সুন্দর পরিবেশই পারে মানুষের মনকে সুন্দর রাখতে। অনেকের কাছেই নিজের ঘরটিই সবচেয়ে পছন্দের। তাই ঘরের সৌন্দর্যের সাথে সম্পর্ক মনের। তা ছাড়া ঘরের নান্দনিক পরিবেশে ফুটে ওঠে যে কারো রুচিবোধ। এ জন্য ঘরের সৌন্দর্য বাড়াতে পেন্টিংস, শোপিস, পুরোনো কারুকার্যের ফার্নিচার, ওয়ালমেট, মুখোশ, ফুলদানিসহ কমতি থাকে না এ ধরনের নানান আয়োজনের। কিন্তু দেশি কিংবা বিদেশি বিলাসবহুল পণ্যে ঘর সাজানোর সামর্থ্য কজনেরই বা থাকে। তবে মাটির তৈরি তৈজস হলে কথাটা ভিন্ন। কারণ, এগুলো শিল্পীর হাতের নিপুণ ছোঁয়ায় তৈরি। আর তাই অর্থের বিচারেই নয়, বরং ঘরকে শৈল্পিকতা দানে এর জুড়ি মেলা ভার।
প্রতিটি মানুষই চায় নিজের ঘরটি হোক একটু অন্য রকম। যা হবে দারুন আকর্ষণীয়। তাই বিদেশি তৈজসপত্রের পাশাপাশি ঘরসজ্জায় আজকাল যুক্ত হয়েছে মাটির তৈরি পণ্য বা শোপিস। শুধু গৃহসজ্জায় নয়, অফিস-আদালত, রেস্টুরেন্ট, হোটেলের সৌন্দর্য বাড়াতে বাড়ছে এর চাহিদা। প্রাচীনকাল থেকেই এর ব্যবহার প্রচলিত। মাটির আসবাবের ব্যবহার প্রথম শুরু হয় চীনে। তখনকার সময়ে রাজপ্রাসাদগুলো সাজানো হতো মাটির আসবাবে। অতিথিদের উপঢৌকন হিসেবেও দেওয়া হতো মাটির তৈরি প্রাচীন এই শোপিস। এগুলোর পুরোটাই থাকত কারুকার্যময়। এ ছাড়া আস্তে আস্তে কালের বিবর্তনে বাড়তে থাকে এর ব্যবহার ও চাহিদা। আজ এর ব্যবহার প্রায় সর্বত্রই। সাধ ও সাধ্যের নিশ্চয়তায় মাটির পণ্য অনন্য। পরিবেশবান্ধব এ পণ্যগুলো শুধু দৃষ্টিনন্দনই নয়, মজবুত ও দীর্ঘস্থায়ী।

মাটির তৈরি পণ্যের মধ্যে রয়েছে ফুলদানি, ওয়ালমেট, ঝাড়বাতি, দরজার ঝুনঝুনি, সিগারেট এস্ট্রে, মগ, প্লেট, কলমদানি, ব্যাংক, ছোট টুল, হেলানচেয়ারসহ নানা সামগ্রী। এগুলোর মধ্যে মাটির ফুলদানি, ওয়ালমেট, ব্যাংক ও কলমদানির চাহিদা সবচে বেশি। মাটির বড় ফুলদানি রাখা যায় ঘরের যেকোনো কোনায়। আর ছোটগুলো রাখা যায় টেবিল, ওয়ারড্রপ, টি টেবিল বা ড্রেসিং টেবিলের ওপরও। ফুলদানিতে তাজা কিংবা কৃত্রিম ফুল যাই সাজিয়ে রাখা হোক না কেন এতে ঘরের সৌন্দর্য বাড়ে বহুগুণে। যেকোনো ধরনের পড়ার টেবিলে মাটির কলমদানি মানিয়ে যায় খুব সহজেই। দেয়ালে টানানো যেতে পারে বিভিন্ন দৃশ্যসংবলিত মাটির ওয়ালমেট। রবীন্দ্রনাথ, নজরুল, কলসি কাঁখে গাঁয়ের বধূ, গরুরগাড়িসহ গ্রাম-বাংলার নানা দৃশ্যই ঘরের শোভা বৃদ্ধি করে খুব সহজেই। এ ছাড়া খাবার টেবিলে চায়ের মগ, খুচরা পয়সা জমাতে মাটির ব্যাংক বা শোকেসে কিছু শোপিস রাখা যায় খুব অল্প টাকা খরচ করেই।
