হরেক রকম টাইলস

মেটাল টাইলস
মেটাল বা ধাতব নানা বস্তু দিয়ে তৈরি টাইলসই হলো মেটাল টাইলস। মেটাল টাইলস বর্তমানে বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। ফ্লোরিং হিসেবে মেটালের ব্যবহার নতুন নয়। তবে দেয়ালে আস্তরণ হিসেবে মেটালের ব্যবহার বেশ আধুনিক। কয়েক দিন আগেও এটি ব্যবহার করা কষ্টসাধ্য হলেও এখনকার সময়ে এটির ব্যবহার দেখা যাচ্ছে। মেটালিং টাইলস নানা রকমের হতে পারে। এতে ধাতু হিসেবে অ্যালুমিনিয়াম ও তামার ব্যবহার দেখা যায় বেশি। এগুলোর ইনস্টলেশন প্রসেস একটু ভিন্ন। এটি লাগানোর নানা রকম প্রক্রিয়ার একটি হলো আঠা পদ্ধতি। হোয়াইট সিমেন্টের আস্তরণ দিয়ে লাগিয়ে দেওয়ার পর এর ফাঁকগুলোও একই রঙের হোয়াইট সিমেন্ট দিয়ে ভরাট করে দেওয়া হয়। আবার এরোল্ডাইট দিয়ে আঠা প্রস্তুত করে ও এটি ইনস্টল করা হয়। তবে এটি যে সারফেসে লাগানো হয়, সেই সারফেস অবশ্যই রাইট অ্যাঙ্গেলে থাকা আবশ্যক।

টাইলসের ইনস্টলেশন
টাইলস নানা পদ্ধতিতে ইনস্টল করা হয়। সবচেয়ে প্রচলিত পদ্ধতি হলো সিমেন্ট ও বালু দিয়ে তৈরি মসলা, যা দিয়ে তৈরি মিশ্রণের ওপর টাইলস বিছিয়ে দেওয়ার পর আবার টাইলস তুলে ফেলা হয়। এরপর বেশি করে পানি দিয়ে মিশ্রিত সিমেন্টের পানি (ঘোলা) দিয়ে সেই মিশ্রণ ভিজিয়ে দেওয়া হয়। এরপর এর ওপর টাইলস বিছিয়ে রাবারের তৈরি হাতুড়ি দিয়ে প্রেশার দিলে টাইলস লাগানোর কাজ শেষ হয়। সম্প্রতি টাইলস বসানোর জন্য নানারকম ডিজাইন করা হয়। বাসাবাড়িতে ডিজাইন মোতাবেক টাইলস বসানো হলে দেখতে মনোমুগ্ধকর। অথচ একই দামের টাইলস ডিজাইন ছাড়া লাগানোও যায়। টাইলস নানা রকম করে বসানো যায়। যেমন রানিং বন্ড, স্টেক বন্ড, জিগজ্যাগ বন্ড ইত্যাদি।

হ্যারিংবোন প্যাটার্ন
হ্যারিংবোন প্যাটার্ন হলো ক্ল্যাসিক টাইলস ইনস্টলেশন প্যাটার্ন। এটি টাইলস লাগানোর একটি সনাতন পদ্ধতি। সাধারণত ক্ল্যাসিক্যাল ইন্টেরিয়ারে লাগানো হতো প্রাচীন ব্রিটেনের স্থাপত্যে।

ডায়মন্ড প্যাটার্ন
ডায়মন্ড প্যাটার্ন অনুযায়ী টাইলস লাগালে টাইলস থেকে সাধারণত সোজাসুজি দেখতে কৌণিকভাবে লাগানো দেখতে পাওয়া যায়। এই ধরনের টাইলসকে স্বাধীনতা ডায়মন্ড প্যাটার্ন নিয়ে টাইলস বসানো হয়েছে বলে জানা যায়। লাগালে অনেক বেশি ওয়েস্টেজ হয় বলে এটি সাধারণত খুব একটা বেশি দেখা যায় না।

হ্যারিংবোন প্যাটার্ন ও ব্রিক বন্ড প্যাটার্ন টাইলস (বাম থেকে)

