‘পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন’ বা পবা- পরিবেশ ও প্রতিবেশ ব্যবস্থার সংরক্ষণ ও উন্নয়নে কাজ করা একটি স্বেচ্ছাব্রতী সামাজিক সংগঠন। প্রকৃতি ও মানুষের সম্পর্ক স্থিতিকরণ, চলমান ও সম্ভাব্য পরিবেশ বিপর্যয়ে মানুষ ও জীবজগতের অস্তিত্ব রক্ষায় উন্নয়ন কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে সংগঠনটি। দেশের পরিবেশের নানা ইস্যুর মতো ঢাকার বুড়িগঙ্গা নদী নিয়ে কাজ করছে তারা। দখল থেকে নদীরক্ষা, পরিবেশ বিপর্যয় এবং দূষণমুক্ত বুড়িগঙ্গা উপহার দিতে কাজ করে চলেছে নিরন্তর। বুড়িগঙ্গা নিয়ে বিভিন্ন সেমিনার, সিম্পোজিয়াম, মানববন্ধন, সভা, সমাবেশ,র্যালি, গোলটেবিল বৈঠক, মতবিনিময় সভা, সরকারকে পরামর্শ প্রদান, অবস্থান ধর্মঘট, অনশন, আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ, বিভিন্ন সংগঠনের সাথে আন্তঃযোগাযোগ, এ বিষয়ে প্রচার ও প্রচারণা, বিভিন্ন পেশাজীবী, বিশেষজ্ঞ ও জনগোষ্ঠীর সাথে মতবিনিময়, তরুণদের গ্রীনফোর্স গঠন, পরিবেশ বিষয়ক সাংস্কৃতিক কর্মকান্ড পরিচালনা করছে সংগঠনটি। আর এই কাজটি যে মানুষটির নেতৃত্বে পরিচালিত হচ্ছে তিনি পবার চেয়ারম্যান আবু নাসের খান। বন্ধনের মুখোমুখি হয়ে কথা বলেছেন বুড়িগঙ্গা নদীর পরিবেশগত সমস্যার নানা দিক নিয়ে। জানিয়েছেন বুড়িগঙ্গা নদী রক্ষায় তাদের বহুমুখী কর্মকান্ডের কথা।
বুুড়িগঙ্গা নদীর বর্তমান অবস্থা জানতে চাই?
বুড়িগঙ্গা নদীর বর্তমান পরিবেশ নিয়ে কথা বলার আগে এর ইতিহাস জানতে হবে। এ নিয়ে আমাদের অনেক কাজ করার সুযোগ হয়েছে। পবার উল্লেখযোগ্য কাজের অন্যতম বুড়িগঙ্গা নদী বাঁচাও আন্দোলন। ১৬০০ শতাব্দী; সময়টা মুঘল আমল, এ সময়ে বুড়িগঙ্গা নদীকে কেন্দ্র করে নগর ঢাকার গোড়াপত্তন হয়। ঢাকা মহানগরীতে যেসব খাল ছিল যেমন- বেগুনবাড়ী, সেগুনবাগিচা, আরামবাগ, জিরানী, ধোলাই, দেব ধোলাই, কল্যাণপুর, মহাখালী খালসহ অসংখ্য শহরের প্রাকৃতিক জলাধারগুলো ব্যবহৃত হতো নৌপথ হিসেবে। উত্তর-পশ্চিমে তুরাগ নদী দিয়ে মালবাহী নৌকা নগরীতে প্রবেশ করত। বেগুনবাড়ী ধোলাই খাল হয়ে তা বুড়িগঙ্গা দিয়ে বেরিয়ে যেত। নগরীর পানি নিষ্কাশনের মাধ্যম ছিল খাল ও পার্শ্ববর্তী নদীগুলো। কালের আবর্তে ঢাকা গুরুত্বপূর্ণ নগরীতে পরিণত হয়। এর ফলে অপরিকল্পিত নগরায়ণের পাশাপাশি প্রাকৃতিক খাল ও জলাশয়গুলো ভরাট হতে শুরু করে।

বুড়িগঙ্গার ভৌগোলিক অবকাঠামো সম্পর্কে বলবেন?
