এলজিইডি

শুরুর কথা

দেশের অবকাঠামো উন্নয়নে কাজ করা সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে অন্যতম স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি)। প্রতিষ্ঠানটির আত্মপ্রকাশ ষাটের দশকের শুরুতে। প্রাথমিক অবস্থায় সংস্থাটির কার্যক্রম ও পরিসর এত বড় ছিল না। অস্থায়ীভাবে সরকারের উন্নয়ন বাজটের আওতায় একটি বিশেষ প্রকল্প হিসেবে ১৯৮২ সালে যাত্রা শুরু করে এলজিইডি। শুরুতে এর নাম ছিল ‘ওয়ার্কস প্রোগ্রাম উইং’। পরে ১৯৮৪ সালে নাম বদলে হয় স্থানীয় সরকার প্রকৌশল ব্যুরো বা এলজিইবি। তখন সরকারের রাজস্ব বাজেটের অধীনে প্রতিষ্ঠানটি পরিচালিত হতো এবং ১৯৯২ সালে চূড়ান্তরূপে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) নাম নিয়ে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের অধীনে সরকারের একটি পূর্ণাঙ্গ অধিদপ্তর হিসেবে এটি প্রতিষ্ঠা লাভ করে।

যা নিয়ে এলজিইডি

দেশের প্রবৃদ্ধির হারকে বাড়িয়ে দারিদ্র্যপীড়িত বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর অর্থনৈতিক দুর্দশা লাঘবের উদ্দেশ্যে, বিশেষ করে দেশের প্রত্যন্ত স্থানীয় অঞ্চলে উন্নয়নের সুষম বণ্টন করা এলজিইডির অন্যতম উদ্দেশ্য। জনগণকে সেবা দিতে সরকারের প্রতিশ্রুতি বাস্তÍবায়ন করতে সংস্থাটি স্থানীয় সরকার, সমবায় ও পল্লী উন্নয়ন মন্ত্রণালয়ের অধীনে কাজ করছে। এলজিইডি দেশের প্রতিটি জেলা অফিস ও শাখার মাধ্যমে পল্লী অঞ্চলের অবকাঠামো, রাস্তাঘাট, স্থাপনার উন্নয়নে কাজ করছে। এ কাজে এলজিইডি সরকারের নিজস্ব বরাদ্দের বাইরে দেশি-বিদেশি বিভিন্ন দাতা সংস্থা থেকে আর্থিক সহায়তা নিয়ে তাদের নিয়মিত কার্যক্রম পরিচালনা করছে। স্থানীয় সরকার, পল্লী ‍উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় স্থানীয় সরকার বিভাগের অধীন এলজিইডি স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানসমূহকে কারিগরি সহায়তা প্রদান, পল্লী ও শহরাঞ্চলের অবকাঠামো ‍উন্নয়ন ও রক্ষণাবেক্ষণসহ ক্ষুদ্রাকার পানি সম্পদ উন্নয়নের মাধ্যমে দেশের ‍আর্থ-সামাজিক অবস্থার ‍উন্নয়ন ও কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে। একটা সময় ছিল যখন বাংলাদেশে গ্রামীণ এলাকার যোগাযোগ অবকাঠামো ছিল অত্যন্ত নাজুক। আজ এলজিইডির মাধ্যমে ব্যাপক ‍উন্নয়ন কর্মকান্ডের মাধ্যমে দেশের সর্বত্র গ্রামীণ যোগাযোগের ক্ষে‌ত্রে এক বৈপ্লবিক পরিবর্তন এসেছে। আজ গ্রামের উৎপাদিত ফসল বাজারজাতকরণ ও পরিবহন সুবিধা বৃদ্ধি পেয়ে কৃষকদের উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্যমূল্য প্রাপ্তি নিশ্চিত হচ্ছে। এ ছাড়াও পরিবেশের ভারসাম্য সংরক্ষণ ও দারিদ্র্য বিমোচনের লক্ষ্যে সরকারের জাতীয় কর্মসূচি বাস্তবায়নেও এলজিইডি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। বাংলাদেশ সরকারের নিজস্ব অর্থায়নে ও উন্নয়ন সহযোগী সংস্থার সহায়তায় এলজিইডি বিভিন্ন প্রকল্প ও কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছে।