ব্রিক বন্ড প্যাটার্ন
ব্রিক বন্ড প্যাটার্ন একটি খুবই সুন্দর প্যাটার্ন টাইলস। সাধারণত আয়তকার টাইলস ব্রিকবন্ড প্যাটার্নে বসানো হয়। এটি হচ্ছে অনেকটা বাড়ির দেয়ালে যেভাবে আমরা ইট বসাই, সেভাবে বসাতে হয়। এই ব্রিকবন্ড প্যাটার্ন আরও কয়েক রকম করে হতে পারে। যেমন, আমরা যদি টাইলসকে মাঝখান থেকে না বসিয়ে তিন ভাগের দুই ভাগ অংশ থেকে বসানো শুরু করি, তখনো এটি ব্রিকবন্ড প্যাটার্নই বলা হয়। নানা রকমভাবে এই ব্রিক বন্ড প্যাটার্ন ক্রিয়েট করা হয় এবং এটি দেখতে খুবই সুন্দর দেখায়। অনেক ক্ষেত্রে দেয়ালে টাইলস এভাবে বসানো হয়। তবে ফ্লোরে টাইলস যদি আয়তকার হয় বা দেয়ালের টাইলস যদি আয়তক্ষেত্রাকার হিসেবে থাকে, তাহলে এটি বসালে খুব সুন্দর দেখায়। তবে ফ্লোরেও বসানো যেতে পারে, সেটি দেখতে একই রকম নান্দনিক মনে হয়। আবার বর্গাকার টাইলসও এই নিয়মে বসানো যায়।

লিনিয়ার বন্ড প্যাটার্ন
লিনিয়ার বন্ড হলো সেই প্যাটার্ন, যেটাতে আসলে সাধারণত আমরা টাইলস বসিয়ে থাকি। এই প্যাটার্নটি বিশ্বজুড়ে সমাদৃত। এটি ব্যবহার করে টাইলস বসানো অনেক সহজ এবং এটি ব্যবহার করে টাইলস বসালে দেয়াল বা ফ্লোর দেখতে খুব সুন্দর দেখায়।

ডায়মন্ড প্যাটার্ন ও ব্রিক বন্ড প্যাটার্ন টাইলস (বাম থেকে)

টাইলসের গ্যাপিং
টাইলসের গ্যাপিং কেন দেওয়া হবে অথবা টাইলসের গ্যাপ কেন দেওয়া হবে না এই নিয়ে নানা রকম মত দেখতে বা শুনতে পাওয়া যায়। কারণ অনেকে টাইলসের গ্যাপিং দিতে চান না। বিশেষ করে রাসটিক টাইলস, যেগুলো আমরা ব্যবহার করি সেগুলো গ্যাপ দিয়ে বসালে একটু অদ্ভুত দেখায় আবার আমাদের দেশে যে সমস্ত সিরামিক টাইলস পাওয়া যায়, সেগুলো গ্যাপ না দিয়ে বসালে অনেক ক্ষেত্রে টাইলস বা ফ্লোরে টাইলস ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সাধারণত এক-দুই বছরে এই ক্ষতিটা টের পাওয়া যায় না। বেশ কিছু বছর পর অনেক ক্ষেত্রে টাইলসের নিচের অংশে পানি শোষণ করে টাইলস ফুলে ওঠে এবং একটা সময় এটি উঠে যায় বা ভেঙে যায়। ফ্লোর থেকে উঠে যাওয়ার এই প্রবণতা লক্ষ করা যায় সিরামিক টাইলসের ক্ষেত্রে। আমরা ফ্লোর পরিষ্কার করার জন্য পানি ব্যবহার করি এবং এই পানির ব্যবহার কমবেশি প্রতিদিনই হয়ে থাকে। আমরা প্রতিদিন ফ্লোর যে পানি দিয়ে মুছে থাকি, সেই পানির কিছু অংশ টাইলসের গ্যাপ দিয়ে ঢুকে গিয়ে টাইলসের নিচের অংশে গিয়ে জমে থাকে এবং সেখান থেকে টাইলস এই পানিটাকে শোষণ করে কিছুটা বৃদ্ধি পায় এই বৃদ্ধি আমরা সাধারণত চোখে দেখি না কিন্তু এটি প্রতিটা টাইলসের ক্ষেত্রে ঘটে থাকে। এখন যদি আমরা এই গ্যাপটা না দিই তাহলে প্রসারণ হওয়ার জায়গা পায় না বলে সেটি ধীরে ধীরে দুর্বল হতে থাকে এবং মাটি থেকে আলগা হয়ে যায় এবং এই আলগা হয় বলেই টাইলস সাধারণত গ্যাপ দিয়ে বসানো হয়। সাধারণত গ্যাপ দেওয়ার জন্য কিছু স্পেসার পাওয়া যায়, এগুলো দেড় মিলিমিটার বা দুই মিলিমিটার বা ক্ষেত্রবিশেষে তিন মিলিমিটার হতে পারে কিন্তু কখনো যদি ডিজাইনার বা স্থপতি টাইলসের ডিজাইনের ক্ষেত্রে এর চেয়েও বেশি গ্যাপ রাখতে চান, সেক্ষেত্রে বিভিন্ন বস্তু দিয়ে এই গ্যাপিং করতে হয়। বিশেষ করে আউটসাইড ওয়ালে অনেক সময় টাইলস বসানোর ক্ষেত্রে সাধারণ ১ দশমিক ৫ মিলি বা ২ মিলিমিটারের গ্যাপের পরিবর্তে ১ ইঞ্চি বা হাফ ইঞ্চির একটি গ্যাপ রাখা হয়, যা সাধারণত অনেক দূর দেখতে সুন্দর লাগে। নান্দনিকতা ফুটিয়ে তোলে।

