স্লেট
স্লেট টাইলস হলো একটি প্রাকৃতিক স্টোন টাইলস, যা প্রাকৃতিক স্লেট পাথর থেকে কেটে বের করা হয়। স্লেট পাথর একটি স্থায়ী, ঘন এবং শক্ত প্রাকৃতিক পাথর, যা প্রকৃতি থেকে মার্বেল বা গ্রানাইটের মতোই সংগ্রহ করা হয়। স্লেট টাইলসের রং, স্থায়িত্ব ও ব্যবহারে সৌন্দর্যের জন্য বিখ্যাত। স্লেট নানা রঙের নানা আকৃতিতে প্রকৃতি থেকে আহরিত হয়। মার্বেল ও গ্রানাইটের মতোই এর ভ্যারিয়েশন হলেও এটি বেশ ভিন্ন একটি ম্যাটেরিয়াল। স্লেট টাইলসের গঠন ও ভ্যারিয়েশন মডার্ন ইন্টেরিয়র ডিজাইনের সঙ্গে সমন্বয় করে স্থপতি ও ইন্টেরিয়র ডিজাইনাররা ব্যবহার করে থাকেন। স্লেট টাইলস বিভিন্ন ব্যক্তিগত প্রকল্পে বা কমার্শিয়াল ইন্টেরিয়র প্রকল্পে ব্যবহার করা যায়। এগুলো অবাসন, বার, রেস্টুরেন্ট, সুইট বাথরুম, অফিস ইন্টেরিয়র, রাস্তা প্রকল্প ইত্যাদির জন্য উপযুক্ত হতে পারে।
লাইমস্টোন
মানুষের তৈরি টাইলসগুলোর মধ্যে লাইমস্টোন টাইলস হলো এমন এক প্রকার, যা প্রকৃতি ও মানবসৃষ্ট ডিজাইনের এক অপূর্ব সমন্বয়। লাইমস্টোন টাইলস এক প্রকারের কম্পোজিট টাইলস, যা সিমেন্ট, লাইম পাউডার, পার্টিকেল বোর্ড এবং ন্যাচারাল মিনারাল ফাইবার ইত্যাদি উপাদানের সমন্বয়ে তৈরি হয়। লাইমস্টোন টাইলসের প্রধান উপাদান হলো সিমেন্ট এবং লাইম, যা এই টাইলসসের স্থায়িত্ব প্রদান করে। লাইমস্টোন টাইলস ভার্সেটাইলিটি প্রদানের জন্য বিশ্বনন্দিত। লাইমস্টোন টাইলস বিভিন্ন রঙের এবং আকৃতিতে পাওয়া যায়, ডিজাইনের ক্ষেত্রে বৈচিত্র্য নিয়ে আসতে এই টাইলসের জুড়ি নেই। বিভিন্ন ইন্টেরিয়র ডিজাইনে বাথরুম, কিচেন, ফ্লোর, ওয়াল, ব্যাকস্প্ল্যাশ, প্রাইভেট স্পেস, কমার্শিয়াল ইন্টেরিয়র, রাস্তা প্রকল্প ইত্যাদি ক্ষেত্রে লাইমস্টোন টাইলস ব্যবহার হয়। এর ইনস্টলেশন প্রক্রিয়ার সঙ্গে অন্যান্য টাইলস প্রক্রিয়ার তেমন কোনো ভিন্নতা নেই।

ট্র্যাভারটাইন
আপনি যদি আগে ট্র্যাভারটাইন টাইলের কথা না শুনে থাকেন, তাহলে আপনি বাজারের সবচেয়ে সুন্দর এবং সবচেয়ে মার্জিত ইন্টেরিয়র ডিজাইনের অনুষঙ্গ মিস করছেন! এটি একধরনের প্রাকৃতিক পাথর, যেমন আপনার রান্নাঘরের গ্রানাইট বা আপনার বাথরুমের মার্বেল। ট্র্যাভারটাইন হলো একটি পাললিক পাথরের একধরনের চুনাপাথর, যা প্রাকৃতিক স্প্রিংস থেকে খনিজ দিয়ে তৈরি। এটি ট্র্যাভারটাইনকে একটি স্বতন্ত্র এবং আকর্ষণীয় চেহারা দেয়, যা সত্যি অনন্য।
