আল-মাক্তুম ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্ট

দুবাইয়ের শেখ মোহাম্মদ বিন রশিদ আল-মাক্তুম এমন একধরনের যোগাযোগ মাধ্যমের কথা ভেবেছিলেন যার প্রভাব হবে দুবাইসহ বিশ্বব্যাপী; যা অর্থনৈতিক উন্নয়নের গতিকে করবে ত্বরান্বিত। আর এই স্বপ্নের বাস্তব রূপ দিতে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় আল-মাক্তুম ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্ট নির্মাণের। তার চিন্তা ছিল নির্মাণকাজ শেষে যখন বিশ্বের সামনে এটি উন্মুক্ত হবে, তখন এটাই হবে বিশ্বের সর্ববৃহৎ এয়ারপোর্ট। এই চিন্তা শেখ রশিদ বিন সাইদ আল-মাক্তুম মৃত্যুর আগ পর্যন্ত দেখেছিলেন। যা এখন আল-মাক্তুম ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্টে রূপ নিতে যাচ্ছে। আল-মাক্তুম এয়ারপোর্টকে গড়ে তোলা হচ্ছে আন্তর্জাতিক সব ধরনের মান বজায় রেখে। যাতে এখানে যাত্রী সাধারণের জন্য আধুনিক সব সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করা যায়। নব নির্মিত এই এয়ারপোর্টের আয়তন প্রায় ৫৫ হাজার একর বা ২২০ কিলোমিটার, যার যাত্রী ধারণক্ষমতা প্রায় ১৬০ মিলিয়ন আর মালামাল ধারনক্ষমতা ১২ মিলিয়ন টন। ২০১৭ সালের মধ্যে এর সম্পূর্ণ নির্মাণকাজ সম্পন্ন হওয়ার কথা থাকলেও ২০০৭ থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত অর্থনৈতিক মন্দার কারণে নির্মাণকাজ সাময়িকভাবে স্থগিত থাকে। এর নির্মাণকাজ এখন পুনরায় দ্রুতগতিতে শুরু হলেও কবে নাগাদ শেষ হবে তা বলা কঠিন। তবে নির্মাণ প্রকৌশলীরা মনে করেন, ২০২০ সালের মধ্যে এর নির্মাণকাজ সম্পূর্ণ সম্পন্ন হবে।

রানওয়ে এবং টার্মিনাল

উড়োজাহাজ উড্ডয়নের জন্য আল-মাক্তুম এয়ারপোর্টের প্রতিটি রানওয়ের মধ্যে কমপক্ষে ৮০০ মিটার করে ফাঁকা জায়গা রয়েছে। প্রতিটি রানওয়ে দৈর্ঘ্যে প্রায় ৪ দশমিক ৫ কিলোমিটার। এয়ারপোর্টটির প্রথম রানওয়েটির নির্মাণের সময়কাল ধরা হয়েছিল ৬০০ দিন যা নির্ধারিত সময়ের আগেই সম্পন্ন হয়। আল-মাক্তুম ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্টের নির্মাণকাজ সম্পন্ন হবে ২০২০ সালের মাঝামাঝি। এতে থাকবে যাত্রীদের জন্য আধুনিক সুযোগ-সুবিধাসমৃদ্ধ চারটি টার্মিনাল। অপেক্ষাকৃত কম খরচে হলেও টার্মিনালটির নির্মাণব্যয় প্রায় ২৭ মিলিয়ন ডলার। এর নির্মাণকাজ করছে জার্মানি ও সংযুক্ত আরব আমিরাত যৌথভাবে। ২০১২ সালে প্রথম ব্যবহারের জন্য যখন টার্মিনালটি উন্মুক্ত করা হয়, তখন এটার প্রাথমিক পর্যায়ে বার্ষিক যাত্রী ধারণক্ষমতা ছিল প্রায় ৫০ লাখ বা পাঁচ মিলিয়ন। প্রয়োজনবোধে এর যাত্রী ধারণক্ষমতা সাত মিলিয়ন পর্যন্ত বাড়ানো সম্ভব।

