মহাতীর্থ লাঙ্গলবন্দের নতুন রূপকল্প

সনাতন ধর্মীয় চেতনা বিশ্বজুড়ে গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে আছে। মহাবিশ্বের সৃষ্টি নিয়ে এতে রয়েছে গুরুত্বপূর্ণ সব তথ্য। সনাতনীরা বিশ্বাস করে বিশ্বব্রহ্মাণ্ড সৃষ্টির আগে একমাত্র সত্তা ছিলেন গুণাতীত পরম ব্রহ্ম। এই ধর্মীয় চেতনায় বাংলাদেশের মহাতীর্থ লাঙ্গলবন্দ সনাতন ধর্মাবলম্বীদের একটি সর্বশ্রেষ্ঠ পুণ্যস্থান, যার উৎস দেশের একমাত্র নদ ব্রহ্মপুত্রের অববাহিকায়।

একসময় লাঙ্গলবন্দের ওপর দিয়ে প্রবাহিত আদি আজকের এই ব্রহ্মপুত্র ছিল সুবিশাল স্রোতস্বিনী। ব্রিটিশ আমলের সময়ক্ষণের ভয়াবহ ভূমিকম্পের কারণে ব্রহ্মপুত্রের মূল স্রোতধারা যমুনায় সরে যায়। ধীরে ধীরে ক্ষীণকায় হতে থাকে ব্রহ্মপুত্রের আদি এ রূপ। অজস্র শৈবালে আবদ্ধ আর আগের তুলনায় স্রোতহীন এই নদকে দেখে কেউ আর লাঙ্গলবন্দের আদি ব্রহ্মপুত্রকে মহা নদ বলবে কি না সেটা ভাবনার বিষয়। তাই বলে ব্রহ্মপুত্র কিন্তু এখনো তার মহিমা এতটুকু হারায়নি।

প্রতিবছরের চৈত্র মাসে অশোকাষ্টমী তিথিতে পুণ্যস্নানের জন্য এখানে সমাগম ঘটে লাখ লাখ সনাতন ধর্মাবলম্বী নর-নারীর। স্নান উপলক্ষে এখানে বসে বিরাট মেলা। বাংলাদেশসহ ভারত নেপাল, ভূটান, শ্রীলঙ্কা থেকে আসেন বহু পুণ্যার্থী। কিন্তু কেন এখানে মানুষ দূর-দূরান্ত থেকে পুণ্যস্নানের জন্য ছুটে আসে আর কেনই বা এখানে এসে স্নানে শুদ্ধ হয়? কেমন করে জন্ম হলো মহা নদ ব্রহ্মপুত্রের? এর পেছনে রয়েছে ঐতিহাসিক এক পুণ্যকাহিনি।

ডিজাইনকৃত প্রধান ঘাট

মহাভারতে উল্লেখিত মহাবীর ভীস্মের পিতা রাজা শান্তনু নন। তিনি হচ্ছেন শান্তনু মুনি। তাঁর স্ত্রী অমোঘা দেবী ব্রহ্মার কৃপায় গর্ভে ধারণ করেন পরম সুন্দর এক পুত্রসন্তান। শান্তনু মুনি তাঁর সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়ার আগেই উত্তর কৈলাসে, পূর্বে সম্মতক, দক্ষিণে গন্ধমাদন ও পশ্চিমে জারুঠি এই চার পর্বতের মাঝখানে একটি কুণ্ড খনন করে রাখেন। ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর মুনি তাঁর সন্তানকে এই কুণ্ডের ভেতর রেখে দেন। পরে পরম ব্রহ্মা এসে আর মুখ দর্শন করেন এবং তাঁর নাম রাখেন লৌহিত। কিছুকাল পরে সে নদ রূপে বিস্তার করে এই কুণ্ডের ভেতর অবস্থান করেন। সেই থেকে এই কুণ্ডের নাম ব্রহ্মকুণ্ড।

অন্য দিকে পরশুরাম ছিলেন বিষ্ণুর ষষ্ঠ অবতার। তাঁর জন্মের সময় বিশ্বজুড়ে চলছিল মহাসংকট। প্রথমে তাঁর নাম রাখা হয়েছিল রাম। পরে তিনি মা হত্যার জন্য হাতে কুঠার তুলে নিয়েছিলেন বলে তাঁর নাম হয়ে যায় পরশুরাম। নিজ হাতে মাতৃ হত্যার পাপ যখন তাঁকে পূর্ণভাবে গ্রাস করে রেখেছিল এবং অভিশপ্ত রক্তমাখা কুঠার কিছুতেই তাঁর হাত থেকে খোসছিল না। সমগ্র ভারতবর্ষের কোনো পুণ্যস্থানে গিয়ে তিনি এই পাপের মুক্তি পাননি। ঠিক তখনই তিনি দেখা পান ব্রহ্মকুণ্ডের এই ব্রহ্মপুত্রের। খুঁজে পান পাপমুক্তির ঠিকানা।

