বিশ্বকাপের বর্ণিল যত স্টেডিয়াম

১২ জুন ব্রাজিলে পর্দা উঠছে ফুটবল মহাযজ্ঞ এবারের বিশ্বকাপের। চলবে ১৩ জুলাই পর্যন্ত। ফুটবল বিশ্বকাপ মানেই উত্তেজনা আর উদ্দীপনা। বিশ্বকাপ এলেই ফুটবলপ্রেমীদের মধ্যে শুরু হয় উৎসবের আমেজ। ফুটবলই যে বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় খেলা তা পরতে পরতে বোঝা যায় খেলা চলাকালে। তুমুল এ জনপ্রিয়তার কারণে আন্তর্জাতিক ফুটবল সংস্থা, ফিফা (FIFA) চার বছর পর পর আয়োজন করে বিশ্বকাপ ফুটবলের। ২০১৪ সাল তথা এবারের বিশ্বকাপ ফুটবলের আয়োজক ফুটবল উন্মাদনায় এগিয়ে থাকা ও সর্বোচ্চবার বিশ্বকাপ ট্রফিজয়ী ল্যাটিন আমেরিকান দেশ ব্রাজিল। সাম্বা আর ফুটবলের জাদুস্পর্শে মুখর হবে ব্রাজিল ফুটবল বিশ্বকাপের ২০তম আসর। আমাজানের অববাহিকা থেকে গুয়াইবা নদীর পার অবধি এক ডজন স্টেডিয়ামে হবে এবারের বিশ্বকাপের উত্তেজনাময় সব ম্যাচ। 

ব্রাজিলকে বিশ্বকাপ ফুটবলের আয়োজক দেশ হিসেবে ঘোষণার সময় ফিফার প্রস্তাব ছিল, কোনো শহরে দুটির বেশি স্টেডিয়াম খেলায় ব্যবহার করা যাবে না। আর সব স্টেডিয়ামকে আট-দশটি শহরের মধ্যে সীমিত রাখতে হবে। ব্রাজিলিয়ান ফুটবল ফেডারেশনের সভাপতি Ricardo Teixeira বিশ্বকাপ আয়োজনের জন্য ১২টি শহরের নাম প্রস্তাব করেন। সার্বিক দিক ও দেশের স্বার্থ বিবেচনায় ২০০৯ সালের ৩১ মে ১২টি আয়োজক শহরের নাম ঘোষণা করে ফিফা। স্টেডিয়াম নির্মাণে ৩ দশমিক ৪৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত নেয় ব্রাজিল। পাঁচটি শহরে শুধু বিশ্বকাপের জন্য নির্মিত হয় নতুন স্টেডিয়াম। ব্রাজিলের রাজধানী ব্রাসিলিয়ার Estadio Nacional Mane Garrincha স্টেডিয়ামকে ভেঙে সম্পূর্ণ নতুন করে নির্মাণ করা হয়েছে। অবশিষ্ট ছয়টি স্টেডিয়ামকে সংস্কার করে বিশ্বকাপের জন্য নবরূপে সুসজ্জিত করা হয়েছে। 

