নির্মাণে অত্যাবশ্যকীয় নির্মাণ উপকরণ বালু। কংক্রিটে ফাইল এগ্রিগেট ছাড়াও প্লাস্টার ও নিচু স্থান ভরাট করতেও বালু ব্যবহৃত হয় বহুলভাবে। তবে বালুর গুণাগুণ ও ধরনভেদে ব্যবহারে রয়েছে ভিন্নতা। কংক্রিটের কাজে ব্যবহৃত বালুর Fineness Modulus (F.M) থাকে ১.৮ থেকে ২.৫। অর্থাৎ মোটা দানার বালু যেটা সাধারণত আমাদের দেশে লাল বালু বা সিলেট স্যান্ড নামে পরিচিত। আবার, প্লাস্টারের জন্য ব্যবহৃত বালু লোকাল স্যান্ড, যার F.M ১.২ থেকে ১.৮ পর্যন্ত। আর ভিটি বালু বা ভরাটের জন্য ব্যবহৃত বালুর ভালো F.M-এর প্রয়োজন নেই, যা ১.২-এর কম। কিন্তু কখনো ফাউন্ডেশনের নিচে স্যান্ড পাইল হিসেবে বালু ভরাট বা কম্পাক্ট করতে হলে সেই বালুর মান ভালো হওয়া প্রয়োজন। সাধারণত বড় বড় নদীগর্ভ থেকে প্রাকৃতিক বালু সংগ্রহ করা হয়। এ ছাড়া ভূপৃষ্ঠের মাটি খনন করেও বালু সংগ্রহ করা হয়। আমাদের দেশে ডোমার ও ডিমলা স্যান্ড খুবই উৎকৃষ্টমানের বিধায় নির্মাণকাজে এ ধরনের বালু বেশি ব্যবহৃত হয়। যদিও সিলেট স্যান্ডের ব্যবহার নির্মাণে খুবই কার্যকর এবং সচরাচর প্রচুর পরিমাণে পাওয়া যায় বলে এই বালুর জনপ্রিয়তা ও চাহিদা বরাবরই তুঙ্গে।
উৎস অনুসারে বালু তিন ভাগে বিভক্ত
গর্তের বালু (Pit Sand)
নদীর বালু (River Sand)
সমুদ্রের বালু (Sea Sand)

আবার, বালুর বিভিন্ন দানার গঠন এবং সূক্ষ¥তা ওপর ভিত্তি করে বালুকে মোটামুটি চার ভাগে ভাগ করা যায়
মোটা দানার বালু
মাঝারি দানার বালু
সরু দানার বালু
সূক্ষ্ন দানার বালু।

ASTM কোড অনুযায়ী বালুর আকার
প্রমাণ বালু
Sieve No. ১৮ দিয়ে অতিক্রান্ত এবং Sieve No: ২৫ এ ধারণাকৃত বালুর আকারকে প্রমাণ বালু বলে।
ফাইন এগ্রিগেট
American Concrete Institute (ACI) কোড অনুযায়ী, ১০ সস ব্যাস অপেক্ষা ক্ষুদ্রাকৃতি এগ্রিগেটকে ফাইন এগ্রিগেট (Fine Aggregate) বলে।
কোর্স এগ্রিগেট
ACI কোড অনুযায়ী, ১০ সস অপেক্ষা বড় ব্যাসের এগ্রিগেটকে কোর্স এগ্রিগেট (Coarse Aggregate) বলে।
বালুর আয়তন স্থিতি (Bulking of Sand)
বালুতে পানির পরিমাণ কমবেশিতে এর আয়তনের ক্ষেত্রে বিশেষ প্রভাব পরিলক্ষিত হয়।
এমনকি বালুতে বালুর ওজনের ৪ থেকে ৫ শতাংশ পানি থাকলে এটি আয়তনের ২০ থেকে ২৫ শতাংশ বৃদ্ধি পায়। শুষক বালুতে পানি দিলে এর আয়তনের স্ফীতি ঘটে, এটাই মূলত বালুর আয়তন স্ফীতি (Bulking of Sand)।
সূক্ষ¥তার গুনাঙ্ক (Fineness Modulus)
বালুর নমুনার স্ট্যান্ডার্ড চালুনি অনুযায়ী (৪, ৮, ১৬, ৫০, ১০০ নম্বর)-এ আটকে যাওয়া স্ব স্ব চালুনির অবশেষকে শতকরা হারে প্রকাশ করার পর ওদের কিউমিলেটিভ যোগফলকে ১০০ দিয়ে ভাগ করলে যে সংখ্যা মান পাওয়া যায়, তাকে F.M- Fineness Modulus বা সূক্ষ¥তার গুণাঙ্ক বলে।
উৎকৃষ্ট বালুর গুণাগুণ
নির্মাণকাজে ব্যবহৃত বালু ধারালো (Sharp), কৌণিক (Angular) এবং শক্ত দানাবিশিষ্ট (Hard Grains) হয়। এই বালু মোটামুটিভাবে ঘন আকৃতির হওয়া চাই। এটা অবশ্যই মজবুত (Strong), টেকসই (Durable), বাঁ হাতের তালুতে সামান্য বালু নিয়ে ডান হাত দিয়ে পেষণ করলে যদি দেখা যায়, বালু গুঁড়া হয়নি এবং হাতের তালুতে মাটি বা কোনো প্রকার গুঁড়া লেগে নেই, তবে মোটামুটি বুঝতে হবে এটি উত্তম মানের এবং কার্যোপযোগী নির্মাণকাজে ব্যবহৃত বালু। যত দূর সম্ভব এটিই বিশুদ্ধ সিলিকা (Silica) বা Si.02। এটি কাদা বা অন্য কোনো আবর্জনামুক্ত হওয়া উচিত। অবশ্যই এতে কোনো জৈবিক পদার্থ যেমন আঁশ (Loam), পচা ঘাস, পাতা ইত্যাদি থাকবে না।

