পরিচয়:
ড. প্রকৌশলী এম. শামীম-উজ-জামান বসুনিয়া
প্রেসিডেন্ট, ইনস্টিটিউশন অব ইঞ্জিনিয়ার্স, বাংলাদেশ
কাঠামো প্রকৌশলী ও কংক্রিট বিশেষজ্ঞ
দেশে ও বিদেশে প্রকৌশলীদের ভূমিকা ও চাহিদা সম্পর্কে জানতে চাই?
বিদেশিদের পাশাপাশি দেশীয় প্রকৌশলীরা নির্মাণকাজের সঙ্গে সম্পৃক্ত। অবকাঠামো উন্নয়নে তাঁরা সরকারি বাজেটারি প্রভিশন তৈরি করে সেই অনুযায়ী খরচ করেন। এ ছাড়া সরকারির পাশাপাশি বেসরকারি পর্যায়েও অবকাঠামোগত কাজ নির্মাণ প্রকৌশলীদের দ্বারা করা হচ্ছে। যেমন- রাস্তাঘাট থেকে শুরু করে নির্মাণ করা হয় ব্রিজ, কালভার্ট ও বিল্ডিং। তাঁদের পেশাগত যোগ্যতা দ্বারা তাঁরা যেকোনো ধরনের অবকাঠামোগত নির্মাণকাজ করতে পারেন। দেশের বাইরে বিদেশেও কাজ করছেন আমাদের প্রকৌশলীরা। যে যেখানে কাজ করছেন ভালো কাজ করছেন এবং আজ অবধি তাঁরা কোনো অসুবিধায় পড়েননি। দেশে-বিদেশে আমাদের প্রকৌশলীরা এত ভালো কাজ করা সত্ত্বেও কিন্তু সরকারিভাবে তাঁদের কোনো মূল্যায়ন নেই। আমাদের দেশে মেধাবী ছেলেমেয়েরা BUET, KUET, RUET, CUET বিভিন্ন প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে তাঁদের মেধা দিয়ে পড়াশোনা করছেন, যা অন্য কোনো কারিগরি পেশায় দেখা যায় না। তবুও দেখা যায়, পেশা হিসেবে প্রকৌশলীকে যাঁরা সরকারি চাকরির জন্য বেছে নিয়েছেন, তাঁদের সঙ্গে বিমাতাসুলভ আচরণ করা হয়। অথচ এ সেক্টরে ইঞ্জিনিয়ারদের প্রমোশন না দিয়ে রাখা হয়। তাই বলতে পারি, যত দিন বাংলাদেশে ফ্রন্ট ডেক্সে প্রকৌশলীদের মূল্যায়ন করা হবে না, তত দিন বাংলাদেশে প্রকৌশলগত কোনো কাজ সঠিকভাবে হবে না।
বাড়ছে কংক্রিটের চাহিদা, পাল্লা দিয়ে বাড়ছে কংক্রিট বর্জ্য। পরিবেশদূষণ ও নির্মাণব্যয় কমাতে কংক্রিটের ভূমিকা সম্পর্কে বলুন?
কংক্রিট হচ্ছে বিশ্বে Most Widely Construction Material এবং বিশ্বের কোনো জায়গায় কংক্রিট ছাড়া কাজ করা সম্ভব না। কারণ, কংক্রিট সহজলভ্য এবং এর কাঁচামাল কমবেশি সব দেশেই পাওয়া যায়। আর এই কংক্রিট ব্রেকিংয়ের জন্য কাজ করছে বিরাট এক শ্রমশক্তি। গার্মেন্টসে যত শ্রমিক আছে তার চেয়ে বেশি শ্রমিক কাজ করছেন কংক্রিট নিয়ে। কনস্ট্রাকশন সেক্টরে সম্পৃক্ত এর চেয়েও বেশি শ্রমিক। বিশ্বে যেখানে কংক্রিটের ব্যবহার বেশি, সেখানে তত বেশি উন্নত সভ্যতা গড়ে উঠেছে। কংক্রিটের মধ্যে থাকা রি-ইনফোর্সের পুনর্ব্যবহার যত বেশি হবে সভ্যতার ক্রমবিবর্তনও তত দ্রুত হবে। ফলে একে অবহেলার কোনো সুযোগ নেই।

বিটুমিন বা পিচের সড়কের বদলে কংক্রিট দিয়ে নির্মিত সড়কের সুবিধা কী? অসুবিধাই বা কী?