ট্র্যাভারটাইনের প্রকারভেদ
ট্র্যাভারটাইন খুব টেকসই পাথর এবং এটি বহুমুখী, তাই এটি সাধারণত মেঝে এবং ব্যাকস্প্ল্যাশ উভয়ের জন্যই ব্যবহৃত হয়। সাধারণত চার প্রকারের ট্রাভারটাইনের কথা জানা যায়। সেগুলো হচ্ছে-
ব্রাশড ট্র্যাভারটাইন: ব্রাশড ট্র্যাভারটাইনের একটি অ্যান্টি শাইন, ম্যাট ফিনিশ ম্যাটেরিয়াল, যা দেখতে দারুণ। এই চেহারা দেওয়ার জন্য তারের তৈরি ব্রাশ ঘষার মাধ্যমে এর এই খসখসে আস্তরণ তৈরি করা হয়।
হন্ড ট্র্যাভারটাইন: হন্ড (Honed) ট্র্যাভারটাইন সেমিগ্লাস টাইলস। এটি একটি সুষম, সূক্ষভাবে পলিশ চেহারা তৈরি করে। স্পর্শ করলে চামড়ার মতো অনুভূতি দেয়। ট্র্যাভারটাইনের অসমাপ্ত পাশকে ওভারল্যাপ করে ইনস্টলেশনের মাধ্যমে সুন্দর লুক নিয়ে আসা হয়।
পলিশ ট্র্যাভারটাইন: পলিশ ট্র্যাভারটাইন একটি নজরকাড়া, পরিশীলিত ডিজাইনের টাইলস। এলিগ্যান্ট লুকের ইন্টেরিয়রে পলিশ ট্র্যাভেন্টাইনের জুড়ি নেই।
টাম্বলড ট্র্যাভারটাইন: টাম্বলড ট্র্যাভারটাইন টাইলস ডিজাইনে ভিনটেজ লুক দেয়। একটার ওপর আরেকটা সূক্ষভাবে তুলে দিয়ে আলো-ছায়ার খেলা তৈরি করে ভিন্টেজ ইন্টেরিয়র লুক নিয়ে আসার জন্য টাম্বলড ট্যাভারটাইন সেরা।
ট্র্যাভারটাইনের সুবিধা
সৌন্দর্য: ট্র্যাভারটাইন ফ্লোরের জমকালো, শাস্ত্রীয় সৌন্দর্য ফুটিয়ে তোলে। স্থাপত্যকলায় ক্ল্যাসিক ভাব নিয়ে আসতে ট্যাভারটাইনের জুড়ি অস্বীকার করা অসম্ভব।
স্থায়িত্ব: এটি দীর্ঘস্থায়ী। শিশু ও পোষা প্রাণীদের জন্যও এটি বিপজ্জনক নয়। এটা ফাটে না। বাড়ির সঠিক রক্ষণাবেক্ষণের জুড়ি নেই।
মান: ট্র্যাভারটাইন ফ্লোরিং হলো মার্বেল বা গ্রানাইটের মতো অন্যান্য উচ্চমানের পাথরের তুলনায় কম দামে একটি বাজেট-বান্ধব বিকল্প। ট্র্যাভারটাইন মেঝে ইনস্টল করা আপনার বাড়ির মানও বাড়িয়ে তুলতে পারে।
নন-স্লিপ: ট্র্যাভারটাইন মেঝে প্রাকৃতিকভাবে পিচ্ছিল নয়, যা এটিকে আর্দ্রতা-প্রবণ স্থান যেমন বাথরুম এবং রান্নাঘরে ব্যবহারের জন্য আদর্শ।

ট্র্যাভারটাইনের কিছু সমস্যা