পরশুরাম যখন এই ব্রহ্মকুণ্ডের পবিত্র জলে এসে স্নান করেন, তখন আচমকা তাঁর হাত থেকে অভিশপ্ত কুঠার খসে পড়ে। তিনি ততক্ষণে বুঝে যান জগতের শ্রেষ্ঠ এই পবিত্র জলের মহিমার কথা, জগতের শ্রেষ্ঠ এই পুণ্যস্থানের কথা। তখন তিনি একে জিজ্ঞেস করেন, কে তুমি? তোমার নাম কী? আর কেনই বা এখানে আবদ্ধ আছো? তখন নদ বলে, আমি ব্রহ্মার নন্দন। আমার নাম ব্রহ্মপুত্র। অভিশাপে নদরূপে এখানে বিপাকে পড়ে আছি। 

পরশুরাম পাপমুক্ত হয়ে চিন্তা করলেন সমগ্র মানবজাতির কল্যাণের জন্য অজানা এই ব্রহ্মকুণ্ডের জল ধরাধামে সমতলভূমিতে নিয়ে আসা উচিত। তা না হলে জগতের পাপী-তাপী মানুষ কীভাবে পাপমুক্ত হবে। তখন তিনি তাঁর কুঠার রূপান্তর করলেন লাঙ্গলরূপে এবং তাই দিয়ে মাটি খুঁড়তে লাগলেন। বর্তমান লাঙ্গলবন্দে এসে খোঁড়া বন্ধ করে দিলেন। ধন্য হলো প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশ। এই স্থানে ততক্ষণে একটি নদী খাত তৈরি হয়ে যায়। এখানে লাঙ্গল বন্ধ করেন বিধায় এই স্থানের নাম রাখা হয় লাঙ্গলবন্দ। আর এই প্রবহমান ধারাটি ব্রহ্মপুত্র নামে পরিচিতি লাভ করে।

মহাতীর্থ লাঙ্গলবন্দ রাজধানী ঢাকা থেকে প্রায় ২০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্বে অবস্থিত। নারায়ণগঞ্জ জেলা শহর থেকে এই তীর্থস্থানের দূরত্ব প্রায় সাত কিলোমিটার। সোনারগাঁ উপজেলার গাঘেঁষে প্রবাহিত আদি ব্রহ্মপুত্রের সাড়ে তিন কিলোমিটার এলাকাজুড়ে এই তীর্থক্ষেত্রের অবস্থান। সোনারগাঁ একসময় বন্দর থানার অন্তর্ভুক্ত ছিল। রাজধানী ঢাকা থেকে বন্দরনগর চট্টগ্রামের সংযোগ স্থাপনকারী মহাসড়ক নির্মিত হওয়ার পর তীর্থযাত্রীদের তীর্থস্থানে যাওয়া আনেকটা সহজতর হয়েছে।

এই মহা তীর্থের চরণজুড়ে রয়েছে গুটি কয়েক মন্দির ও ঘাট। তীর্থস্থানটির উত্তর প্রান্তে রয়েছে ললিত সাধু মন্দির, দক্ষিণ প্রান্তে আছে চৌধুরীপাড়ার কালীমন্দির এবং গোসাইবাড়ির কালীমন্দির। পুণ্যস্নান সম্পন্ন করার জন্য এখানে রয়েছে বেশ কয়েকটি নামকরা ঘাট। যেগুলো এখানকার পালিত অনুষ্ঠানের সময় হয়ে ওঠে রমরমা ও প্রাণবন্তÍ।