কংক্রিট সড়ক করতে গেলে প্রাথমিক খরচ বাড়বে। আর পিচ দিয়ে করতে গেলে রাস্তার নিচ দিয়ে যে ড্রেনেজ সিস্টেম থাকে, সেটা সঠিকভাবে করতে হবে। Bare বা Subbare বলে দুইটা কথা আছে, এগুলো মেনে Compack করা হয় তাহলে কংক্রিট সড়ক গড়ে তোলা সম্ভব। কিন্তু পিচের রাস্তার সবচেয়ে বড় অসুবিধা হচ্ছে রাস্তার মধ্যে ছোট ছোট গর্ত সৃষ্টি হয়, যা ঠিক না করা হলে বৃষ্টিতে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়। কংক্রিট রাস্তা হলে এই অসুবিধা হবে না এবং কংক্রিট যদি ভালো মানের হয় সেই রাস্তাটি অবশ্যই টেকসই হবে।
কংক্রিটের তৈরি একটি দালান সঠিকভাবে রি-ইনফোর্স করা না হলে কী হতে পারে তার উদাহরণ রানা প্লাজা। এ ব্যাপারে যদি কিছু বলেন?
এটা ভেঙে পড়তে পারে। ঠিকমতো কাজ না করলে ভেঙে পড়বে। শুধু রি-ইনফোর্সমেন্ট দিয়ে তো কাজ হবে না, কংক্রিটের মান ঠিক রাখতে হবে। দেখা যায় একটা কলামে ৭০ শতাংশ ওজন বহন করে কংক্রিট আর ৩০ শতাংশ বহন করে রড। কংক্রিটের গুণগতমান যদি ঠিক থাকে সেটা টেকসই হবে। কংক্রিট যদি ঠিক না থাকে, সেখানে রড বেশি দিলেও তা ভেঙে পড়ার আশঙ্কা আছে।
পুরকৌশলগত কাঠামোয় এ ধরনের দুর্ঘটনার প্রকৌশলগত কারণ কী? এর প্রতিকারই বা কী?
কারণ দুই রকম। প্রথমত, ভুল ডিজাইন যেমন: রড কম হলে, রড উল্টাপাল্টা হলে। দ্বিতীয়ত, কংক্রিট ঠিক না হলে। ভুল ডিজাইন হয় খুব কম কারণ আমাদের এখানে অনেক ভালো ডিজাইনার আছেন এবং তাঁরা ভালো কাজ করছেন। পক্ষান্তরে ডিজাইনটা পরীক্ষা করা যায় দু-তিনবার। এরপর রড় ও কংক্রিটের মান যদি ভালো থাকে তাহলে কাজটা সহজ হয়ে যায়। একটা ভালো মানের কংক্রিটের মান হয় ৩০০০ পিএসএ বা ৪০০০ পিএসএ। অনেকেরই ধারণা, কংক্রিট যে কেউ বানাতে পারেন। যেমন রাস্তার পাশে ভাঙা কংক্রিট দিয়ে তো আর ১০০০ বা ২০০০ পিএসএর বেশি পাওয়া সম্ভব না। তাই কংক্রিট নিয়ে মানুষের মনে রয়েছে একটি ভ্রান্ত ধারণা। এই কংক্রিট নিয়ে নির্মাতারা রাজমিস্ত্রি কিংবা কনটাক্টরের কথা শুনে প্রভাবিত হয় বেশি। কংক্রিট সম্পর্কে নির্মাতা, রাজমিস্ত্রি, কনটাক্টর সবাইকে বুঝতে হবে। এই ব্যাপারে ইঞ্জিনিয়ারের উচিত তাঁদের ভালোভাবে বোঝানো এবং এর মান কীভাবে নিয়ন্ত্রণ করা যায় তা জানানো। তবেই রোধ করা যাবে যেকোনো ধরনের দুর্ঘটনা।
ভবনের ডিজাইন ও নির্মাণ এমন হতে হবে যেন ভবন ভেঙে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে পুরোপুরি বিধ্বস্ত না হয়ে কিছু সময় কাঠামোগতভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে পারে। এমন ভবন কি এ দেশে নির্মাণ করা সম্ভব?
