বাংলাদেশের জলাধার সংরক্ষণে প্রণীত আইন

নদী-নালা, খাল-বিল সমৃদ্ধ দেশ বাংলাদেশ। তবে এদেশের নদীগুলোর চেহারা দেখে এখন আর মনে হয় না, এগুলো কখনো প্রবল প্রমত্তা বা স্রোতম্বিনী ছিল। এক সময়ে এ দেশের ব্যবসা বাণিজ্যের যাবতীয় মালামাল পরিবহনে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ব্যবহার করা হত নদীপথ। শুধু তাই নয়, ছোট-বড় নদী, জলাশয়, খাল-বিল ইত্যাদি ছিল মাছের এক বিশাল সাম্রাজ্য। রাজধানী ঢাকার সাথে নদীপথে দেশের প্রায় সব জায়গাতে মালামাল পরিবহন এবং যাতায়াত ব্যবস্থা ছিল। কিন্তু কালের বিবর্তনে নদীমাতৃক এই দেশটির নৌযোগাযোগ ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। পাশাপাশি নদীর জীববৈচিত্রও আজ অনেকটা বিলুপ্তির পথে। ইতোমধ্যেই অনেক নদী, খাল, বিল ও জলাশয়ের অপমৃত্যুও ঘটেছে। এসবের পেছনে একদিকে যেমন রয়েছে প্রাকৃতিক কারণ, অন্যদিকে তেমন রয়েছে মানব সৃষ্ট নানা কারণ। পলি দ্বারা ভরাট হয়ে যাওয়া, নদীর গতিপথ পরিবর্তন, পাড়ভাঙা, চর জমে যাওয়া, খরাসহ নানা প্রাকৃতিক কারণে জলাধারের অবস্থার পরিবর্তন ঘটেছে। কিন্তু সেক্ষেত্রে পরিবর্তনটা হয়েছে খুব ধীরগতিতে। অবৈধ দখল, চাষের জমি তৈরি, মাটিভরাট করে ভবন নির্মাণ, বাঁধ নির্মাণ, শিল্প এলাকা গড়ে তোলা, নগর সম্প্রসারণ, বিভিন্ন আবাসন প্রকল্প, কলকারখানার বর্জ্য পদার্থ, ফসলে কীটনাশক প্রয়োগ ইত্যাদি নানা মানব সৃষ্ট কারণে এদেশের জলাশয় আজ চরম হুমকির মুখে।

জলবায়ুর পরিবর্তনজনিত কারণে বৈশ্বিক উষ্ণতা ক্রমেই বেড়ে চলেছে। বাংলাদেশে এর প্রভাবটা আরো বেশি। এ পরিবর্তনজনিত কারণে অতিবৃষ্টি, অনাবৃষ্টি, খরা, বন্যা, আইলা, সিডর ইত্যাদি নানা ভয়াবহ দুর্যোগ প্রায়ই এদেশের উপর দিয়ে বয়ে যাচ্ছে। কয়েক বছর ধরে রাজধানী ঢাকার উন্নয়ন ও বিকাশ ঘটছে অপরিকল্পিতভাবে। বিশাল জনসংখ্যার মাথা গোজার ঠাঁই করে দিতে এ শহরের নদী, জলাশয়, খাল, নিম্রভূমি ইত্যাদি অনবরত ভরাট করা হচ্ছে। বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) তথ্য অনুযায়ী, সারাদেশে প্রতি বছর ৪২ হাজার একর কৃষিজমি ও জলাশয় ভরাট করা হচ্ছে। ফলে ঘন বসতিপূর্ণ এ নগরীর তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেয়েছে ব্যপকহারে। জলাশয় একটি এলাকার তাপমাত্রা সহনীয় রাখতে সহায়তা করে। খোলা জায়গা ও জলাভূমি না থাকাতে, তাপমাত্রা বৃদ্ধিজনিত কারণে ঢাকার পরিবেশ বর্তমানে অত্যন্ত হুমকির সম্মুখীন।

