ঘরের ভেতরটা রক্ষা করার জন্য তৈরি করা হয়েছে সবুজ বেষ্টনী, যা উচ্চশব্দ ও দূষণ থেকে বসবাসকারীদের রক্ষা করছে। আবার একই সঙ্গে এই সবুজ ও অন্যান্য দৃশ্যানুষঙ্গ দেখতে বড়ই মনোরম। যেন শহুরে জীবনে একটুকরো গ্রাম্য পরিবেশ এনে দিয়েছে এই সবুজ। শুধু বাসকক্ষ নয়, অফিসকক্ষ থেকেও এসব ভিউ দেখা যায়- অনুভব করা যায়।

স্থাপনার অভ্যন্তরে আলো-বাতাসের অবাধ প্রবেশ

ভবনটি তৈরিতে স্থানীয় ম্যাটেরিয়াল যেমন ইট, কংক্রিট কাঠের ব্যবহার লক্ষণীয়। ভবনটি ডিজাইনে প্রকৃতি নিয়ে কাজ করার প্রয়াস স্থপতিদের মধ্যে ছিল বলে ওনারা সূর্যালোক, বাতাস, পানি ইত্যাদি নিয়ে এখানে কাজ করেছেন। প্রতিটি কক্ষ ডিজাইন করা হয়েছে টেরাসকে সঙ্গে নিয়ে। বসার ঘর-ডায়নিং ইত্যাদি স্পেসও প্রকৃতির দিকে উন্মুক্ত। খুবই সাধারণ কিছু আর্কিটেকচারাল ডিজাইন পুরো বাড়িটিকে করে তুলেছে একদম সাধারণ। অথচ সাধারণের মধ্যে অসাধারণ।

একনজরে আহসান রেসিডেন্স
প্রজেক্টের অবস্থান:
ঢাকা
আয়তন: ৬০০০ বর্গমিটার
স্থাপত্য প্রতিষ্ঠান: গ্রাউন্ড ওয়ান
প্রধান স্থপতি: মোহাম্মদ শাহনেওয়াজ
ডিজাইন টিম: আল নোমান মোহাম্মদ ইউনুস, ধ্রুব জ্যোতি দাস, শামসুদ্দিন আহমেদ ভুঁঁইয়া, হাসান আলী ইমতিয়াজ জাফরি, আসিফ এম. নঈম
স্ট্রাকচারাল ইঞ্জিনিয়ার: এম. নাহিদ হাসান

ছবি: জুনায়েদ হাসান প্রান্ত, রেজওয়ান কবির জোহা

প্রকাশকাল: বন্ধন ১৬৭ তম সংখ্যা, জুলাই ২০২৪

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top