এস্তাদিও দো মারাকানা, রিও ডি জেনিরো 

এস্তাদিও দো মারাকানা (Estadio do Maracana), রিও ডি জেনিরো 

স্টেডিয়ামটি ১৯৫০ সালে ব্রাজিলের রিও ডি জেনিরোতে অনুষ্ঠিত ফুটবল বিশ্বকাপের জন্য নির্মাণ করা হয়েছিল। স্টেডিয়ামটি মারাকানা নামেই বেশি পরিচিত। সে সময় এটিই ছিল বিশ্বের সবচেয়ে বড় স্টেডিয়াম। ১৯৫০ সালের বিশ্বকাপ ফুটবলের ফাইনাল খেলা দেখতে স্টেডিয়ামটিতে প্রায় এক লাখ ৯৯ হাজার ৮৫৪ জন দর্শক এসেছিল, যা দর্শকসংখ্যায় এখন অবধি বিশ্বরেকর্ড। এবারের ব্রাজিল বিশ্বকাপে স্টেডিয়ামটি আবার নিশ্চিতভাবেই লাইমলাইটে আসবে। ১৩ জুলাই এর ফাইনালসহ মোট সাতটি খেলা অনুষ্ঠিত হবে এখানে। খেলা দেখতে সর্বোচ্চসংখ্যক দর্শক এখানে আসবে হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে, যা হবে নতুন বিশ্বরেকর্ড। যদিও বর্তমানে মারাকানার দর্শক ধারণক্ষমতা কমিয়ে আনা হয়েছে। বর্তমানে এর আসনসংখ্যা ৭৬ হাজার ৮০৪। এটিই এবারকার ফুটবল বিশ্বকাপের তথা আয়োজক দেশ ব্রাজিলের সবচেয়ে বড় ফুটবল স্টেডিয়াম।

স্টেডিয়ামটির আগের আদলের প্রতি সম্মান রেখে সংস্কারকাজের সময় সিটের নিচের রিংগুলোতে পরিবর্তন আনা হয়েছে। নতুন এই রিং সংযোজনের ফলে দর্শকেরা আগের চেয়ে অনেক স্বাচ্ছন্দ্যে খেলা উপভোগ করতে পারবে। সম্পূর্ণ স্টেডিয়ামটিতে সংযোজন করা হয়েছে নতুন ছাদ। যাতে রয়েছে বৃষ্টির পানি সংরক্ষণের ব্যবস্থা। তা ছাড়া দর্শকদের জন্য কাচের টাওয়ার নির্মাণ করা হয়েছে শুধু বিশ্বকাপের ভাবনা মাথায় রেখে। টাওয়ারটি থেকে স্টেডিয়ামটির সংযুক্তি ও বন্ধ হওয়া পর্যবেক্ষণ করা যাবে খুব ভালোভাবে।

যে ম্যাচগুলো হবে: আর্জেন্টিনা বনাম বসনিয়া-হারজেগোভিনা (১৫ জুন), স্পেন বনাম চিলি (১৮ জুন), বেলজিয়াম বনাম রাশিয়া (২২ জুন), ইকুয়েডর বনাম ফ্রান্স (২৫ জুন), দ্বিতীয় রাউন্ডে- গ্রুপ সি-র বিজয়ী বনাম গ্রুপ ডি-র রানার আপ (২৮ জুন), কোয়ার্টার ফাইনাল একটি (৪ জুলাই), বিশ্বকাপ ফাইনাল (১৩ জুলাই)।

এরিনা দা বাইসাদা, কুরিতিবা

এরিনা দা বাইসাদা (Arena da Baixada), কুরিতিবা

১৯৯৯ সালের জুন মাসে যখন এর সংস্কারকাজ শেষ হয়, তখন থেকেই ঐতিহাসিক Estadio Joaquim Americo স্টেডিয়ামটি Arena da Baixada নামেই বেশি পরিচিতি পায়। এই স্টেডিয়ামটিকে ব্রাজিলের সবচেয়ে আধুনিক ও বিশ্বকাপের অন্যতম স্টেডিয়াম ধরা হয়। স্টেডিয়ামটিকে বিশ্বকাপের জন্য নির্ধারণ করার পর ২০১২ সালে পুনরায় সংস্কার করে বিশ্বকাপের জন্য পুরোপুরি প্রস্তুত করা হয়। সংস্কারের ফলে বেড়েছে দর্শকের বিশেষ সুযোগ-সুবিধার পাশাপাশি মূল খেলার পিচের সমান্তরালে দর্শক আসনসংখ্যাও। এর ফলে স্টেডিয়ামটিতে প্রায় ৪০ হাজার দর্শকের খেলা দেখার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। এখানকার মোট দর্শকাসন ৪১ হাজার ৪৫৬। এখানে অনুষ্ঠিত হবে মোট চারটি খেলা। 

