যেকোনো দেশের উন্নয়নের পূর্বশর্ত সে দেশের উন্নত যোগাযোগব্যবস্থা। সারা দেশে সুষ্ঠু এবং সমন্বিত যোগাযোগব্যবস্থা গড়ে তোলার লক্ষ্যে যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের সেতু বিভাগের অধীন বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ (বাসেক) সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। তারই অংশ হিসেবে সর্বপ্রথম দেশের উত্তর ও উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলকে রাজধানী ঢাকা তথা দেশের পূর্বাঞ্চলকে বিভক্তকারী প্রমত্তা যমুনা নদীর ওপর ৪.৮০ কিলেমিটার দীর্ঘ বঙ্গবন্ধু সেতু নির্মাণ করা হয়। দেশের পূর্বাঞ্চলকে রাজধানীর সঙ্গে সংযোগের উদ্দেশ্যে ধলেশ্বরী নদীর ওপর ষষ্ঠ বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সেতু বা মুক্তারপুর সেতু বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ (বাসেক)-এর আরও একটি উল্লেখযোগ্য নির্মাণ। বর্তমানে দেশের দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের বিশাল জনগোষ্ঠীর রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশের সঙ্গে যোগাযোগের পথ সুগম করতে বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ মুন্সিগঞ্জের মাওয়া ও শরীয়তপুর জেলার জাজিরা পয়েন্টে পদ্মা নদীর ওপর ৬.১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ পদ্মা বহুমুখী সেতু নির্মাণের কাজ দ্রুত সম্পন্ন করতে নিরন্তর চেষ্টা করে যাচ্ছে। এ ছাড়া পাটুরিয়া-গোয়ালন্দ পয়েন্টে দ্বিতীয় পদ্মা সেতু নির্মাণের জন্য ডিসিপি (Development Project Proforma) অনুমোদনের প্রস্তাব ইতিমধ্যেই পরিকল্পনা কমিশনে প্রেরণ করা হয়েছে। প্রস্তাবিত পিরোজপুর-ঝালকাঠি সড়কে কচা নদীর ওপর বেকুটিয়া সেতু নির্মাণ, কর্ণফুলী নদীর নিচ দিয়ে এবং ঢাকা শহরের জাহাঙ্গীর গেট থেকে রোকেয়া সরণি পর্যন্ত টানেল নির্মাণের কাজের সম্ভাব্যতা সমীক্ষা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
রাজধানী ঢাকার ভয়াবহ যানজট সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণের ব্যাপারে বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ এবং ইতালিয়ান থাই ডেভেলপমেন্ট পাবলিক কোম্পানি লিমিটেডের সঙ্গে ইতিমধ্যে Concession চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে এবং এর নির্মাণকাজ দ্রুত সম্পন্ন করে বর্তমান সরকারের মেয়াদকালেই তা বাস্তবায়ন করার সর্বাত্মক চেষ্টা চলছে।

ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ
ঢাকা মহানগরের বিদ্যমান যাটজট নিরসনকল্পে সেতু বিভাগের অধীন বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের তত্ত্বাবধানে পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপ পদ্ধতিতে নির্মিতব্য ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে পিপিপি প্রকল্পটি হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে শুরু হয়ে কুড়িল-বনানী-মহাখালী-তেজগাঁও-সাতরাস্তা-মগবাজার রেল করিডর-খিলগাঁও-কমলাপুর- গোলাপবাগ হয়ে ঢাকা চট্টগ্রাম রোড (কুতুবখালীর নিকটে) পর্যন্ত যাবে।
