বিল্ডিংয়ের ভেতরে ও বাইরে তাপমাত্রার পার্থক্য থাকলে উচ্চ তাপমাত্রার স্থান হতে নিম্র তাপমাত্রার স্থানে তাপ চলাচল করে। শীতপ্রধান জায়গায় দালানের ভেতর যখন উত্তপ্ত করা হয় তখন বাইরে খুব ঠান্ডা থাকে। ফলে ভেতরের তাপ বাইরে যেতে চায়। অপরদিকে গ্রীষ্মপ্রধান এলাকায় যখন দালানের বাইরে তাপমাত্রা খুব বেশি থাকে তখন দালানের ভেতরে ঠান্ডা রাখার ব্যবস্থা করা হয়। এ অবস্থায় বাইরের তাপ ভেতরে প্রবেশ করতে চায়। এ তাপ চলাচল বা সঞ্চালন প্রতিরোধ করাই হলো থার্মাল ইনসুলেশন। সুতরাং কক্ষের মধ্যদিয়ে তাপ সঞ্চালন মন্থর বা প্রতিরোধ করার যে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয় তাকে থার্মাল ইনসুলেশন বলে। সাধারণত গ্রীস্মকালে ঘরের মধ্যে গরম এবং শীতকালে ঠান্ডা অনুভূত হয়। এ অসুবিধা দূর করার জন্য বিভিন্ন থার্মাল ইনস্যুলেটিং ম্যাটেরিয়ালস্ ব্যবহার করে তাপ প্রতিহত করা হয়। আরামদায়ক বসবাসের জন্য তাপ সঞ্চালন নিয়ন্ত্রণ একান্ত প্রয়োজন। আমাদের দেশে বিশেষ করে গ্রীষ্মকালে অধিকাংশ বিল্ডিংয়ে এয়ার কন্ডিশন ব্যবহার করতে দেখা যায়; কিন্তু আমরা একটু সচেতন হলেই আমাদের মূল্যবান অর্থ এবং বিদ্যুৎ সম্পদ সহজেই সাশ্রয় করতে পারি থার্মাল ইনসুলেশনের মাধ্যমে।তাই আধুনিক অ্যাপার্টমেন্টে থার্মাল ইনসুলেশনের বিকল্প নাই।
থার্মাল ইনসুলেটিং ম্যাটেরিয়ালের গুণাগুণ:
উচ্চতাপ প্রতিরোধক হতে হবে।
পরিমিত অগ্নিনিরোধক হওয়া উচিত।
কীটনাশক হওয়া উচিত।
এর বেশি আর্দ্রতা ও অপ্রবেশ্য গুণ থাকতে হবে।
দীর্ঘস্থায়ী হবে।
দামে সস্তা হবে এবং
বাজারে পর্যাপ্ত পরিমাণে পাওয়া যাবে।
থার্মাল ইনসুলেটিং ম্যাটেরিয়াল : থার্মাল ইনসুলেশনে ব্যবহৃত মালামালগুলো নিম্ররূপ:
১। স্ল্যাব ও ব্লক ইনস্যুলেশন : ব্লকগুলো কর্ক বোর্ড, সেলুলার গ্লাস, সেলুলার রাবার, কাঠের গুঁড়া, অ্যাসবেস্টস সিমেন্ট, মিনারেল উল, ভারমিকুলাইট ইত্যাদি তৈরি ব্লক বা স্লাবের আকার ৬০ সে:মি: x ১২০ সে: মি: এবং পুরুত্ব ২.৫ সে: মি:। এই ইনস্যুলেটিং ম্যাটেরিয়ালগুলো দেয়ালে বা ছাদে স্থাপন করা হয়।
২। ব্লাংকেট ইনস্যুলেশন : নরম আঁশযুক্ত দ্রব্যাদি দ্বারা রোল আকারে তৈরি করা হয়। এটা তৈরি করতে মিনারেল উল, উড ফাইবার, কটন, পশুর চুল ইত্যাদি ব্যবহার করা হয়। এর পুরুত্ব ১.২ থেকে ৪ সে: মি: হয়ে থাকে। এ ধরনের ম্যাটেরিয়ালস সাধারণত দেয়ালে এবং সিলিংয়ে বিছিয়ে দেয়া হয়।