পুণ্যার্থীরা গাইছে ভক্তিগীত

এখানে আরও রয়েছে দক্ষিণেশ্বরী মঠ, পঞ্চমী ঘাট, দক্ষিণেশ্বরী কালীঘাট, মাকরী সাধুর আশ্রম, মাকরী সাধুর ঘাট, ললিত সাধুর শ্মশানঘাট, ত্রিনাথের মূর্তি, ললিত সাধুর আশ্রম, আদি ব্রহ্মপুত্রের মূর্তি, বাসন্তী দেবীর মূর্তি (বর্তমান দুর্গা), মহাকাল ও মহাকালীর মূর্তি, কাল ভৈরব, রক্ষাকালীমন্দির, রক্ষাকালীঘাট, গৌরাঙ্গ মহাপ্রভুর মন্দির, রয়েছে প্রেমতলা। জয়কালী মন্দির, অন্নপুণ্যা মন্দিরসহ রয়েছে সারি সারি ঘাট। লাঙ্গলবন্দে রয়েছে ভারতবর্ষের জাতির জনক (মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধীর) নামে একটি ঘাট। মৃত্যুর পরে তাঁর চিতা ব্রহ্মপুত্র নদে ভাসানো হয়েছিল।  

অষ্টম তিথিতে মার্চ অথবা এপ্রিল মাসে (চৈত্রে) এখানে পুণ্যস্নান অনুষ্ঠিত হয়। এ ছাড়া কোনো এক অষ্টম পূর্ণিমায় এবং আগস্ট মাসের দিকে আরও একটা একদিনের অনুষ্ঠান মিলে মোট তিনটা অনুষ্ঠান এখানে পালিত হয়। পুণ্যস্নানকে ঘিরে এখানে রমরমা হয়ে ওঠে হাট। পুণ্যস্নানের সময় ছাড়াও প্রতি সপ্তাহে এখানে বিরাট হাট বসে, যেটা অনেক দিনের একটা ঐতিহ্য বহন করে চলেছে। 

এই হাটেরও একটা বিশেষ ধর্মীয় তাৎপর্য রয়েছে। বিভিন্ন বইপুস্তকে আমরা হয়তো অনেকে পড়েছি, দেশের সবচেয়ে বড় মেলা ও হাটের একটি লাঙ্গলবন্দের এ মিলনমেলা। তাই বিশ্বের অন্যতম এই পুণ্য ও তীর্থস্থানের এতসব পুণ্যের কথা বিবেচনা করে বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে এই স্থানের তাৎপর্যকে বিবেচনায় আনা হয়। চিন্তা করা হয় স্থানটিকে গড়ে তোলা হবে একটি পর্যটনকেন্দ্র হিসেবে। দাঁড় করানো হয় মহাতীর্থ লাঙ্গলবন্দ ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট নামের একটি প্রকল্প।

প্রকল্পের উদ্দেশ্য হলো স্থানটিকে দখলদারি থেকে মুক্ত করা, দেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি ট্যুরিস্ট স্পট হিসেবে দাঁড় করানো এবং এর আদি ঐতিহ্যকে ফিরিয়ে আনা। বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে সেই লক্ষ্যে ২০০৭ সালে প্রথমে মহাতীর্থ লাঙ্গলবন্দ প্রকল্পটির কাজ হাতে নেওয়া হয়। 

এ সময় এই তীর্থস্থানের তাৎপর্য ও গুরুত্বের কথা বিবেচনায় নেন বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মোঃ মোহতাজ হোসেন। একসময় তিনি এই প্রকল্পের সঙ্গে নিজেকে যুক্ত করেন। 

প্রথম পর্যায়ে প্রকল্পটিকে ঘিরে ব্রহ্মপুত্র নদ খনন, বাঁধ চওড়া করা, শিশু পার্ক নির্মাণ, রেস্টহাউস, রেস্টুরেন্টসহ সরকারিভাবে মোট আটটা প্রস্তাবনা ছিল। কিন্তু এগুলোর পাশাপাশি মোহতাজ হোসেন বাড়তি কিছু প্রস্তাবনার প্রস্তাব পেশ করেন। তিনি চেয়েছিলেন, যেহেতু এই স্থানটির একটি ধর্মীয় গুরুত্ব রয়েছে তাই কোনোভাবেই এটির নকশায় কোনো রকমের পরিবর্তন আনা যাবে না, যা এর পুরাতন ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যে আঘাত হানে। সরকারি প্রস্তাবনায় আরও ছিল এখানকার কিছু অধিবাসী অবৈধভাবে স্থান দখল করে আছে। তাদের উচ্ছেদ করে অন্যত্র পুনর্বাসন করানো। কিন্তু মোহতাজ হোসেনের মতে, যেহেতু এই লোকগুলো এই স্থানটির ঐতিহ্যকে এখন পর্যন্ত ধারণ করে রেখেছেন, তাই এখানে তাঁদের একটা ধর্মীয় গুরুত্ব রয়েছে। তাই এখানেই তাঁদের পুনর্বাসনের একটা ব্যবস্থা করা উচিত।