এতে দুইটি এলিভেটেড লিংক রয়েছে, যার প্রথমটি মানিক মিয়া এভিনিউ থেকে শুরু হয়ে তেজগাঁও রেলক্রসিং পর্যন্ত এবং দ্বিতীয়টি পলাশী থেকে শুরু হয়ে কাঁটাবন-হাতিরপুল হয়ে মগবাজার রেল ক্রসিং পর্যন্ত যাবে। দুইটি এলিভেটেড লিংকসহ এক্সপ্রেসওয়ের দৈর্ঘ্য ২৬ কিলোমিটার তবে এতে সংযুক্ত ৩৫টি র্যাম্পসহ এক্সপ্রেসওয়ের মোট দৈর্ঘ্য ৩১ কিলোমিটার। প্রকল্পের নির্বাচিত বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান ইতালিয়ান থাই ডেভেলপমেন্ট পাবলিক কোম্পানি লিমিটেডের সঙ্গে Concession Agreement স্বাক্ষরিত হয়।
স্বাক্ষরিত চুক্তিতে প্রকল্পের নির্মাণকালীন সময় ৪২ মাস এবং Concession Period (নির্মাণকালীন সময়সহ) ২৫ বছর নির্ধারিত হয়েছে। চুক্তি স্বাক্ষরের ছয় মাসের মধ্যে কাজ শুরু করার কথা থাকলেও মাত্র সাড়ে তিন মাসের মধ্যে প্রকল্পের নির্মাণকাজ শুরু হয়েছে। ৩০ এপ্রিল, ২০১১ তারিখে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকল্পের গ্রাউন্ড ব্রেকিংয়ের শুভ সূচনা করা হয়।
Concession Agreement অনুযায়ী বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানকে তিন ধাপে ভূমি হস্তান্তরের কথা রয়েছে, যেখানে প্রথম ধাপে মোট জমির ৩০ শতাংশ, দ্বিতীয় ধাপে ৩৫ শতাংশ এবং তৃতীয় ধাপে বাকি ৩৫ শতাংশ হস্তান্তর করতে হবে। প্রকল্পের ভূমি অধিগ্রহণ প্রস্তাব প্রস্তুত করার জন্য বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়কে নিয়োগ করা হলে তারা ওই প্রকল্পের ভূমি অধিগ্রহণ প্রস্তাব (হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে কমলাপুর পর্যন্ত) সম্পন্ন করে বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ বরাবর জমা দিয়েছে, যা কেন্দ্রীয় ভূমি বরাদ্দ কমিটি কর্তৃক অনুমোদন পেয়েছে। ঢাকা জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে ইতিমধ্যে ৩ ধারার নোটিশ জারি করা হয়েছে। বর্তমান অবস্থায় জমি অধিগ্রহণের নিমিত্তে প্রস্তাবিত ভূমি ও তদস্থিত কাঠামো এবং গাছপালা সরেজমিনে যৌথভাবে তদন্তকাজ চলছে।

উল্লেখ্য, প্রকল্পের ভূমি অধিগ্রহণের প্রক্রিয়াকে সহজতর করার জন্য বঙ্গবন্ধু সেতু এবং পদ্মা বহুমুখী সেতু নির্মাণ প্রকল্পের অভিজ্ঞতার আলোকে ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে পিপিপি প্রকল্পের ভূমি অধিগ্রহণ বিল, ২০১১ গত ২৭ জুন, ২০১১ তারিখে জাতীয় সংসদে পাস হয়েছে।
ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের জন্য প্রস্তাবটি রুট এলাইনমেন্টের বেশির ভাগ অংশ বাংলাদেশ রেলওয়ের নিজস্ব সম্পত্তি হওয়ায় ওই জমি বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ বরাবরে হস্তান্তরের লক্ষ্যে বাংলাদেশ রেলওয়ের সঙ্গে ইতিমধ্যে Memorandum of Understanding (MOU) এবং License Agreement স্বাক্ষরিত হয়েছে।