বুড়িগঙ্গা নদীকে ঢাকার প্রাণ বলা হয়। কিন্তু সেই প্রাণ পাখিটিকে মেরে ফেলতে চলছে নানা আয়োজন। ঐতিহ্যবাহী নদীটিকে দেখে এখন মনে হবে এটা বর্জ্যেভরা কোনো বিষাক্ত কালো নদী। অথচ এই নদীটিই মিশে আছে ঢাকার গৌরবের অংশ হয়ে। শুধু বুড়িগঙ্গাই নয় তুরাগ, বালু ও শীতলক্ষ্যার অবস্থাও খুব নাজুক। কলকারখানার দূষিত বর্জ্য, ড্রেনের নোংরা পানি, নৌযানের তেল, ময়লা-আবর্জনা ইত্যাদি নানা পদার্থ মিশ্রিত হয়ে নদী হারিয়েছে তার আপন রূপ। শুধু তাই নয় নদীতে মাছসহ যে সমস্ত জীববৈচিত্র ছিল তাও অনেকটা বিলীন হয়ে গেছে। দেশের অন্যান্য নদীও কমবেশি এসবের শিকার। তবে এসব রোধকল্পে নেই তেমন কোন উদ্যোগ।

রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ বা রাজউকের পরিসংখ্যান মতে, রাজধানীতে একসময় ৪৭টি খাল ছিল। পরবর্তীতে সে সংখ্যা দাঁড়ায় ২৭ এ। বাকিগুলো চলে গেছে দখলদারের হাতে। যার কোনো চিহ্ন এখন আর খুঁজে পাওয়া যাবে না। তবে যেগুলো অবশিষ্ট আছে সেগুলোর অবস্থাও খুব একটা ভাল না। বেগুনবাড়ি-হাতিরঝিল খালটি নগরীর একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ খাল। এ খালটি রাজধানীর জলাবদ্ধতা দূর করতে বিশেষ ভূমিকা রাখে। খালটিতে থাকা বিভিন্ন বস্তি উচ্ছেদ করে উন্নয়ন প্রকল্প হাতে নিলেও বিজেএমইএ এর ভবনটি ভাঙ্গা সম্ভব হচ্ছে না। ফলে খাল তার বহমান ক্ষমতা দিন দিন হারিয়ে ফেলছে। অথচ জলাবদ্ধতা দূর করতে খালের কোনো বিকল্প নাই। খাল দখল হয়ে যাওয়ার কারণে রাজধানীতে বৃষ্টি হলেই জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। সেই সাথে জনজীবনে নেমে আসে চরম দুর্ভোগ।

জলবায়ুর পরিবর্তনজনিত কারণে বৈশ্বিক উষ্ণতা ক্রমেই বেড়ে চলেছে। ছবি: উইকিপিডিয়া

নদী বা নিম্র জলাভূমি ভরাট করে অবৈধভাবে চলছে নানা প্রকল্পের কাজ। ঢাকার চারপাশে নদীবেষ্টিত এলাকা যেমন- উত্তরা, খিলখেত, আশুলিয়া, আমিনবাজার, রায়েরবাজার, বসিলা, কেরানীগঞ্জ, রূপগঞ্জসহ বিভিন্ন জায়গায় নদী ভরাট করে গড়ে উঠেছে অবৈধ নানা আবাসন প্রকল্প। অথচ এসব বন্ধ  করার রাজউক তথা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নেই তেমন কোনো মাথাব্যাথা। মাঝে মাঝে হাইকোর্ট থেকে এসব কার্যক্রম বন্ধের নির্দেশ দেয়া হলেও তেমন কোনো ফল পাওয়া যায় না। কিন্তু জলাশয়, খাল, নদী ইত্যাদি ভরাট করে স্থাপনা কিংবা ভবন নির্মাণ ইমারত আইন ও জলাধার আইনের সম্পূর্ণ পরিপন্থী।

কৃষিজমি ও নিম্রজলাভূমি যেগুলো থেকে সাধারণ কৃষক, জেলে, মাঝি তথা সর্বস্তরের মানুষ উপকৃত হয়, প্রভাবশালীদের নির্মম থাবায় দিন দিন তারা জীবিকা শূন্য হয়ে পড়ছে। রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে নদীর মাঝে ও তীরে দেখা যায় নানা নামে সাইন বোর্ড। মাটি ফেলে এগুলো ধীরে ধীরে ভরাট করে বিভিন্ন স্থাপনাও গড়ে তুলতে দেখা যায়। ঢাকার পার্শবর্তী জেলাগুলোতে এটা ভয়ঙ্কর রূপ ধারণ করেছে। অথচ ইমারত আইনে সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ রয়েছে, নদী থেকে ২৫০ মিটার ও তীর থেকে ৫০ মিটার পর্যন্ত কোনো স্থাপনা ও ভবন নির্মাণ করা যাবে না।