টাইলসের এই গ্যাপিংয়ের জায়গাটাতে সব কাজ এবং ইনস্টলেশন শেষ করার পর হোয়াইট সিমেন্ট দিয়ে এটি ফিল করে দেওয়া হয়। এই সিলিং প্রক্রিয়া সাধারণত হোয়াইট সিমেন্ট দিয়েই হয় এবং অনেক ক্ষেত্রে আর্কিটেক্ট টাইলসের রঙের সঙ্গে মিলিয়ে বিভিন্ন ধরনের কেমিক্যাল মিশ্রণ করে এই হোয়াইট সিমেন্টকে নিয়ে টাইলসের কাছাকাছি রঙে নিয়ে আসা হয় এবং সেটি দিয়ে এই গ্যাপটা সিল করা হয়। সিলিংয়ের ক্ষেত্রে আবার অনেক সময় আমরা সিলিকন ব্যবহার করি। কারণ অনেক ক্ষেত্রে যদি টাইলস ব্যবহার করার সময় বেশি গ্যাপিংয়ের প্রয়োজন হয়, তখন সেই গ্যাপের মধ্যকার হোয়াইট সিমেন্ট ভেঙে যায়, যার ফলে সেটি হোয়াইট সিমেন্টের বদলে সিলিকন ব্যবহার করা হয়। আবার কোনো কোনো ক্ষেত্রে এই টাইলসের গ্যাপে যদি এক ইঞ্চি বা এর চেয়ে বেশি গ্যাপ থাকে, সে ক্ষেত্রে এই গ্যাপটাকে টাইলসের ছোট টুকরো দিয়েই ফিল করা হয় এবং সে ক্ষেত্রে এটি বেশ নান্দনিক দেখতে হয়। এসব ছাড়াও টাইলস বা গ্রানাইট বা অন্য যেকোনো টাইলস ম্যাটেরিয়াল বিভিন্ন ধরনের সিলেট দিয়ে সিল করা হয় এবং এই গ্যাপগুলো হোক রাখাই হয় যাতে টাইলস ম্যাটেরিয়াল সংকুচিত ও প্রসারিত হতে পারে। এর মধ্যে মাস্টিক, গ্রে সিমেন্ট অন্যতম।

টাইলস কাটিং
টাইলস কাটার জন্য সাধারণত গ্রান্ডিং মেশিন ব্যবহার করা হয়। ডিজাইন মোতাবেক মাপ মেলানোর পর গ্রান্ডিং মেশিন দিয়ে টাইলস কেটে ব্যবহার করা হয়। তা ছাড়া অনেক সময় টাইলস ডিজাইন করে বসাতে গেলে বেশ কিছু ওয়েস্টেজ হয়। সেগুলো আবার মাপমতো স্কার্টিংয়ে ব্যবহার করা হয়। এসব কাজে গ্রান্ডিং মেশিন ছাড়া মোটেও চলে না। এ ছাড়া অনেকেই টাইলস কাটার মেশিন স্ন্যাপ কাটার ব্যবহার করেন। মাপমতো একটা কাটলে টাইলস দুই ভাগ হয়ে যায়। বাংলাদেশে এই স্ন্যাপ কাটার বহুল ব্যবহার হচ্ছে বর্তমানে। স্ন্যাপ কাটার দিয়ে সোজাসুজি বেশ সুন্দরভাবে কম সময়ে টাইলস কেটে ফেলা যায়। হোমোজিনিয়াস টাইলস খুব সুন্দরভাবে স্ন্যাপ কাটার দিয়ে কেটে ফেলা যায়। তবে বিশেষ কোনো ডিজাইন- যেমন ফুলের নকশা বা কার্ভ লাইন থাকলে তখন গ্রান্ডিংয়ের বিকল্প থাকে না।