প্রকল্পের বেশির ভাগ অংশে সরকারি জমি (বাংলাদেশ রেলওয়ের নিজস্ব) ব্যবহারের কারণে ভূমি অধিগ্রহণের পরিমাণ তুলনামূলকভাবে কম হবে এবং স্বল্প সময়ের মধ্যে ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্প বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে। ২০১৩ সালের ডিসেম্বর মাসের মধ্যে প্রকল্পের নির্মাণকাজ সম্পন্ন করার ব্যাপারে সেতু বিভাগ প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে ঢাকা শহরের বর্তমান অসহনীয় যানজট বহুলাংশে কমবে বলে আশা করা যায়।
পদ্মা বহুমুখী সেতু
বর্তমান সরকার মাওয়া-জাজিরা পয়েন্টে প্রমত্তা পদ্মা নদীর ওপর পদ্মা বহুমুখী সেতু নির্মাণ প্রকল্প বাস্তবায়নের সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এ সরকার দায়িত্ব গ্রহণের মাত্র ১৩ দিনের মাথায় ১৯ জানুয়ারি ২০০৯ অনুষ্ঠিত সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা নিয়োগের প্রস্তাব অনুমোদিত হয়। উল্লেখ্য, ২০০৫ সালে পরিচালিত সম্ভাব্যতা সমীক্ষার ভিত্তিতে প্রণীত ৫.৫৮ কিলোমিটার দীর্ঘ ও ১.৪৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ব্যয়সংবলিত প্রকল্পের ডিপিপি ২০০৭ সালের ২০ আগস্ট একনেক কর্তৃক অনুমোদন লাভ করে।
পরামর্শক প্রতিষ্ঠান কর্তৃক প্রণীত ডিজাইন অনুযায়ী নদী ভাঙনের কারণে সেতুর দৈর্ঘ্য বৃদ্ধি পেয়ে ৬.১৬ কিলোমিটার উন্নীত, সেতুর নির্মাণশৈলী পরিবর্তন ও লোডিং ক্যাপাসিটি বৃদ্ধি অন্তর্ভুক্তিসহ সেতু বাস্তবায়নে গৃহীত Accelerated Programme অনুযায়ী ইতিমধ্যে মূল সেতু, নদীশাসন, সেতুর উভয় প্রান্তের সংযোগ সড়ক এবং ব্রিজ অ্যান্ড ফ্যাসালিটিজের বিস্তারিত ডিজাইন চূড়ান্ত করা হয়েছে। এই ডিজাইন অনুযায়ী প্রকল্প ব্যয় দাঁড়িয়েছে ২০,৫০৭.২০ কোটি টাকা বা ২৯৭২.০৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। এর মধ্যে জিওবি ৪,২৫৭.৬৮ কোটি টাকা বা ৬১৭.০৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলার এবং অবশিষ্ট ব্যয় ১৬,২৪৯.৫২ কোটি টাকা বা ২৩৫৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার উন্নয়ন সহযোগী সংস্থাসমূহের অর্থায়নে নির্বাহ করা হবে।

প্রকল্পের সংশোধিত ডিপিপি অনুযায়ী, পদ্মা বহুমুখী সেতু প্রকল্পের আওতায় মূল সেতু ৬.১৬ কিলোমিটার, রোড ভায়াডাক্ট ৩.৮ কিলোমিটার, রেল ভায়াডাক্ট ৫.৩২ কিলোমিচার, ১৪ কিলোমিটার, নদীশাসন এবং ১২ কিলোমিটার সংযোগ সড়ক নির্মাণ করা হবে।
পদ্মা বহুমুখী সেতু প্রকল্পের চূড়ান্ত দরপত্র প্রক্রিয়া
পদ্মা বহুমুখী সেতু প্রকল্পের মূল সেতু নির্মাণের জন্য দ্বিতীয় পর্যায়ে প্রাকযোগ্যতা দরপত্র আহ্বান করা হলে মোট ১১টি প্রতিষ্ঠান অংশগ্রহণ করে এবং তাদের মধ্য থেকে পাঁচটি প্রতিষ্ঠান প্রাকযোগ্য বিবেচিত হয়। এরা হলো (নামের প্রথম পক্ষ অনুসারে) :