কোমলতা: যেহেতু ট্র্যাভারটাইন একধরনের পাথর, তাই এটি মেঝে তৈরির অন্যান্য উপকরণের তুলনায় শক্ত। এটা বেশ ভারী। বাড়িতে অধিক ব্যবহার করলে পুরো স্ট্রাকচারের ওপর খানিকটা বেশিই ডেড লোড যোগ করে।
তাপমাত্রা: অন্যান্য প্রাকৃতিক পাথরের টাইলের মতো, ট্র্যাভারটাইন বেশ ঠান্ডা থাকে। গরমের দেশে এটি বেশ আদর্শ হলেও শীতপ্রধান দেশগুলোর জন্য এটা বেশ ভালো একটি সমস্যা।
সংবেদনশীলতা: ট্র্যাভারটাইন টেকসই হলেও, এটি ভিনেগার, কফি, জুস ও অ্যালকোহলের মতো অ্যাসিডিক পদার্থের প্রতি অত্যন্ত সংবেদনশীল। ছিটকে গেলে, অ্যাসিডিক তরল দাগ ফেলে যাওয়ার আশঙ্কা বেশি থাকে কারণ তারা ট্র্যাভারটাইনের ক্যালসিয়াম কার্বনেটের সঙ্গে বিক্রিয়া করে। আপনি যদি গতানুগতিক ধারার টাইলিংয়ের বদলে ভিন্ন কোনো লুকে নিজের ঘর ও কাজের জায়গা সাজাতে চান, তাহলে আপনি ট্র্যাভারটাইনকে বেছে নিতেই পারেন।
টেরাকোটা
টেরাকোটা হলো আমাদের দেশে বহুল ব্যবহৃত পোড়ামাটির টাইলস। এঁটেল মাটি দিয়ে তৈরি টাইলসে ফুটিয়ে তোলা হয় নানা রকমের ডিজাইন। এই ডিজাইনগুলো দিয়ে বাড়ির ফ্লোর বা দেয়াল ঢেকে দেওয়া হয় বলে এটিও টাইলস উপকরণের মধ্যে পড়ে যায়। এটি নানা ডিজাইনে নানা রকম দেখতে পাওয়া যায়। সাধারণত ডিজাইনাররা এটিকে প্রথমে মাটি দিয়ে বানান। এরপর যে স্থানে এটা বসবে, সেখানে সেই মাটির টালি ইনস্টল করেন। অথবা আগে থেকে মাপ জেনে নিয়ে টাইলস পুড়িয়ে সাইটে গিয়ে লাগিয়ে দেওয়া হয়। পুরো কাজটি বেশ সময় সাপেক্ষ এবং এটি বাস্তবিক ক্ষেত্রে একটি চারুকলাবিদ্যা। একটি দেয়ালে পেইন্টিং যেমন, তেমনই টেরাকোটা। এটি দিয়ে খুব সহজেই মানুষের মনে প্রভাব বিস্তার করা যায়। বাংলাদেশের বহু দালানে টেরাকোটা দেখতে পাওয়া যায়।

সিমেন্ট টাইলস
সিমেন্টের সঙ্গে বিভিন্ন রং মিশিয়ে তৈরি করা টাইলস সিমেন্ট টাইলস বা টেরাজো (Terrazzo)। বহু শতাব্দী প্রাচীন এই সিমেন্ট টাইলস আবিষ্কার হয়েছিল ইজিপ্টে। সে আমলে ইজিপ্টে রং ও সিমেন্ট নিয়ে তৈরি করা টাইলসের প্রচলন হয়েছিল। আর এর ফলে সৃষ্টি হয়েছিল শিল্পবিপ্লব। শিল্পী তার মনের মতো করে রং মিশিয়ে টাইলস তৈরি করতে শুরু করেন। আর এতেই সৃষ্টি হয় ইতিহাস। মূলত ৮ ইঞ্চি বাই ৮ ইঞ্চির এই টাইলস (ক্ষেত্রবিশেষে যা বাড়তে পারে) দেখতে যেন একেকটি শিল্পকর্ম। ঘরের বিশেষ বিশেষ অংশে ব্যবহার করা হলে এই টাইলস নানন্দিকতার এক অন্য রকম সংজ্ঞায় সংজ্ঞায়িত করে তোলে সেই স্থান।