পুণ্যস্নানে পুণ্যার্থীরা

এ ছাড়া তাঁর প্রস্তাবনা হচ্ছে বাঁধসংলগ্ন রাস্তাটাকে সংস্করণ না করে বিকল্প বাইপাস একটা রাস্তা করা প্রয়োজন। কারণ, এই একটি মাত্র রাস্তা চৈত্রে অনুষ্ঠান চলাকালীন একদম বন্ধ হয়ে যায়। এটা একটা ঝুঁকিপূর্ণ জায়গা। নিয়মিত গাড়ি চলাচলের জন্য জায়গাটা হারাচ্ছে তার সৌন্দর্য।

মোহতাজ হোসেন ঘাট বাঁধানোর নকশায় আধুনিকত্বের ছোঁয়ার সংযোগ ঘটিয়ে এঁকেছেন কিছুটা আধুনিকতার নন্দনতত্তে¡। লাঙ্গলবন্দের সব গুরুত্বপূর্ণ ঘাটকে তিনি এমনভাবে নকশা করেছেন, যেগুলো দেখতে অনেকটা গ্যালারির মতো। লাঙ্গলবন্দের পাড়ঘেঁষে হাঁটতে থাকলে এর ঠিক মাঝ বরাবর একটা পুকুর নজরে আটকায়। সরকারিভাবে একটা প্রস্তাবনা আসে এই পুকুরটাকে মাটি ভরাট করে হোটেল বানানোর। কিন্তু মোহতাজ হোসেনের প্রস্তাবনা হচ্ছে লাঙ্গলবন্দের প্রবেশদ্বার দিয়ে ঢোকার শুরুতে একটা পরিত্যক্ত ফ্যাক্টরি আছে, যেটা বহুদিন ধরে পরিত্যক্ত অবস্থায় রয়েছে, যার অবস্থান ঢাকা-চট্টগ্রাম হাইওয়ের পাশে। তিনি সেটাকে ব্যবহার করে রেস্টহাউজ অথবা হোটেল অথবা কোনো কালচারাল অনুষ্ঠানের স্থান হিসেবে দাঁড় করানোকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছেন। স্থানটির ঘাটে বৈঠাচালিত কিছু নৌকার ব্যবস্থা থাকবে, যেগুলো এই স্থান থেকে ছেড়ে যাবে এবং তীর্থযাত্রীরা ব্রহ্মপুত্রের সৌন্দর্য অবলোকনে প্রাকৃতিক ছোঁয়া পাবে।

তিনি চেয়েছেন দেশি-বিদেশি সব পর্যটক যেন লাঙ্গলবন্দে পৌঁছানোর সঙ্গে সঙ্গে রেস্টহাউস অথবা হোটেল পায়। সেই লক্ষ্যে তিনি পরিত্যক্ত ফ্যাক্টরিটাকে ব্যবহার করতে চেয়েছেন। অন্য দিকে পুকুরের স্থানটি কেন্দ্রে হওয়ায় সেখানে একটি মঞ্চ তৈরির ওপর বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করেন মোহতাজ হোসেন। এই মঞ্চকে স্থানীয় সাধু-সন্ন্যাসীদের নিয়মিত মিলনস্থল হিসেবে মনোনীত করেন তিনি। এখানে নিয়মিত চলবে পূজা, আরাধনা ও গান-বাজনা।

এ ছাড়া তিনি ঘোর বিরোধিতা করেন লাঙ্গলবন্দের পাড়ঘেঁষে কোনো ধরনের বহুতলবিশিষ্ট ভবন নির্মাণের। তাহলে ধর্মীয় তাৎপর্যমণ্ডিত স্থানটি হারাবে তার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য।  

সরকারি প্রস্তাবনায় মোট আটটা প্রস্তাবনা ছিল। ঘাটগুলোকে সঠিক নিয়মে বাঁধানো, ড্রেজিং করা, বাঁধসংলগ্ন রাস্তাটাকে চওড়া করা, শিশু পার্ক করা। বর্তমানে বহু লোকজন অবৈধভাবে স্থানটি ভোগ-দখল করে রেখেছে। তাই স্থানটিকে দখলদারি থেকে মুক্ত করাও সরকারের প্রস্তাবনার একটি বিশেষ উদ্দেশ্য। কিন্তু মোহতাজ হোসেন সরকারি প্রস্তাবনার পাশাপাশি নিজে কিছু প্রস্তাবনা পেশ করেন এবং সরকারি কিছু প্রস্তাবনার বিরোধিতা করেন। তাঁর প্রস্তাবনাগুলো হলো-