এলজিইডির কর্মপরিধি

  • পল্লী ও নগর অঞ্চলে অবকাঠামো উন্নয়নের লক্ষ্যে পরিকল্পনা প্রণয়ন, বাস্তবায়ন ও পরিবীক্ষণ;
  • পল্লী অবকাঠামো রক্ষণাবেক্ষণ;
  • গ্রোথ সেন্টার/হাটবাজার উন্নয়নে পরিকল্পনা প্রণয়ন, বাস্তবায়ন ও পরিবীক্ষণ;
  • ইউনিয়ন, উপজেলা, জেলা পরিষদ ও পৌরসভাকে কারিগরি সহায়তা প্রদান;
  • ইউনিয়ন, উপজেলা ও পৌরসভা প্লানবুক, ম্যাপিং ও সড়ক এবং সামাজিক অবকাঠামোর ডাটাবেজ প্রস্তুতকরণ;
  • ক্ষুদ্রাকার পানি সম্পদ উন্নয়ন পরিকল্পনা বাস্তবায়ন ও পরিবীক্ষণ;
  • বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের অবকাঠামো উন্নয়ন কর্মসূচি বাস্তবায়ন ও পরিবীক্ষণ;
  • জনপ্রতিনিধি, উপকারভোগী, ঠিকাদার, চুক্তিবদ্ধ শ্রমিকদলসমূহের সংশ্লিষ্ট উন্নয়ন কর্মকান্ডের প্রশিক্ষণ;
  • ডিজাইন ও অন্যান্য কারিগরি মডেল, ম্যানুয়েল ও স্পেসিফিকেশন প্রণয়ন;
  • এলজিইডির কর্মকর্তা/কর্মচারীদের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষতা বৃদ্ধি;

এলজিইডির খাতওয়ারী প্রধান প্রধান কর্মকান্ড

  • গ্রামীণ অবকাঠামো
  • নগর অবকাঠামো
  • ক্ষুদ্রাকার পানি সম্পদ উন্নয়ন
  • সড়ক নির্মাণ/পুনর্নির্মাণ/ পুনর্বাসন
  • ব্রিজ/ কালভার্ট নির্মাণ/ পুনর্নির্মাণ
  • গ্রোথ সেন্টার/হাট-বাজার উন্নয়ন
  • ঘাট/জেটি নির্মাণ
  • ইউনিয়ন পরিষদ ভবন নির্মাণ
  • উপজেলা পরিষদ কমপ্লেক্স ভবন নির্মাণ
  • ঘূর্ণিঝড়/বন্যা আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণ/পুনর্নির্মাণ
  • বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি
  • ক্ষুদ্র-ঋণ কর্মসূচি
  • কৃষি, মৎস্য ও পশু সম্পদ উন্নয়ন
  • অবকাঠামো রক্ষণাবেক্ষণ
  • সড়ক/ফুটপাত নির্মাণ/ পুনর্নির্মাণ
  • নর্দমা নির্মাণ/ পুনর্নির্মাণ
  • বাস/ট্রাক টার্মিনাল নির্মাণ
  • বাজার উন্নয়ন
  • টাউন সেন্টার নির্মাণ
  • স্যানিটারি ল্যাট্রিন নির্মাণ
  • টিউবওয়েল স্থাপন
  • ক্ষুদ্র-ঋণ কর্মসূচি
  • বর্জ্য ব্যবস্থাপনা
  • বস্তি উন্নয়ন কার্যক্রম
  • নগর পরিচালনা উন্নতিকরণ
  • দারিদ্র্য বিমোচন
  • নগর প্রশাসনের সক্ষমতা বৃদ্ধি
  • বাঁধ নির্মাণ
  • স্লুইস গেট নির্মাণ
  • রাবার ড্যাম নির্মাণ
  • খাল খনন ও পুনঃখনন
  • বন্যা নিয়ন্ত্রণ, বাঁধ নির্মাণ/ পুনর্নির্মাণ
  • স্থানীয় পানি ব্যবস্থাপনা সমবায় সমিতিকে (পাবসস) বিভিন্ন কারিগরি ও জীবিকা উন্নয়নে সহায়তা প্রদান

এলজিইডির প্রশাসনিক কাঠামো

এলজিইডির বিস্তৃত কর্মকান্ড পরিচালনার জন্য নিম্নবর্ণিত উপায়ে প্রশাসনিক নেটওয়ার্ক সারাদেশে বিস্তৃত আছে-

এলজিইডির প্রধান প্রকৌশলী দাপ্তরিক প্রধান হিসেবে ‍আগারগাঁও, শেরেবাংলা নগর, ঢাকা-১২০৭ অবস্থিত সদর দপ্তরে এলজিইডি দপ্তর পরিচালনা করছেন। তা ছাড়া সদর দপ্তরে ৫ জন অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী, ১১ জন তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী, ৪৪ জন নির্বাহী প্রকৌশলীসহ মোট ২০৯ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী বিভিন্ন ইউনিটে কর্মরত আছেন- সদর দপ্তরে এলজিইডির কর্মকান্ড নিম্নবর্ণিত ইউনিটের মাধ্যমে সম্পন্ন হয়ে থাকে।

