নির্মাণে ওপেন স্পেস

নতুন বাড়ি বানাবেন এলাকার প্রভাবশালী চৌধুরী সাহেব। তিনি তাঁর এক পরিচিত ইঞ্জিনিয়ারকে ডেকে সুন্দর একটি ডিজাইন করে দিতে বললেন। কিন্তু বলতে ভুললেন না, বাড়ির জায়গা যেন এক বিন্দুও নষ্ট না হয়। প্রভাবশালী হওয়ায় চৌধুরী সাহেবের সঙ্গে কেউ দ্বিমত পোষণ করে না। তবু ইঞ্জিনিয়ার ইমারত নির্মাণ বিধিমালা অনুযায়ী বাড়ির পাশে, পেছনে ও সামনে নির্দিষ্ট কিছু জায়গা ছেড়ে স্থাপনা নির্মাণ করতে হয়, সেটা তাঁকে জানালেন। তবে তা তিনি হাওয়ায় উড়িয়ে দিলেন। কোটি কোটি টাকায় কেনা জমির এক ইঞ্চি জায়গাও তিনি ছাড়তে চান না। একপর্যায়ে তাঁর চাহিদা মোতাবেক ভবন নির্মাণ হলো। কিন্তু দেখা দিল নানা বিপত্তি। বাধ্য হয়ে ভবনের কিছু অংশ ভাঙতে হলো, যাতে নির্মাণ খরচ বেড়ে গেল অনেকাংশে। স্বপ্নের ভবন নির্মাণের পর আপনি যদি এই অবস্থায় পড়তে না চান তাহলে জানতে হবে ইমারত নির্মাণ বিধিমালা অনুযায়ী ঠিক কতটুকু জায়গা ছাড়তে হবে। বন্ধনের পাঠকদের জন্য ইমারত নির্মাণ বিধিমালার বিস্তারিত জানাচ্ছেন স্থপতি রাজীব চৌধুরী

ইঞ্জিনিয়ারের ডিজাইন অনুযায়ী নির্মিত হলো চৌধুরী সাহেবের নতুন বাড়ি। নিজের জায়গায় তো বাড়ি করেছেনই, সঙ্গে এমনভাবে জানালার শেডগুলো রেখেছেন, যাতে সেগুলোর অবস্থান গিয়ে পাশের বাড়িতে গিয়ে পড়ে। মানে বৃষ্টির পানি পড়লে পড়বে প্রতিবেশীর ঘরে। তাতে তাঁর কিছু আসে-যায় না। এভাবে বাড়ির স্ট্রাকচার বানানোর পর এল প্লাম্বিং লাইন স্থাপনের সময়। বাধল বিপত্তি। প্লাম্বার কোনোভাবেই প্লাম্বিং লাইন টানতে পারেন না। কারণ তিনি তো বাড়ির ড্রয়িংরুম আর ডাইনিংরুমজুড়ে একপাশে পিট বসাতে পারছেন না, ময়লাগুলো নিয়ে যাবেন কীভাবে সেপটিক ট্যাংক পর্যন্ত? ওপরতলার বাথরুমের পি ট্র্যাপ আবার চলে এল নিচতলার ড্রয়িংরুমের ভেতর। এ রকম অদ্ভুত অবস্থা হলো যে ওপরের তলায় কেউ কমোডের পানি ফ্ল্যাশ করলে নিচতলায় বিকট শব্দ তৈরি হয়। চৌধুরী সাহেব এরপর সত্যিই ভয় পেলেন, যখন দেখলেন এই হিউম্যান ওয়েস্ট লাইন গেছে রান্নাঘরের ওপর দিয়ে। মানে কোনোভাবে এই পাইপলাইন লিকেজ হলে সব ময়লা এসে পড়বে রান্নাঘরের মেঝেতে! এমনই এক পরিস্থিতিতে তিনি বাধ্য হলেন বাড়ি ভাঙতে। শেষে বাড়ির একপাশ ভেঙে তিনি প্লাম্বিং লাইন টানলেন। বৃষ্টির পানি নামার লাইন তৈরি করলেন। আর এভাবেই ওনার বাড়ি বানানোর খরচ বেড়ে হয়ে গেল প্রায় দ্বিগুণ।