নির্মাণকাজে ব্যবহৃত বালু ১/৪ ইঞ্চি থেকে ১/১৬ ইঞ্চি চালুনির মধ্য দিয়ে অতিক্রম করতে সম্ভব।
বালুর ওজন
ফাইল অ্যান্ড ড্রাই রিভার স্যান্ড (লুজ)-৯০ পা./ঘনফুট
মিডিয়াম অ্যান্ড ড্রাই রিভার স্যান্ড (লুজ)-৯৫ পা./ঘনফুট
কোর্স (Coarse) অ্যান্ড ড্রাই রিভার স্যান্ড (লুজ)-১০০ পা./ঘনফুট
বালুর মান পরীক্ষা
বালু নির্মাণকাজের উপযুক্ত কি না তা মাঠ পর্যায়ে কতগুলো পরীক্ষার মাধ্যমে যাচাই করা যায়। বালুতে ধুলা, পলিমাটি এবং অন্যান্য জৈব পদার্থের উপস্থিতি বালুর গুণগতমান ক্ষুণœ করে। সে জন্য কংক্রিটের ব্যবহৃত বাতিল পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন হওয়া দরকার। কংক্রিটের ব্যবহৃত বালুতে ধুলা, পলিমাটিজাত ময়লা ৫ শতাংশের বেশি থাকা উচিত নয়। মাঠ পর্যায়ে কতগুলো পরীক্ষার মাধ্যমে বালুতে উপস্থিত পলিমাটি এবং জৈব পদার্থের পরিমাণ নির্ণয় করা যায়।
মাঠ পর্যায়ের বালুর যত পরীক্ষা
বালুতে পলিমাটির উপস্থিতির পরিমাণ নির্ণয় পদ্ধতি
এই পদ্ধতি পরীক্ষার জন্য নির্দিষ্ট ওজনের শুকনো বালু পানিপূর্ণ পাত্রে নিয়ে ভালোভাবে নাড়তে হয়। তারপর পলিমাটিযুক্ত পানি ছেকে আলাদা করতে হয়। একই বালুতে কয়েকবার পানি দিয়ে এভাবে পলিমাটিযুক্ত পানি আলাদা করার পর বালুকে যখন পানির সঙ্গে মেশানোর পর পানি পরিষ্কার অবস্থায় থাকছে, তখনই বুঝতে হবে বালুতে অবস্থিত পলিমাটি সম্পূর্ণরূপে আলাদা হয়েছে। এখন পলিমাটি যুক্ত সম্পূর্ণ পানিটুকু ব্রটিং কাগজে শুকিয়ে ওজন করলে পলিমাটির পরিমাণ পাওয়া যাবে।
এই পরিমাণকে বালুর শতকরা হারে প্রকাশ করা যায়। মনে রাখতে হবে, পলিমাটিজাত ময়লা ৫ শতাংশের বেশি থাকলে এ বালু নির্মাণকাজের অনুপযুক্ত।

বালুতে জৈব পদার্থের পরিমাণ নির্ণয় পদ্ধতি
নির্মাণকাজে ব্যবহার করা হবে এমন বালুতে মাঠ পর্যায়ে জৈব পদার্থের উপস্থিতির পরিমাণ নির্ণয় করতে রং পরীক্ষা করা হয়। ৩ শতাংশ সোডিয়াম হাইড্রোক্সাইড (কস্টিক সোডা) দ্রবণে বালুর নমুনা ডুবিয়ে এ পরীক্ষা করা হয়। এতে বালুতে অবস্থিত জৈব পদার্থ সম্পূর্ণরূপে দ্রবীভূত হয় এবং দ্রবণের রঙের পরিবর্তন হয়ে হলুদ বর্ণ ধারণ করে। এই হলুদ বর্ণ যদি গাঢ় না হয়ে সামান্য হালকা বর্ণ ধারণ করে, তবে বুঝতে হবে বালুতে জৈব পদার্থের উপস্থিতির পরিমাণ অল্প এবং গ্রহণযোগ্য।

এভাবে চালুনি রিপোর্ট বিশ্লেষণসহযোগে সঠিকভাবে হিসাব করে বালুর F.M নির্ণয় করা হয়। বালুর F.M-এর ওপর নির্ভর করে বালুর মান। বালু কোথায় ব্যবহৃত হবে F.M নির্ণয়ের মাধ্যমেই সঠিকভাবে বোঝা যায়। উৎস অনুসারে বালুর প্রকারভেদের মধ্যে সমুদ্রের বালুর F.M ভালো পাওয়া গেলেও তা ব্যবহারের ওপর রয়েছে নিষেধাজ্ঞা। কেননা এই বালুতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে লবণের উপস্থিতি। তাই এই বালুর স্যালাইনিটি থেকে দ্রæতই নির্মাণের অন্যান্য অংশে লবণাক্ততা ছড়িয়ে পড়ার সমূহ আশঙ্কা থাকে। যদি সম্ভব হয় সমুদ্রের বালু নির্মাণে উপেক্ষা করাই ভালো। অন্যথায় সঠিকভাবে বালু রিফাইটিং বা ট্রিটমেন্ট করে অথবা লবণমুক্ত করে নির্মাণে ব্যবহার করা উত্তম।

প্রকৌশলী সুবীর কুমার সাহা
[email protected]
প্রকাশকাল: বন্ধন ৭২ তম সংখ্যা, এপ্রিল ২০১৬