নান্দনিক শোপিস

বান্ধবীর বাসা ধানমন্ডিতে। সেখানে একদিন বেড়াতে গিয়ে আমার চমৎকার  অনুভূতি হলো। ওদের বাসায় ঢোকার মুহূর্ত থেকে বের হয়ে আসাঅবধি যা দেখলাম এক কথায় তা অসাধারণ। গেস্ট রুমে বসে থেকেই দেখছিলাম শোপিস দিয়ে চমৎকারভাবে সাজানো রুমগুলোর সৌন্দর্য। এতো সুন্দর সুন্দর শোপিস দিয়ে পুরো ঘর সাজানো, দেখলেই যে কারো চোখ জুড়িয়ে যাবে।

সারাদিনের কর্মব্যস্ততা শেষে সবাই ফেরে ভালোবাসার আপন ঘরে। আর সেই ঘরটি যদি থাকে মনের মতো করে সাজানো, তাহলে তো কথায় নেই। ঘরে সুন্দর ও চমকপ্রদ বিভিন্ন ধরনের ফার্নিচারের পাশাপাশি নান্দনিক সব শোপিস থাকলে ঘরটি রূপ নেয় অন্যরকম সৌন্দর্যের। আর তাই রুচিশীল মানুষের ঘর সাজাতে শোপিস এখন প্রয়োজনীয় অনুষঙ্গ। নিম্রবিত্ত, মধ্যবিত্ত কিংবা উচ্চবিত্ত সব পরিবারেই থাকে কাঠ, বাঁশ, বেত, লোহা, রড কিংবা লেদারের কম বেশি ফার্নিচার। এর সাথে মনের মতো করে ঘর সাজাতে যুক্ত হয়েছে চমৎকার ও শৈল্পিক সব শোপিস। যারা তাদের ঘরটি শোপিস দিয়ে সাজাতে চান মনের মতো করে; কিন্তু ভেবে পাচ্ছেন না কোথায় কোন শোপিসটা রাখবেন, কোথায় কিনতে পাওয়া যাবে কিংবা এর দরদাম বা কেমন ? তাদের জন্যই এ আয়োজন ।

আগে মানুষ ভাবতো শোপিস শুধু শোকেচেই মানায়। তাই তারা তাদের শখের ছোট ছোট শোপিসগুলো সাজিয়ে রাখত শুধু শোকেচেই। কিন্তু এখন সে ভাবনায় পরিবর্তন এসেছে। পরিবর্তন হয়েছে মানুষের রুচির। এখন ঘরের সব জায়গাতেই রাখা যাবে পছন্দের শোপিস। আপনার ঘরে ঢুকতেই প্রথমেই যে জায়গাটা পার হতে হয় সেখানে রাখা যেতে পারে ফুলের টব অথবা বড় আকৃতির কোনো শোপিস।

ড্রয়িং রুমে 

বাসায় যে কেউ আসলেই প্রথমে যে জায়গাটাতে বসে সেটা বাসার ড্রয়িং রুম। তাই এ রুম সাজাতে ব্যবহার করতে পারেন মাঝারি কিংবা একটু বড় ধরনের শোপিস। সেখানে যদি কাঠের সোফা কিংবা অন্য কোনো ফার্নিচার থাকে তবে কাঠের তৈরি শোপিসই এখানে মানাবে ভালো। আর যদি ফার্নিচারগুলো বেতের হয় তবে বাঁশ অথবা বেতের তৈরি যে কোনো ধরনের শোপিস রাখা যেতে পারে। তবে এখানে আপনাকে মাথায় রাখতে হবে ঘরের সাইজ। যদি ঘরটি বড় হয়, তবে সেখানে বড় ধরনের শোপিস আর যদি ছোট হয় তবে একটু ছোট শোপিস রাখলে মানাবে বেশ।

