রাজধানীর ব্যস্ততম শহরে প্রতিদিন সবাই ছুটছে কাজের পেছনে। যেখানে দিনের প্রায় বেশির ভাগ সময়ই কাটে অফিসে। ইট-পাথরের এ শহরে নিজেকেও হয়ে যেতে হয় যান্ত্রিক। কিন্তু এই যান্ত্রিকতার মাঝেও অফিসে পেতে পারেন প্রকৃতির ছোঁয়া একেবারেই ঘরোয়া আমেজে। অফিসের জায়গাভেদে ছোট ছোট টবে রাখা যেতে পারে বিভিন্ন ইনডোর প্লান্ট বা সবুজ গাছ। এতে বৃদ্ধি পাবে অফিসের সৌন্দর্য; পাওয়া যাবে প্রকৃতির সবুজ পরশও।
অফিসে ইনডোর প্লান্ট
গাছের জন্য যে শুধু অনেক বেশি এবং খোলামেলা জায়গা লাগবে এমন ধারণা কিন্তু ঠিক নয়। অফিসের অল্প পরিসরেও গাছ রেখে নেওয়া যেতে পারে একটু স্বস্তির নিঃশ্বাস। অফিসে গাছের ব্যবহারের সুফল সম্পর্কে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ জসীম উদ্দিন বললেন, ‘যে কোনো কাজের জন্য প্রথমত যে বিষয়টি প্রয়োজন তা হলো সুস্থ সুন্দর পরিবেশ অর্থাৎ প্রয়োজন পর্যাপ্ত পরিমাণ নির্মল বাতাস তথা অক্সিজেন। অফিসে জায়গার তুলনায় লোকের সংখ্যা অনেক বেশি। এজন্য অতিরিক্ত কার্বন ডাই-অক্সাইড নির্গমন করতে গাছের কোনো বিকল্প নেই, আর অফিসে সবুজের ব্যবহারই পারে কাজের স্পৃহা বাড়াতে।’ অফিসে সুন্দর সুন্দর ফার্নিচার, শো-পিসের সঙ্গে সঙ্গে বিভিন্ন ধরনের ছোট-বড় নানা রকমের ইনডোর প্লান্ট বা সবুজ গাছ রাখা যেতে পারে। অফিসে সারাদিন কত না কাজে ব্যস্ত থাকতে হয় আমাদের। আর এই সকল কাজের ভালো ফল পেতে প্রয়োজন কাজের ভালো পরিবেশ। অফিসে সবুজের উপস্থিতি পারে এমন একটা কর্মোদ্দীপ্ত পরিবেশ সৃষ্টি করতে অর্থাৎ মনকে রাখতে পারে সতেজ।

ইনডোর প্লান্ট রাখবেন যেখানে
ছোট-বড় সব ধরনের অফিসে কাজের জন্য রয়েছে অফিস ডেস্ক। সেখানে কম্পিউটারসহ প্রয়োজনীয় কাগজপত্রের পাশাপাশি রাখা যেতে পারে পাতা বাহারি গাছের ছোট টব। কিংবা টেবিলের পাশে যে জায়গাটা থাকে সেখানেও রাখা যেতে পারে একটু বড় ধরনের বাহারি কোনো গাছ। অফিসে যে কোনো কাজের প্রয়োজনে প্রথমেই যেতে হয় রিসিপশনে। তাই ঐ জায়গাটা হওয়া চাই সুন্দর ও পরিপাটি। সেখানে দুই সোফাসেটের মাঝেও রাখা যেতে পারে একটা গাছ। কনফারেন্স রুমে টেবিলের মাঝে যে জায়গাটা ফাঁকা থাকে ওখানে ক’টি গাছ থাকতে পারে। অফিসের ভেতরে রাখা গাছগুলো সাধারণত হয় পাতা বাহারি। অর্থাৎ বাহারি রঙের ছোট-বড় আকারের গাছ রাখা হয়। আবার অফিসে ঢুকতে কিংবা সিঁড়িতে ফুলের গাছ রাখা যেতে পারে।
ইনডোর প্লান্টের ধরন
ফুল পছন্দ করে না এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া কঠিন। ধানমন্ডির গার্ডেন সেন্টারের ল্যান্ডস্কেপ গার্ডেন ডিজাইনার মোহাম্মদ তারেক রহমান বলেন, ‘অফিসে আলোর অভাবে সব ধরনের গাছ রাখা যায় না। তাই যেখানে একটু কম আলো যায় কিংবা আলো যায় না সেখানে রাখা যেতে পারে আলোহীনভাবে বেড়ে ওঠা কিছু ফুলের গাছ কিংবা বাহারি রঙের পাতার গাছ।’ কচু জাতীয় নানা জাতের গাছের প্রায় সবই রাখা যেতে পারে এমন জায়গাতে। জানালাতে রাখা যেতে পারে ঝুলন্ত সব গাছ।

ইনডোর প্লান্টের রকমফের
বাহারি সব পাতা এবং ফুলের মধ্যে ড্রাসিনা, এগ্রোনিমা, ক্যানটিয়া পাম, এরিকাপাম, ফ্যালাডেনডল, মনেস্টেরিয়া, স্যাগেনিয়াম, তালপাম্পসহ বিভিন্ন গাছ ছোট, বড়, মাঝারি সাইজের টবে রাখা যেতে পারে অফিসের স্থানভেদে।
গাছের যত্নআত্তি
যে কোনো জিনিসেরই প্রয়োজন পরিচর্যার। তবে অফিসে ব্যবহৃত গাছের পরিচর্যার জন্য খুব বেশি সময় এবং পরিশ্রমের দরকার হয় না। কাজের ফাঁকে মাঝে মধ্যে দেওয়া যেতে পারে পানি। শুকনা পাতাগুলো ফেলে দেওয়া এবং কিছু কিছু গাছের পাতা বড় হলে মাঝে মধ্যে ছেঁটে দিতে হবে। তবে যারা এসব ঝামেলা এড়াতে চান কিন্তু অফিসে রাখতে চান সবুজের ছোঁয়া, তারা যোগাযোগ করতে পারেন নিকটস্থ নার্সারিগুলোতে। তারা নিজেরাই গাছ দিয়ে যাবে এবং প্রতি মাসে পুরনো গাছগুলো বদলে দেবে নতুন নতুন সব গাছ। এর জন্য খুব বেশি খরচের প্রয়োজন নেই। ছোট-বড় সব সাইজের গাছের জন্য প্রতি মাসে সর্বনিম্ন পাঁচ টাকা খরচ করতে হবে। শুধু অফিস নয়, এমন সব গাছ রাখা যেতে পারে বিভিন্ন শপিং কমপ্লেক্স, বাসা-বাড়িতে, কিংবা ছাদে। এ ছাড়া রাখা যেতে পারে বিভিন্ন প্রাইভেট ইউনিভার্সিটির ক্যাম্পাসের অফিসরুম ও করিডরে।

প্রাপ্তিস্থান
সৈয়দ গার্ডেন সেন্টার, উত্তরা; মিজান প্লাজা, সাভার; তরুকুঞ্জ নার্সারি, ধানমন্ডি; শেখ নার্সারি, সাউথ পল্লবী; গার্ডেন সেন্টার, ধানমন্ডি। এ ছাড়াও বনানী, বাড্ডা, গুলশানসহ প্রায় সব জায়গাতে রয়েছে নানা ধরনের ইনডোর প্লান্টের নার্সারি।
- তানজিনা আফরিন ইভা
প্রকাশকাল: বন্ধন ৩৩ তম সংখ্যা, জানুয়ারি ২০১৩