যে ম্যাচগুলো হবে: ইরান বনাম নাইজেরিয়া (১৬ জুন), হন্ডুরাস বনাম ইকুয়েডর (২০ জুন), অস্ট্রেলিয়া বনাম স্পেন (২৩ জুন), আলজেরিয়া বনাম রাশিয়া (২৬ জুন)।

এস্তাদিও বেইরা-রিও, পোর্তো আলেগ্রে 

এস্তাদিও বেইরা-রিও (Estadio Beira-Rio), পোর্তো আলেগ্রে 

স্টেডিয়ামটি গোয়াইবা নদীর তীরে অবস্থিত। এটি আন্তর্জাতিক ক্লাবগুলোর ঘরের মাঠ। ভেন্যুটিতে কমপক্ষে চারটি কোপা লিবারেটর্সের ফাইনাল খেলা হয়েছে। স্টেডিয়ামটি প্রথম চালু হয় ১৯৬৯ সালে। এটি নির্মাণে সময় লেগেছে প্রায় এক দশক বা ১০ বছর। এটির নির্মাণকাজ বিভক্ত ছিল কয়েকটি ধাপে। বিশ্বকাপের জন্য প্রস্তুতকৃত স্টেডিয়ামটিতে মোট পাঁচটি খেলা অনুষ্ঠিত হবে, যার মধ্যে রয়েছে দ্বিতীয় পর্ব বা নকআউট পর্বের খেলাও। স্টেডিয়ামটি দক্ষিণ ব্রাজিলের সবচেয়ে বড় স্টেডিয়াম। দর্শক ধারণক্ষমতা ৪৮ হাজার ৮৪৯ জন।

যে ম্যাচগুলো হবে: ফ্রান্স বনাম হন্ডুরাস (১৫ জুন), অস্ট্রেলিয়া বনাম নেদারল্যান্ডস (১৮ জুন), দক্ষিণ কোরিয়া বনাম আলজেরিয়া (২২ জুন), নাইজেরিয়া বনাম আর্জেন্টিনা (২৫ জুন), দ্বিতীয় রাউন্ডে গ্রুপ জি-র জয়ী বনাম গ্রুপ এইচ-এর রানার আপ (৩০ জুন)।

এরিনা দে সাও পাওলো, সাও পাওলো

৪. এরিনা দে সাও পাওলো (Arena de Sao Paulo), সাও পাওলো

সাও পাওলোতে রয়েছে বড় মাপের ফুটবল ক্লাব। এখানকার সবচেয়ে নামকরা ও জনপ্রিয় ক্লাব Corinthians Paulista. ক্লাবটির দীর্ঘদিনের স্বপ্ন ২০১৪ সালের ব্রাজিল বিশ্বকাপের দরুন পাওয়া সাও পাওলো স্টেডিয়ামটি। স্টেডিয়ামটির অবস্থান সাও পাওলোর সবচেয়ে অবহেলিত অঞ্চলে। সাও পাওলোর এই স্টেডিয়ামটিতে অনুষ্ঠিত হবে ২০১৪ সালের ব্রাজিল বিশ্বকাপের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান ও প্রথম ম্যাচ। স্টেডিয়ামটিতে হবে মোট পাঁচটি খেলা, যার মধ্যে রয়েছে বিশ্বকাপের একটি সেমিফাইনালও। স্টেডিয়ামটির দর্শক ধারণক্ষমতা ৬৫ হাজার ৮০৭ জন।

যে ম্যাচগুলো হবে: ব্রাজিল বনাম ক্রোয়েশিয়া (১২ জুন), উরুগুয়ে বনাম ইংল্যান্ড (১৯ জুন), নেদারল্যান্ডস বনাম চিলি (২৩ জুন), দক্ষিণ কোরিয়া বনাম বেলজিয়াম (২২ জুন)। দ্বিতীয় রাউন্ডে গ্রুপ এফ-এর বিজয়ী বনাম গ্রুপ ই-র রানার আপ (১ জুলাই)। সেমিফাইনাল (৯ জুলাই)।