ইমারত নির্মাণ বিধিমালা অনুযায়ী ভবন নির্মাণের আগে বেশ কিছু বিধিমালা আপনাকে মানতে হবে। যেমন, ভবনের সামনে অবশ্যই রাস্তা থাকতে হবে ২০ ফুট। এই ২০ ফুট বা ৬ মিটার রাস্তা না থাকলে আপনাকে বাড়ির সামনের রাস্তাটা ২০ ফুট করার জন্য রাস্তার মাঝখান থেকে দুই দিকে ১০ ফুট করে মেপে যতটুকু ছাড়তে হয়, ততটুকু ছেড়ে জমির পরিমাণ নির্ধারণ করতে হবে। এই জমির পরিমাণ নির্ধারণে আপনি অবশ্যই কিছু বোনাস ফার (Floor Area Ratio) পেয়ে যাবেন। আর বোনাস ফার পেলে ভবনে আপনার সাধারণ হিসাবের চেয়েও বেশি তলা যোগ করতে পারবেন।

ভবনের উন্মুক্ত পরিসরের বহুমুখী ব্যবহার

এরপরেই আপনাকে ইমারত নির্মাণ বিধিমালা অনুযায়ী জমির ক্ষেত্রফলের সঙ্গে মিল রেখে ৫১-এর সারণি ৩ অনুযায়ী ফার নির্ধারণ করতে হবে। সেখানে উল্লেখ থাকবে, আপনার জমি অনুযায়ী জমির সামনে রাস্তা থাকতে হবে। রাস্তার প্রস্থ নির্ধারণ করতে হলে জমির সামনে থাকা রাস্তার দুই দিকে ৫০ মিটারের মধ্যে সর্বিনিম্ন প্রস্থ বিবেচনা করতে হবে। এর পরেই আপনাকে দেখতে হবে আপনার MGC (ম্যান্ডেটরি গ্রাউন্ড কভারেজ) কতটুকু। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে এটা ৫০ শতাংশের বেশি হয় না। মানে আপনার জমির অর্ধেকজুড়ে আপনি বাড়ি নির্মাণ করতে পারবেন। বাকিটা ফাঁকা রাখতে হবে।

ড্যাপ ২০২২-২০৩৫ প্লট ফার বা প্লটভিত্তিক ফার সূচক (সারণি ৩.৫)
ভবনের এই ফাঁকা অংশ কীভাবে পাবেন? আপনার জমির মাপ অনুযায়ী ইমারত নির্মাণ বিধিমালার সারণি ৩ অনুযায়ী সামনে পেছনে ও দুই পাশে কতটা জায়গা ছাড়তে হবে, সেটা পেয়ে যাবেন। এগুলো বাদ দিলে যা থাকবে, সেটা যদি ৫০ শতাংশ হয়ে যায়, তাহলে আপনি এর মধ্যেই বাড়ি নির্মাণ করতে পারবেন। যদি সেটা বেশি হয়, তাহলে এর সামনে বা পেছনে, অথবা দুই পাশে আরও বেশি ছেড়ে দিয়ে বাড়ির গ্রাউন্ড কভারেজ ৫০ শতাংশ করে নিতে হবে। দেখা গেল আপনি জমির পরিমাণ তিন থেকে চার কাঠার মধ্যে এবং এ জন্যে সারণি থেকে পেলেন যে বাড়ির সামনের দিকে ছাড়াতে হবে ১.৫ মিটার বা ৫ ফুট জায়গা। দুই পাশে আপনাকে ছাড়তে বলা হলো ১ মিটার বা ৩.২৮ ফুট এবং পেছনে বলা হলো আবারও ১.৫ মিটার বা ৫ ফুট। এভাবে খালি অংশ ছাড়ার পরও যদি গ্রাউন্ড কভারেজ সারণি ৩(ক) অনুযায়ী ৬২.৫-এর বেশি হয়, তাহলে আপনাকে আরও বেশি জমি ছেড়ে এই ৬২.৫ শতাংশে নিয়ে আসতে হবে।

আপনি বাকি ৫০ শতাংশে কী করবেন? বাকি ৫০ শতাংশের মধ্যে আপনি গার্ডরুম বানাতে পারবেন। পারবেন পেইভড পার্কিং করতে। এ ছাড়া বেসমেন্ট থাকলে সেটা এই ৫০ শতাংশের অর্ধেক পর্যন্ত বাড়াতে পারবেন। এরপর বাকি থাকল আরও ২৫ শতাংশ। এই ২৫ শতাংশে আপনি আসলে কিছুই করতে পারবেন না। মানে এখানে কোনো পেইভ এরিয়া করতে পারবেন না। পেইভ এরিয়া মানেই ঢালাই করে দেওয়া, যা আপনি এখানে করতে পারবেন না। আর এই ম্যান্ডেটরি গ্রিন এরিয়া নিয়েই সবার হরেক রকম আপত্তি। কেউ মূলত এই জায়গা ছেড়ে দিতে চান না। ভাবেন এত টাকা দিয়ে বাড়ি বানিয়ে আপনি কেন জায়গা ছেড়ে দেবেন? কিন্তু এই জায়গা ছেড়ে দেওয়া মূলত আপনার ভবিষ্যতের জন্যই।