বুড়িগঙ্গাকে ঘিরে ঢাকা নদীবন্দরের তীরভূমির দৈর্ঘ্য দুই পাশে প্রায় ৩৪ কিলোমিটার, জমির পরিমাণ ৪৫১ একর এবং প্রস্থ ৪০ মিটার। ১৯৮৪ সালে পানি প্রবাহের পরিমাণ ছিল সর্বোচ্চ ২৯০২ ঘনমিটার/সিসি। ১৯৬৭ সালে ঢাকা নদীবন্দর প্রতিষ্ঠার পর গত প্রায় ৪০ বছর পুরো জায়গা নিয়ন্ত্রণ ও রক্ষার দায়িত্ব অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষের।
এখানে নদীবন্দর কখন প্রতিষ্ঠিত হয়?
১৯০৫ সালে ঢাকা মহানগরীর পরিকল্পনায় পরিবহন ব্যবস্থার সুপারিশ করা হয় তাতে বুড়িগঙ্গা নদীকে কেন্দ্র করেই গড়ে ওঠে ঢাকা শহরের যাত্রী ও মালামাল পরিবহন ব্যবস্থা। ঢাকা নগরের শিল্প ও বাণিজ্যিক ব্যবস্থা বিকাশের মূল কেন্দ্রবিন্দু ছিল বুড়িগঙ্গা নদী। এই নদীকে কেন্দ্র করে নৌ-পথের যাত্রী ও মালামাল ওঠানামা-যাতায়াতের অবকাঠামো প্রস্তুত করা হয়। যার মধ্যে রয়েছে শ্যামবাজার থেকে বাদামতলী পর্যন্ত ১.৫ কিলোমিটার এলাকা, সদরঘাট টার্মিনাল ভবন সংলগ্ন ওয়াইজঘাট, সিমসনঘাট, নবাববাড়ি ও বাদামতলী এবং শ্যামবাজার মিলব্যারাক জাহাজ শিল্প এলাকা। বুড়িগঙ্গা নদীর কারণে ঢাকা শহরে পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা করা সম্ভব হয়েছে। এখনও দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ঢাকা নগরের প্রবেশের পথ এই বুড়িগঙ্গা।
এক সময় এখানে শহরের লোকজন নির্মল চিত্তবিনোদনের জন্য আসত, সেই পরিবেশ কি ফিরিয়ে আনা সম্ভব?
এক সময় না, এখনো অনেকে আসে। যারা এখানে আসছে তারা দেখছে আবর্জনা ময়লা আর নোংরা বুড়িগঙ্গাকে। বুড়িগঙ্গার প্রতি মানুষের ভালোবাসার কমতি নেই। একসময় বুড়িগঙ্গা নদীর ধারে বসে নির্মল বায়ু উপভোগ করত দর্শনার্থীরা। নৌ-ভ্রমণ করত। বর্তমানে অবৈধ দোকান, বর্জ্য, ময়লা, আবর্জনা স্ত‚পের কারণে এই এলাকা ডাস্টবিনের রূপ নিয়েছে। এর ফলে বুড়িগঙ্গার পাশ দিয়ে সাধারণ মানুষের চলা সীমিত হয়ে পড়েছে। আর আমাদের কাজ এগুলো নিয়েই। আমরা চাই বুড়িগঙ্গার পানি নির্মল হোক। তার জন্য সরকারকে পরামর্শ ও প্রস্তাবনা দিচ্ছি। এখনো সময় আছে এই নদীকে বাঁচানোর। যদি এই নদীকে বাঁচানো না যায় তাহলে আমাদের সামনের দিনগুলোতে কী হবে তা ভেবে বলা সত্যিই মুশকিল।

বুড়িগঙ্গা নদীর এখনকার অবস্থা সত্যিই ভয়াবহ, এ সম্পর্কে বলবেন?