এস্তাদিও মিনেইরাও, বেল ওরিজোন্তে

এস্তাদিও মিনেইরাও (Estadio Mineirao), বেল ওরিজোন্তে

স্টেডিয়ামটি ব্রাজিলিয়ান ফুটবলের ঐতিহাসিক এক ভেন্যু। এস্তাদিও মিনেইরাও স্টেডিয়ামের মোট দর্শকাসন ৬২ হাজার ৫৪৭। স্টেডিয়ামটিতে ব্রাজিল বিশ্বকাপের মোট ছয়টি খেলা অনুষ্ঠিত হবে, যার মধ্যে রয়েছে একটি সেমিফাইনাল। বিশ্বকাপের জন্য সংস্কার করা হয়েছে স্টেডিয়ামটি। মাঠের সার্বিক ব্যবস্থাপনায় ঘটানো হয়েছে ব্যাপক উন্নতি। এর ওপরে নির্মিত ছাদে রয়েছে বৃষ্টির পানি সংরক্ষণের সুব্যবস্থা। এতে প্রায় ছয় লাখ ২৭ হাজার লিটার পানি সংরক্ষণের ব্যবস্থা আছে, যা পুনর্ব্যবহারযোগ্য। এই স্টেডিয়াম বছর বছর ব্রাজিলিয়ান ফুটবলকে রোনাল্ডো, টোস্টা, দারিওর মতো আক্রমণভাগের সেরা সব খেলোয়াড় উপহার দিয়েছে। ব্রাজিল বিশ্বকাপের জন্য তৈরি স্টেডিয়ামগুলোর মধ্যে দর্শক ধারণক্ষমতায় এটি দ্বিতীয়। দর্শকদের সুবিধার জন্য সম্পূর্ণ স্টেডিয়ামটির ওপরে স্টিল নির্মিত ছাদের সুব্যবস্থা করা হয়েছে। এ ছাড়া মাঠের পিচ নিচু হওয়ার কারণে সিটে বসে সুন্দরভাবে সহজেই খেলা দেখা যায়। তদুপরি, নির্মাণ প্রকল্পটি পরিবেশবান্ধব হওয়ায় সারা বিশ্বে ব্রাজিলিয়ান নির্মাণশৈলীর মর্যাদা বেড়েছে অনেকাংশে। স্টেডিয়ামটি নির্মাণের ফলে স্থানীয় অর্থনীতিতে বইবে সমৃদ্ধির সুবাতাস এমনটাই প্রত্যাশা আয়োজকদের।  

যে ম্যাচগুলো হবে: কলম্বিয়া বনাম গ্রীস (১৪ জুন), আর্জেন্টিনা বনাম ইরান (২১ জুন), কোস্টারিকা বনাম ইংল্যান্ড (২৪ জুন), বেলজিয়াম বনাম আলজেরিয়া (১৭ জুন), দ্বিতীয় রাউন্ডে গ্রুপ এ-র বিজয়ী বনাম গ্রুপ বি-র রানার আপ (২৮ জুন), সেমিফাইনাল (৮ জুলাই)। 

এস্তাদিও পান্তানাল, কুইয়াবা

এস্তাদিও পান্তানাল (Estadio Pantanal), কুইয়াবা

২০১৪ সালের ব্রাজিল বিশ্বকাপের নবনির্মিত স্টেডিয়াম এটি। এতে বিশ্বকাপের মোট চারটি খেলা অনুষ্ঠিত হবে। স্টেডিয়ামটিতে মোট দর্শকাসন ৪২ হাজার ৯৬৮। প্রয়োজনে স্টেডিয়ামটির মূল কাঠামো সংকোচন করা যায়। আর তাই ব্রাজিল বিশ্বকাপ শেষে এর আকার-আকৃতি কিছুটা সংকুচিত করে আবৃত এ স্টেডিয়ামে তখন বিভিন্ন ধরনের অনুষ্ঠান বা প্রদর্শনী যেমন- বাণিজ্য মেলা, সংগীতানুষ্ঠান ও নানা ধরনের প্রদর্শনী আয়োজনের জন্য আদর্শ স্থানে পরিণত করা হবে। 