বিআইডাব্লিউটিএ একটি প্রতিবেদনে জানা গেছে, গাবতলী, আমিনবাজার, সিন্নিরটেক, খোলামোড়া, শ্যামপুর, মুন্সিখোলা ও ফতুল্লা এলাকায় তীরভূমি এবং নদীগর্ভ বালু দিয়ে ভরাট করা হয়েছে। যা নদীর স্বাভাবিক গতিকে ব্যাহত করে। এছাড়াও নৌযান চলাচল ব্যবস্থা বিকল হয়ে পড়ে। শুধু এসব জায়গাতেই বালু ভরাট সীমাবদ্ধ নেই। দেশের বিভিন্ন স্থানে বালু ও মাটি ফেলে নদী ভরাট করা হচ্ছে। অনেক নদী ও খালে পলি পড়ে ভরাট হয়ে গেলেও তা অপসারণ করে তার স্বাভাবিক পরিবেশ ফিরিয়ে দেওয়ার কোনো উদ্যোগ লক্ষ্য করা যায় না। ফলে নৌপথ ছাড়াও এদেশের মৎস্য সম্পদের উপর ব্যাপক নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। এখন দেশে প্রাকৃতিক মাছের একরকম আকালই চলছে বলা যায়। পরিবেশবিদরা বলছেন, এভাবে ভরাট প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকলে ভবিষ্যতে দেশে মৎস্য সম্পদের ভয়াবহ অভাব দেখা দেবে।

প্রাকৃতিক জলাধার সংরক্ষণ আইন

মহানগরী, বিভাগীয় শহর ও জেলা শহরের পৌর এলাকাসহ দেশের সকল পৌর এলাকার খেলার মাঠ, উন্মুক্ত স্থান, উদ্যান এবং প্রাকৃতিক জলাধার সংরক্ষণ আইন, ২০০০ (২০০০ সনের ৩৬ নং আইন) 

যেহেতু মহানগরী, বিভাগীয় শহর ও জেলা শহরের পৌর এলাকাসহ দেশের সকল পৌর এলাকার খেলার মাঠ, উন্মুক্ত স্থান, উদ্যান এবং প্রাকৃতিক জলাধার সংরক্ষণের জন্য বিধান করা সমীচীন ও প্রয়োজনীয়; সেহেতু এতদ্বারা নিম্ররূপ আইন করা হইল:- সংক্ষিপ্ত শিরোনামা ও প্রবর্তন

১৷ (১) এই আইন মহানগরী, বিভাগীয় শহর ও জেলা শহরের পৌর এলাকাসহ দেশের সকল পৌর এলাকার খেলার মাঠ, উন্মুক্ত স্থান, উদ্যান এবং প্রাকৃতিক জলাধার সংরক্ষণ আইন, ২০০০ নামে অভিহিত হইবে৷

(২) সরকার, সরকারি গেজেটে প্রজ্ঞাপন দ্বারা, যে তারিখ নির্ধারণ করবে সেই তারিখে এ আইন কার্যকর হইবে৷

 সংজ্ঞা

২৷ বিষয় বা প্রসংগের পরিপন্থী কোনো কিছু না থাকিলে, এই আইনে-

(ক) ‘উদ্যান’ অর্থ মাস্টার প্লানে বা ভূমি জরিপ নকশায় উদ্যান বা পার্ক হিসেবে চিহ্নিত বা সরকার কর্তৃক, সরকারি গেজেটে প্রজ্ঞাপন দ্বারা, উদ্যান বা পার্ক হিসেবে ঘোষিত কোনো স্থান;

