প্রাকৃতিক প্রতিকূলতা ও নানা রকম দুর্যোগ থেকে বাঁচতে চাই একটি আশ্রয়। আর সে আশ্রয়টি হওয়া চাই নিরাপদ, দৃষ্টিনন্দন ও নিজ সামর্থ্যরে মধ্যে। প্রতিদিন শহরে ও গ্রামে নির্মিত হচ্ছে বিভিন্ন ধরনের স্থাপনা। কিন্তু স্থাপত্যের মতো জটিল একটি বিষয়ে ক’জনইবা জ্ঞান রাখে। তা ছাড়া বাংলাদেশ একটি দুর্যোগপ্রবণ উন্নয়নশীল দেশ। এ দেশের অধিকাংশ মানুষই দরিদ্র। প্রাকৃতিক দুর্যোগ সহনীয় আবাসন নির্মাণ তাই সবার পক্ষে সম্ভব নয়। শুধু তা-ই নয়, খোদ রাজধানীতেও ভবন নির্মাণে নিরাপত্তা, স্থায়িত্ব, নির্মাণ ব্যয় কমানোর মতো ব্যাপারগুলো সবার কাছে খুব একটা সহজবোধ্য নয়। আর এ বিষয়গুলো সমাধানের লক্ষ্যে রাজধানীর মিরপুরের দারুস-সালামে গড়ে উঠেছে হাউজিং অ্যান্ড বিল্ডিং রিসার্চ ইনস্টিটিউট; যা দীর্ঘদিন যাবত ব্যক্তি বা সরকারি/বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে ভবন নির্মাণ বিষয়ক (মাটি পরীক্ষা, নির্মাণ উপকরণের সঠিক মিশ্রণ, মেরামত বিষয়ক সহায়তা, নির্মাণ ব্যয় কমানো ইত্যাদি) বিভিন্ন পরামর্শ ও সহায়তা দিয়ে আসছে। শুধু তাই নয়, গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর জন্য প্রকৃতির নানা উপাদান রাসায়নিকভাবে প্রক্রিয়াজাত করে নির্মাণোপযোগী করা এবং তা নানাভাবে কাজে লাগানোর মাধ্যমে স্বল্প ব্যয়ে অধিক দুর্যোগ সহনীয় আবাসন নির্মাণ কৌশল প্রদান করে আসছে।

প্রতিষ্ঠার ইতিকথা
দেশের প্রচলিত নির্মাণ কর্মকান্ডের গুণগতমান বৃদ্ধিকরণ এবং নতুন উপকরণ ও উন্নত নির্মাণ পদ্ধতি উদ্ভাবনের লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় গবেষণা পরিচালনার জন্য সঙ্গত কারণেই গৃহায়ন ও নির্মাণ বিষয়ক গবেষণার গুরুত্ব সব মহলে অনুভূত হয়। বাংলাদেশের ন্যায় একটি উন্নয়নশীল দেশে যেখানে সম্পদ সীমিত, সেখানে গবেষণার মাধ্যমে নির্মাণ সামগ্রী ও সম্পদের অপচয় রোধ, মিতব্যয়ী অনুশীলন ও মান নিয়ন্ত্রণের পন্থা জনপ্রিয়করণ এবং প্রচলিত নির্মাণ পদ্ধতির পরিবর্তে বিকল্প নির্মাণ উপকরণ ও কৌশল উদ্ভাবনের প্রয়োজনীয়তা একান্তই অনস্বীকার্য। গৃহায়ন ও নির্মাণ বিষয়ক গবেষণা কার্যক্রম দেশের ব্যাপক জনগোষ্ঠীর গৃহায়ন সমস্যা সমাধান ও নির্মাণ শিল্পের মান উন্নয়নসহ জাতীয় অর্থনীতিতে বিশেষ অবদান রাখতে পারে। নির্মাণ ব্যয় সাশ্রয় ও দেশীয় উপকরণের যথাযথ ব্যবহারের মাধ্যমে গৃহায়ন ও নির্মাণ শিল্পের গুণগতমান