বর্তমান অবস্থা সবাই জানে। নদীর পাশে যাদের বাড়ি রয়েছে সে ইচ্ছা করে নদীর মধ্যে দখল নিয়ে নিয়েছে। কলকারখানার কাজ করছে অনেকেই। নদীতে ফেলা হচ্ছে বর্জ্য। রাসায়নিক বর্জ্যরে ফলে নদীর জীববৈচিত্র্য ধ্বংস হচ্ছে। বুড়িগঙ্গা নদীর পাড়ে এখন দাঁড়িয়ে থাকা যায় না। একসময় বুড়িগঙ্গা নদীকে কেন্দ্র করে ঢাকা মহানগরী গড়ে উঠেছিল। এখন সেই বুড়িগঙ্গাকে রক্ষা করার জন্য আন্দোলন করতে হচ্ছে। বুড়িগঙ্গা যেভাবে দখল ও দূষণ হচ্ছে, এভাবে চললে বুড়িগঙ্গার অস্তিত্বই বিপন্ন হবে।
বুড়িগঙ্গা প্রধানত দখল হচ্ছে কীভাবে? বুঝিয়ে বলবেন?
১৯৬৭ সালে নৌবন্দর প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর ৪০ বছরে পুরো জায়গা নিয়ন্ত্রণ ও রক্ষার দায়িত্ব অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষের। এ দায়িত্ব তারা ঠিকমতো পালন না করার কারণে নদীতীর এলাকায় অবস্থানরত মানুষ ছাড়াও প্রভাবশালী ভূমিদস্যুরা নদীতীর দখল ও নদী ভরাট করে অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ করছে। এ যাবত বহুবার অবৈধ স্থাপনা ভেঙে ফেলা হয়েছে। কিন্তু প্রতিবারই নতুন করে স্থাপনা গড়ে উঠেছে। নির্মাণ করা হয়েছে ইটের খোয়া ও বালুর গদি। এতে করে স্রোতবিহীন বুড়িগঙ্গা নদী ক্রমেই সরু হয়ে যাচ্ছে।
আবাসন ও অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ হচ্ছে, রাজউক বা সংশ্লিষ্ট বিভাগের চোখের সামনে কীভাবে এই দখলদারিত্ব চলছে?
এটা খুবই সহজ বিষয়। আমাদের নীতিনির্ধারকদের মাসোয়ারা দিয়ে এই ব্যবসা চলে। হাজারীবাগের কাছে বুড়িগঙ্গার একটি ধারা পুরোপুরি ভূমিদস্যুদের দখলে চলে গেছে। প্রতিদিনই এখানে কোনো না কোনো অংশ দখল হয়ে যাচ্ছে। প্রকাশ্যে ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে চলছে নদী ভরাটের কাজ। ভরাটকৃত অনেক স্থানেই নির্মাণ করা হচ্ছে বহুতল ভবন, শিল্প কারখানাসহ কাঁচাপাকা একাধিক ভবন ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান। কামরাঙ্গীরচরের বেড়িবাঁধের ভেতরেই নদীর জায়গা দখল করে তৈরি করা হয়েছে দোকান ঘর ও বাঁশের গদি। স্থানীয় কিছু রাজনৈতিক নেতা এসব ঘর ভাড়া দিয়ে আদায় করছে হাজার হাজার টাকা।

আমরা বুড়িগঙ্গা দূষণের নানা কারণ জানি, কিন্তু উল্লেখ করার মতো প্রধান কারণ কোন্গুলো?