টাইলস লাগানোর মিক্সচার ‘কনমিক্স’ কিনতে পাওয়া যায়। এটি প্যাকেটজাত বস্তু। পাউডারসদৃশ বস্তুটিকে পানির সঙ্গে মিশিয়ে ব্যবহার করতে হয়। প্রথমে সিমেন্টের একটা আস্তরণ দিয়ে প্লাস্টার করা হয়। এরপর এটি দিয়ে টাইলস লাগানো হয়। খুব কম পরিমাণে লাগে বলে এটি দিয়ে সহজেই টাইলস ইনস্টলেশন সম্ভব এবং বর্তমানে বহুল ব্যবহার হওয়া ইনস্টলেশন ম্যাটেরিয়াল এটি। এটি পানিরোধী বস্তু। বর্তমানে এর ব্যবহার বেড়েছে। বেশ দ্রæত শুকিয়ে যায় বিধায় এর ব্যবহার সুবিধাজনক।

লিনিয়ার বন্ড প্যাটার্ন টাইলস

টাইলসের কর্নার জয়েন্ট
টাইলস কর্নার জয়েন্টের ক্ষেত্রে ক্ষেত্রবিশেষে পেছন থেকে ৪৫ ডিগ্রি কোণে কেটে এরপর জোড়া দেওয়া হয়। তবে সিঁড়ি বা ফ্লোরের মতো জায়গায় এসব কাটিং করা যায় না। কারণ টাইলস একটু ভালো মানের না হলে কাটিং করার সময় ভেঙে যায়। আর এতে ওয়েস্টেজ অনেক বেশি হওয়ার দরুন কাজের দাম বেড়ে যায়। সময় ও অনেক নষ্ট হয়। এ জন্য অনেকেই ওভারল্যাপিং বা বাটেড পদ্ধতিতে কর্নার জয়েন্ট করেন। আউট সাইড ওয়ালে টাইলস কেটে ব্যবহার তেমন দেখা যায় না। টয়লেটের ভেতর যদি কোনো কলামের ভাঁজ থাকে সে ক্ষেত্রে সাবধানে কোনা মিলিয়ে কাজ করা হয় বটে। কিন্তু ওভারল্যাপিং পদ্ধতিতেই বেশির ভাগ টাইলস লাগানো হয়। এখনকার দিনে এই কর্নার জয়েন্টের নানা রকম পদ্ধতি আছে।

মিটার্ড জয়েন্ট বা কর্নার জয়েন্ট: এটি বেশ প্রচলিত হলেও এটি বেশ কষ্টসাধ্য। দুই দিকের টাইলস গ্র্যান্ডিং মেশিন দিয়ে কেটে সমান কোণ মিলিয়ে বসাতে হয়। অনেক ক্ষেত্রেই টাইলসের মান ভালো না হলে কোনা ভেঙে যায়। ফলে অনেকেই এই ধরনের জয়েন্ট করতে চান না। তবে করতে পারলে এটির মতো সুন্দর জয়েন্ট আর হয় না।

বাটেড জয়েন্ট: টাইলস কারিগরদের পছন্দের জয়েন্ট এটি। বাটেড বা ওভারল্যাপিং পদ্ধতিতে জয়েন্ট করলে এটি বেশ সুন্দরভাবে মিলে যায়। হোমোজিনিয়াস টাইলসের ক্ষেত্রে এটির তেমন সমস্যা হয় না। কারণ হোমোজিনিয়াস টাইলস কাটলেও ভেতরে একই রকম দেখতে ম্যাটেরিয়াল থাকে। কিন্তু লাল মাটির সিরামিক টাইলসগুলো সাধারণত লাল মাটির আস্তরণ শুকালে এর ওপর ইউভি প্রিন্ট করে এর টেক্সচার বসানো হয়। এবং এর পরেই চুল্লিতে যায়। ফলে এটির পাশ থেকে লাল মাটির পোড়া অংশটি দেখা যায়। এটি বাটেড জয়েন্ট সিস্টেমে বসালে পাশ থেকে লাল মাটির অংশ দেখা যায়, যা মোটেও দৃষ্টিনন্দন নয়।