বৃদ্ধিকরণ এবং উন্নয়নের বিষয়টি বিবেচনা করে স্বাধীনতা-উত্তর বাংলাদেশে সীমিত সম্পদ ও দেশজ নির্মাণ উপকরণের সর্বোচ্চ ব্যবহার করে বিপুল জনগোষ্ঠীর আবাসন সংকট নিরসনের লক্ষ্যে ১৯৭৫ সালে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের বিবেচনার জন্য হাউজিং বিল্ডিং রিসার্চ সেন্টার স্থাপন সংক্রান্ত একটি উন্নয়ন প্রকল্প পেশ করা হলে জাতীয় অর্থনৈতিক কাউন্সিল গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের অধীনে তা অনুমোদন করে। গবেষণার কাজ সুষ্ঠুরূপে পরিচালনার সুবিধার্থে ১৯৭৭ সালে একটি অধ্যাদেশের মাধ্যমে বর্তমান স্বায়ত্তশাসিত হাউজিং অ্যান্ড বিল্ডিং রিসার্চ ইনস্টিটিউট স্থাপন করা হয়।
উদ্দেশ্যসমূহ
দেশের সামগ্রিক ‘মানব বসতি’ এবং নির্মাণ উপকরণ ও পদ্ধতি সম্পর্কিত বিভিন্ন সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে ধারাবাহিকভাবে গবেষণা পরিচালনা করা।
দেশের বিভিন্ন স্থানে যে সব দেশজ উপকরণ পাওয়া যায় সেগুলোর মান বৃদ্ধি করে কিভাবে নির্মাণ কাজে তা ব্যবহারোপযোগী করা সম্ভব সে বিষয়ে পরীক্ষা নিরীক্ষা করা।
দেশে প্রচলিত নির্মাণ উপকরণসমূহের উন্নততর ব্যবহার পদ্ধতি উদ্ভাবনের উদ্দেশ্যে গবেষণা পরিচালনা করা।
নির্মাণ ক্ষেত্রে সঠিক মান সংরক্ষণের উদ্দেশ্যে প্রয়োজনীয় মান নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা প্রচলনের উদ্যোগ গ্রহণ করা।
প্রচলিত নির্মাণ প্রযুক্তির উন্নতি বিধানের লক্ষ্যে পরিকল্পনা প্রণয়ন এবং ডিজাইনের নবতর পদ্ধতি প্রবর্তনের প্রচেষ্টা গ্রহণ করা।

‘পাইলট প্রকল্প’ গ্রহণের মাধ্যমে গতানুগতিক নির্মাণ ধারায় ‘স্বল্প ব্যয়ে’ গৃহ নির্মাণ পদ্ধতি এবং উপকরণ প্রচলনের আয়োজন করা।
জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি পরিষদ এবং অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয় ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সক্রিয় সহযোগিতার মাধ্যমে দেশের গৃহায়ন এবং নির্মাণ ক্ষেত্রের বিভিন্ন সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় গবেষণা কর্মসূচি প্রণয়ন ও গবেষণা পরিচালনার উদ্যোগ গ্রহণ করা।
গবেষণার ফলাফল পর্যালোচনা ও তার সুফল বাস্তবে প্রয়োগের ক্ষেত্রে প্রচেষ্টা গ্রহণ করা।
দেশের গৃহায়ন ও নির্মাণ ক্ষেত্রের সমস্যা সমাধানের উদ্দেশ্যে বিভিন্ন ধারাবাহিক গবেষণা এবং বৈজ্ঞানিক বিশ্লেষণের উৎসাহ প্রদানের লক্ষ্যে স্কলারশিপ, ফেলোশিপ ইত্যাদির ব্যবস্থা করা।