এয়ারপোর্টের অভ্যন্তর

আল-মাক্তুম ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্টে যাত্রীদের চারটি টার্মিনালের পাশাপাশি ১৬টি কার্গো টার্মিনালও রয়েছে, যার মধ্যে শুধুমাত্র একটি কার্গো টার্মিনালের নির্মাণ শেষ হয়েছে। ১৬টি কার্গো টার্মিনালের নির্মাণকাজ সম্পন্ন হলে এর বার্ষিক ধারণক্ষমতা হবে প্রায় ১২ মিলিয়ন বা এক কোটি ২০ লাখ টনের সমপরিমান। প্রতিটি কার্গো টার্মিনালের বিস্তার ৪১ হাজার মিটার আর প্রতিটির ধারণক্ষমতা দুই লাখ টন। কিন্তু এর ধারণক্ষমতা বাড়ানো সম্ভব ছয় লাখ টন পর্যন্ত। এয়ারপোর্টের কার্গো টার্মিনাল নির্মাণে প্রায় ৭৫ মিলিয়ন ডলার খরচ হয় এবং এর ৫০ শতাংশ কাজ শেষ হয় ২০০৮ সালের মধ্যেই।

এয়ারপোর্টের পরিকাঠামো

আল-মাক্তুম ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্টের এটিসি টাওয়ারের নির্মাণকাজ এয়ারপোর্টের অবকাঠামোগত উন্নয়নে  নতুন মাইলফলক স্থাপনে সক্ষম হবে। আল-মাক্তুম ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্টটি দুবাই ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্টের সঙ্গে এক্সপ্রেস রেলওয়ে সিস্টেমে সংযুক্ত। এর ফলে দুটি বৃহৎ আকারের আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরকে একইসূত্রে গাঁথা সম্ভব। আল-মাক্তুম এয়ারপোর্টের এটিসি টাওয়ার এবং ছয় হাজার মিটারের টেকনিক্যাল ব্লকের নির্মাণকাজে আরবটেক (Arabtec) এবং মাক্স বোওয়েগি জে ভি (Max Boegi JV)-কে ২০০৭ সালে নিয়োগ করা হয়। কিন্তু এর নির্মাণকাজ এক বছর পরিত্যক্ত থাকে এবং ২০০৯ সালের মে মাসে এর নির্মাণকাজ শেষ হয়। এয়ারপোর্টে নির্মিত এটিসি টাওয়ারের প্রথম ৬০ মিটার রেইনফোর্সড কংক্রিটে নির্মিত এবং অবশিষ্টাংশ স্টিলে নির্মিত। এটিসি টাওয়ারের নির্মাণকাজ শেষ হওয়ায় বিমান চালনার ক্ষেত্রে এটি বড় ধরনের অগ্রগতি বা পদক্ষেপ বলা যায় এবং এই টাওয়ারের উন্নয়ন কর্মকান্ড প্রতিবছরই বিস্তৃত হচ্ছে। এয়ারপোর্টের অন্যান্য অবকাঠামোর নির্মাণকাজ এখনো শেষ না হলেও রয়েছে নির্মাণাধীন অবস্থায়। যেসব অবকাঠামোর নির্মাণকাজ চলছে, তার মধ্যে রয়েছে ৭৫ দশমিক ৬ মিলিয়ন ডলার ব্যয়ে নির্মিত কার্গো টার্মিনাল, ২৪৭ দশমিক ২ মিলিয়ন ডলারের এগ্রোনস এবং ট্যাক্সিওয়ে, ২৯ দশমিক ৪ মিলিয়ন ডলারের তেলের ফার্ম এবং ৩২ দশমিক ৬ মিলিয়ন ডলার ব্যয়ে নির্মিত হচ্ছে বিমান চালনার কাজে বিশেষ সাহায্য-সহযোগিতা প্রদানকারী বিশেষ প্যাকেজ ব্যবস্থা।

