নিজেদেরকে সাজিয়ে তুলতে আমাদের কত চিন্তাই না থাকে। পোশাক-পরিচ্ছদে তো বটেই, ঘরের সাজসজ্জায়ও আনতে হয় নানা পরিবর্তন। কখনো দেয়ালের রঙ, কখনো আসবাব পরিবর্তনের ছোঁয়া থাকে সব সময়ই। আর এ পরিবর্তনটা হয় সৌন্দর্যের জন্য, নান্দনিকতার জন্য। অনেকে সারা বছর হয়তো মেঝে খোলা রাখেন, গরম এলেই পাতেন নানা নকশার বর্ণিল সব কার্পেট আর ম্যাট। ধূলা-বালি থেকে রক্ষা আর সৌন্দর্য দুই দিকে লক্ষ্য রেখেই পাতা হয় কার্পেট। তবে শুধু গরমেই নয়, অনেকেই কার্পেট পাতেন সারাবছরই। গায়িকা-উপস্থাপিকা দিনাত জাহান মুন্নি আর গীতিকার-সাংবাদিক কবির বকুলের বাসাতেও এমনটাই দেখা গেল। তাদের বাসার সামনের কক্ষে বছরের সব সময়ই কার্পেট বিছানো থাকে। সামনের কক্ষের মেঝেতে একটু আলাদা ভাব আনতেই এমনটাই করা বলে জানিয়েছেন দিনাত জাহান মুন্নি। আবার কেউ কেউ বছরের নির্দিষ্ট সময় ঘরে কার্পেট ব্যবহার করেন। বছরের যে সময়েই ব্যবহার হোক না কেন বাসাবাড়ি বা অফিসে কার্পেটের ব্যবহার বর্তমানে বেশ জনপ্রিয়। সৌন্দর্য বা প্রয়োজন মেটানো সব কাজেই ব্যবহার হচ্ছে কার্পেট। বন্ধনের এবারের সংখ্যার অ্যাকসেসরিজ বিভাগে আমরা জানাবো কার্পেট নিয়ে সব তথ্য। এখানে থাকবে কোন ঘরে কোন কার্পেট, কার্পেটের যত্ন-আত্তি, যেখানে পাবেন আর কার্পেট সংশ্লিষ্ট নানা বিষয়।
কোন ঘরে কেমন কার্পেট
কার্পেটের ব্যবহার বা চাহিদা কেমন জানতে কথা হয় ক্রেতা-বিক্রেতা আর ইন্টেরিয়র ডিজাইনারদের সাথে। ঘর বা অফিসের অন্দরসাজ করে দেয় এমন একটি প্রতিষ্ঠান ক্রিয়েটোর স্বত্বাধিকারী রাশিদ খান বলেন, বাসাবাড়ি বা অফিসে কার্পেটের ব্যবহার একটু বেশিই হয়। তবে যেখানেই ব্যবহার করা হোক না কেন স্থান আর কাজ বুঝেই কার্পেট ব্যবহার করা উচিত। তা না হলে আপনার উদ্দেশ্যটাই ভেস্তে যেতে পারে। আর কার্পেট তো কেবল বিছালেই হয় না, কোনো ঘরের জন্য সেই ঘরের আসবাব, পর্দার রঙ ইত্যাদি বিষয় মাথায় রেখে কার্পেট নির্বাচন করতে হয়। রাশিদ খান আরো বলেন, ধরা যাক কার্পেটটা বসার ঘরে বিছানো হলো। সে ক্ষেত্রে ঘরের পর্দা, বিছানার চাদরের সাথে মিল রেখে কিংবা সম্পূর্ণ বিপরীত রঙের কার্পেট ব্যবহার করতে পারেন। ফ্যাশন বা ঘর নকশা ঘুরে ঘুরে আসে। কার্পেটের ক্ষেত্রেও তা ব্যতিক্রম নয়। এখন পুরনো আমলের মোটিফ আর ধাতবের কাজ খুব বেশি চলছে। মোটা ভারি আর কারুকার্যময় কার্পেটগুলো এখন আবার বসার ঘরে জায়গা করে নিয়েছে। কার্পেটের আকার সব সময় যে চার কোণাকার