এটা তো ভূমিকম্পকালীন অবস্থার মতো। বিশ্বের অনেক দেশসহ বাংলাদেশের বিল্ডিং কোডে বলা আছে, বিল্ডিংটা ধসে পড়তে কিছুটা সময় নেবে। এ ক্ষেত্রে আমি বলব, কলামের বিমে যে জংশন আছে, সেই জংশনগুলোতে ইনফোর্সমেন্ট করে একটু ঠিকঠাক করতে হয়। অর্থাৎ পুরো ফ্রেমকে ভারফ্রেম করতে হয়। এটা কিন্তু করা সম্ভব!
সেন্টারিং, সাটারিং, ফ্রেমওয়ার্ক, কংক্রিট তৈরি, স্থাপন ও কমপ্যাকশন প্রতিটি ক্ষেত্রে নিয়ম মেনে একজন সিভিল ইঞ্জিনিয়ারের তদারকিতে নির্মাণকাজ বাস্তবায়ন করা উচিত কি না?
অবশ্যই, প্রতিটি জায়গায় পরীক্ষা করতে হবে। কোনো জায়গায় এতটুকু ছাড় দেওয়া যাবে না। যেমন কংক্রিটে কী অ্যাগ্রিগ্রেট ব্যবহার করছে, কতটুকু পানি দিচ্ছে, কীভাবে কমপ্যাক্ট করছে সবই পরীক্ষা করতে হবে। এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। যেখানে সাধারণ রাজমিস্ত্রিরা শিখে ফেলেছে ৪ ইঞ্চির ক্লিকার (Kiker) করা। এই ক্লিকার বন্ধ করা উচিত। এইটা কোনো কমপ্যাকশন (Compaction) করে না। অনেক বিল্ডিং আছে, যা এই ক্লিকার করার জন্য ঝুঁকির সম্মুখীন। তাই ক্লিকার করার সময় সবাইকে লক্ষ রাখতে হবে কীভাবে কংক্রিটটা মাথায় নেবে, কীভাবে ঢালবে, কীভাবে কমপ্যাকশন করবে, কীভাবে কংক্রিটটা কার্ভ করবে, সাটারিং ফর্মা কীভাবে থাকবে প্রত্যেকটার মধ্যে তার গুণাবলি ঠিক রাখতে হবে। বিভিন্ন কংক্রিটে উল্লেখ করা থাকে কংক্রিটগুলো টেস্ট করতে হবে। আমাদের দেশে কংক্রিট টেস্টই করা হয় না।

প্রচলিত বিল্ডিং কোড ও ইমারত নির্মাণ বিধিমালা মেনে দালান ডিজাইন ও নির্মাণ করা হচ্ছে কী? ভবনধ্বসে এর ভূমিকা কতটুকু?
পুরোপুরি নয়। বিধিমালা এক জিনিস আর নিয়মাবলি এক জিনিস। নিয়মমাফিক বিল্ডিং আর একটা জিনিস। বিধিমালা হচ্ছে এখানে এতটুকু ছাড়তে হবে এখানে এতটুকু করতে হবে। মূলত অনেকেই এটা করে না। কোয়ালিটি কন্ট্রোল না করায় বিল্ডিং ধসে পড়ছে। পাঁচতলার জন্য অনুমতি নিয়ে করছে চারতলা। সরকার এটা ঠিকমতো নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না। সরকারের উচিত বিল্ডিং কোড ও ইমারত নির্মাণ বিধিমালার জন্য বিশেষজ্ঞ প্যানেল ও কাউন্সিল গঠন করা। সকল ক্ষমতা থাকবে কাউন্সিলের ওপর। রাজউকের ক্ষমতা দিয়ে হবে না। তারা সব সময় এটা সুপারভাইজ করবে। তবেই এটা নিয়ন্ত্রণ হবে, নইলে নয়।
বাংলাদেশে বর্তমানে প্রচলিত ন্যাশনাল বিল্ডিং কোডের [বিএনবিকে-১৯৯৩]; কোনো পরিবর্তন আনা যায় কি না, যা ভবিষ্যতে এমন ভয়াবহ বিপর্যয় থেকে ভবনগুলোকে সুরক্ষা দেবে?