1. M/s. China Major Bridge Engineering Co. Ltd. (People’s Republic of China)
2. M/S. China Communications Construction Company Ltd.
(People’s Republic of China)
3. M/S. Daelim & BAM-VCI Joint Operation (Republic of Korea)
4. M/S. Samsung C&T Corporation (Republic of Korea)
5. M/S. Vinci-HCC Joint Venture (India)
সেতু বিভাগ প্রাকযোগ্য প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে চূড়ান্ত দরপত্র প্রক্রিয়া শুরু করেছে। মূল সেতু নির্মাণের চূড়ান্ত দরপত্র আহ্বানের মধ্য দিয়ে পদ্মা বহুমুখী সেতু নির্মাণে সেতু বিভাগ আরও এক ধাপ এগিয়ে গেল।
ভূমি অধিগ্রহণ ও পুনর্বাসন
পদ্মা বহুমুখী সেতু নির্মাণের জন্য ভূমি অধিগ্রহণ এবং হুকুমদখলের কাজ প্রায় শেষের পথে। অধিকাংশ ক্ষতিগ্রস্ত জমির মালিকদের ইতিমধ্যে ক্ষতিপূরণও দেওয়া হয়েছে। ভূমি অধিগ্রহণ ও পুনর্বাসন বিষয়ে মুন্সিগঞ্জ, মাদারীপুর ও শরীয়তপুর জেলার জেলা প্রশাসকেরা, সেতু বিভাগের কর্মকর্তারা, পুনর্বাসনের কাজে নিয়োজিত সংস্থা সিসিডিবিসহ সংশ্লিষ্ট অন্যান্য কর্মকর্তা এবং স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিদের সমন্বয়ে সেতু বিভাগে অনুষ্ঠিত সভায় প্রকৃত জমির মালিক যাতে তার ন্যায্য পাওনা পায়, সে দিকে লক্ষ রেখে ক্ষতিপূরণ প্রদানের জন্য সংশ্লিষ্ট সবাইকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। অসাধু লোকজন যাতে ফায়দা লুটতে না পারে সে দিকে লক্ষ রেখে ক্ষতিপূরণ প্রদানের বিষয়েও সভায় পরামর্শ দেওয়া হয়।

পদ্মা বহুমুখী সেতুর সুবিধাসমূহ
ক) ৪ (চার) লেনবিশিষ্ট সড়ক যোগাযোগব্যবস্থা
খ) রেল যোগাযোগব্যবস্থা
গ) ৪০০ কে ভি বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইন
ঘ) ৩০ ইঞ্চি ব্যাসবিশিষ্ট গ্যাস সঞ্চালন পাইপলাইন এবং
ঙ) টেলিযোগাযোগব্যবস্থাসহ ইস্পাতের তৈরি দোতলা সেতু।
পদ্মা বহুমুখী সেতুর আনুষঙ্গিক তথ্য
সেতুর দৈর্ঘ্য : ৬.১৫ কিলোমিটার
সেতুর প্রস্থ : ২৫ মিটার
সেতুর পাইল সংখ্যা : ২৬৮ টি
নদীশাসন কাজ : ১৪,০০ কিলোমিটার (উভয় পার্শ্বে মিলিয়ে)
সংযোগ সড়কের দৈর্ঘ্য : ১২.৫০ কিলোমিটার (উভয় পার্শ্বে মিলিয়ে)
প্রকল্পের EIRR, BCR : ১৪.৮০
বঙ্গবন্ধু সেতু
টোল আদায়ব্যবস্থার আধুনিকায়ন
প্রতিযোগিতামূলক দরপত্র প্রক্রিয়ার মাধ্যমে কানাডার International Road Dynamics Inc. (IRD)-কে বঙ্গবন্ধু সেতুর টোল আদায়ব্যবস্থার আধুনিকায়নের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। আইআরডি ইতিমধ্যে টোল আদায়ব্যবস্থা আধুনিকায়ন করেছে। নতুন ব্যবস্থায় বঙ্গবন্ধু সেতুর একটি লেন দিয়ে প্রিপেইড কার্ড পদ্ধতির মাধ্যমে টোল আদায় করা যাবে। এই ব্যবস্থায় টোল