কর্মযজ্ঞ

আল-মাক্তুম ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্ট ২০১০ সালের ২০ জুন শুধুমাত্র একটি রানওয়ে ও কার্গো ফ্লাইট নিয়ে  যাত্রা শুরু করে। যাত্রীদের জন্য ২০১৩ সালের প্রথম দিকে প্যাসেনজার ফ্লাইট শুরু করে। ২০১০ সালের ২০ জুন এ এয়ারপোর্টের রানওয়েতে প্রথম কোনো বিমান অবতরণ করে। আমিরাত স্কাই কার্গো ৭৭৭F হংকং থেকে যাত্রা শুরু করে এর রানওয়েতে প্রথম অবতরণ করে। এই ফ্লাইটের মাধ্যমে বিমানের ট্রাফিক কন্ট্রোল রানওয়েতে বিমানের চলাচল, বিমান ও এর সঙ্গে সংযুক্ত যথাযথ নিরাপত্তাব্যবস্থা এবং আরও বিশেষ কিছু ব্যবস্থার পরীক্ষা করা হয়। আমিরাতের এই ফ্লাইটের সফল অবতরণের ফলস্বরূপ ২০১২ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি যাত্রীবাহী বিমান অবতরণের অনুমতি পায়। কিন্তু দুবাই বিমান সংস্থার মতে, এটাতে তখন শুধু ৬০ জন যাত্রীবাহী বিমান অবতরণের অনুমতি দেওয়া হতো। তাই আল-মাক্তুম ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্ট ২০১১ সালের শেষ ভাগ পর্যন্ত পুরোদমে যাত্রী বহনে প্রস্তুত ছিল না। প্রথম যাত্রীবাহী বিমান ২০১১ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি এর রানওয়ে স্পর্শ  করলেও ২০১৩ সালের ২৬ অক্টোবর আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রীবাহী বিমানের যাতায়াত শুরু হয়। নাচ এয়ার (Nas Air) এবং Wizz Air নামক দুইটি বিমান নিয়ে এই যাত্রা শুরু হয়। কিন্তু বর্তমানে বিভিন্ন বিমান কোম্পানির ১৫টি বিমানের সঙ্গে চুক্তি রয়েছে এখান থেকে তাদের বিমান নিয়মিত পরিচালনার জন্য।

এয়ারপোর্টের নির্মাণাধীন ব‍র্হিদৃশ্য

বিমানসংস্থা

কনডোর, গালফ্ এয়ার, জাজিরা এয়ারওয়েজ (Jazeera Airways), জেট টাইম, তাজিকস্তান এয়ার কোম্পানি (Tyrgywstan Air Company), নিয়চ এয়ার, কাতার এয়ারওয়েজ, রয়েল ব্রুনিয়া এয়ারওয়েজ, ভিআইএম এয়ারলাইনস, ডরুু অরৎ নামক বিমানগুলো চুক্তিবদ্ধ হয়ে এখান থেকে নিয়মিত যাত্রী পরিবহন করছে।

সম্মুখচিত্র

আল-মাক্তুম ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্টের কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা পরিকল্পনায় রয়েছে বিমানবন্দরটিকে বিশ্বের সর্ববৃহৎ যাত্রী ও কার্গো পরিবহনের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত করার। এটা দুবাই ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্ট থেকে প্রায় ১০ গুণ বড় এবং এর আয়তন প্রায় ২৯ বর্গকিলোমিটার বা সাত হাজার ২০০ একর।

যদি সবকিছু পরিকল্পনামতো হয়, তবে প্রতিবছর এর কার্গো ধারণক্ষমতা হবে ১২ মিলিয়ন টন এবং যাত্রী ধারণক্ষমতা হবে প্রায় ১৬০ মিলিয়ন, যা হার্টসফিল্ড জ্যাকসন আটলান্টা ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্টের চেয়েও বেশি। কেননা এটা ২০০৮ সালে প্রায় ৯০ মিলিয়ন যাত্রীকে সেবা প্রদান করে বর্তমান বিশ্বের সবচেয়ে বেশি যাত্রী ধারণক্ষমতাসম্পন্ন এয়ারপোর্ট।

আল-মাক্তুম ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্টকে ভবিষ্যতের বিমানবন্দর হিসেবে নকশা করে নির্মাণ করা হচ্ছে। যার ফলে এটা ভবিষ্যতে নির্মিত যেকোনো ধরনের এয়ারক্রাফটকে অবতরণের সুবিধা দিতে সক্ষম। এই বন্দর ২৪ ঘণ্টায় চারটি বিমান একসঙ্গে অবতরণের সুবিধা দিতে সক্ষম কোনো ধরনের ক্রম বা লাইন অনুসরণ না করেই।

পা‍র্কিং টার্মিনাল

আল-মাক্তুম ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্টে সংযুক্ত বৈশিষ্ট্য