ইতোমধ্যে ১৯৯৩ সালের বিল্ডিং কোড পরিবর্ধনের শেষ ধাপে রয়েছে। ১৯৯৩ সালে প্রণীত কোড মানলেও বিল্ডিং ভেঙে পড়বে না। এ কোডে যা যা আছে সব কিছু যদি মানা হয় আমার মনে হয় কোনো বিল্ডিং ধসে পড়ার কথা নয়। সব মানার পরেও নির্মাতা, রাজমিস্ত্রি, সাইড সংশ্লিষ্টরাসহ ইঞ্জিনিয়ার লোভে পড়ে অতিরিক্ত লাভের আশায় এ ধরনের দুর্ঘটনা ঘটায়। বিল্ডিং কোডে কিন্তু কোনো ভুল নেই।
কীভাবে এ ধরনের বিপর্যয়ে ক্ষতির পরিমাণ কমানো যায় এবং কোন প্রযুক্তি ব্যবহার করে এ ভবনধসের মতো দুর্যোগ মোকাবিলা করা সম্ভব বলে আপনি মনে করেন?
প্রথমেই ভালোভাবে জানতে হবে কংক্রিট সম্বন্ধে এবং প্রতিটা ক্ষেত্রে যোগ্য ইঞ্জিনিয়ার দ্বারা পরীক্ষা করাতে হবে। শুধু ইঞ্জিনিয়ার হলে হবে না তার আইবি, রাজউক থেকে সনদ থাকতে হবে। আমাদের এখানে দেখা যায় একটা বিল্ডিং করতে ইঞ্জিনিয়ারকে অনেক টাকা দেওয়া হয় কিন্তু আর্কিক্টেটকে তার অর্ধেকও দেওয়া হয় না। এই রকম বৈষম্য করলে চলবে না। যেখানে একটা বিল্ডিং করতে ১০ কোটি টাকা ব্যয় হয়, সেখানে একজন স্ট্রাকচারাল ইঞ্জিনিয়ারকে ১০ লাখ টাকা দিতে হবে। টাকা না পাওয়ায় কাজের ব্যাপারে অনীহা রয়েছে অনেক ইঞ্জিনিয়ারের। কিন্তু আমার মনে হয়, সময় বদলে গেছে। প্রত্যেক মালিকের উচিত সরাসরি কোনো ভালো ইঞ্জিনিয়ার ছাড়া বিল্ডিং না করা।
বাংলাদেশের স্থাপনা নির্মাণের ধারাবাহিকতা সম্পর্কে কিছু বলুন। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে নির্মাণের রূপবদলের ধারা কীভাবে পরিবর্তিত হচ্ছে বলে আপনার ধারণা?