যে ম্যাচগুলো হবে: চিলি বনাম অস্ট্রেলিয়া (১৩ জুন), রাশিয়া বনাম দক্ষিণ কোরিয়া (১৭ জুন), নাইজেরিয়া বনাম বসনিয়া-হারজেগোভিনা (২১ জুন), জাপান বনাম কলম্বিয়া (২৪ জুন)।

এরিনা পেরনামবুকো, রেসিফ 

এরিনা পেরনামবুকো (Arena Pernambuco), রেসিফ 

স্টেডিয়ামটির অবস্থান রেসিফ শহরে। বিশ্বকাপ ফুটবলের আয়োজক শহরটির উন্মাদনা দেখার মতো। ব্রাজিলের নামকরা তিন ফুটবল ক্লাবের ঘাঁটি এটি। ক্লাব তিনটি হলো- Nautico, Santa Cruz ও Sport. স্টেডিয়ামটি ইতিমধ্যে ১৯৫০ সালের ব্রাজিল বিশ্বকাপের একটি ম্যাচের আয়োজক। কিন্তু ২০১৪ সালের বিশ্বকাপের জন্য আয়োজক শহরটি নিয়েছে ব্যাপক প্রস্তুতি। বিশ্বকাপের মোট পাঁচটি খেলা এখানে অনুষ্ঠিত হবে। এ স্টেডিয়ামের মূল কমপ্লেক্সের পাশেই রয়েছে রেস্টুরেন্ট, শপিং মল, সিনেমা হল। পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপে নির্মিত স্টেডিয়ামটির দর্শক ধারণক্ষমতা ৪২ হাজার ২৪৮ জন। স্টেডিয়ামটিতে রয়েছে ফুটবলপ্রেমীদের জন্য যাবতীয় সুযোগ-সুবিধার সুব্যবস্থা।

যে ম্যাচগুলো হবে: আইভরি কোস্ট বনাম জাপান (১৫ জুন), ইতালি বনাম কোস্টারিকা (২০ জুন), ক্রোয়েশিয়া বনাম মেক্সিকো (২৩ জুন), আমেরিকা বনাম জার্মানি (২৬ জুন), দ্বিতীয় রাউন্ডে গ্রুপ ডি-র বিজয়ী বনাম গ্রুপ সি-র রানার আপ (২৯ জুন)।

এরিনা ফন্তে নোভা, সালভাদোর

এরিনা ফন্তে নোভা (Arena Fonte Nova), সালভাদোর

ব্রাজিলের প্রথম রাজধানী সালভাদোর। শহরটি ২০১৪ ব্রাজিল বিশ্বকাপকে অভ্যর্থনা জানাবে সম্পূর্ণ নবরূপে নির্মিত ৪৮ হাজার ৭৪৭ দর্শকাসনের সুসজ্জিত স্টেডিয়াম এরিনা ফন্তে নোভায়। স্টেডিয়ামটি চালু হয় ১৯৫১ সালের ২৮ জানুয়ারি। পুরোনো এই স্টেডিয়ামটি Bahia ও Victoria ক্লাবের মধ্যে অনুষ্ঠিত উত্তেজনাকর অনেক ডার্বি ম্যাচের সাক্ষী। নতুন স্টেডিয়ামটি আগের স্টেডিয়ামের প্রতিরূপ মাত্র, যা সম্পূর্ণ ধাতব ছাদে আবৃত। স্টেডিয়ামটি প্রাইভেট ও পাবলিক অংশীদারিত্বের যৌথ অর্থায়নে নির্মিত। স্টেডিয়াম কমপ্লেক্সের পাশেই রয়েছে বিলাসবহুল রেস্টুরেন্ট, ফুটবল জাদুঘর, দোকান, হোটেল, কার পার্কিং ও কনসার্ট হলের সুব্যবস্থা। সংস্কারকৃত নতুন এ স্টেডিয়ামে মোট ছয়টি খেলা অনুষ্ঠিত হবে। যার মধ্যে চারটি গ্রুপ পর্বের খেলা, একটি দ্বিতীয় রাউন্ড বা নকআউট পর্বের খেলা আর একটি কোয়ার্টার ফাইনাল।