  • পাঁচটি সমান্তরাল রানওয়ে রয়েছে, যার প্রতিটির দৈর্ঘ্য ৪ দশমিক ৯ কিলোমিটার এবং প্রতিটি রানওয়ের মধ্যে ৮০০ মিটার ফাঁকা জায়গা রয়েছে। প্রথমে ছয়টি রানওয়ে নির্মাণের পরিকল্পনা থাকলে ২০০৯ সালের এপ্রিলে তা কমিয়ে পাঁচটি করা হয়।
  • এখানে তিনটি বৃহৎ আকারের যাত্রী টার্মিনাল রয়েছে, যার মধ্যে দুটি বিলাসবহুল সুযোগ-সুবিধায় সজ্জিত। এর মধ্যে একটি টার্মিনাল এমিরেটস এয়ারলাইনস কোম্পানির জন্য বরাদ্দ। দ্বিতীয়টি অন্য যাত্রীদের জন্য এবং তৃতীয়টি অপেক্ষাকৃত নিম্নশ্রেণীর যাত্রীদের জন্য।
  • বিভিন্ন শ্রেণীর যাত্রীদের বিশ্রামের জন্য রয়েছে বিশাল হলঘর।
  • ১৬টি কার্গো টার্মিনাল রয়েছে, যেগুলোর ধারণক্ষমতা প্রায় ১২ মিলিয়ন টন।
  • নির্বাহী বা প্রশাসনিক এবং রাজকীয় বিমান অবতরণের বিশেষ ব্যবস্থা রয়েছে।
  • এতে আধুনিক মানের বিলাসবহুল হোটেল এবং রেস্টুরেন্ট রয়েছে।
  • যেকোনো পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের জন্য বিশেষ সহযোগিতা এবং নিরাপত্তা প্রদানের ব্যবস্থা রয়েছে।
  • এয়ারপোর্টের কর্মচারী, কর্মকর্তা এবং যাত্রীদের জন্য এক লাখ গাড়ি পার্কিংয়ের ব্যবস্থা রয়েছে।
  • আল-মাক্তুম ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্ট এবং দুবাই ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্টের সংযোগ স্থাপনের জন্য দ্রুতগতিসম্পন্ন এক্সপ্রেস ট্রেনের ব্যবস্থা রাখা আছে।
  • আল-মাক্তুম ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্টটি দুবাই মেট্রো রেল এবং দুবাই সেন্ট্রাল রেলওয়ে দ্বারা যুক্ত।

সুবিধা যত

এয়ারপোর্ট নির্মাতারা চার হাজার ৯০০ মিটার দীর্ঘ পাঁচটি সমান্তরাল রানওয়ে নির্মাণের পরিকল্পনা করেছেন। যার মাঝে থাকবে বৃহৎ আকৃতির যাত্রীদের বিশেষ কমপ্লেক্স। যার একপাশে থাকবে তিনটি রানওয়ে এবং অপর পাশে থাকবে বাকি দুটি রানওয়ে। প্রতিটি রানওয়েতে Asphalt দ্বারা নির্মিত অতিরিক্ত রাস্তা থাকবে, যার দ্বারা বিমানগুলো অন্য রানওয়েকে Bypass করে চলতে পারে। তা ছাড়া রানওয়ের উভয় পাশে অতিরিক্ত রাস্তা থাকার কারণে অন্যান্য বিমান ও ট্যাক্সিকে তাদের নির্দিষ্ট রানওয়েতে চলাচলে কোনো ধরনের বাধায় পড়তে হবে  না। এই এয়ারপোর্টটি দুবাই ওয়ার্ল্ড সেন্ট্রালের একটা বৃহৎ অংশবিশেষ। যদি এটা পরিকল্পনা অনুযায়ী নির্মিত হয়, তবে এটা হবে বিশ্বের সবচেয়ে বড় এয়ারপোর্ট। প্রতিবছর যার যাত্রী ধারণক্ষমতা হবে ১৬০ মিলিয়ন এবং কার্গো ধারণক্ষমতা ১২ মিলিয়ন টনের সমান। এয়ারপোর্টের বৃহৎ রানওয়ে এবং এর মধ্যবর্তী ফাঁকা জায়গা বাধাহীনভাবে বিমান উড্ডয়ন ও অবতরণের সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করবে। কর্তৃপক্ষের বিশ্বাস খুব নিকটবর্তী সময়ে এখানে যাত্রী চাপ অনেক বাড়বে এবং এটা বিশ্বের বিভিন্ন অংশের মানুষের মেলবন্ধনের ক্ষেত্রে পরিণত হবে। নির্মাণকাজ শেষে এটি হবে আয়তনের দিক থেকে বিশ্বে তৃতীয়তম। বিশ্বের আরও দুইটি এয়ারপোর্ট আছে, যা আয়তনের দিক থেকে এর চেয়ে বড়। প্রথম সৌদি আরবের কিং ফাহাদ ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্ট বা (Dammam) দামাম, যার আয়তন প্রায় ৭৮০ বর্গ কিলোমিটার। দ্বিতীয়, কানাডার মনট্রেন মিরাবেল (Montreal Mirabel) ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্ট, যার আয়তন ৩৯২ বর্গ কিলোমিটার।