পবার পক্ষ থেকে অনুসন্ধান করে আমরা জেনেছি, সদরঘাট, কেরানীগঞ্জ, লালবাগ, সোয়ারীঘাট, কামরাঙ্গীরচর, শহীদনগর, আমলীপাড়া, চাঁদনীঘাট এসব এলাকার পানি এখন তরল ছাই। এখানে আমরা দেখেছি, হাজারীবাগ ট্যানারির বর্জ্য ১২%, ঢাকাবাসীর প্রতিদিনের বর্জ্য ৭৮% দুই তীরের শিল্প-কারখানার বর্জ্য, কাঁচাবাজারের প্রতিদিনের আবর্জনা, স্টিমার-লঞ্চ, ও অন্যান্য নৌযান থেকে নিঃসৃত বর্জ্য নদীর পানিকে এই দশা করেছে। ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় অবহেলা ও বুড়িগঙ্গার দু’পাশে অসংখ্য পাইপ দিয়ে স্যুয়ারেজের ময়লা সরাসরি নদীতে পড়ে। জোট সরকারের অঙ্গীকার ছিল, ২০১০ সালের মধ্যে সবার জন্য স্যানিটেশন ব্যবস্থা। আগে মানুষ খোলা জায়গায় মল ত্যাগ করত; এতে মলমূত্র চারদিকে ছড়িয়ে অসুখ-বিসুখ বাড়ত। এর ফলে সরকার এসব এলাকায় স্যানিটেশন ব্যবস্থা জোরদার করার লক্ষ্যে স্যুয়ারেজ লাইন দিয়ে মলমূত্র, ময়লা-আবর্জনা খাল ও নদীতে এনে ফেলছে অর্থাৎ আগে ছিল যার যার মলমূত্র, ময়লা-আবর্জনা তার তার বাড়িতে একটি নির্দিষ্ট স্থানে, কিন্তু এখন তা জাতীয় পর্যায়ে সবার মধ্যে ছড়িয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
বুড়িগঙ্গার তলদেশে পলিথিন ও বিষাক্ত আবর্জনার স্তর পড়েছে বলে বিশেষজ্ঞরা ধারণা করছেন, এ বিষয়ে কিছু বলুন?
বর্তমানে দখল ও দূষণের কারণে নদী ক্রমান্বয়ে সঙ্কুচিত হয়ে আসছে। পানির স্তর প্রায় ছয় ফুট বিষাক্ত হচ্ছে। বিষাক্ত পানির আরো দশ ফুট নিচে পলিথিন ও আবর্জনার কারণে কঠিন স্তরের সৃষ্টি হয়েছে। বুড়িগঙ্গার প্রতি লিটার পানিতে দশমিক ৪৫ মিলিগ্রাম ক্রোমিয়াম পাওয়া যাচ্ছে এবং সর্বোচ্চ মারাত্মক হচ্ছে দশমিক ৫০ মিলিগ্রাম। বুড়িগঙ্গার পাশের শিল্প-কারখানাগুলোর সায়ানাইড, পারদ, ক্লোরিন, নানা রকম এসিড, দস্তা, নিকেল, অ্যালকালিসহ মোট ৬২ ধরনের ক্ষতিকর রাসায়নিক বর্জ্য নদীতে যাচ্ছে। এ ছাড়া টেক্সটাইল লেড, ব্যাটারি, পেপার পাল্প, লোহা, রঙ, রাবার ইত্যাদি বর্জ্য ও শিল্প-কারখানা থেকে নিঃসৃত রাসায়নিক দ্রব্য পানিকে বিষাক্ত করছে। এসব বর্জ্য কোনোভাবে অপসারিত হতে পারে না। ফলে তা নদীর পানিকে মারাত্মকভাবে দূষিত করছে।
বুড়িগঙ্গা নদী দূষণ ও দখলের ফলে কী ধরনের ক্ষতি হচ্ছে?
একসময় বুড়িগঙ্গা নদীর পানি ছিল অত্যন্ত স্বচ্ছ। সে সময় এলাকার মানুষ রান্নাবান্নাসহ এই নদীর পানি পান করত। প্রচুর পরিমাণে বিভিন্ন প্রজাতির সুস্বাদু মাছ ধরা পড়ত জালে। এলাকার চাহিদা পূরণ করে বিভিন্ন জেলায় সে মাছ সরবরাহ করা হতো। পরিবেশ অধিদপ্তর থেকে ছাড়পত্র না নেওয়ার কারণে কারখানার বিষাক্ত কেমিক্যাল মিশ্রিত বর্জ্য সরাসরি নদীতে ফেলার কারণে বুড়িগঙ্গার পানি দুর্গন্ধময় হয়ে পীতবর্ণ ধারণ করছে। বুড়িগঙ্গার পচা দূষিত পানির কারণে শ্বাসকষ্ট, ঘা, পাচড়াসহ নানা ধরনের চর্মরোগ, আমাশয় ডায়রিয়াসহ নানা জটিল রোগে আক্রান্ত হয়ে প্রতিদিন হাসপাতালে ছুটছে। ডাক্তাররা বলছেন, বুড়িগঙ্গা নদীতে গোসল করার ফলে তারা নানা রোগবালাইয়ের শিকার হচ্ছে। এখানকার পানিতে অক্সিজেনের পরিমাণ শূন্য শতাংশে নেমে এসেছে। ফলে এখানে কোনো প্রকার মাছ বা জলজ প্রাণীর অস্তিত্ব থাকার কথা নয়।
বুড়িগঙ্গা নদীর তীর সংলগ্ন এলাকাগুলোতে বাঁধের উপর বাড়িঘর, অন্যান্য অবৈধ পাকা স্থাপনা, ময়লা-আবর্জনার স্ত‚প প্রভৃতি থাকার কারণে এখানকার বাঁধের ক্ষতি হচ্ছে। বুড়িগঙ্গা দখল ও দূষণের ফলে এই নদীর অনেক শাখামুখ বন্ধ হয়ে গেছে এবং নদীর নাব্যতা কমে যাওয়ার ফলে অনেক স্থানে নৌ-চলাচল বন্ধ রয়েছে।
এত সব সমস্যার মাঝে বুড়িগঙ্গা নিয়ে নগরবাসীর জন্য কোনো আশার বাণী আছে কি?