(খ) ‘উন্মুক্ত স্থান’ অর্থ মাস্টার প্লানে উন্মুক্ত স্থান হিসেবে চিহ্নিত বা সরকার কর্তৃক, সরকারি গেজেটে প্রজ্ঞাপন দ্বারা, উন্মুক্ত স্থান হিসেবে ঘোষিত এমন স্থান যা দীর্ঘদিন হতে ঈদগা বা অন্য কোনোভাবে জনসাধারণ কর্তৃক ব্যবহার হয়ে আসছে;

(গ) ‘কর্তৃপক্ষ’ অর্থ রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, খুলনা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, রাজশাহী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ এবং আপাততঃ বলবত অন্য কোন আইনের অধীন প্রতিষ্ঠিত কোন শহর উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, সিটি কর্পোরেশন এবং বিভাগীয় ও জেলা শহরের পৌরসভাসহ দেশের সকল পৌরসভা;

(ঘ) ‘খেলার মাঠ’ অর্থ খেলাধুলা বা ক্রীড়া নৈপুণ্য প্রদর্শনের জন্য মাস্টার প্লানে খেলার মাঠ হিসেবে চিহ্নিত জায়গা;

(ঙ) ‘নির্ধারিত অর্থ এই আইনের অধীন প্রণীত বিধি দ্বারা নির্ধারিত;

(চ) ‘প্রাকৃতিক জলাধার’ অর্থ নদী, খাল, বিল, দীঘি, ঝরনা বা জলাশয় হিসেবে মাস্টার প্লানে চিহ্নিত বা সরকার, স্থানীয় সরকার বা কোন সংস্থা কর্তৃক, সরকারি গেজেটে প্রজ্ঞাপন দ্বারা, বন্যাপ্রবাহ এলাকা হিসেবে ঘোষিত কোনো জায়গা, সলল পানি এবং বৃষ্টির পানি ধারণ করে এমন কোন ভূমিও এর অন্তর্ভুক্ত হবে;

(ছ) ‘মাস্টার প্লান’ অর্থ রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, খুলনা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, রাজশাহী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ এবং অন্য কোন শহর উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ বা বিভাগীয় ও জেলা শহরসহ সকল পৌরসভা প্রতিষ্ঠাকারী আইনের অধীন প্রণীত মাস্টার প্লান;

(জ) ‘শ্রেণী পরিবর্তন’ অর্থ মস্টার প্লানে বা সরকারি গেজেটে সংশ্লিষ্ট জায়গার অবস্থা যেভাবে উল্লেখ করা হয়েছে বা বর্ণনা করা হয়েছে বা সংশ্লিষ্ট জায়গা সাধারণত যেভাবে থাকার কথা মাটি ভরাট, পাকা, আধা-পাকা বা কাঁচা ঘরবাড়ি এবং অন্য যে কোনো ধরনের ভবন নির্মাণসহ কোনোভাবে সেই অবস্থার পরিবর্তন হতে পারে এমন কিছু করাকে বুঝাবে;

(ঝ) ‘সরকার’ অর্থ এ আইনের প্রশাসনিক মন্ত্রণালয়। 

আইনের প্রাধান্য

নদী বা নিম্র জলাভূমি ভরাট করে অবৈধভাবে চলছে নানা প্রকল্পের কাজ। ছবি: গেটি ইমেজ

৩৷ আপাতত বলবত অন্য কোন আইনে যা কিছুই থাকুক না কেন, এ আইন ও তদধীনে প্রণীত বিধির বিধানাবলী কার্যকর থাকবে।  

মাস্টার প্লানের বহুল প্রচার

৪৷ (১) কোন মাস্টার প্লান চূড়ান্তভাবে প্রণয়নের পর এর কপি উক্তরূপ প্রণয়নের তারিখ হতে অন্তত এক মাসের মধ্যে কর্তৃপক্ষের হেড অফিস এবং শাখা অফিস, যদি থাকে, এর নোটিশ বোর্ডে এমনভাবে লটকিয়ে রাখা হবে যাতে তা যথাসম্ভব সংশ্লিষ্ট এলাকার জনসাধারণের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। 

(২) কর্তৃপক্ষ তৎকর্তৃক নির্ধারিত মূল্যে মাস্টার প্লানের মুদ্রিত কপি বা মাস্টার প্লানের এলাকাভিত্তিক নকশা জনসাধারণের কাছে বিক্রির ব্যবস্থা কররে। 

