মো. শাহজাহানের জন্ম ১৯৬৯ সালে ঢাকায়। বাবা হাজি সিরাজুল ইসলাম ও মা আমেনা বেগম। নারায়ণগঞ্জ আর্দশ উচ্চবিদ্যালয় থেকে এসএসসি এবং নটর ডেম কলেজ থেকে এইচএসসি পাসের পর ভর্তি হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ম্যানেজমেন্ট অনুষদে। এখান থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি সম্পন্ন করে যুক্ত হন পারিবারিক ব্যবসায়। বর্তমানে তিনি স্টিল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের নির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক ও সিএসআরএমের ব্যবস্থাপনা পরিচালক। সফল এ শিল্পোদ্যোক্তা কথা বলেছেন বন্ধন-এর সঙ্গে। কথার সূত্রধর বন্ধন সম্পাদক শরিফুল বারী টুটুল
সিএসআরএমের যাত্রা কবে, কীভাবে শুরু হয়?
১৯৯৩ সালে সিএসআরএমের ফ্যাক্টরি চালু হয়। ২০০৫ সালে শুরু হয় রি-রোলিং মিলস ইউনিট। আর অটো রি-রোলিং মিলস চালু হয় ২০১২ সালে।
নামটা সিএসআরএম কেন?
সিএসআরএমের পূর্ণরূপ চাকদা স্টিল রি-রোলিং মিলস। চাকদা হলো নারায়ণগঞ্জের শ্যামপুরের একটি জায়গা। যেখানে উত্তরাধিকার সূত্রে আমাদের বাস। জায়গাটার নামানুসারে আমাদের প্রতিষ্ঠানটির নাম; নামটি দিয়েছেন আমার বাবা। এখন মানুষ চাকদা বলতে জায়গাটার চেয়ে চাকদা স্টিলকেই বেশি চেনে। জায়গাটা এখন চাকদা স্টিলের নামেই পরিচিত।
শুরুতে আপনাকে কী ধরনের বাধাবিপত্তিতে পড়তে হয়েছে? কীভাবে সেগুলো সামলেছেন?
ফ্যাক্টরি চালুর শুরুতে আমাদের প্রধান সমস্যা ছিল বিদ্যুতের। শুরুটা একটি ইউনিট নিয়ে পরে আরও দুটি যুক্ত হয়। স্টিল প্ল্যান্ট হয় এরপর। এরই ধারাহিকতায় পাই ২৭ কিলোওয়াটের ক্যাপটিভি পাওয়ারের অনুমোদন। তবে গ্যাসস্বল্পতার কারণে এটিতে কখনোই ২২ কিলোওয়াটের বেশি বিদ্যুৎ উৎপাদন করা সম্ভব হয়নি। গ্যাসের চাপ কমার পাশাপাশি কমতে থাকে বিদ্যুৎ উৎপাদন। বাধ্য হয়েই বন্ধ রাখতে হয় চলমান দুটি ইউনিট। বাকি দুটির উৎপাদন কয়লা দিয়ে অব্যাহত রাখি। বিদ্যুৎসংকটের কারণে অটো রি-রোলিং মিলস চালু রাখা কঠিন হয়ে পড়ে। তাই বাধ্য হয়েই আমরা ইন্টারমিডিয়েট ফার্নেস ওয়েলকে বিকল্প জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করে সুফল পাই। এতে কমেছে উৎপাদন ব্যয়। এখন বিদ্যুতের সমস্যা না থাকলেও আছে গ্যাসের সংকট, যা ব্যাহত করছে আমাদের নিয়মিত স্টিল উৎপাদনকে।

দেশে এখন বহু কোম্পানি রড নির্মাণে যুক্ত। এত প্রতিযোগিতার মধ্যে কেমন করছে সিএসআরএম? অন্যদের তুলনায় এ রডের বিশেষত্ব কী?
আগে থেকেই স্টিল কোম্পানি এ দেশে ছিল, এখন বাড়ছে। স্বভাবতই প্রতিযোগিতাও হচ্ছে। এখন ব্র্যান্ডিংটা খুব গুরুত্বপূর্ণ। সবাই ব্যাপক প্রচার-প্রচারণা চালাচ্ছে। এরই ধারাবাহিকতায় আমরাও এগিয়ে যাচ্ছি। আমাদের স্টিল গুণগতমানে অনন্য। নিজস্ব ল্যাবের পাশাপাশি বুয়েট, বিএসটিআই থেকে আমরা স্যাম্পল টেস্ট করি নিয়মিত। অনেকেই বলে তাদের রড ফ্যাটিগ টেস্টে উত্তীর্ণ কিংবা এত মাত্রার সাইক্লিক লোড সহনীয়। আমরা এভাবে প্রচারে যাই না। আমরা আমাদের কাস্টমারদের মান যাচাই করে কিনতে বলি। আমার বিশ্বাস, এখন ক্রেতারা অনেক সচেতন, তাই মানের ব্যাপারে তাঁরা বরাবরই আপসহীন।
বিএসআরএম, একেএস টিএমটিবার কিংবা আরএসআরএমের মতো কোম্পানি বাজারে থাকলেও আপনারা বেশ জোরালো অবস্থান তৈরিতে সক্ষম হয়েছেন। এলাম, দেখলাম, জয় করলাম অবস্থা। কীভাবে এটা সম্ভব হয়েছে? সাফল্যের গোপন মন্ত্র কী?
শুরু থেকেই বাজারে আমাদের সুনাম আছে। আছে নির্দিষ্টসংখ্যক ক্রেতাও। চাহিদা অনুয়ায়ী আমরা উৎপাদিত স্টিল তথা রড সরবরাহ করতে পারছি না। উৎপাদনের চেয়ে চাহিদা বেশি। প্রচুর অর্ডার পাচ্ছি আমরা। কাস্টমারকে আমরা সময়মতো মাল ডেলিভারি দিয়ে আমাদের সার্ভিসটা ঠিক রাখি। আমি মনে করি, এ সাফল্যের কারণ গ্রাহকদের প্রতি আমাদের কমিটমেন্ট আর আমাদের রডের কোয়ালিটি।
শিল্প হিসেবে স্টিলের বাজার কত বড়, এ খাতের ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা কেমন?
স্টিলের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে আমাদের এখানে। উন্নয়নকামী দেশ হিসেবে ব্যাপক অবকাঠামোগত উন্নয়ন চলছে এখানে, যার পুরোভাগেই রয়েছে স্টিল। যে দেশে স্টিলের ব্যবহার যত বেশি, সে দেশ তত উন্নত। আবাসনশিল্পের প্রসারে ক্রমেই বিস্তৃত হচ্ছে এর বাজার। ক্রমবর্ধমান চাহিদার কারণে রডের বাজার সম্ভাবনাও অনেক।