গৃহ গবেষণা সংক্রান্ত বিভিন্ন কাজ সম্পাদনের জন্য সংশ্লিষ্ট গবেষকগণের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা।
গৃহায়ন ও নির্মাণ গবেষণার কাজে পরামর্শ প্রদান।
গৃহায়ন ও নির্মাণ বিষয়ে সমস্যার উপর যুগোপযোগী জ্ঞান ও ধারণার আহরণ ও প্রচার করা।
গৃহ গবেষণার ফলাফলের আলোকে নিয়মিতভাবে প্রকাশনা তৈরি ও তা প্রচারের ব্যবস্থা করা।
দেশের সীমিত সম্পদ, অপর্যাপ্ত ভূমি, জনসংখ্যার আধিক্য, জলবায়ু পরিবর্তন, প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের ঝুঁকি ইত্যাদি বিবেচনায় রেখে গৃহায়ন ও নির্মাণ শিল্পের দক্ষতা বৃদ্ধিসহ নির্মাণ সামগ্রী ও সম্পদের যথাযথ ব্যবহার ও মানসম্পন্ন করণের পন্থা উদ্ভাবন এবং প্রচলিত নির্মাণ পদ্ধতির পরিবর্তন করে টেকসই নতুন নির্মাণ উপকরণ, পদ্ধতি ও কৌশল উদ্ভাবনের লক্ষ্যে এ ইনস্টিটিউট গবেষণা কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। প্রতিষ্ঠানের সার্বিক কার্যক্রম পরিচালনার জন্য রয়েছে চারটি গবেষণা বিভাগ-
১. হাউজিং ডিভিশন
২. বিল্ডিং মেটেরিয়াল ডিভিশন
৩. সয়েল মেকানিক্স অ্যান্ড ফাউন্ডেশন ইঞ্জিনিয়ারিং ডিভিশন ও
৪. স্ট্রাকচারাল ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড কন্সট্রাকশন ডিভিশন
গবেষণা কাজের পাশাপাশি বাড়ি নির্মাতাগণের উপযোগী প্রশিক্ষণ কর্মসূচি এবং নির্মাণ শ্রমিকদের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষতা বৃদ্ধি করে মানব সম্পদ উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছে। এ প্রতিষ্ঠানে কর্মরত গবেষকগণ দেশীয় উপকরণের সর্বোচ্চ ব্যবহার ও উদ্ভাবিত প্রযুক্তি ব্যবহার করে দেশে বিদ্যমান গৃহায়ন সমস্যার সমাধানে ও নির্মাণ শিল্পের গুণগতমান বৃদ্ধিতে বিশেষ ভূমিকা রাখতে সর্বদা সচেষ্ট।
ইনস্টিটিউটের বর্তমান অর্গানোগ্রাম
এ ইনস্টিটিউটের গবেষণা কার্যক্রম চারটি গবেষণা বিভাগের মাধ্যমে সম্পাদন করা হয়। এগুলো হচ্ছে-
- উপকরণ বিভাগ
- কেমিক্যাল টেস্টিং অ্যান্ড রিসার্চ
- ফিজিক্যাল টেস্টিং অ্যান্ড রিসার্চ
- গৃহায়ন বিভাগ
- নির্মাণ ও কাঠামো বিভাগ
- মৃত্তিকা বিভাগ

এ ছাড়াও ইনফরমেশন অ্যান্ড ডকুমেন্টেশন ও একজন প্রজেক্ট অফিসারের তত্ত্বাবধানে প্রশাসনিক, প্রকল্প ও হিসাব চারটি পৃথক শাখা গবেষণা সহযোগী শাখা হিসেবে কাজ করে যাচ্ছে। সর্বোপরি ইনস্টিটিউটের গবেষণা ফলাফলের বাস্তব প্রয়োগের জন্য সম্প্রসারণ উইং নামে একটি উইং কাজ করছে।
