সময়টা তখন ২০০৮ সালের আগস্ট মাস। শান্তনু সরকার, জাহিদুর রহমান, পিনাকী গুহ বিশ্বাস এবং কানিজা মুনতারিনা এই চারজন মিলে পরিকল্পনা করলো একটি ডেভেলপার ফার্ম দিবে। তবে পরিকল্পনা করলেই তো আর হলো না। একটা প্রতিষ্ঠান দাঁড় করাতে গেলে কত ঝক্কি-ঝামেলা পোহাতে হয় তার মোটামুটি সবই জানা ছিল ওদের। তার উপর আবার কনস্ট্রাকশন ফার্ম। তবে ওদের বড় সুবিধাটা হল এদের প্রথম তিনজনই বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) থেকে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং এ পড়াশুনা করেছে। অন্যজন কানিজা মুনতারিনা জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং এর ছাত্রী ছিল। ফলে নির্মাণ বিষয়ক জ্ঞান এবং কম্পিউটার প্রযুক্তির একটা চমৎকার মিশেল ঘটেছে তাদের কাজের ক্ষেত্রে। এর সাথে যুক্ত হয়েছে কর্মক্ষেত্রের অভিজ্ঞতা। এ্যাড্রয়েটের বর্তমান পরিচালক শান্তুনু সরকার এবং ব্যবস্থাপনা পরিচালক জাহিদুর রহমান এরা দুজনেই ডিজাইনার হিসেবে কাজ করেছে যথাক্রমে উত্তরণ স্ট্রাকচারাল ও বাংলাদেশ ইরেক্টরস্ লিমিটেডে। এই প্রতিষ্ঠানগুলোতে কাজ করার সুবাদে নির্মাণ ও আবাসন ক্ষেত্রটি সম্পর্কে ভাল একটি ধারণা জন্মেছে ওদের। বাংলাদেশে রিয়েল এস্টেট খাতটি যে ক্রমেই বিকাশ লাভ করছে এবং সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে সে বিষয়টি বুঝতে বেশি দেরি করেনি ওরা। এর পাশপাশি তাদের নিজস্ব কর্মপরিকল্পনা, চিন্তাধারা, মেধা ও অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে একটি ডেভেলপমেন্ট কোম্পানি গড়ে তুললেন। উদ্দেশ্য ছিল দেশের নির্মাণ খাতে নিজেদের মেধাকে কাজে লাগিয়ে নতুন কিছু করার পাশপাশি এ খাতের উন্নয়নে নিজেদেরকে সম্পৃক্ত করা। প্রথমে তারা প্রতিষ্ঠা করেন এ্যাড্রয়েট কনসালটেন্ট এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং (ACE) ফার্ম। এ ফার্মটির মাধ্যমেই শুরু হয় তাদের প্রাতিষ্ঠানিক কার্যক্রম।
প্রথমেই কাজ করেন ভবনের ডিজাইন নিয়ে। শুরুতেই ডিস্কো, ইনসিজনিয়া ডেভেলপমেন্ট, মোহনা ডেভেলপমেন্টের ডিজাইন করেন। সাফল্যের দেখাটাও এখানেই মেলে। কাজের ক্ষেত্রেও যোগ হয় বাড়তি প্রেরণা। এরপর কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্টের আংশিক ডিজাইনের কাজসহ টাঙ্গাইলের ঘাটাইল ক্যান্টনমেন্টের ডিজাইনের কাজও সফলভাবে করতে সক্ষম হন তারা। এছাড়া রাজধানী ঢাকা ও এর বাইরের বিভিন্ন সেক্টরের কাজ করেছেন এ চার তরুণ ও তাদের প্রতিষ্ঠান।
বর্তমানে বনশ্রীতে ৭ তলা বিশিষ্ট নির্মিতব্য একটি ভবনের কাজ করছে এ্যাড্রয়েট। বসুন্ধরা সিটি শপিং কমপ্লেক্স এর ৯ তলার জি ব্লকের নির্মাণ কাজও করেছে তারা। ময়মনসিংহে তিনটি ও ভালুকাতে দুইটি প্রকল্পের কাজ চলছে তাদের প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে।