এঁটেল মাটির তৈরি মাটির এ শোপিসগুলো। প্রথমেই উৎকৃষ্টমানের এঁটেল মাটি সংগ্রহ করে তা আনা হয় কারখানায়। এরপর পানি দিয়ে এগুলো ভিজিয়ে নরম করে বিশেষভাবে আলাদা আলাদা দানা করা হয়। এরপর বৈদ্যুতিক মোটরের সাহায্যে ডাইসের মাধ্যমে মাটি দেওয়া হয়। নির্দিষ্ট সময়বাদে এগুলো আবার বের করা হয় ডাইস থেকে। এরপর নারকেলের পাতার সাহায্যে হাতের মাধ্যমে কেটে কেটে এর মধ্যে ছাপকৃত নকশা তোলা হয়। নকশাগুলো কাগজে আঁকা থাকে। সেগুলোকে অনুসরণ করে তারপর এগুলোর ওপর ছাপানো হয়। শুকানোর জন্য এরপর হিটারে হিট দেওয়া হয়। এগুলো শক্ত হলে বের করে আনা হয়। কেউ আবার শুকাতে রোদেও দেয়। সে ক্ষেত্রে শুকাতে সময় লাগে দুই দিন। শুকিয়ে গেলে নকশার ওপরে রং করা হয়। রং করার পর আবার রৌদ্রে শুকাতে দেওয়া হয়। রঙের সঙ্গে মিশানো হয় নারকেলের পানি। এটি বিশেষভাবে রঙকে ফুটিয়ে তোলে। সাদা, লাল, হলুদ, গোল্ডেন বিভিন্ন রঙের মাটির তৈজস বিক্রির জন্য প্রস্তুত করা হয়। তবে এখন মাটির পণ্যে কালো রঙের ব্যবহার বেশ লক্ষণীয়। খুব সাবধানে করতে হয় মাটির পাত্রের আদল দান, নকশা ও আঁকিবুকির কাজ। কারণ এগুলো একটু এ দিক-ও দিক হলেই নষ্ট হয়ে যেতে পারে। এমনকি একটু অসতর্ক হলে আশঙ্কা থাকে ভেঙে যাওয়ার।
দরদাম
মাটির তৈরি তৈজসের দাম পণ্যের আকার ও মানের ওপর নির্ভর করে। এর মধ্যে ফুলদানি ৩০০-১৫০০ টাকা, ওয়ালমেট ২০০-১০০০ টাকা, শোপিস ৫০-৬০০ টাকা, মুখোশ ১০০-৭০০০ টাকা, থালা ৫০-৩০০ টাকা, মগ ৩০-২০০ টাকা, এস্ট্রে ৩০-১৫০ টাকা, ছোট টুল ১৫০-৫০০ টাকার মধ্যে হয়ে থাকে। তবে প্রতিবছর বৈশাখ এলেই চাহিদার সঙ্গে বাড়ে দামও।

প্রাপ্তিস্থান
ঢাকার বিভিন্ন জায়গায় মাটির তৈরি তৈজস পাওয়া যায়। এর মধ্যে নিউমার্কেট, ধানমন্ডি, কলাবাগান, মিরপুর-২, আজিজ সুপার মার্কেট ছাড়াও রয়েছে দেশের বিভিন্ন ক্রাফটের দোকান।
মো. ওয়ালিউর রহমান (অভি)
প্রকাশকাল: বন্ধন ৫০ তম সংখ্যা, জুন ২০১৪