আমি বলব বুড়িগঙ্গা নিজেই নগরবাসীর জন্য সৌভাগ্যের বিষয়। সেটাকে রক্ষা করার জন্য সুদৃঢ় সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলা দরকার। তবেই এ নদীর ভয়াবহতার হাত থেকে রক্ষা পাওয়া সম্ভব। একটি কথা হচ্ছে, বুড়িগঙ্গাকে আমরা যতদিন ধরে দূষিত করেছি, আজ থেকে যদি এটিকে স্বচ্ছ টলটলে পানি করার কাজ শুরু করি, তাহলে যতদিনে দূষিত হয়েছে ঠিক ততদিন সময় লাগবে। তাহলে যত দ্রুত সময়ে সম্ভব আমাদের কাজ শুরু করা উচিত।

বুড়িগঙ্গা নিয়ে পবা কী ধরনের কাজ করছে?
২০০১ সাল থেকে আমরা বুড়িগঙ্গা নিয়ে কাজ করছি। সভা, সেমিনার, মানববন্ধন করেছি। ওই এলাকার লোকজনকে সম্পৃক্ত করে সচেতনতা তৈরিসহ সব ধরনের কাজ করছি। মিডিয়ার সাহায্য নিয়ে আমরা নানা কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছি। পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলনের (পবা) উদ্যোগে ‘নদী ও জলাশয়গুলোর দখল ও দূষণমুক্ত কর’ এই দাবিতে অনেক কাজ হয়েছে।
তাহলে বুড়িগঙ্গা নিয়ে আমাদের আশা কোথায়?
আশা যে নেই তা কিন্তু ঠিক নয়। নদী যে কোনো দেশের সার্বিক পরিবেশ রক্ষার ক্ষেত্রে মানব দেহের রক্ত-সংবহনতন্ত্রের মতো পরিবেশকে সতেজ ও সাবলীল রাখতে সাহায্য করে। অতএব এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নীরব থাকা মোটেও উচিত নয়, অপরিকল্পিত নগরায়ণ, বহুতল ভবন নির্মাণ, যেখানে সেখানে ডিপ টিউবওয়েলের বসিয়ে মোটরের সাহায্যে ভূগর্ভ থেকে অনিয়মিত পানি উত্তোলন, নদী-নালা, খাল-বিল ভরাটসহ এ ধরনের সব কর্মকান্ড বন্ধ করতে হবে। নইলে বিপর্যয় থেকে দেশকে রক্ষা করা যাবে না। এ বিপর্যয় থেকে বাঁচতে হলে প্রতিটি মানুষকে সচেতন করতে হবে। আর এটি করা সম্ভব হলে আশা করা যেতেই পারে, বুড়িগঙ্গার নির্মল বাতাসে আমাদের সন্তানেরা বেড়াতে পারবে, পারবে স্বচ্ছ পানিতে বাচ্চারা সাঁতার কাটতে।
আপনাকে ধন্যবাদ
তোমাকেও।
- প্রকাশকাল: বন্ধন ৩২ তম সংখ্যা, ডিসেম্বর ২০১২