যে ম্যাচগুলো হবে: স্পেন বনাম নেদারল্যান্ডস (১৩ জুন), জার্মানি বনাম পর্তুগাল (১৬ জুন), সুইজারল্যান্ড বনাম ফ্রান্স (২০ জুন), ইরান বনাম বসনিয়া-হারজেগোভিনা (২৫ জুন), দ্বিতীয় রাউন্ডে গ্রুপ এইচ-এর বিজয়ী বনাম গ্রুপ জি-র রানার আপ (১ জুলাই), কোয়ার্টার ফাইনাল একটি (৫ জুলাই)।

এস্তাদিও নাসিওনাল, ব্রাসিলিয়া

এস্তাদিও নাসিওনাল (Estadio Nacional), ব্রাসিলিয়া

স্টেডিয়ামটি মূলত ব্রাসিলিয়া নামে পরিচিত। ২০১৪-এর ফুটবল বিশ্বকাপকে সামনে রেখে স্টেডিয়ামটি সম্পূর্ণ নতুনরূপে সাজানো হয়েছে। স্টেডিয়ামটিতে আগের তুলনায় বেড়েছে আসনসংখ্যা। বর্তমানে এর আসন ৬৮ হাজার নয়টি। বিশ্বকাপে যে ১২টি স্টেডিয়ামে খেলা হবে আসনসংখ্যার বিচারে এস্তাদিও নাসিওনালর অবস্থান দ্বিতীয়। এখানে বিশ্বকাপের মোট ছয়টি খেলা অনুষ্ঠিত হবে।

যে ম্যাচগুলো হবে: সুইজারল্যান্ড বনাম ইকুয়েডর (১৫ জুন), কলম্বিয়া বনাম আইভরি কোস্ট (১৯ জুন), ক্যামেরুন বনাম ব্রাজিল (২৩ জুন), পর্তুগাল বনাম ঘানা (২৬ জুন), দ্বিতীয় রাউন্ডে গ্রুপ ই-র বিজয়ী বনাম গ্রুপ এফ-এর রানার আপ (৩০ জুন), কোয়ার্টার ফাইনাল একটি (৫ জুলাই), তৃতীয় স্থান নির্ধারণী খেলা (১২ জুলাই)।

এস্তাদিও দাস দুনাস, নাতাল

১০. এস্তাদিও দাস দুনাস (Estadio Das Dunas), নাতাল

স্টেডিয়ামটির যাত্রা শুরু ১৯৭২ সালে। নাতালকে ২০১৪ সালের ব্রাজিল বিশ্বকাপের আয়োজক শহর করায় একটি বিশাল ও বৃহৎ আকৃতির আধুনিক স্টেডিয়ামের প্রয়োজন হয়। তাই আধুনিক স্টেডিয়াম নির্মাণের লক্ষ্যে পাশাপাশি অবস্থিত স্টেডিয়াম দুটিকে ভেঙে ওই জায়গায় সম্পূর্ণ নতুন স্টেডিয়াম নির্মাণের প্রকল্প নেয় আয়োজক কমিটি। নতুন এ স্টেডিয়ামের নাম রাখা হয় এস্তাদিও দাস দুনাস। নামের সঙ্গে দুনাসকে সম্পৃক্ত করার কারণ এটি নাতালের সবচেয়ে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যমন্ডিত অঞ্চলের একটি। সম্পূর্ণ নতুনরূপে নির্মিত ও সুসজ্জিত স্টেডিয়ামটির দর্শক আসনসংখ্যা ৪২ হাজার ৮৬। স্টেডিয়ামটিতে বিশ্বকাপের মোট চারটি খেলা অনুষ্ঠিত হবে। 