কিছু সাধারণ, কিছু মডার্ন, ভিক্টোরিয়ান কারুকাজখচিত অথবা রোমান্স স্টাইলের শোপিস ড্রয়িং রুমে রাখা যেতে পারে। মূর্তি, কাঠের পাটাতনবিশিষ্ট শোপিস, বাঁশ কিংবা বেতের শোপিসগুলো রাখলেও মন্দ লাগবে না।

সেন্টার টেবিলে শোপিস

রুমের সেন্টার টেবিলটি যদি হয় কাঁচের তবে সেখানে রাখতে হবে একটু হালকা এবং ছোট সাইজের শোপিস। আর যদি টেবিলটি হয় কাঠের কিংবা স্টিলের তবে আপনি চাইলে নিজস্ব ঐতিহ্যকে ধরে রাখতে ব্যবহার করতে পারেন মাটির তৈরি বৈচিত্র্যময় সব শোপিস। একইভাবে মানানসই শোপিস ব্যবহার করতে পারেন আপনার সাইড টেবিলটিতেও।

ডাইনিং রুমে শোপিস

ডাইনিং রুমে খুব বেশি শোপিস না রাখাই ভালো। তবে বেসিনের পাশে থাকতে পারে ফুলের শোপিস, সাবান রাখার কেসটাও হতে পারে কোােন শো-পিচের।

শোপিস যখন বেডরুমের

সাধারণত বেডরুমে থাকে কাঠের, স্টিলের অথবা বেতের তৈরি খাট। আবার কেউ বা থাকেন ফ্লোরিং করে। ফার্নিচারের ধরন অনুযায়ী ব্যবহার করা যেতে পারে মানানসই শোপিস। ড্রেসিং টেবিলে থাকতে পারে জুয়েলারি বক্স, লিপস্টিক হোল্ডার অথবা চিরুনিদানি। এগুলো থাকতে পারে বিভিন্ন শোপিসের আদলে। বেডরুমে এলসিডি টেলিভিশন থাকলে যে পাশে টেলিভিশনটি রাখা হয়েছে তার দেয়ালে কাঠের সেলফে রাখা যেতে পারে লেদার, মাটি, বাঁশ কিংবা কাঠের তৈরি শোপিস। এখানে ঝুলন্ত ফুল রাখলেও মন্দ হয় না। আবার টেলিভিশন কেবিনেট বানিয়ে তার নিচে ছোট থেকে বড় কিংবা বড় থেকে ছোট করে দৃষ্টিনন্দন শোপিসগুলো সাজিয়ে রাখা যায়।

গেস্ট রুমের শোপিস

বাঙালি মাত্রই অতিথিপরায়ন। আর তাই অতিথি অ্যাপায়নের রুমগুলো হয় সুন্দর এবং নানান রঙের। গেস্ট রুমে তাই রাখা যেতে পারে হাস্যোজ্জ্বল বা মজার কোনো শোপিস । যাতে আপনার অতিথি এ রুমে এলেই পেতে পারে বাড়তি আনন্দ।

বাচ্চার রুমের শোপিস

বাচ্চাদের রুমে শোপিস ব্যবহারের ক্ষেত্রে যে বিষয়টি সর্বপ্রথম খেয়াল রাখতে হবে, তা হচ্ছে বাচ্চাটি ছেলে না মেয়ে। ছেলে হলে স্পাইডারম্যান আবার মেয়ে হলে বার্বি কার্টুনের এর শোপিস দেয়া যেতে পারে। তবে এখানে তাদের পছন্দ ও রুচিকে প্রাধান্য দেয়াই উচিত। বাচ্চাদের শোপিসের ক্ষেত্রে লেদার এবং কাঠের তৈরি শোপিসই ভালো। কেননা এগুলো সহজে ভাঙ্গে বা নষ্ট হয়  না।

রান্নাঘরে শোপিস

কৃত্রিমভাবে তৈরি প্লাস্টিকের মরিচ বা এ ধরনের অন্য যে কোনো সবজির শোপিস রাখা যেতে পারে রান্নাঘরে। 