গবেষণাগার
কমিক্যাল টেস্টিং অ্যান্ড রিসার্চ
গবেষণাগারে গৃহ নির্মাণ সামগ্রীর রাসায়নিক পরীক্ষা ও বিভিন্ন পদার্থের গুণাগুণ বিশ্লেষণ করে সে সম্পর্কে মৌলিক তথ্য প্রদান করাই এ শাখার কাজ; যা গবেষণা কাজে সহায়তা ছাড়াও নির্মাণ শিল্পের সাথে জড়িত বিভিন্ন সংস্থাকে নির্মাণ সামগ্রীর পরিমিত ব্যবহারের বিষয়ে তথ্য ও পরামর্শ প্রদান করে নির্মাণ কাজের মান নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে থাকে। সাধারণত সিমেন্ট, বালি, মাটি, পানি, মার্বেল চিপস, রঙ ও রঞ্জক পদার্থ ইত্যাদির রাসায়নিক পরীক্ষা করা হয়ে থাকে।
ফিজিক্যাল টেস্টিং অ্যান্ড রিসার্চ
গবেষণাগারে নির্মাণ সামগ্রীর যাবতীয় ভৌত গুণাগুণ বিশ্লেষণ করে তথ্য প্রদান করা এ শাখার উদ্দেশ্য; যা গবেষণা ছাড়াও নির্মাণ শিল্পের সাথে জড়িত বিভিন্ন সংস্থাকে নির্মাণ সামগ্রী পরীক্ষা করে এর মান নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে থাকে। সাধারণত কংক্রিট, লোহা, ইট, বালি, সিমেন্ট, খোয়া ইত্যাদি এবং সেই সাথে কংক্রিটের ক্ষতিসাধন না করে এমন উপকরণের ভৌত পরীক্ষা করা হয় ও এ সংক্রান্ত পরামর্শ দেওয়া হয়।
ড্রইং স্টুডিও
গবেষণামূলক কর্মে সহযোগিতা ও প্রতিষ্ঠানের যে কোনো নির্মাণের জন্য ড্রইংয়ের প্রয়োজন এবং এ চাহিদা
মেটাতে গৃহায়ন বিভাগের আওতায় একটি ড্রইং স্টুডিও আছে।
প্রতিষ্ঠানের গবেষণা কাজের পাশাপাশি যে কোনো ব্যক্তি বা সরকারি/বেসরকারি প্রতিষ্ঠান এখান থেকে নির্মাণ বিষয়ক সহায়তা পেতে পারে। এখান থেকে গৃহায়ন বিভাগের মাধ্যমে ভবনের কাঠামো বিষয়ক পরামর্শ ও ডিজাইন সরবরাহ করা হয়।

নির্মাণ উপকরণ
প্রতিষ্ঠানটি ভবন এবং এর নানাবিধ উপকরণ নির্মাণে সিনথেটিক এগ্রিগেট, পোজোলানা সিমেন্ট, উপজাত জিপসাম, উড উল বোর্ড, স্ট্যাবিলাইজড মাটির ব্লক, ফাইবার সিমেন্টের শিট ইত্যাদি ব্যবহার করে থাকে। এগুলোর সাহায্যে তুলনামূলক অনেক কম খরচে বিভিন্ন নির্মাণ সামগ্রী তৈরি করা যায়।
নির্মিত সামগ্রীসমূহ
ফেরোসিমেন্ট দিয়ে নৌকা, সাইলো, চ্যানেল, প্যানেল, ফোল্ডেড প্লেট, পানির ট্যাংক, লংপ্যাং, দরজা-জানালার চৌকাঠ ইত্যাদি তৈরিতে প্রতিষ্ঠানটির বেশ সফলতা রয়েছে। এ ছাড়াও এখানে কম খরচে পানির ট্যাংক তৈরি, কম খরচে পাকা ছাদ, কাঠের পরিবর্তে আরসিসি/ফেরোসিমেন্ট ইত্যাদির ব্যবহার বিষয়ক বিভিন্ন কার্যক্রম চালানো হয়।