প্রদানের জন্য গাড়ির চালকদের টোল আদায় বুথের সামনে থামতে হবে না। তারা একটি কার্ডরিডার মেশিনের সামনে তাদের প্রিপেইড কার্ডটি প্রদর্শন করে টোল প্লাজা অতিক্রম করতে পারবেন। এই প্রক্রিয়ায় সময় যেমন কম লাগবে, তেমনি টোল আদায় কার্যক্রমের স্বচ্ছতা বাড়বে। নতুন এই পদ্ধতিটি অতি শিগগিরই চালু হবে। এ ছাড়া টোল আদায় ব্যবস্থাপনার আধুনিকায়নের অংশ হিসেবে বঙ্গবন্ধু সেতুর সার্বিক ভিডিও সার্ভেল্যান্সেরও উন্নয়ন ঘটানো হয়েছে। নতুন স্থাপিত ভিডিও ক্যামেরাসমূহ দিয়ে বনানীতে অবস্থিত সেতু বিভাগের প্রধান কার্যালয় থেকেই টোল প্লাজায় টোল আদায় কার্যক্রম পুরো পর্যবেক্ষণ ও মনিটরিং করা যাবে। ইতিমধ্যে এ ব্যবস্থাটি সফলভাবে স্থাপন করা হয়েছে।

সৌন্দর্যবর্ধন কার্যক্রম
বঙ্গবন্ধু সেতু একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় স্থাপনা। এ সেতু এক দিকে যেমন রাজধানীর সঙ্গে উত্তরবঙ্গের সরাসরি যোগাযোগ স্থাপনের মাধ্যমে সার্বিক অর্থনৈতিক উন্নয়ন ত্বরান্বিত করেছে, তেমনি সেতুর দুই প্রান্তের বিস্তীর্ণ এলাকা দর্শনার্থীদের কাছে ভ্রমণ ও বিনোদনের স্থানে পরিণত হয়েছে। বঙ্গবন্ধু সেতু এলাকাকে আরও সুন্দর ও আকর্ষণীয় করার মাধ্যমে আন্তর্জাতিক মানের পর্যটনকেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলার কার্যক্রমের অংশ হিসেবে অস্ট্রেলিয়ার ACE Consultant Ltd. প্রতিষ্ঠানকে প্রতিযোগিতামূলক দরপত্রের ভিত্তিতে বঙ্গবন্ধু সেতুর সৌন্দর্যবর্ধন কার্যক্রমের পরামর্শক নিয়োগ করা হয়। তারা ইতিমধ্যে সৌন্দর্যবর্ধনের জন্য একটি বিস্তারিত কর্মপরিকল্পনা পেশ করেছে, যা সেতু বিভাগের বিবেচনাধীন। সমন্বিত এ পরিকল্পনাটি বাস্তবায়িত হলে বঙ্গবন্ধু সেতু একটি আন্তর্জাতিক মানের পর্যটনকেন্দ্র হিসেবে গড়ে উঠবে বলে আশা করা যায়।
সেতুর টোল আদায়
২৩ জুন, ১৯৯৮ সালে বঙ্গবন্ধু সেতু শুভ উদ্বোধনের সময়কাল থেকে এ অবধি সেতুর টোল কালেকশন আশানুরূপহারে বেড়েছে। আদায়কৃত টোলের মোট পরিমাণ বৃদ্ধির এ ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকলে বঙ্গবন্ধু সেতু নির্মাণে যে পরিমাণ ঋণ গ্রহণ করা হয়েছে, তা নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই পরিশোধ করা সম্ভব হবে।
অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ কার্যক্রম
ঢাকা-আশুলিয়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ
ঢাকা শহরের উত্তরাংশ তথা সাভার ও ইপিজেড শিল্প এলাকার যানজট নিরসনের লক্ষ্যে সেতু বিভাগের অধীন বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ ঢাকা-আশুলিয়া সড়কের পাশ দিয়ে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণের কার্যক্রম হাতে নিয়েছে। প্রকল্পটি ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পের ন্যায় পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপ (পিপিপি) পদ্ধতিতে বাস্তবায়ন করা হবে। ইতিমধ্যে প্রকল্পের প্রাক-সম্ভাব্যতা সমীক্ষা (Pre-Feasibility Study) করার জন্য বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) দায়িত্ব নিয়েছে। প্রকল্পের রুট অ্যালাইনমেন্ট হলো হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর-আব্দুল্লাপুর-আশুলিয়া-ইপিজেড-চন্দ্রা মোড় (জাতীয় স্মৃতিসৌধ সাভারে সংযুক্ত হবে) ইতিমধ্যে প্রকল্পের Investor’s Prequalification নোটিশ জারি করা হয়েছে।
গুলিস্তান গোলাপ শাহ্ মাজার থেকে দ্বিতীয় বুড়িগঙ্গা সেতু পর্যন্ত এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ
বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের তত্ত্বাবধানে পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপ (পিপিপি) পদ্ধতিতে গুলিস্তান গোলাপ শাহ্ মাজার থেকে দ্বিতীয় বুড়িগঙ্গা সেতু পর্যন্ত এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মিত হবে। সেতু বিভাগ থেকে এ সংক্রান্ত একটি সারসংক্ষেপ প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদন লাভ করেছে। প্রকল্পটি যোগাযোগ মন্ত্রণালয় কর্তৃক প্রণীত Strategic Transport Plan (STP)-এর সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে নির্মাণ করা হবে।
কর্ণফুলী নদীতে এবং ঢাকা শহরের জাহাঙ্গীর গেট থেকে রোকেয়া সরণি পর্যন্ত টানেল নির্মাণ
ঢাকা শহরের যানজট নিরসনের জন্য জাহাঙ্গীর গেট থেকে রোকেয়া সরণি পর্যন্ত প্রায় এক কিলোমিটার দীর্ঘ এবং চট্টগ্রাম শহরের এক অংশের সঙ্গে অপর অংশের যোগাযোগ স্থাপনের লক্ষ্যে কর্ণফুলী নদীর নিচ দিয়ে প্রায় দুই কিলোমিটার দীর্ঘ টানেল নির্মাণের পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। চট্টগ্রাম কর্ণফুলী নদীর তলদেশ দিয়ে টানলে নির্মাণের লক্ষ্যে সমীক্ষা কার্যক্রম পরিচালনার জন্য বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ এবং China Communication Construction Company (CCCC) Limited- Arup (Hongkong)-এর মধ্যে একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। ইতিমধ্যে পরামর্শক প্রতিষ্ঠান তাদের সমীক্ষা কার্যক্রম শুরু করেছে। তারা নয় মাসের মধ্যে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করবে। একইভাবে ঢাকা শহরের জাহাঙ্গীর গেট থেকে রোকেয়া সরণি পর্যন্ত টানেল নির্মাণের সমীক্ষা চালানোর জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত পরামর্শক প্রতিষ্ঠানও সমীক্ষা কার্যক্রম শুরু করেছে। চুক্তি অনুসারে আগামী চার মাসের মধ্যে এ টানেলটির সমীক্ষা কার্যক্রমের চূড়ান্ত ফলাফল জানা যাবে। সমীক্ষা প্রতিবেদন পাওয়ার পর এ বিষয়ে সেতু বিভাগ পরবর্তী কার্যক্রম গ্রহণ করবে।