৩। লুজ ফিল ইনস্যুলেশন : এটা রক উল, স্লাগ উল, সেলুলোজ বা উড ফাইবার উল ইত্যাদি আঁশযুক্ত পদার্থ দ্বারা তৈরি।
৪। ব্যাট ইনস্যুলেটিং ম্যাটেরিয়াল : এটা ব্ল্যাংকেট ইনসুলেশনের ন্যায় একই ধরনের নরম সামগ্রী। এগুলোর সাইজ ছোট; কিন্তু পুরুত্ব বেশি। সাধারণত এটার পুরুত্ব ৫ সে: মি:, ৭.৫ সে: মি: ও ৯ সে: মি: হয়ে থাকে। দেয়াল এবং সিলিংয়েও বিছিয়ে ব্যবহার করা হয়।
৫। ইনসুলেটিং বোর্ড : ইহা কাঠের মজ্জা (pulp of wood), বেত রাবার ইত্যাদি নামক পদার্থ দ্বারা তৈরি। দেয়াল এবং পার্টিশন দেওয়ালের ভেতরের আস্তরণ (linning) হিসেবে ব্যবহার করা হয়। এটা যে কোনো আকার ও পুরুত্বের পাওয়া যায়।
৬। রিফ্লেকটিভ শিট ম্যাটেরিয়াল : রিফ্লেকটিভ শিট ম্যাটেরিয়াল উচ্চ প্রতিক্ষেপণ ক্ষমতাসম্পন্ন এবং ন্যূনতম নির্গতকারী তাই এটা উত্তম তাপ প্রতিরোধী। এটা জিসপাম বোর্ড, স্টিল শিট, রিফ্লেকটিভ ম্যাটেরিয়াল, অ্যালুমিনিয়াম ফয়েল ইত্যাদি দ্বারা তৈরি করা হয়। রিফ্লেকটিভ সারফেসে সোলার এনার্জি প্রতিফলিত হয়ে দালানের তাপ নিয়ন্ত্রণ করে।
৭। লাইট ওয়েট ম্যাটেরিয়াল : ব্লাস্ট ফার্নেস স্লাগ, পোড়া মাটির এগ্রিগেট, ভারমিকুলাইট ইত্যাদি লাইট ওয়েট জাতীয় এগ্রিগেট ব্যবহার করে কংক্রিটের তাপ প্রতিরোধী গুণাগুণ বহুলাংশে বৃদ্ধি করা যায়।

থার্মাল ইনসুলেশন করার পদ্ধতি : সাধারণত প্রচলিত নিয়ম অনুযায়ী তিন ধরনের মাধ্যমে থার্মাল ইনসুলেশন করা হয়।
১। ছাদের মাধ্যমে থার্মাল ইনসুলেশন।
২। বহিঃস্থ দেওয়ালের থার্মাল ইনসুলেশন।
৩। বহিঃস্থ দরজা এবং জানালার থার্মাল ইনসুলেশন।
নিম্রলিখিতভাবে ছাদে থার্মাল ইনসুলেশন প্রদান করা হয়-
ছাদের ওপরে ইনসুলটিং ম্যাটেরিয়াল ব্যবহারের জন্য অবশ্যই তা ছাদের ওয়াটার প্রুফ কোর্সের নিচে আঠা দিয়ে লাগাতে হবে। অথবা ইনসুলেটিং ম্যাটেরিয়ালের ফলস সিলিং দ্বারা এয়ার গ্যাস তৈরি করে ছাদে থার্মাল ইনসুলেশন প্রদান করা হয়।
সমতল ছাদের ওপরে অ্যাসবেস্টস শিট বা কারোগেটেড গ্যালভানাইজড আয়রণ শিট ইটের ওপর স্থাপন করে এয়ার স্পেস সৃষ্টি করা হয়। এ এয়ার স্পেস ভালো হিট ইনসুলেশন হিসেবে কাজ করে।
ছাদের উন্মুক্ত স্থানে চকচকে এবং রিফ্লেকটিং ম্যাটেরিয়াল ব্যবহার করে সৌরশক্তিকে পুরাপুরি কাজ করতে দেয়া হয় না।
প্রতি বছর গ্রীষ্মকাল আসার আগেই ইনসুলেটিং ম্যাটেরিয়াল সহযোগে ছাদে হোয়াইট ওয়াশ করতে হবে।
ছাদের ওপর মাটির সানকি অথবা প.প হলে ব্লক ব্যবহার করে হিট ইনসুলেশন করা যায়।
প্রকাশকাল: বন্ধন ২৪ তম সংখ্যা, এপ্রিল ২০১২