দুর্যোগ সহনীয় ব্যয় সাশ্রয়ী স্থাপনা নির্মাণে গবেষণা ও উদ্বুদ্ধকরণ প্রকল্প
এ প্রকল্পটি দুটি ভাগে বিভক্ত করে বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।
ভূমিকম্প বলে ইটের দেয়ালযুক্ত আরসিসি স্ট্রাকচারের প্রতিক্রিয়া সম্পর্কিত গবেষণা।
(ক) বাংলাদেশে আরসিসি স্ট্রাকচারের গ্রাউন্ড ফ্লোর ওপেন রেখে উপরের ফ্লোরগুলোতে ইটের পার্টিশন ওয়াল ব্যবহার করা হয়, যেটার ভূমিকম্পের সময় ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা অত্যন্ত বেশি। এ ধরনের স্ট্রাকচারের প্রিভেনটিভ মেজারস (Preventive Measures) এবং রিট্রোফিটিং (Retrofitting) সম্পর্কিত গবেষণা।
(খ) ভূমিকম্পের সময় আরসিসি স্ট্রাকচারে ইটের পার্টিশন ওয়ালের (Partition wall) উপস্থিতির কারণে কাঠামোতে যে পরস্পরবিরোধী প্রতিক্রিয়া হয়, গবেষণাগারে তা পর্যালোচনা করা।
ঘূর্ণিঝড়, নদীভাঙন এবং বন্যা উপদ্রুত এলাকার জনগোষ্ঠীর জন্য দুর্যোগ সহনীয় স্থাপনা নির্মাণে উদ্বুদ্ধকরণ।
(ক) প্রকল্পের অংশে ঘূর্ণিঝড়, নদীভাঙন এবং বন্যা উপদ্রুত এলাকার জনগোষ্ঠীর জন্য দুর্যোগ সহনীয় পুনঃব্যবহারযোগ্য প্রি-ফ্যাব্রিকেটেড চারটি মডেল হাউস নির্মাণ করা হচ্ছে।
(খ) বন্যা উপদ্রুত এলাকায় একটি ‘ভাসমান আশ্রয়কেন্দ্র’ এবং একটি পুনঃব্যবহারযোগ্য প্রি-ফ্যাব্রিকেটেড মডেল হাউস তৈরি করা হচ্ছে।
(গ) নদীভাঙন এলাকায় একটি ‘প্রয়োজনে নিরাপদ স্থানে’ প্রতিস্থাপনযোগ্য প্রি-ফ্যাব্রিকেটেড মডেল হাউস নির্মাণ।
(ঘ) ঘূর্ণিঝড়প্রবণ সমুদ্র উপকূলবর্তী অঞ্চলে একটি স্টিল্ট হাউস (Stilt house) তৈরি করা হচ্ছে।
দুর্যোগ সহনীয় বাড়ি নির্মাণ
কম্প্রিহেনসিভ ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট প্রোগ্রামের (CDMP) চাহিদা অনুয়াযী সিডর ও আইলাদুর্গত অঞ্চলের ক্ষতিগ্রস্ত জনগোষ্ঠীর জন্য এইচবিআরআইয়ের (HBIR) প্রযুক্তিতে দুর্যোগ সহনীয় ২০০টি প্রিকাস্ট পুনঃব্যবহারযোগ্য বাড়ি তৈরি করে সরবরাহ করা হয়েছে।
ঝুঁকিবিহীন বাড়ি নির্মাণে প্রশিক্ষণ কর্মসূচি
বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগ যেমনÑ বন্যা, জলোচ্ছ্বাস, ঘূর্ণিঝড় ও ভূমিকম্পে সহনীয় বাড়ি নির্মাণের ঝুঁকি এড়ানোর জন্য বাড়ি নির্মাণে সংশ্লিষ্ট মাঠ পর্যায়ের নির্মাণ শ্রমিক, রাজমিস্ত্রি, রড বাইন্ডার ও ঠিকাদারদের জন্য প্রশিক্ষণ কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের সিডিএমপি-২ প্রকল্পের অধীনে ডিসেম্বর ২০১৩ নাগাদ ২০০০ জনকে উল্লিখিত প্রশিক্ষণ ও সার্টিফিকেট প্রদান করা হবে। এর মাধ্যমে ভবনের গুণগতমান বজায় রাখা সহায়ক হবে। তা ছাড়া বাড়ি নির্মাণের পূর্বে ভবন মালিকদের সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য এ প্রতিষ্ঠান কর্তৃক নিয়মিতভাবে ‘নিজের বাড়ি নিজেই করি’ প্রশিক্ষণ কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। বিগত ৩ বছরে উল্লিখিত বিষয়ে প্রায় ১০০০ জনকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে।
প্রতিষ্ঠানটি যে সকল বিষয়ে সহায়তা দিয়ে থাকে
নিরাপদ ও টেকসই ভবন নির্মাণের জন্য আন্তর্জাতিক মান অনুসারে মৃত্তিকা পরীক্ষা করা।
দক্ষ প্রকৌশলী/প্রযুক্তিবিদ দিয়ে নির্মাণ সামগ্রী তথা ইট, বালি, সিমেন্ট, কংক্রিট সিলিন্ডার/কিউব, রড, পানি ইত্যাদির ভৌত ও রাসায়নিক পরীক্ষা করা।
ইনস্টিটিউটের উদ্ভাবিত বালি-সিমেন্ট হলো ব্লক, ফেরোসিমেন্ট পানির ট্যাংক, প্রিস্ট্রেসড প্রিকাস্ট কংক্রিট মাইক্রো পাইল, একতলা ভবনের ছাদের জন্য ফেরোসিমেন্ট চ্যানেল/প্রিস্ট্রেসড হলো কোর স্লাব, দরজার আরসিসি চৌকাঠ, গ্রামীণ গৃহের জন্য কংক্রিটের খুঁটি, ছাদের রাফটার, পারলিন ইত্যাদি সরবরাহ এবং বাঁশের রাসায়নিক প্রক্রিয়াজাতকরণের মাধ্যমে দীর্ঘস্থায়ীকরণের ব্যবস্থা করা।
এ ছাড়া ভবন নির্মাণ, মেরামত, এবং নোনাধরা সংক্রান্ত যাবতীয় বিষয়ে পরামর্শ প্রদান করা।

বাংলাদেশের জাতীয় বিল্ডিং কোড সরবরাহ করা।
বাড়ি নির্মাণের জন্য সচেতনতামূলক প্রশিক্ষণ কোর্স ‘নিজের বাড়ি নিজেই করি’ নিয়মিত আয়োজন।
নির্মাণ শ্রমিকগণের জন্য দক্ষতা ও সচেতনতামূলক প্রশিক্ষণ।
পুরনো জরাজীর্ণ এবং ঐতিহাসিক ভবনসমূহের মূল কাঠামো অক্ষুন্ন রেখে সংস্কার বিষয়ে পরামর্শ দেওয়া হয়।
এ ছাড়াও এখানে ভবন নির্মণের পূর্বে মাটি পরীক্ষা করা হয়। প্রতিষ্ঠানটি বিভিন্ন সময়ে গৃহায়ন ও গৃহ নির্মাণ সংক্রান্ত বিষয়াবলির উপর সেমিনার, সিম্পোজিয়াম, ওয়ার্কশপ ও প্রদর্শনীর আয়োজন করে থাকে।
যোগাযোগ
হাউজিং অ্যান্ড বিল্ডিং রিসার্চ ইনস্টিটিউট
১২০/৩ দারুস-সালাম, মিরপুর, ঢাকা-১২১৬
ফোন : ৮০৬০৯৮৯, ৯০০০৮১৯-২২
ফ্যাক্স : ৮০৬০৭৭৩
ই-মেইল : [email protected]
ওয়েবসাইট :www.hbri.gov.bd
মাহফুজ ফারুক
প্রকাশকাল: বন্ধন ২৩ তম সংখ্যা, মার্চ ২০১২