যে ম্যাচগুলো হবে: মেক্সিকো বনাম ক্যামেরুন (১৩ জুন), ঘানা বনাম আমেরিকা (১৬ জুন), জাপান বনাম গ্রীস (১৯ জুন), ইতালি বনাম উরুগুয়ে (২৪ জুন)।

 এস্তাদিও কাস্তেরাও, ফোর্তালেজা 

 এস্তাদিও কাস্তেরাও (Estadio Castelao), ফোর্তালেজা 

ফোর্তালেজার অধিবাসীদের অনন্য সুন্দর খেলা ফুটবলের প্রতি যেমন আবেগ ও উচ্ছ্বাস রয়েছে ঠিক তেমনি ভালোবাসা রয়েছে স্থানীয় দুটি ফুটবল ক্লাব সিয়েরা ও ফোর্তালেজার প্রতি। কাস্তেরাও স্টেডিয়ামটি নির্মাণ করা হয়েছিল ১৯৭২ সালে। স্টেডিয়ামটি স্থানীয় দুটি ক্লাবেরই হোম গ্রাউন্ড। ২০১৩ সালের ফিফা কনফেডারেশন কাপ অনুষ্ঠিত হয় এখানে। ২০১৪ সালের ব্রাজিল বিশ্বকাপের জন্য সম্পূর্ণরূপে প্রস্তুত নবরূপান্তরিত স্টেডিয়ামটি। তদুপরি, সংস্কারের পর বেড়েছে এর দর্শক ধারণক্ষমতা। বর্তমানে এর দর্শকাসনসংখ্যা ৬৪ হাজার ৮৪৬। স্টেডিয়ামটিতে রয়েছে পাঁচ হাজার ৯০০টি কার পার্কিংয়ের ব্যবস্থা। ভিআইপিদের জন্য রয়েছে এক্সকিউটিভ বক্স। পোশাক বদলানোর জন্য আছে বিশাল ও সুসজ্জিত কক্ষ। তা ছাড়া স্টেডিয়ামের দর্শকদের মাথার ওপরে থাকছে ধাতব ছাদের ব্যবস্থা। স্টেডিয়ামের প্রবেশপথকে করা হয়েছে আরও বেশি উন্নত। ছোট রেললাইন, মেট্রোরেলসহ যাতায়াতব্যবস্থায় আছে নানা ধরনের সুযোগ-সুবিধা; যাতে করে দর্শকেরা খুব সহজে ও দ্রুত স্টেডিয়ামে পৌঁছাতে পারে। এখানে স্টেডিয়াম কমপ্লেক্সসহ রয়েছে রেস্টুরেন্ট, সিনেমা হল, হোটেল ও অলিম্পিক সেন্টার। স্টেডিয়ামটিতে ২০১৪ সালের ফুটবল বিশ্বকাপের দ্বিতীয় পর্বের খেলাসহ মোট ছয়টি খেলা অনুষ্ঠিত হবে।

যে ম্যাচগুলো হবে: উরুগুয়ে বনাম কোস্টারিকা (১৪ জুন), ব্রাজিল বনাম মেক্সিকো (১৭ জুন), জার্মানি বনাম ঘানা (২১ জুন), গ্রীস বনাম আইভরি কোস্ট (২৪ জুন), দ্বিতীয় রাউন্ডে গ্রুপ বি-র বিজয়ী বনাম গ্রুপ এ-র রানার আপ (২৯ জুন), কোয়ার্টার ফাইনাল একটি (৪ জুলাই)।