ফিটেড কর্নার জয়েন্ট: এটি বেশ ব্যয়সাপেক্ষ টাইলস জয়েন্ট। দুটো সমান মাপের টাইলস মুখোমুখি বসে। এরপর মাঝের গ্যাপে আরেকটি ছোট্ট টাইলসের টুকরো বসে ছবির মতো সেকশন তৈরি করে। এটি বেশ সুন্দর তবে ব্যয়সাপেক্ষ। কারণ অনেক ক্ষেত্রে মাঝের টাইলসের টুকরোটি কাটিং করতে গিয়ে ভেঙে যায়। আবার গ্রান্ডিং মেশিন দিয়ে এত ছোট টুকরো কাটাও যায় না। ফলে অনেক বেশি ওয়েস্টেজ হয়। অনেক স্থপতি এই মাঝের অংশটি ছাড়াই এই টাইলস বসিয়ে ডিটেইল ডিজাইন দেন। এটিও দেখতে মন্দ লাগে না।

টাইলসের কোনায় বেশি ময়লা জমায় টুথব্রাশ ও স্ক্রাবার দিয়ে পরিস্কার করা জরুরি

টাইলস রক্ষণাবেক্ষণ
টাইলস শুধু লাগালেই হয় না। একে প্রতিদিন পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করতে হয়। সিরামিক টাইলস হোক বা রাস্টিক টাইলস প্রতিদিন বা কদিন পর পর নিয়ম করে পরিষ্কার করতেই হয়। নইলে এতে স্থায়ী দাগ পড়ে যায়। পানির ভেতর থাকলে শেওলা পড়ে এতে স্থায়ী দাগ পড়তে পারে। আবার ফাঙ্গাল ইনফেকশন হয়ে টাইলসের রং পরিবর্তন হয়ে যেতে পারে।

যেভাবে পরিষ্কার

  • পানি ও ডিটারজেন্ট পাউডার দিয়ে টাইলস পরিষ্কার করলে ভালো হয়। এতে টাইলস দেখতে সুন্দর দেখায়। এর আগে অবশ্যই ময়লা পরিষ্কার করে নিতে হবে।
  • ক্লিনিংয়ে ফ্লোর ক্লিনার ব্যবহার করতে হবে। লাইজল বা ভিক্সল ব্র্যান্ডগুলো বাদে আরও নানা রকম ফ্লোর ক্লিনার পাওয়া যায়। এগুলো পরিমাণমতো পানিতে মিশিয়ে ব্যবহার করা আবশ্যক। পরিমাণে একটু বেশি হলেই দামি টাইলসে দাগ পড়ে যায়। তাই ব্যবহারে সাবধানতা আবশ্যক। এগুলো বেশ ক্ষার-জাতীয় পদার্থ হয় বলে সাবধান না হলে শরীরের ক্ষতি ও হতে পারে।
  • টাইলস এর কোনায় কোনায় বেশি ময়লা জমে। বিশেষ করে স্কারটিংয়ের ওপর ময়লার আস্তরণ জমে। কোনায় ও জমে যায় নানা আস্তরণ। এগুলো টুথব্রাশ দিয়ে পরিষ্কার করা যেতে পারে।
  • তেল ঝোল বা চর্বি-জাতীয় খাবার টাইলসে পড়লে সঙ্গে সঙ্গে দাগ পড়ে না সত্য, কিন্তু দীর্ঘ সময় পড়ে থাকলে টাইলসের ওপরের শক্ত আস্তরণের ভেতর ময়লা ঢুকে যায়। মার্বেল হলে পরিষ্কার করা যায় দ্রুতই। কিন্তু টাইলসের ক্ষেত্রে কোনো সমাধান নেই। দ্রুত সাবান দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে জায়গাটা।
  • ১ : ৫ অনুপাতে ভিনিগার ও পানি মিশিয়ে দ্রবণ তৈরি করে টাইলসের ওপর ছিটিয়ে বা ভিজিয়ে দিলে দ্রুত টাইলস তার আগের রূপ ফিরে পায়। এরপর পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে।
  • টাইলস পরিষ্কারের পর আগের উজ্জ্বলতা ফিরে না এলে পাতলা কাপড়ে বেকিং সোডা নিয়ে সেই জায়গায় মুছতে হবে। কয়েকবার মুছলে টাইলসে নতুন করে দাগ পড়ে না। ফোম ঘষে দিতে হবে টাইলসে। খানিক পরেই দেখা যাবে টাইলস নতুনের মতো চকচক করছে।
  • ব্লিচিং পাউডার দিয়েও টাইলস পরিষ্কার করা যায়। এ ক্ষেত্রে ব্লিচিং পাউডার, বেকিং সোডা ও পানি ১ : ৩ : ৫ অনুপাতে মিশিয়ে নিয়ে টাইলসে ছিটিয়ে দিলে ভালো হয়। এরপর ভালোমতো ঘষে দিলে টাইলস আবার আগের মতো পরিষ্কার হয়ে যাবে।
  • টাইলস জীবাণুমুক্ত করার জন্য ডেটল বা স্যাভলন ব্যবহার করা যেতে পারে। পরিবারের স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য টাইলস পরিষ্কার রাখার কোনো বিকল্প নেই। কিন্তু ডেটল বা স্যাভলন কতটা জীবাণুমুক্ত করতে পারে এ ব্যাপার পরিষ্কার কোনো ধারণা পাওয়া যায় না। লাইজল বা এ ধরনের প্রোডাক্টগুলো বিক্রির জন্য নানা মুখরোচক গল্প বলে টেলিভিশন মিডিয়ায় বিজ্ঞাপন প্রচার হয় ঠিকই। কিন্তু এসব বিজ্ঞাপনের কতটা সত্য সেটাই হলো আসল প্রশ্ন।
টাইলসের দাগ দূর করতে সাবান, ডিটারজেন্ট ও ভিক্সল দিয়ে নিয়মিত পরিস্কার করা জরুরি। ছবি: ক্রিয়েটিভটিলিং