(৩) সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ যথাযথ বিবেচিত অন্য যে কোন পদ্ধতিতে মাস্টার প্লান এবং তৎসূত্রে জনগণের দায়িত্ব ও কর্তব্য সম্পর্কে বহুল প্রচারের ব্যবস্থা করবে। 

 খেলার মাঠ, উন্মুক্ত স্থান, উদ্যান ও প্রাকৃতিক জলাধারের শ্রেণী পরিবর্তনে বাধানিষেধ

৫৷ এই আইনের বিধান অনুযায়ী ব্যতীত, খেলার মাঠ, উন্মুক্ত স্থান, উদ্যান এবং প্রাকৃতিক জলাধার হিসেবে চিহ্নিত জায়গার শ্রেণী পরিবর্তন করা যাবে না বা উক্তরূপ জায়গা অন্য কোনভাবে ব্যবহার করা যাবে না বা অনুরূপ ব্যবহারের জন্য ভাড়া, ইজারা বা অন্য কোনভাবে হস্তান্তর করা যাবে না।

ব্যাখ্যা- এই ধারার উদ্দেশ্য পূরণকল্পে, কোন উদ্যানের মৌলিক বৈশিষ্ট্য নষ্ট হয় এরূপে এর বৃক্ষরাজি নিধনকে উদ্যানটির শ্রেণী পরিবর্তনরূপে গণ্য করা হবে৷ 

জায়গার শ্রেণী পরিবর্তনের আবেদন, ইত্যাদি

৬। (১) ধারা ৫-এ বর্ণিত কোন জায়গা বা জায়গার অংশবিশেষের শ্রেণী পরিবর্তন করার প্রয়োজন হলে উক্ত জায়গার মালিক, প্রস্তাবিত পরিবর্তনের কারণ লিপিবদ্ধ করে, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে সরকারের কাছে আবেদন করনে।

(২) উপ-ধারা (১) এর অধীন আবেদনপত্র প্রাপ্তির ৬০ দিনের মধ্যে কর্তৃপক্ষ আবেদনপত্রটি বিবেচনা করে আবেদনাধীন জায়গার শ্রেণী পরিবর্তন জনস্বার্থে সমীচীন হবে কিনা সেই সম্পর্কে, অন্যান্যের মধ্যে, নিম্রবর্ণিত বিষয়ের ওপর সুস্পষ্ট মতামত এবং সুপারিশসহকারে আবেদনটি সরকার বরাবরে প্রেরণ করবে, যথা:-

(ক) আবেদনাধীন জায়গার শ্রেণী পরিবর্তন করা হলে মাস্টার প্লানের উদ্দেশ্য ক্ষতিগ্রস্ত হবে কিনা, হলে এর পরিমাণ; এবং

(খ) শ্রেণী পরিবর্তনজনিত কারণে সংশ্লিষ্ট এলাকার পরিবেশের ওপর কোন ক্ষতিকর প্রভাব পড়বে কিনা বা বসবাসকারীগণের অন্য কোনপ্রকার ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা আছে কিনা।

(৩) শ্রেণী পরিবর্তনের জায়গা যদি সরকারি, স্থানীয় কর্তৃপক্ষ, বিধিবদ্ধ সংস্থা বা কোম্পানির হয় সেক্ষেত্রেও এ ধারার বিধানাবলী একইভাবে প্রযোজ্য হবে।

(৪) উপ-ধারা (২) এর অধীন মতামত এবং সুপারিশ প্রদানের সুবিধার্থে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ আবেদনকারীর কাছ থেকে এতদ্‌সংশ্লিষ্ট প্রয়োজনীয় তথ্য ও দলিল চাইতে পারবে এবং আবেদনকারী উক্তরূপ তথ্য ও দলিল এ উদ্দেশ্যে কর্তৃপক্ষ কর্তৃক নির্ধারিত সময়সীমা, যা নোটিশ প্রাপ্তির তারিখ হতে ১৫ দিন হবে, এর মধ্যে সরবরাহ করতে বাধ্য থাকবে। 