ম্যান্ডেটরি ওপেন এরিয়ায় হতে পারে একটি বাগান। সেখানে নানা রকম গাছ লাগাতে পারেন, যা একই সঙ্গে পরিবেশ সংরক্ষণে ভূমিকা রাখবে- গ্রিন হাউস অ্যাফেক্ট প্রতিরোধে কাজ করবে এবং বাড়ির পরিবেশের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করবে।

অনেক ডেভেলপার আছেন, যাঁরা বাড়ির দুই পাশে তেমন কিছু না করলেও সামনের দিকে হরেক রকম বিদেশি গাছ লাগিয়ে দেন। এই বিদেশি গাছগুলো তেমন কাজে আসে না। আবার দেখা যায়, আমাদের দেশের পরিবেশে এসব গাছ প্রথম কিছু বছর টিকলেও ধীরে ধীরে মরে যায়। এ জন্য পরিবেশের সঙ্গে খাপ খায় এমন গাছ লাগানো প্রয়োজন। বিদেশি গাছগুলো আমাদের দেশের জন্যও ভালো কোনো সুফল বয়ে আনতে পারে না। এগুলোর বদলে দেশি ফলদ গাছ লাগানো হলে সেটা আমাদের পরিবেশ ও প্রকৃতির জন্য আশীর্বাদ হয়ে আসে।

ওয়াটার রিচার্জ ইউনিট

ওয়াটার রিচার্জ ইউনিট
ম্যান্ডেটরি গ্রিন এরিয়া থাকে মূলত বৃষ্টির পানি যেন মাটির ভেতর প্রবেশ করতে পারে। প্রতিদিন আমরা ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ার সমস্যায় ভুগছি। জমিতে এখন ডিপ টিউবওয়েল বসানো নিষেধ হলেও অধিকাংশ বাড়িতেই ডিপ টিউবওয়েল আছে। ফলে আমাদের শহর ও নগরের ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নিচের দিকে নেমে যাচ্ছে। অনেকেই শুকনো সময়ে এখন আর পানি পান না বলে অভিযোগ করেন। আর এ জন্য আমাদের উচিত বৃষ্টির পানি থেকে শুরু করে প্রতিনিয়ত ফেলে দেওয়া পানিকে আবার মাটিতে ফিরিয়ে দেওয়া। আমরা চাইলেই একটা পিট তৈরি করে বৃষ্টির জলাধারা ও দৈনন্দিন ব্যবহার্য পানিকে ম্যান্ডেটরি গ্রিন এরিয়া দিয়ে মাটিতে রিচার্জ করতে পারি। এতে একদিকে আমাদের নগরের জলাবদ্ধতা কমবে, অন্যদিকে ভবিষ্যতের পানির অভাব পূরণে এটি গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করে। এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, এক ঘণ্টার বৃষ্টিতে সিলেট বিমানবন্দরের রানওয়েতে যে পরিমাণ পানি জমে, সেটা দিয়ে একটা শহরের পুরো এক দিনের পানির অভাব পূরণ করা সম্ভব। এর মানে হলো এভাবে কোটি কোটি লিটার পানি আমরা নদী বা খালে ফেলে দিই বৃষ্টির সময়ে। আর এভাবে নদীর পানি সমুদ্রে চলে যায়, কিন্তু এই পানির অর্ধেকও যদি আমরা মাটিতে রিচার্জ করতে পারতাম, তাহলে আমাদের খাবারের পানির অভাব হতো না।

খেলার জায়গা
আমাদের দেশে শিশুদের খেলার জায়গাতেই প্রথমে আবাসন শুরু হয়। দেখা গেল শিশুরা একদিন এসে দেখল ওদের খেলার জায়গায় বাড়ি উঠবে, তাই খেলা বারণ। দেশে পর্যাপ্ত পরিমাণ খেলার জায়গা নেই। কিন্তু বাড়ির সামনে চাইলেই ম্যান্ডেটরি গ্রিন এরিয়ায় খেলার জায়গা নির্মাণ করা যায়। এতে বরং বাড়ির নান্দনিকতাই বাড়ে।