হবে এমনটা নয়। হয়তো বসার ঘরের কোনো একটা টেবিল বা চার কোনার যেকোনো একটা কোণার আকারের সাথে মিলিয়ে নির্বাচন করা হচ্ছে কার্পেট। এ ছাড়া কুশন কভারের নকশা বা কুশনের আকারের অপেক্ষাকৃত বড় কার্পেটও ব্যবহার করতে পারেন। তবে ঘরজোড়া কার্পেটের চেয়ে ছোট কার্পেটের ব্যবহার বর্তমানে বেড়েছে। ছোট কয়েকটা কার্পেট দিয়ে বসার ঘর সাজানো যায়। আর চারদিকে ফাঁকা জায়গাটা ম্যাট দিয়ে মুড়ে দেয়া যেতে পারে। খাবার ঘরে কার্পেটের ব্যবহার কম হয়। তবে খাবার টেবিলের কাচটা যদি স্বচ্ছ হয়ে থাকে সে ক্ষেত্রে টেবিলের অংশটায় কার্পেট ব্যবহার করা যেতে পারে। স্বচ্ছ কাচের মাঝে নকশা করা কার্পেট দেখা যায়। আর চারপাশে চিকন করে ম্যাট বিছিয়ে দেয়া যেতে পারে। শোবার ঘরে বিছানা থেকে নেমেই পা রাখার জায়গাটা অর্থাৎ ফুট ল্যান্ডিং স্পেসে চিকন নকশা করা কার্পেট ব্যবহার করা যেতে পারে। আর পুরো ঘরে পাতলা বা হালকা কাজ করা কার্পেট ব্যবহার করলে মন্দ হয় না। ছোট্ট সোনামণির ঘরের জন্য অপেক্ষাকৃত বর্ণিল আর কার্টুন আঁকা কার্পেট ব্যবহার করা যেতে পারে। সেগুলো একটু ভারি হলেই ভালো হয়।
তবে অফিস আর বাসাবাড়ির কার্পেটের ব্যবহার এক নয়। অফিসে ব্যবহারের জন্য কার্পেটের আকার ও রঙ অফিসের ধরন বুঝে করতে হয়। যদি কোন কর্পোরেট অফিস হয় তাহলে খুব রঙচটা কার্পেট ব্যবহার না করে একরঙা বা হালকা রঙয়ের যে কোনো কার্পেট ব্যবহার করতে হবে।

বিক্রিটা কেমন
পল্টনের কার্পেট দোকান নিউ ঢাকা কার্পেট হাউজের বিক্রয়কর্মী আব্দুস শহীদ বলেন, ‘মানুষের সৌন্দর্য্য সচেতনতা থেকেই কার্পেটের ব্যবহার বাড়ছে। এ কারণে এখন কার্পেটের বিক্রি অনেক ভালো। মানুষ নিজেকে যেমন সাজাতে বা সুন্দর করতে চায় তেমনি নিজের ঘরকেও সুন্দর করে তুলতে চায়। আর এ কারণে দিন দিন কার্পেটের ব্যবহার বাড়ছে।’ এলিফ্যান্ট রোড থেকে কার্পেট কিনতে এসেছিলেন রাজশাহীর ব্যবসায়ী মোতালিব তালুকদার। তিনি জানান, তার দোকানে কার্পেটের বিক্রি বেশি হওয়ায় দু মাসের মাথায় আবার কার্পেট নিতে ঢাকা এসেছেন।
এ দোকানে কার্পেট কিনতে এসেছেন ধানমন্ডির মৌমিতা সুলতানা ও আতিকুল ইসলাম। গত মাসেই তারা বাসা বদলিয়েছেন। নতুন বাসার মেঝেতে টাইলস না থাকায় কার্পেটের উপরই ভরসা করতে হচ্ছে তাদের। তাই কার্পেট কিনতে এলিফ্যান্ট রোডে এসেছেন।
কেমন দরদাম