(৫) এ ধারার অধীন কোনো আবেদন গ্রহণ করা হবে না যদি এর সাথে নির্ধারিত ফি কর্তৃপক্ষের বরাবরে নির্ধারিত পদ্ধতিতে জমা করার রসিদ সংযুক্ত করা না হয়। 

আবেদনপত্র নিষ্পত্তি

৭৷ (১) ধারা ৬-এর অধীন আবেদনপত্র প্রাপ্তির ৬০ দিনের মধ্যে সরকার, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের মতামত এবং সুপারিশ বিবেচনা করে, আবেদনের উপর সিদ্ধান্ত প্রদান করবে এবং আবেদনকারীকে, সিদ্ধান্ত প্রদানের তারিখ হতে ১৫ দিনের মধ্যে, উক্ত সিদ্ধান্ত লিখিতভাবে অবহিত করবে:

তবে শর্ত থাকে যে, আবেদনপত্রটি অননুমোদন করার বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হলে, আবেদন প্রাপ্তির ৯০ দিনের মধ্যে সরকার আবেদনকারীকে শুনানির সুযোগ প্রদান করবে।

 (২) উপ-ধারা (১) এ প্রদত্ত সিদ্ধান্তে সংক্ষুব্ধ আবেদনকারী সিদ্ধান্ত সম্বলিত স্মারক বা নোটিশ প্রাপ্তির তারিখ হতে ৩০ দিনের মধ্যে সরকার বরাবরে এর সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করার জন্য আবেদন করতে পারবে।

(৩) উপ-ধারা (২) এর অধীনে সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার কোন আবেদন গ্রহণযোগ্য হবে না যদি এরর সাথে নির্ধারিত ফি সরকার বরাবরে নির্ধারিত পদ্ধতিতে জমা করার রসিদ সংযুক্ত করা না হয়।

 (৪) উপ-ধারা (৩) এর অধীন প্রদত্ত আবেদনের উপর সরকারের সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হবে৷ 

শাস্তি ও অন্যান্য

৮৷ (১) কোন ব্যক্তি এই আইনের কোন বিধান লংঘন করলে তিনি অনধিক ৫ বছরের কারাদন্ডে বা অনধিক ৫০ (পঞ্চাশ) হাজার টাকা অর্থদন্ডে অথবা উভয় দন্ডে দন্ডনীয় হবেন। 

(২) ধারা ৫ এর বিধান লংঘন করে যদি কোন জায়গা বা জায়গার অংশ বিশেষের শ্রেণী পরিবর্তন করা হয়, তাহলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ নোটিশ দ্বারা জমির মালিককে অথবা বিধান লংঘনকারী ব্যক্তিকে নোটিশে উল্লিখিত জায়গার শ্রেণী পরিবর্তনের কাজে বাধা প্রদান করতে পারবে এবং নির্ধারিত পদ্ধতিতে অননুমোদিত নির্মাণকার্য ভেঙ্গে ফেলার নির্দেশ দিতে পারবে এবং অন্য কোন আইনে যা কিছুই থাকুক না কেন, উক্তরূপ ভেঙ্গে ফেলার জন্য কোনো ক্ষতিপূরণ প্রদেয় হবে না।

(৩) এই আইনের বিধান লংঘন করে যদি কোন নির্মাণকার্য সম্পাদিত বা অবকাঠামো তৈরি হয়ে থাকে সেইসব অবকাঠামো আদালতের আদেশে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের বরাবরে বাজেয়াপ্ত হবে।

অর্থদন্ড আরোপের ক্ষেত্রে কতিপয় ম্যাজিস্ট্রেটের বিশেষ ক্ষমতা

৯৷ Code of Criminal Procedure, ১৮৯৮ (Act V of ১৮৯৮) এ ভিন্নতর যা কিছুই থাকুক না কেন, কোন ব্যক্তির উপর ধারা ৮ এর অধীনে অর্থদন্ড আরোপের ক্ষেত্রে একজন প্রথম শ্রেণীর ম্যাজিস্ট্রেট বা মেট্রোপলিটন এলাকায় মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট উক্ত ধারায় উল্লিখিত অর্থদন্ড আরোপ করতে পারিবেন।