এটা খুব ভালো প্রশ্ন। আমি যখন প্র্যাকটিস শুরু করি ১৯৬৫-৬৬ সালে তখন ৩, ৪, ৫ তলা বিল্ডিং ছাড়া কিছুই ছিল না। এই বিল্ডিংগুলো যে মিস্ত্রিরা করত তারা অধিকাংশই ছিল অর্ধশিক্ষিত। পরবর্তী সময়ে ৮ তলা, ১০ তলা বিল্ডিং করা শুরু হলে তারা বলত, আমরা বহুতলা বিল্ডিং বানিয়েছি। সাংঘাতিক ভুল ধারণা এটি। আমরা স্বাধীনতা-উত্তর ঢাকায় আশির দশকের পর থেকে বহুতল বিশিষ্ট বিল্ডিং করতে দেখেছি। আমরা বানিয়েছি ৩৭তলা সিটি সেন্টার ভবন। আমার মনে হয় আমরা এখন যেকোনো উচ্চতার বিল্ডিং বানাতে পারি। আমাদের পর্যাপ্ত বিল্ডিং ম্যাটেরিয়ার আছে এবং এখানে বিল্ডিং করাও নিরাপদ। আমরা যদি কোড মেনে নিয়মমাফিক কোনো বিল্ডিং নির্মাণ করি, তবে চিন্তার কারণ নেই। দেখা যাবে ৯০ তলা বিল্ডিংও করা আমাদের পক্ষে সম্ভব।
একজন সাধারণ মানুষ বাড়ি নির্মাণের আগে কোন কোন বিষয় বিবেচনায় নিলে এমন দুর্ঘটনা রোধ সম্ভব এবং কীভাবে জীবন এবং সম্পদ রক্ষা করা যাবে বলে মনে করেন?
একজন সাধারণ মানুষের জন্য বিবেচনার বিষয় হলো, নির্মাণ কাঠামোর মধ্যে যে দুইটা জিনিস বাজার থেকে কেনা হয় তা হলো রড় এবং সিমেন্ট। এই নির্মাণ উপাদান দুটি সম্পর্কে জানতে হবে। মাটি পরীক্ষা (Soil Test) ছাড়া কোনো বাড়িই করা যাবে না। অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় মাটি পরীক্ষা না করেই তার রেজাল্ট দেওয়া হয়। আমার তো মনে হয় এটা মানুষকে হত্যা করার মতো ঘটনা। ফলে মাটি পরীক্ষা করার জন্য মানসম্মত প্রতিষ্ঠান থাকতে হবে। যার কাজ হবে মাটি পরীক্ষা করা, রড, সিমেন্টের গুণগত মান যাচাই করা এবং বিল্ডিংয়ের সকল কাজ তদারকি করা। তবে এটা সত্যি যে আমাদের দেশের রড ও সিমেন্টের গুণগত মান অনেক ভালো, যা বিশ্বের যেকোনো দেশের সঙ্গে তুলনীয়। প্রত্যেকের কংক্রিট সম্পর্কে বিষদ ধারণা থাকা দরকার। এই কটি দিক বিবেচনা করে যদি বিল্ডিং নির্মাণ করা হয় তবেই বিল্ডিং হবে মানসম্মত ও টেকসই।
একটি পরিকল্পিত নগর গড়তে আমাদের বাধা কোথায়? উত্তরণের উপায় কী?
আমাদের লোভে আমরাই ধ্বংস হচ্ছি। আমরা খাল-বিল দখল করছি। নদীর পাড় দখল করছি। যাদের ব্যবসা-বাণিজ্য, গাড়ি, বাড়ি সব আছে প্রভাবশালীরাই এই সমস্ত জায়গা দখল করছে। দখলমুক্ত করতে নগরবাসীকে এগিয়ে আসতে হবে। এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় ভূমিকা নগরবাসীকে। তবে নগরবিদ নয় এর জন্য আলাদা কমিটি গঠন করতে হবে এবং এর একটি প্ল্যান থাকবে। সেই প্ল্যান অনুযায়ী কাজ করতে হবে।

বর্তমান ঢাকায় অনেক বহুতল ভবন তৈরি হয়েছে কিন্তু সেগুলোর নিজস্ব পাকিং স্পেস নেই, এ ক্ষেত্রে করণীয় কী বলে আপনি মনে করেন?