গ্রামের ঘরগুলোর শোপিস

শোপিস রাখার জন্য যে শুধু দালান ঘরই লাগবে এমন কোন কথা নেই। চিরায়িত বাংলার ঐতিহ্যকে ধরে রাখতে গ্রামের ঘরগুলোতে ব্যবহার করতে পারে একতারা, মাথালসহ বিভিন্ন শোপিস। থাকতে পারে বিভিন্ন কাসা বা পিতলের তৈজসপত্র।

অফিসে শোপিস

এমডির কেবিনেট

অফিসে এমন শোপিস রাখা উচিত নয় যেগুলো ঘরোয়া ভাব এনে দেয়। এখানে লেদারের তৈরি পেনহোল্ডার, ফটো-ফ্রেম রাখা যেতে পারে। এমন কিছু ফুল থাকতে পারে যেগুলো কর্পোরেট এনভারনমেন্টালে মানানসই। ক্রিস্টাল মডেল ও কাঁচের বোল রাখলেও মন্দ লাগবে না। 

রিসিপশনে শোপিস

আপনার ব্যবসার ধরন অনুযায়ী এমন কিছু শোপিস রাখতে পারেন যেগুলো আপনার ব্যবসাকেই রিপ্রেজেন্ট করে। আবার ধরুন অফিসে ঢুকতেই কিছুটা খোলা জায়গা রয়েছে সেখানেও রাখা যেতে পারে কিছু শোপিস।

উপহার হিসেবে শোপিস

সাধ আছে কিন্তু সাধ্য নেই। এমন অনেক শোপিস রয়েছে যেগুলো দেখলেই কিনতে ইচ্ছে করে। কিন্তু কেনা আর হয়ে ওঠে না। তাই বিয়ে, জন্মদিনসহ যে কোনো ধরনের উপলক্ষ যেমন- বন্ধু দিবস, ভালোবাসা দিবস, মা দিবস, বাবা দিবস ইত্যাদি দিনে উপহার হিসেবে শোপিস দেয়া যেতে পারে। এক্ষেত্রে আপনার প্রিয় মানুষটির রুচি কিংবা পছন্দ অনুযায়ী দিতে পারেন শোপিস। বাবা-মা, কিংবা দাদা-দাদিকে এমন কিছু শোপিস দেয়া যেতে পারে যেগুলো ফেলে আসা স্মৃতিকে উস্কে দেবে। 

পাওয়া যাবে যেখানে

খুব দামি শোপিস কিনতে চাইলে অটবি, হাতিল, ফিদার টাচ, আইডিয়াস, যাত্রা কিংবা সোর্স এ যাওয়া যেতে পারে। আবার নিউমার্কেট ও আজিজ সুপার মার্কেটগুলোতে কমবেশি দামের ছোট বড় সবধরনের শোপিস পাওয়া যাবে।

শোপিসের যত্নআত্তি

শোপিসের ধরন অনুযায়ী যত্ন নিতে হয়। লেবু, হালকা সাবানের পানি, শুধু পানি কিংবা শুকনো কাপড় দিয়ে মুছে যত্ন নিতে হবে আপনার প্রিয় শোপিসটির। 

শোপিস দেখেই পছন্দ হলেই কেনা উচিত না; কারণ সব শোপিস সব জায়গায় মানায় না। তাই আপনার ঘরে কোন শোপিসটি ভালো লাগবে সেদিকে খেয়াল রাখুন। এক্ষেত্রে আপনি নিজে বুঝতে না পারলে এক্সপার্ট ইন্টেরিয়র ডিজাইনারের সহায়তা নিন।

একটু ভেবে চিন্তে নির্ধারণ করলে শোপিস আপনার ঘর অফিস বা রেস্টুরেন্টকে করবে আরো আকর্ষণীয়।

-তাসমিয়া আফরিন

প্রকাশকাল: বন্ধন ২৪ তম সংখ্যা, এপ্রিল ২০১২

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top