ওয়াটার বডি
বাড়ির সামনে বা পেছনে একটা সুন্দর ওয়াটার বডি তৈরি করা যায়, যেটার সামনে বসে বিকেলবেলার সময়টা উপভোগ করা সম্ভব। এখানেই থাকতে পারে কোনো কৃত্রিম ঝরনা, যা বাড়ির তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে ভূমিকা রাখবে, থাকতে পারে একটা ছোট্ট মাছের অ্যাকুরিয়াম, যা নান্দনিকভাবে ফুটিয়ে তুলতে পারে নানা রকম মাছের সমারোহ, থাকতে পারে শাপলা ফুলের টব। আর এভাবে নান্দনিক স্থাপনায় রূপান্তরিত হতে পারে আপনার বাসস্থান। একটা বাড়ির সামনে একটা ছোট্ট বিশুদ্ধ পানির পাত্র থাকতে পাওে, যেটা থেকে পথচারী চাইলেই তৃষ্ণা মেটাতে পারবে। আর এভাবে সামাজিক দায়বোধও তৈরি হয়। গুলশান ও বনানীর কিছু বাড়ির সামনে এরকম চিত্র দেখা যায়।

সবজি চাষ
বর্তমানে বিশ্ব মন্দার সময়ে আপনি দ্রব্যমূল্যের নাভিশ্বাসের গল্প করতে পারেন। এসব গল্প শোনার চেয়ে সেই সময়ে নিজের জমির চারপাশের ম্যান্ডেটরি গ্রিন স্পেসে সবজি চাষ করতে পারেন। এতে বাড়ির চারপাশের পরিবেশ থাকবে অনন্য, আপনার পরিবারের প্রয়োজনে এসব শাকসবজি খাদ্য হিসেবেও গ্রহণ করতে পারবেন, চাইলে বিক্রিও করতে পারবেন।

সফট পেইভ
সফট পেইভ হলো এমন এক পেভিং সিস্টেম, যাতে আপনি চাইলে এর ওপর হেঁটে যেতে পারবেন। আপনার পায়ে মাটি লেগে থাকবে না কিন্তু আপনাকে কোনো শক্ত পেইভ এরিয়ার ওপর হাঁটতে হবে না। কারণ এই পেইভের ফাঁকে ফাঁকে জন্মে ঘাস, যা একই সঙ্গে মাটিতে পানি প্রবেশ করতে সাহায্য করে, সবুজ তৈরি করে, আবার হাঁটার জন্য পথ হিসেবেও ব্যবহার করা হয়। এই হাঁটা পথের পাশে আমরা নানা ধরনের ফুলের গাছ লাগাতে পারি, যাঁদের সকালবেলা হাঁটতে হয় ডাক্তারের পরামর্শে, তাঁরা চাইলেই এই গ্রিন এরিয়াতেই সেরে ফেলতে পারেন সকাল বা বিকেলের প্রাত/সান্ধ্যভ্রমণ।

ঘিঞ্জি নগরে এক চিলতে জলাধার

ল্যান্ডস্কেপ ও অন্যান্য
স্থাপত্যের এই আধুনিক শাখার দিকে ঝুঁকেছে সারা বিশ্ব। ল্যান্ডস্কেপ আর্কিটেকচার নামে একটা আলাদা টার্মও জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। যাঁরা ল্যান্ডস্কেপ আর্কিটেক্ট, তাঁরা চাইলেই এই ম্যান্ডেটরি গ্রিন এরিয়াকে নিয়ে নানা ধরনের ল্যান্ডস্কেপ আর্কিটেকচারাল ডিজাইন করতে পারেন। পেইভ ও গ্রিন নিয়ে এ ধরনের কাজ বহির্বিশ্বে অহরহ হচ্ছে। আমাদের দেশেও এই প্র্যাকটিস হচ্ছে অনেক বছর ধরে।

এই ম্যান্ডেটরি ওপেন স্পেস বা আবশ্যিক খোলা জায়গায় কখনোই গ্রিল দিয়ে আটকে সূর্যালোক বাধাগ্রস্ত করা উচিত না। এতে বাড়ির গ্রাউন্ডফ্লোরে আলো-বাতাস প্রবেশ করতে বাধাপ্রাপ্ত হয়। অনেকেই চোরের ভয়ে পুরো স্পেস বিল্ডিংয়ের সঙ্গে যুক্ত করে ওপরে গ্রিল করে দেন। এতে পুরো বাসার নান্দনিকতা বিনষ্ট হয় এবং এর ফলে দেখা যায় এই স্পেস বাড়ির ভেতরে নিয়ে আসার প্রবণতা থেকে এটায় সলিড ঢালাই করে দেওয়া হয়, যাতে এটি আদতে কোনো কাজেই আসে না। তাই এই সবুজ, এই মাটি কাজে লাগাতে হবে। কাজে লাগাতে হবে আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্যই। নইলে সুন্দর বাসস্থানে থাকার জন্য জায়গা থাকবে কিন্তু সেই পরিবেশটা আর থাকবে না, যেখানে মানুষ নামের প্রাণীরা বসবাস করে।

প্রকাশকাল: বন্ধন ১৬৮ তম সংখ্যা, আগস্ট ২০২4

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top