বাহারি নকশা আর আকারের কার্পেটের দামটাও একটু বেশি। এলিফ্যান্ট রোডের কার্পেটের দোকান কন্টিনেন্টাল কার্পেট লিমিটেডের কর্মী মো. আবুল কালাম আজাদ জানান, পিস কার্পেটের চলটা এখন বেশি তাই এর বিক্রিও তুলনামূলক বেশি। দেশে তৈরি কার্পেটের পাশাপাশি তুরস্ক, চীন, বেলজিয়াম আর দুবাই থেকে আসা কার্পেট এখন প্রচুর পাওয়া যাচ্ছে। তবে বিদেশি কার্পেটগুলোর মধ্যে তুরস্কের কার্পেটের চাহিদা সবচেয়ে বেশি। এ ধরনের কার্পেটের বুনন অনেক বেশি মজবুত হয় আর এগুলোর দামটাও একটু বেশি। এই কার্পেট বিভিন্ন আকারের হয়ে থাকে। তুরস্কের এসব কার্পেট কেনা যাবে ১১ হাজার থেকে ২২ হাজার টাকায়। একেবারে ছোট আকারের চার বাই ছয় ফিট কার্পেট কেনা যাবে সাড়ে তিন হাজার টাকায়। চীনা বিভিন্ন আকারের কার্পেট কেনা যাবে ছয় হাজার থেকে ১৬ হাজার টাকায়। বেলজিয়ামের কার্পেট কেনা যাবে আড়াই থেকে সাত হাজার টাকায়। দেশীয় পাটের ম্যাট কেনা যাবে প্রতি গজ ১৫০ থেকে ৩০০ টাকা দরে।

যেখানে মিলবে কার্পেট
রাজধানীর এলিফ্যান্ট রোড, বায়তুল মোকাররম, পল্টন, গুলিস্তান, উত্তরা, মিরপুর, গুলশান-২ ছাড়াও সারা বাংলাদেশের সব বড় বড় বাজার আর হার্ডওয়্যার দোকানগুলোতে কার্পেট কিনতে পারবেন। নতুন কার্পেট না কিনতে চাইলে সমস্যা নেই। আপনি চাইলে পুরনো কার্পেট রঙ করে ব্যবহার করতে পারেন। পুরনো কার্পেটে খরচ পড়বে ফুট হিসাবে। ঢাকার পল্টন, মতিঝিল আর মোহাম্মদপুর থেকে পুরনো কার্পেট কেনা যাবে।
যত্ন-আত্তি
কার্পেটের যত্ন-আত্তি ঠিকভাবে না করলে এটি কম সময়েই নষ্ট হয়ে যেতে পারে। তাই কার্পেট নিয়মিত পরিষ্কার করা উচিত। হট ওয়াটার ওয়াশিং, স্ট্রিম ক্লিনিং, ড্রাই ক্লিনিং এ তিন রকমভাবে কার্পেট পরিষ্কার করা যায়। তবে এগুলোর মধ্যে ড্রাই-ক্লিনিং সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত। ড্রাই-ক্লিনিং আবার চার রকমের হয়-ড্রাই কম্পাউন্ড, বনেট, শ্যাম্পু আর এনকাসপুলেশন।
কার্পেট বিছানো কক্ষে আর্দ্রতা ঠিকমত না হলে কার্পেট সহজে নষ্ট হয়ে যেতে পারে। তাই কার্পেট বিছানো কক্ষে ঠিকমত আলো-বাতাস চলাচলের ব্যবস্থা করতে হবে।
কার্পেটের আরেকটি বড় শত্রু পোকা-মাকড়। এ কারণে কার্পেট বিছানো কক্ষে বা ঘরে পোকা মাকড়ের উৎপাত করতে হবে। অন্যথায় পোকা-মাকড় বা ইঁদুরজাতীয় প্রাণী কার্পেট কেটে নষ্ট করে ফেলতে পারে। তাই কার্পেটের নিচে পোকানাশক বা ইঁদুরনাশক রাসায়নিক ব্যবহার করা যেতে পারে।
আগুন বা আগুনজাতীয় দাহ্য পদার্থ থেকে কার্পেট ধরে রাখতে হবে।
– জিয়া
প্রকাশকাল: বন্ধন ২৬ তম সংখ্যা, জুন ২০১২