এয়ারপোর্টে প্রথমে শুধু কার্গোর জন্য সুযোগ-সুবিধা এবং সংশ্লিষ্ট যাতায়াতব্যবস্থা চালু করা হয়। বিশাল আকৃতির বেশ কিছু গুদামঘর ও বিমান রাখার ঘর এয়ারপোর্টের পশ্চিম পাশে সারিবদ্ধভাবে অবস্থিত। পশ্চিম দিকের রানওয়েগুলোকে প্রসারিত করে বিমান রাখার ঘরগুলোকে পরস্পরের সঙ্গে যুক্ত করা হয়েছে। বিমান রাখার জন্য নির্মিত এই বিশেষ ঘরগুলোর প্রতিটি অ৩৮০ বিমান রাখার ক্ষমতাসম্পন্ন।

আল-মাক্তুম ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্ট দুবাই ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্ট থেকে ৪০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। এই এয়ারপোর্টের চারপাশে সেনা প্রশিক্ষণকেন্দ্র ও বিশাল সেনা সমাবেশ দ্বারা পরিবেষ্টিত, যা এয়ারপোর্টের নিরাপত্তাব্যবস্থাকে জোরদার করেছে। তা ছাড়া এই এয়ারপোর্টে বৃহৎ ও বিলাসবহুল গালফ রিসোর্ট, বাণিজ্যিক ভবন এবং প্রদর্শনীর জন্য বিশেষ ব্যবস্থা রয়েছে। বিমানবন্দরে সংযুক্ত প্রদর্শনীস্থলটি মিলিয়ন বর্গমিটার জায়গাজুড়ে বিস্তৃত, যা বিশ্বের সর্ববৃহৎ প্রদর্শনার্থীস্থলের মর্যাদা পেয়েছে। যার ফলে এটা একই সঙ্গে বিশাল বাণিজ্যিক ও অভিজাত আবাসিক অঞ্চলের স্বীকৃতি পেয়েছে।

আল-মাক্তুম ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্ট

আল-মাক্তুম ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্ট ২০১০ সালে জুন মাসে প্রথম শুধু কার্গোর পরিবহনের জন্য চালু করা হয়। অন্য দিকে যাত্রী পরিবহন বা যাতায়াতের সুবিধা চালুর বিষয়টি ক্রমাগত পিছিয়ে যাচ্ছিল। এই নতুন এয়ারপোর্টটি দুবাই ওয়ার্ল্ড সেন্ট্রালে অবস্থিত। বাণিজ্যিক এলাকা হওয়ায় সরকার এটাকে অ্যারোট্রপলিসে (Aerotropolis) রূপান্তর করতে যাচ্ছে। সম্পূর্ণ নির্মাণকাজ শেষে বৃহৎ আকৃতির পাঁচটি রানওয়ে দ্বারা ১৬০ মিলিয়ন যাত্রী এবং ১২ মিলিয়ন টন কার্গোর পরিবহন নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে। এই এয়ারপোর্টটি দুবাই এর জেবাল আলী ফ্রি জোন ও পোর্টের কাছে নির্মিত। মানুষ নির্মিত সবচেয়ে বড় সমুদ্রবন্দরও এটি। যেখানে হাজার হাজার কনটেইনার সংরক্ষণ করে রাখা হয়।

আল-মাক্তুম ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্টের আকৃতি এবং বৃহৎ নির্মাণ পরিকল্পনার কারণে এটাকে অনেকে উচ্চাভিলাষী নির্মাণ পরিকল্পনা বলে মনে করে এর প্রয়োগ এবং প্রাসঙ্গিকতা নিয়ে প্রশ্ন তোলে। খুব কাছাকাছি সময়ে সরকারের তরফ থেকে জানানো হয়েছে, এর বর্তমানমূল্য প্রায় ৪২ বিলিয়ন ডলার। আর তাই আল-মাক্তুম ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্ট ভবিষ্যতের দুবাই নির্মাণে রাখবে অগ্রণী ভূমিকা যা খুব শিগগিরই দুবাই এর ব্যবসা-বাণিজ্য, পরিবহন, পর্যটনের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হবে।

প্রকৌশলী সনজিত সাহা

[email protected]

প্রকাশকাল: বন্ধন ৪৫ তম সংখ্যা, জানুয়ারি ২০১৪

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top