এই টাইলস বানানোর মূল উপাদান মাটি, হোয়াইট সিমেন্ট ও লাইমস্টোন। এগুলো গুঁড়ো করে মিহি দানায় রূপান্তরিত করা হয়। রূপান্তরের এই প্রক্রিয়া বেশ কষ্টসাধ্য। অনেক সময় সিমেন্টের ভেতর ময়লা থাকে। আবার মিহি দানায় পরিণত না হলে আবার সেটাকে চালুনি দিয়ে চেলে নিয়ে হাতে গুঁড়ো করে নিতে হয়। এই প্রক্রিয়া বেশ কষ্টসাধ্য। এর পরের প্রক্রিয়া হলো রং তৈরি। বিভিন্ন রং তৈরিতে প্রাকৃতিক ও রাসায়নিক পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়। এই রংগুলো হতে হয় পানিতে অদ্রবণীয়। মানে এটা প্রথমে পানিতে দ্রবণীয় হলেও টাইলস থেকে যেন ধুয়ে না যায় সেদিকে লক্ষ রাখতে হয়। এভাবে ভারী ও অদ্রবণীয় নিজেদের মধ্যে অমিশ্রণযোগ্য রং তৈরি করে সেই রং লোহার তৈরির ছাঁচে নির্দিষ্ট ডিজাইনে ফেলতে হয়। ছাচের মধ্যে রং পূর্ণ হলে সেই রং থেকে খুব সাবধানে ছাঁচ তুলে ফেলতে হয়। রঙের সব দ্রবণ যদি সমান না হয় তাহলে একটার সঙ্গে আরেকটা রং মিশে যেতে পারে। এ জন্য এই প্রক্রিয়া বেশ সাবধানে করতে হয়। একবার এক রঙের সঙ্গে আরেক রং মিশে গেলে পুরো প্রক্রিয়া নতুন করে তৈরি করতে হয়।
রঙের দ্রবণ থেকে লোহার ছাঁচ তুলে ফেলার পর মুহূর্তেই এর ওপর দেওয়া হয় সিমেন্ট ও মাটির মিশ্রণ, যা কিছুটা আর্দ্র থাকে। আর্দ্র সিমেন্ট মিক্সচার সেই ছাঁচে দেওয়ার পর সেটাকে একটা হাইড্রোলিক প্রেস মেশিনে চাপ প্রদান করলে কয়েক সেকেন্ড সময়ের মধ্যে এটি একটি টাইলস হিসেবে প্রস্তুত হয়ে যায়। শুকানোর প্রয়োজন হয় না। আগুনে তাপ বা পোড়ানোর প্রয়োজনও হয় না। কোনো বিশেষ প্রক্রিয়া ছাড়াই এটা পরমুহূর্তেই ব্যবহারের উপযোগী একটি ম্যাটেরিয়ালে পরিণত হয়।
টেরাজো টাইলসের মূল অংশ অনেক। তবে সবচেয়ে জরুরি হলো এর ছাঁচ তৈরি করা। ছাঁচ তৈরির জন্য প্রথমেই একটা বড় দেয়াল কল্পনা করে স্কেচ তৈরি করতে হয়। সেই স্কেচ অনুযায়ী ছোট ছোট টুকরায় ছাঁচ বানাতে হয় লোহার পাত দিয়ে। এই ছাঁচ তৈরি বেশ কঠিন। সুন্দরভাবে পুরো প্রক্রিয়া হওয়ার পর এক একটা ছাঁচ দিয়ে এক একটা টাইলস তৈরি করা