সরল বিশ্বাসে কৃত কাজকর্ম রক্ষণ

১০। এই আইন বা বিধির অধীন সরল বিশ্বাসে কৃত কোন কাজের ফলে কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্ত হলে বা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকলে তার জন্য কর্তৃপক্ষের বা ক্ষেত্রমত, চেয়ারম্যান বা প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা বা কর্তৃপক্ষের অন্য কোন কর্মকর্তা বা অপর কর্মচারী বা কোন ব্যক্তির বিরুদ্ধে কোন আইনগত কার্যক্রম গ্রহণ করা যাবে না। 

কোম্পানি কর্তৃক অপরাধ সংঘটন

১১। এ আইনের অধীন কোন বিধান লংঘনকারী ব্যক্তি যদি কোম্পানি হয়, তাহা হলে উক্ত কোম্পানির মালিক, পরিচালক, ম্যানেজার, সচিব বা অন্য কোনো কর্মকর্তা বা এজেন্ট বিধানটি লংঘন করেছেন বলে গণ্য হবে, যদি না তিনি প্রমাণ করতে পারেন যে, উক্ত লংঘন তাঁর অজ্ঞাতসারে হয়েছে অথবা উক্ত লংঘন রোধ করার জন্য তিনি যথাসাধ্য চেষ্টা করেছেন।

 ব্যাখ্যা- এ ধারায়-

(ক) ‘কোম্পানি’ বলতে কোন সংবিধিবদ্ধ সংস্থা, বাণিজ্য প্রতিষ্ঠান ও সমিতি বা সংগঠনকেও বুঝাবে;

(খ) বাণিজ্য প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে, ‘পরিচালক’ বলতে এর কোন অংশীদার বা পরিচালনা বোর্ডের সদস্যকেও বুঝাবে।  

অপরাধ বিচারার্থে গ্রহণ ইত্যাদি

১২৷ (১) কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান বা প্রধান, যে নামেই অভিহিত হোক না কেন, বা তার কাছ থেকে ক্ষমতাপ্রাপ্ত কোনো ব্যক্তির লিখিত অভিযোগ ছাড়া কোন আদালত এ আইনের অধীন কোন অপরাধ বিচারের জন্য গ্রহণ করবে না।

(২) অন্য কোন আইনে যা কিছুই থাকুক না কেন, এ আইনের অধীন দন্ডনীয় অপরাধ আমলযোগ্য বা ধর্তব্য (Cognizable) অপরাধ হবে। 

বিধি প্রণয়নের ক্ষমতা

১৩। সরকার, সরকারি গেজেটে প্রজ্ঞাপন দ্বারা, এ আইনের উদ্দেশ্য পূরণকল্পে বিধি প্রণয়ন করতে পারবে।

রাজউক, গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা), বেলা, পরিবেশ অধিদফতর, নাগরিক সমাজ, দেশের সুশীল সমাজসহ সর্বস্তরের সাধারণ জনগণ জলাধার, খোলা মাঠ, নদী, খাল, হাওড় ইত্যাদি রক্ষায় নানা রকম আন্দোলন করলেও তাতে কোন লাভ হচ্ছে না। অবৈধ স্থাপনা সরাতে মাঝে মাঝে উচ্ছেদ অভিযান চালালেও, কিছু দিন পর প্রভাবশালী মহল আবার গড়ে তোলে অবৈধ স্থাপনা। কিন্তু জলাধার সংরক্ষণে এদেশে যে প্রচলিত আইন আছে যদি তার সঠিক ও যথাযথ প্রয়োগ করা যায়, তাহলে অবশিষ্ট যে জলাধার আছে তা রক্ষা করা সম্ভব হবে। এমনকি দখল হয়ে যাওয়া জলাধার ও ভূমিও দখলমুক্ত করা সম্ভব। তাই সকলের দাবি এ সম্পর্কিত আইনগুলো কাজে পরিণত করে দেশের স্বাভাবিক সৌন্দর্য ফিরিয়ে আনা হোক। রক্ষা করা হোক জলাধার ও জলজ জীববৈচিত্র। 

সারোয়ার কবির

প্রকাশকাল: বন্ধন ২৫ তম সংখ্যা, মে ২০১২

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top