প্রশাসন

  • পরিকল্পনা
  • ডিজাইন
  • সমন্বিত পানি সম্পদ ব্যবস্থাপনা
  • পরিবেশ ব্যবস্থাপনা
  • মনিটরিং ও মূল্যায়ন
  • ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেম (এমআইএস)
  • জিওগ্রাফিক্যাল ইনফরমেশন সিস্টেম (জিআইএস)
  • নগর ব্যবস্থাপনা
  • মাননিয়ন্ত্রণ
  • প্রশিক্ষণ
  • রক্ষণাবেক্ষণ ব্যবস্থাপনা
  • সড়ক নিরাপত্তা
  • ক্রয় কাযর্ক্রম

তথ্য ইউনিট

এলজিইডির কর্মকান্ড সারাদেশে ২টি বিভাগ যথা ঢাকা ও রাজশাহী, প্রতিটি বিভাগে ১ জন অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলীর অধীন ২ জন নির্বাহী প্রকৌশলীসহ মোট ১১ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী দায়িত্ব পালন করছেন ও ১৪টি অঞ্চল যথা ঢাকা, চট্টগ্রাম, খুলনা, রাজশাহী, বরিশাল, সিলেট, রংপুর, ময়মনসিংহ, কুমিল্লা, ফরিদপুর, যশোর, বগুড়া, দিনাজপুর এবং পটুয়াখালী ‍অঞ্চলের মাধ্যমে বিস্তৃত প্রতিটি অঞ্চলের দায়িত্বে রয়েছেন একজন তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী। প্রতিটি অঞ্চলে তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলীর অধীন নির্বাহী প্রকৌশলী এবং সহকারী প্রকৌশলীসহ মোট ১২ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী রয়েছেন- যারা অঞ্চলের আওতাভুক্ত জেলার ন্যস্ত প্রশাসনিক দায়িত্বসহ এলজিইডির কর্মকান্ড মনিটর ও তদারক করে থাকেন।

৬৪টি জেলার প্রতিটি জেলা সদরে নির্বাহী প্রকৌশলীর নেতৃত্বে ২ জন সিনিয়র সহঃ/সহকারী প্রকৌশলীসহ মোট ১৬ জন কর্মকর্তা/কর্মচারী জেলার সকল এলজিইডির কর্মকান্ড পরিচালনা করছেন। তা ছাড়া বৃহত্তর জেলায় ১ জন মেকানিক্যাল প্রকৌশলী রয়েছেন।

৪৮৫টি উপজেলার প্রতিটিতে উপজেলা প্রকৌশলীর নেতৃত্বে সহকারী উপজেলা প্রকৌশলীসহ মোট ১৯ জন কর্মকর্তা/কর্মচারী উপজেলা পরিষদের উন্নয়ন কর্মকান্ড ও রক্ষণাবেক্ষণ কর্মকান্ড পরিচালনাসহ এলজিইডির কর্মকান্ড পরিকল্পনা ও তদারকিতে নির্বাহী প্রকৌশলীকে সহযোগিতা করে থাকে।

সেবা সংক্রান্ত অভিযোগ গ্রহণ ও নিষ্পত্তিকরণ

সিটিজেন চার্টারের বর্ণিত সেবা নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যে যুক্তিসঙ্গত কারণ ব্যতীত প্রদানে ব্যর্থ হলে সংশ্লিষ্ট ভুক্তভোগী লিখিতভাবে সেবা প্রদান কর্তৃপক্ষের নিকট অভিযোগ করতে পারবেন। সেবা প্রদান কর্তৃপক্ষ অভিযোগ পাওয়ার ১৫ দিনের মধ্যে অভিযোগকারীর অভিযোগ আমলে নিয়ে বিষয়টি নিষ্পত্তি করবেন। অভিযোগকারী সেবা প্রদানকারী কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্তে সন্তুষ্ট না হলে সেবা প্রদানকারী কর্তৃপক্ষের নিয়ন্ত্রণকারী ‍পরবর্তী ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নিকট আপিল আবেদন করতে পারবেন। আপিল কর্তৃপক্ষ আপিল পাওয়ার ১৫ দিনের মধ্যে অভিযোগ নিষ্পত্তি করবেন এবং সেবা প্রদানকারী কর্তৃপক্ষকে লিখিত নির্দেশনা দেবেন। অত্র দপ্তরের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী (প্রশাসন) ও নির্বাহী প্রকৌশলী (প্রশাসন) তথ্য প্রদানকারী কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।

যোগাযোগ

স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি)

এলজিইডি ভবন

আগারগাঁও, শেরেবাংলা নগর, ঢাকা-১২০৭।

মোবাইল : ০১৭১১৫৯৩৮৭৭, ০১৭১১৬৭৯১০১

ফ্যাক্স : ৭১৬৪৩৭৪

ইমেইল :   [email protected]

ওয়েবসাইট : www.lgd.gov.bd

জিয়াউর রহমান চৌধুরী

প্রকাশকাল: বন্ধন ৩৩ তম সংখ্যা, জানুয়ারি ২০১৩

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top