হয়। প্রাচীন গ্রিসে প্রথম এই ধারার টাইলস তৈরি হওয়া শুরু হলেও অনেক বছর এটা বন্ধ হয়ে ছিল। ইউরোপে ১৮০০ শতকে এসে এটির আবারও প্রচলন ঘটে। তখন এটিকে ফ্যাক্টরি প্রস্তুত করে তৈরি শুরু হয়। যদিও এরপর আবার নানা রকম টাইলস বাজারে আসায় এটির প্রোডাকশন প্রায় বন্ধের পথে। তবুও এটি কিছু কিছু দেশে সামান্য কিছু কারিগরের জন্য বেঁচে আছে।

মোজাইক
মার্বেল বা গ্রানাইটের কাজ করতে গেলে বেশ কিছু গুঁড়ো বা টুকরো বের হয়, যেগুলো কোনো কাজে লাগে না। সেই টুকরোগুলোই আবার একটা ছাঁচে ফেলার পর হোয়াইট সিমেন্ট ও আঠা দিয়ে টাইলস বানিয়ে ফেলার প্রক্রিয়াকেই বলা হয় মোজাইক টাইলস মেকিং। মোজাইক টাইলস অবশ্য বহুমাত্রিক হতে পারে। যখন এতে মার্বেল বা গ্রানাইটের টুকরো ব্যবহার করা হয়, তখন এটিকে গ্রানাইট বা মার্বেল মোজাইক টাইলস বলা হয়। আবার মেটালিক টাইলসকেও মোজাইক টাইলস বলা হয়। অনেক ক্ষেত্রে একটা প্যাটার্ন তৈরি করা হয় বলে মোজাইক টাইলস।
ভিনাইল কম্পোজিট টাইলস
পলিভিনাইল ক্লোরাইড দিয়ে তৈরি এই ধরনের টাইলস বা ফ্লোর ফিনিশ ম্যাটেরিয়াল ধীরে ধীরে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। ১৯৮০ সাল থেকে পিভিসি চিপস দিয়ে তৈরি এই টাইলস পৃথিবীজুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে। ভিনাইল কম্পোজিট টাইলস মূলত নরম পিভিসি ম্যাটেরিয়াল, যা বিভিন্ন স্থাপনায় নানা কাজে ব্যবহার করা হয়। আমাদের দেশে বা বিদেশে বিভিন্ন হাসপাতালে এখন আর ফ্লোর টাইলস ব্যবহার হয় না। ব্যবহার করা হয় ভিনাইল কম্পোজিট টাইলস। এগুলো ব্যবহারের মূল কারণ, এতে বিশেষ প্রক্রিয়ায় কোনো রকম জয়েন্ট ছাড়াই টাইলস লাগানো যায়। আমরা জানি যে টালির মাঝে যে ফাঁক থাকে, সেটা হোয়াইট সিমেন্ট ও নানা রকম রঙিন রাসায়নিক দিয়ে ভরাট করা হয়। আবার এটা বিভিন্ন সময় ময়লা হয়ে কালচে হয়ে যায়। কিন্তু এটা হাসপাতালের হাইজেনিক পরিবেশের জন্য বাধাস্বরূপ। এ জন্য হাসপাতালের ফ্লোরের স্কারটিং এরিয়াতে টাইলস ফ্লোর থেকে কার্ভ করে তুলে দেওয়া হয়। এবং এতে একটি সুন্দর মোলায়েম ফ্লোরিং তৈরি হয়। এতে খালি পায়ে হাঁটতে সুবিধা হয়। আবার রোগ-জীবাণু সহজেই পরিষ্কার করে ফেলা যায়। আবার অনেক ক্ষেত্রে