এ ক্ষেত্রে করণীয় হলো সরকারি যেসব জায়গা এখনো খালি আছে, সেখানে মাল্টি পার্কিং জোন করে বেশি ভাড়া দেওয়া। মতিঝিলে এখন কাঠা প্রতি জায়গার দাম ৫ থেকে ১০ কোটি টাকা। বাণিজ্যিক এলাকা হওয়ায় এখানে অনেক গাড়ি দাঁড়িয়ে থাকে। ফলে সৃষ্টি হয় যানজটের। অবিলম্বে এগুলো সরাতে হবে। পুলিশ দিয়ে এটা হবে না। মতিঝিলের একটা রাস্তায়ও যেন কোনো গাড়ি দাঁড়াতে না পারে এ ব্যবস্থা করতে হবে। তার জন্য খালি জায়গায় পার্কিং ব্যবস্থা করে কিছু কিছু রাস্তায় গাড়ির প্রবেশ বন্ধ করতে হবে।
আমাদের দেশের আবাসন খাতের উন্নয়নে করণীয় কী?
আবাসন খাতের উন্নয়নের জন্য সরকারের কিছু করণীয় রয়েছে। উত্তরার দিকে এখন ফ্ল্যাট করে দিচ্ছে সরকার এটা ভালো। প্লট আর দেওয়া যাবে না। সরকারের উচিত প্লটে আর না যাওয়া। বিদেশে যেমন চারতলা বিল্ডিং লাইন ধরে পর পর গড়ে তোলা হয় আমাদেরও তাই করা উচিত। তবেই উন্নয়ন হবে আবাসন খাতের। কোনো হাইরাইজ বিল্ডিং করা যাবে না। এতে অনেক শ্রেণীর মানুষ বাস করার ফলে সামাজিক অবকাঠামো নষ্ট হয়।
ইনস্টিটিউশন অব ইঞ্জিনিয়ার্স, বাংলাদেশের বর্তমান কর্মকাণ্ড ও ভবিষ্যৎ কর্মপরিকল্পনা সম্পর্কে যদি বলেন?
আমরা বর্তমানে কিছু পরিকল্পনা হাতে নিয়েছি, যাতে ইঞ্জিনিয়ারদের মান মর্যাদা বাড়ে। আমরা বিগত এক মাসের মধ্যে ১০-১৫টা সেমিনার আয়োজন করেছি। আমি নিজেও সেখানে উপস্থিত ছিলাম। আমরা শক্তি (Power) নিয়ে চিন্তা করছি। কীভাবে বিকল্প জ্বালানি ব্যবহার করা যায় সেটা নিয়ে ভাবছি। কীভাবে রাস্তাঘাটের উন্নয়ন করা যায়, যাতে আমাদের যোগাযোগব্যবস্থা সহজতর হয়। সম্প্রতি রানা প্লাজা ধ্বস ও তাজরীন গার্মেন্টসে আগুন লাগার পরবর্তী পদক্ষেপ কী হওয়া উচিত এ ব্যাপারে বিজিএমইকে আমরা সার্বক্ষণিক সহযোগিতা দানের প্রতিশ্রুতি দিয়েছি। তাদের বিল্ডিং কীভাবে নিরাপদ করা যায়, কীভাবে Escape করা যায় সবকিছু নিয়ে আমরা ভাবছি এবং ভবিষ্যতে আমাদের এই ধারা অব্যাহত থাকবে।
একজন প্রকৌশলী হিসেবে আপনার কোনো সামাজিক দায়বদ্ধতা আছে কি না? শতভাগ আছে। এই বয়সে আমার অন্য কিছু চাওয়ার নেই। এত বছর শিক্ষকতা করেছি। নিরাপদ নকশা (Safe Design) করা আমার সামাজিক দায়বদ্ধতা। একই সময় যারা নবীন ইঞ্জিনিয়ার, তাদের ক্লাস নিচ্ছি আমি। ট্রেনার হিসেবে অবৈতনিক ক্লাস নিচ্ছি। আমি আইবির এক ক্লাসে সবাইকে একটা কথাই বলেছি, ইঞ্জিনিয়ারিং পেশাকে তাদের রক্তে ধারণ করতে হবে। এটাই হচ্ছে প্রকৌশলী হিসেবে আমাদের সামাজিক দায়বদ্ধতা।
- প্রকাশকাল: বন্ধন ৪০ তম সংখ্যা, আগস্ট ২০১৩