এ শিল্প বিকাশে সরকারের কাছে আপনার চাওয়াটা কী?
সরকারের কাছে চাওয়া নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস ও বিদ্যুৎ। গার্মেন্টস সেক্টরের মতো স্টিল রপ্তানিতেও সরকারের কাছে সব ধরনের সহযোগিতা ও প্রণোদনা চাই। চাই ডিউটি ফ্রি কাঁচামাল আমদানির সুযোগ। আগামী বাজেটে রডের ওপর ১৫ শতাংশ ভ্যাট আরোপের ঘোষণা আসছে, এতে রডের দাম বাড়বে ৭-৮ হাজার টাকা। আশা করি, সরকার বিষয়গুলো বিবেচনায় নিয়ে সবকিছুকে সহনীয় পর্যায়ে আনবে। তা ছাড়া আমদানি-নির্ভর পণ্যের ওপর নির্ভরশীলতা কমিয়ে দেশীয়ভাবে উৎপন্ন মানসম্মত পণ্যের ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। আমদানি-নির্ভরতা কমাতে সরকার বিদেশি পণ্যের ট্যারিফ বাড়াতে পারে। প্রয়োজনবোধে আমদানি নিষিদ্ধ করতে পারে। তবেই প্রাণ পাবে দেশীয় শিল্প। অবকাঠামো উন্নয়নকামী দেশ যেমন- নেপাল, ভুটান কিংবা মিয়ানমারে আমরা স্টিল রপ্তানি করতে পারি। এ ব্যাপারে সরকারের উদ্যোগী ভূমিকা আশা করছি।
ভূমিকম্প মোকাবিলা কিংবা রানা প্লাজা, স্পেকট্রাম গার্মেন্টসের মতো ভবনধসের ক্ষেত্রে আরসিসি নির্মিত ভবন নির্মাণক্রটিজনিত দুর্ঘটনার হাত থেকে রক্ষা করতে প্রিফেব্রিকেটেড স্টিল বিল্ডিং কতটা সহায়ক বলে আপনি মনে করেন?
হাইরাইজ বিল্ডিং খুব দ্রæত নির্মাণ করা যায় বিধায় প্রযুক্তিটি ব্যয়সাশ্রয়ী। এ প্রযুক্তিতেও কিন্তু রড লাগছে। রয়েছে রডের উল্লেখযোগ্য ব্যবহার।
সিএসআরএমের উল্লেখযোগ্য গ্রাহক কারা?
সাধারণ ভোক্তারাই আমাদের গ্রাহক। চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে নতুন নতুন ক্রেতা তৈরি হচ্ছে। অনেক কোম্পানিই নানামাত্রিক অবকাঠামো নির্মাণে আমাদের রড ব্যবহার করছে। তা ছাড়া বড় বা ছোট ফ্যাক্টরি নির্মাণে, ব্যক্তিপ্রতিষ্ঠান বা বাসগৃহ তৈরিতে ব্যবহৃত হচ্ছে চাকদা স্টিল।
আপনাদের স্টিল বিদেশে রপ্তানির সম্ভাবনা কতটুকু?
সরকারের উৎসাহ ও রপ্তানি প্রণোদনা পেলে চাকদা স্টিল বিদেশে রপ্তানির সম্ভাবনা অনেক।

সিএসআরএমকে নিয়ে ভবিষ্যতে আপনার বিশেষ কোনো পরিকল্পনা আছে কি?
গুণগতমান অক্ষুন্ন রেখে উৎপাদনের পাশাপাশি গ্রাহক সেবার মান বাড়াতে চাই। আমাদের উৎপাদিত রডের ক্রয়ক্ষমতা ক্রেতা সাধারণের সামর্থ্যরে মধ্যে রাখতে চাই। দিতে চাই মানসম্মত পণ্যের নিশ্চয়তা।
- প্রকাশকাল: বন্ধন ৭৪ তম সংখ্যা, জুন ২০১৬