টাইলস থেকে কম খরচ বলে এই পিভিসি ফ্লোরিং ব্যবহার করা হয়। যেমন, আসল কাঠের ফ্লোরিং বেশ দামি হলেও কাঠের টেক্সচার প্রিন্ট করা উডেন পিভিসি ফ্লোরিং ব্যবহার বেশ সহজলভ্য ও সুন্দরভাবে কম সময়ে ইনস্টল করা যায়। পিভিসি ফ্লোরিং ইনস্টল করার জন্য সমান একটি ফ্লোর হয়ে গেলেই হয়। অনেক ক্ষেত্রে ফ্লোরের ওপর নিট সিমেন্ট ফিনিশ করে ফেলার পরেই এতে পিভিসি টাইলস বিছিয়ে দেওয়া যায়। যেকোনো আঠা দিয়ে আটকে দিলেই এটি প্রস্তুত। তবে অধিক তাপ ও চাপ প্রয়োগে এটি নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা থাকে। অনেক সময় এটি পানিতে আঠার আস্তরণ নষ্ট হয়ে যায় বলে উঠে চলে আসে। যদি আবার আঠা দিয়ে লাগিয়ে দেওয়া হয়, এটি আবারও নতুন হয়ে যায়।

এইচডিএফ
এইচডিএফ বা হাইডেনসিটি ফ্লোরিং হালের সবচেয়ে আধুনিকতম টাইলস সংস্করণ, যা ইচ্ছেমতো আঁকার ও আকৃতিতে পাওয়া যায়। এটা বাসস্থান ও অফিস বা ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে নিয়ে আসতে পারে আধুনিকতার ছোঁয়া। এইচডিএফ মানে হলো হাইডেনসিটি ফ্লোরিং টাইলস বানানো হয় কাঠ ও প্লাস্টিকের ফেলে দেওয়া বর্জ্য ও নানা কেমিক্যালের মিশ্রণে, যা সহজেই ভেঙে যায় না। এই এইচডিএফ বোর্ডের মধ্যে মেইল ফিমেইল জয়েন্ট থাকে, যাতে এটি সহজেই কোনো রকম জয়েন্ট ছাড়াই ফ্লোরে বসে যায়। তবে এটি বসানোর জন্য ফ্লোরে প্রথমেই ফোমের একটি পাতলা আস্তরণ দিতে হয়, যাতে সহজে নড়াচড়া না করে। আমাদের হাঁটাচলার সময় ফ্লোর যেন না নড়ে ওঠে এ জন্যই এটি দেওয়া হয়। ফোমের ওপর কোনোরকম আঠা ছাড়াই এটি শুধু বিছিয়ে দিলেই সঙ্গে সঙ্গে এটি ব্যবহারযোগ্য হয়ে ওঠে। কাঠের টেক্সচার দেওয়া এইচডিএফ বোর্ড নানা রকম রঙে পাওয়া যায়। এবং এটি ইনস্টল করতে খুবই কম সময় লাগে। অনেকের কাঠের ফ্লোরে বাস করার ইচ্ছে থাকলেও এর দামের জন্য ব্যবহার করতে পারেন না। এ ক্ষেত্রে এইচডিএফ একটি খুবই প্রয়োজনীয় বিকল্প হতে পারে। এটি কাঠের ফ্লোরের চেয়ে বেশ কমদামি। এতে আছে থিন পলিমারের লেয়ার, যা দাগ ও স্ক্র্যাচপ্রুফ। আবার অনেক ভার বহন করতে পারে বলে এটি বেশ সহজে ব্যবহারযোগ্য টাইলস।
স্থপতি রাজীব চৌধুরী
প্রকাশকাল: বন্ধন ১৫৯ তম সংখ্যা, ডিসেম্বর ২০২৩