টাইলস ফ্লোর বা দেয়াল যেখানেই লাগানো হোক, এটি রক্ষণাবেক্ষণ বেশ জরুরি। টাইলস অপরিষ্কার থাকলে বা টাইলসের ফাঁকে ময়লা জমে এটি মানব শরীরের ওপর প্রভাব ফেলে। শিশুরা সহজেই অসুস্থ হয়ে পড়বে যদি টাইলস পরিষ্কার রাখা না হয়। বিভিন্ন রোগ-জীবাণুর বাসা যাতে টাইলস না হয়ে এ বিষয়ে খেয়াল রাখতে হবে। নিয়মিত টাইলস পরিষ্কার রাখলে এটি অনেক বছর পর্যন্ত একই রকম থাকে। একটি ঘরের অন্দরমহল কেমন হবে তা অনেকাংশেই টাইলসের ওপর নির্ভর করে। তাই টাইলস লাগানো ও এর রক্ষণাবেক্ষণে সচেতনতা বেশ জরুরি।

প্রতিদিন নিত্যনতুন রকমের টাইলস বাজারে আসছে। চেষ্টা করেছি সব রকম টাইলস নিয়ে আলোচনা করার। কিন্তু এর বাইরেও প্রতিনিয়ত টাইলসের বাজার উন্নত হচ্ছে। স্পেন বা ফ্রান্সের মতো দেশগুলো টাইলস ডিজাইনের জন্য উচ্চমূল্যে স্থপতি নিয়োগ দিচ্ছেন। ফলে প্রতিনিয়ত টাইলসের বাজারে প্রবেশ করছে উন্নত ও অত্যাধুনিক মানের ও বহুমূল্য নানা টাইলস। আর এসব টাইলস দিয়ে সাজছে বাংলাদেশ। যদিও বেশ ব্যয়সাপেক্ষ, তবুও আশা করা যায় যে অদূরভবিষ্যতে বাংলাদেশের উন্নয়নে টাইলস শিল্পের উন্নয়ন হবে এবং এটি দেশের অর্থনীতিকে যেমন সমৃদ্ধ করবে, তেমন নান্দনিকতায় ছাড়িয়ে যাবে বহির্বিশ্বের টাইলস শিল্পকেও।

স্থপতি রাজীব চৌধুরী

প্রকাশকাল: বন্ধন ১৬০ তম সংখ্যা, জানুয়ারি ২০২৪

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top