রাস্তাটাকে চওড়া না করে এটাকে একেবারে বন্ধ করে দেওয়া এবং নদের কিনার থেকে একটু দূরে বাইপাস একটা রাস্তা করা। 

ডিজাইনকৃত প্রকল্পের প্রাণকেন্দ্র

পাশাপাশি তিলক যাত্রী নিবাসের একটা ডিজাইন করেছেন তিনি তীর্থযাত্রীদের আশ্রয়ের জন্য। এখানে থাকবে বিনা মূল্যে চিকিৎসার ব্যবস্থা। এর সঙ্গে সংযুক্ত থাকবে ছোট্ট একটা জাদুঘর, লাইব্রেরি ও পর্যটক এবং তীর্থযাত্রীদের বিভিন্ন তথ্যসুবিধার জন্য তথ্যকেন্দ্র।

তিনি তাঁর নকশায় বিশেষ গুরুত্ব দেখিয়েছেন এখানকার বিভিন্ন মূর্তিগুলোর কোনো রকম পরিবর্তিত না করে সঠিক সংস্করণ করার ওপর।  

চৈত্র মাসে এখানে প্রচুর গরমের ভেতর তীর্থস্নান অনুষ্ঠিত হয় এবং প্রচণ্ড রোদের কারণে এখানে তীর্থযাত্রীরা খুব কষ্ট করে স্নান সম্পন্ন করতে আসেন আত্মশুদ্ধির আশায়। তাই ঘাটসংলগ্ন এলাকাজুড়ে মোহতাজ হোসেন প্রচুর পরিমাণে কৃষ্ণচূড়া ও রাধাচূড়া গাছ লাগানোর ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন। এই গাছগুলো ধর্মীয়ভাবেও সনাতন ধর্মাবলম্বীদের কাছে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। একইভাবে এই গাছের ছায়া হয়ে উঠবে যাত্রীদের ছায়াময় বিশ্রামের স্থান।

এই প্রকল্পটি বাস্তবায়নের ফলে ধর্মীয়ভাবে বিরাট সুবিধা পাবে দেশের সনাতন ধর্মাবলম্বীরা। পাশাপাশি দেশ পাবে নতুন এক ট্যুরিস্ট স্পট। বিদেশি পর্যটকেরা দেশে আসতে আকৃষ্ট হবে। যার পরিপ্রেক্ষিতে দেশ নতুন করে অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হয়ে উঠবে। 

ব্রহ্মপুত্রে নেই আদি সেই স্রোতধারা, তলদেশ ভরেছে পলিতে। তাই মৃতপ্রায় আদি এ ব্রহ্মপুত্র ফিরে পাবে তার হারানো যৌবন। ব্রহ্মপুত্রের উপকূলীয় অঞ্চল ও আশপাশের পরিবেশ অনেকাংশে হয়ে উঠবে নির্মল ও সুন্দর। যার ফলে দেশ এবং অত্র এলাকার উন্নয়ন ঘটবে নব আঙ্গিকে। 

নতুন রূপকল্পের ল্যান্ডস্কেপ ডিজাইন

আসলে বাস্তব যেকোনো ধরনের সমস্যা নিয়ে কাজ করার ইচ্ছাতেই মোহতাজ হোসেন এ ধরনের একটা প্রকল্পের কাজ বেছে নিয়েছেন। লাঙ্গলবন্দের মতো এত বড় একটা তীর্থস্থানকে ঘিরে এত দিনেও বিশেষ কোনো উদ্যোগ না নেওয়ায় তিনি এটাকে দেশের বাস্তব সমস্যাগুলোর একটি বিবেচনা করছেন। 

২০০৭ সালে এই প্রকল্পের কাজ সরকারিভাবে হাতে নেওয়ার পর থেকে এখনো পর্যন্ত নদ ড্রেজিংয়ের কাজ হয়েছে। প্রতিবছর চৈত্রের আনুষ্ঠানিকতাকে ঘিরে শুধু চৈত্র মাসে অশোকাষ্টমী তিথিতে পুণ্যস্নানের সময় বিভিন্ন আশ্বাসবাণী শুনিয়ে থাকেন এই প্রকল্প উন্নয়নের সরকারি কর্মকর্তারা। আর বছরের বাকি সময় সরকার নীরব থাকে। প্রকল্পটি এখন পর্যটন করপোরেশনের তত্ত্বাবধানে রয়েছে।

মারুফ আহমেদ

প্রকাশকাল: বন্ধন ৩৬ তম সংখ্যা, এপ্রিল ২০১৩

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top