পাটুরিয়া-গোয়ালন্দ অবস্থানে দ্বিতীয় পদ্মা সেতু নির্মাণ
সম্ভাব্য ১.৯০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ব্যয়সংবলিত প্রকল্পের চউচচ পরিকল্পনা কমিশন নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে। দ্বিতীয় পদ্মা সেতু বাস্তবায়নের লক্ষ্যে উন্নয়ন সহযোগীদের কাছ থেকে অর্থ সংগ্রহের প্রচেষ্টা চালানো হচ্ছে। দ্বিতীয় পদ্মা সেতু নির্মাণ প্রকল্পের উচ্চ অনুমোদনের জন্য পরিকল্পনা কমিশনে প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে।

পিরোজপুর-ঝালকাঠি সড়কে কচা নদীর ওপর বেকুটিয়া সেতু নির্মাণ
বরিশাল ও খুলনা বিভাগের মধ্যে সরাসরি সড়ক যোগাযোগ স্থাপনের লক্ষ্যে পিরোজপুর-ঝালকাঠি সড়কে কচা নদীর ওপর বেকুটিয়া সেতু নির্মাণের পদক্ষেপ হিসেবে সম্ভাব্যতা সমীক্ষা (Feasibility Study) চলমান আছে এবং পরামর্শক প্রতিষ্ঠান ইতিমধ্যে Inception Report দাখিল করেছে। অন্যদিকে ৪৬৫.০০ কোটি টাকা ব্যয় সংবলিত প্রকল্পের পিডিপিপি পরিকল্পনা কমিশন নীতিগতভাবে অনুমোদন করেছে। এ পরিপ্রেক্ষিতে বৈদেশিক অর্থ সংগ্রহের প্রচেষ্টা চলছে।
অন্যান্য প্রকল্প
দেশের সড়ক যোগাযোগ নেটওয়ার্ক নিরবচ্ছিন্ন করার লক্ষ্যে সেতু বিভাগের অধীনে আরও নতুন সেতু নির্মাণের পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। এসব সেতু বাস্তবায়নের পদক্ষেপ হিসেবে যেসব স্থানে সমীক্ষা পরিচালনার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। তা হলো-
- পটুয়াখালী-আমতলী-বরগুনা-কাকচইড়া সড়কে বলেশ্বর নদীর ওপর সেতু নির্মাণ
- কচুয়া-বেতাগি-পটুয়াখালী-লোহাদিয়া-কালিয়া সড়কে সেতু নির্মাণ
- লেবুখালী-দুমকী-বগা-দশমিনা-গলাচিপা-আমছাগাছি সড়কে সেতু নির্মাণ
- মেহেন্দীগঞ্জ-বরিশাল সড়কে জয়ন্তিয়া নদীর ওপর সেতু নির্মাণ
- পিরোজপুর-বাগেরহাট সড়কে খাসিয়াখালী নদীর ওপর সেতু নির্মাণ
- কুড়িগ্রাম-গাইবান্ধা-সিরাজগঞ্জ সড়কে দ্বিতীয় তিস্তা সেতু নির্মাণ
- রহমতপুর-হিজলাকক সড়কে আড়িয়াল খাঁ নদের ওপর সেতু নির্মাণ
- ভোলা বাসস্ট্যান্ড-লাহারহাট সড়কে কালাবদর নদীতে সেতু নির্মাণ
- ভবিষ্যতে প্রস্তাবিত সেতুগুলো নির্মিত হলে সারা দেশের মধ্যে সড়ক যোগাযোগ আরও সহজ ও সুগম হবে।
যোগাযোগ
বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ
সেতু ভবন, বনানী, ঢাকা।
ফোন : ৯৮৮৮৩৩৪
ফ্যাক্স : ৯৮৮৮৪১৪
ই-মেইল [email protected]
ওয়েবসাইট : www.bba.gov.bd
শামস আহমেদ
প্রকাশকাল: বন্ধন ৪০ তম সংখ্যা, আগস্ট ২০১৩