শুরু থেকেই যেহেতু প্রত্যেকের ইচ্ছা ছিল ডেভেলপার কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করা, সেই লক্ষে এ বছর অর্থাৎ ২০১২ তে এসে প্রতিষ্ঠা করলেন এ্যাড্রয়েট ডেভেলপমেন্ট লি. (ADL). প্রতিষ্ঠার পর এ্যাড্রয়েট কি কি সাফল্য পেয়েছেন ? জানতে চাইলে শান্তুনু সরকার জানালেন, আমরা (ADL) প্রতিষ্ঠা করেই হাতে দুটি প্রকল্পের কাজ পেয়েছি। একটি আগারগাঁওয়ে এবং অন্যটি মিরপুর মাজার রোডে। চলমান প্রকল্পের পাশপাশি প্রতিষ্ঠানটির অন্যতম কর্নধার জাহিদুর রহমান ও শান্তনু সরকারের আশা, এ বছর আরো ৩ থেকে ৪ টা প্রজেক্টের কাজ হাতে নিতে পারবেন তারা।
এ সেক্টরের উন্নয়নে করণীয় সম্পর্কে জানতে চাইলে জাহিদুর রহমান জানান, এর উন্নয়নে তিনটি দিক খুব গুরুত্বপূর্ণ।
১.ম্যানেজমেন্ট অর্থাৎ ব্যবস্থাপনা।
২. ইঞ্জিনিয়ারিং সাপোর্ট।
৩. প্রয়োজনীয় অর্থ।
তিনি আরো জানালেন বর্তমান অর্থনৈতিক মন্দার প্রভাবে এই কাজে নতুন যারা আসছেন তাদের জন্য এ পথে সাফল্য পাওয়া একটা বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াচ্ছে। আজকাল অধিকাংশ ডেভেলপার কোম্পানির প্রকৌশলীরা নন প্রফেশনাল। আর এই খাত অব্যবসায়ী এবং অপেশাদার লোকের মাধ্যমে পরিচালিত হওয়ায় রিয়েল এস্টেট খাতের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়াচ্ছে। নতুন প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতি তাদের আহবান নতুন এসব প্রতিষ্ঠানের প্রকৌশলী যারা, তারা প্রত্যেকে যেন স্থাপত্য এবং নির্মাণ বিষয়ে সনদপ্রাপ্ত ও প্রফেশনাল হয়ে তারপর এই কাজে নিয়োজিত হন। যারা নিয়মনীতি মেনে বাড়ি তৈরি করতে চান তারা অবশ্যই যেন অন্তত বিভিন্ন কোম্পানির সাথে তুলনা করে এবং তাদের কার্মদক্ষতা সম্পর্কে নিশ্চিত হবার পর কাজে চুক্তিবদ্ধ হোন। কেননা ভাল ফার্ম ছাড়া অধিকাংশ ফার্মই রাজউকের নিয়মনীতি উপেক্ষা করেই নির্মাণ কাজ পরিচালনা করে। যার ফলে ঘটছে নানা রকম দুর্ঘটনা।

এ্যাড্রয়েড যে সব সেবা প্রদান করে
১. আর্কিটেক্টচারাল ডিজাইন, সুপারভিশন অ্যান্ড কনসালটেন্সি।
২. ডিজাইন অব ইন্ডাস্ট্রিয়াল, বিল্ডিং, স্টোরেজ অ্যান্ড সাইলো।
৩. স্ট্রাকচারাল কনস্ট্রাকশন অ্যান্ড কনসালটেন্সি।
৪. ইটিপি অ্যান্ড ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট ডিজাইন অ্যান্ড কনস্ট্রাকশন।
৫. ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্টস অ্যান্ড স্টাডিস।
৬. প্রজেক্ট আইডেন্টিফিকেশন স্টাডিস।
৭. প্রি-ফিসিবিলিটি স্টাডিস।
৮. সাব-সয়েল ইনভেস্টিগেশন।
৯. টেলিকমিনিকেশন বিটিএস রুম অ্যান্ড টাওয়ার কনস্ট্রাকশন।
১০. স্টিল শুটার ফেব্রিকেশন।
১১. সারভে ওয়ার্কস।
১২. মেইনটেইনস অ্যান্ড রিপেয়ারিং ওয়ার্কস।
যোগাযোগের ঠিকানা :
হেড অফিস
২৪৯/১/২, দ্বিতীয় তলা, নিউ এলিফ্যান্ট রোড, ঢাকা-১২০৫।
ফোন : +৮৮-০২-৯৬১৪৮৮৩,
মোবাইল : ০১৯১১-৭২২৬৪০, ০১৮১৯-৪৯৬৬১০, ০১৬১৭৬৩০৮৫৯
ইমেইল : [email protected]
মারুফ আহমেদ
প্রকাশকাল: বন্ধন ২৪ তম সংখ্যা, এপ্রিল ২০১২