এস্তাদিও আমাজনিয়া, মানাউস

১২. এস্তাদিও আমাজনিয়া (Estadio Amazonia), মানাউস

মানাউস শহরটি ২০১৪ এর ব্রাজিল বিশ্বকাপের দরুন ফুটবলপ্রেমী দর্শক ও পর্যটকদের কাছে দারুণ জনপ্রিয় হবে। এর কারণ স্টেডিয়ামটির স্বকীয় বৈশিষ্ট্য। মানাউস শহরটি আমাজান রেইন ফরেস্টের একদম মাঝখানে অবস্থিত। এটিই বিশ্বের সবচেয়ে বড় রেইন ফরেস্ট, যা নতুন স্টেডিয়ামটি আকর্ষণের বড় প্রেরণা। স্টেডিয়ামের আকৃতি ধাতু নির্মিত খড়ের বাক্সের মতো। স্টেডিয়ামের ছাদে বৃষ্টির পানি সংগ্রহের ব্যবস্থা রয়েছে। এখান থেকে সংগৃহীত পানি টয়লেট এবং স্টেডিয়ামের পিচে দেওয়ার কাজে ব্যবহৃত হবে। এর মাধ্যমে সম্ভব হবে স্টেডিয়ামের মধ্যকার তাপমাত্রাকেও নিয়ন্ত্রণে রাখা।

নবনির্মিত স্টেডিয়ামটির দর্শকাসন সংখ্যা ৪২ হাজার ৩৭৪। স্টেডিয়ামের মূল ভবনের সঙ্গে রয়েছে রেস্টুরেন্ট, পার্কিংয়ের ব্যবস্থা। দর্শকদের যাতায়াতের জন্য আছে মনোরেলের সুবিধা। স্টেডিয়ামটিতে ২০১৪ বিশ্বকাপ ফুটবলের মোট চারটি খেলা অনুষ্ঠিত হবে। বিশ্বকাপ শেষে এখানে কনসার্ট ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজনের মাধ্যমে পর্যটকপ্রিয় স্থানে পরিণত করা হবে।

ফিফা বিশ্ব কাপ, ব্রাজিল-২০১৪

যে ম্যাচগুলো হবে: ইংল্যান্ড বনাম ইতালি (১৪ জুন), ক্যামেরুন বনাম ক্রোয়েশিয়া (১৮ জুন), আমেরিকা বনাম পর্তুগাল (২২ জুন), হন্ডুরাস বনাম সুইজারল্যান্ড (২৫ জুন)।

বিশ্বকাপ ফুটবলের মতো মহাযজ্ঞ আয়োজনে জড়িয়ে থাকে আয়োজক দেশের মান-মর্যাদা। এবারের ফুটবল বিশ্বকাপ নিয়ে ব্রাজিলের স্টেডিয়ামকেন্দ্রিক যে ভাবনা ও প্রস্তুতি তা দেখে সহজেই অনুমান করা যায় ব্রাজিলিয়ানরা বিশ্ববাসীকে একটি ভিন্ন ও চমক জাগানিয়া বিশ্বকাপ উপহার দিতে চায়। ফুটবল সারা বিশ্বের সঙ্গে ব্রাজিলেরও সবচেয়ে জনপ্রিয় খেলা। ব্রাজিলিয়ানদের কাছে ফুটবল হচ্ছে ঈশ্বর, যা আরাধনার বিষয়। তাই ফুটবলের এই মহারণ চলার সময় স্থানীয়দের অকুন্ঠ সহযোগিতা ও অতিথিপরায়ণ আপ্যায়ন উভয়ই বিশ্ববাসীর কাছে ব্রাজিলিয়ানদের নতুন এ পরিচিতিকে পৌঁছে দেবে অনন্য এক উচ্চতায়। 

প্রকৌশলী সনজিত সাহা

[email protected]

প্রকাশকাল: বন্ধন ৫০ তম সংখ্যা, জুন ২০১৪

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top