অ্যাওয়ার্ড জয়ী চান্দগাঁও মসজিদ

২০১০ সালে আগাখান অ্যাওয়ার্ড জয়ী চট্টগ্রাম শহরের চান্দগাঁও আবাসিকের কাচ মসজিদটি নির্মিত হয় ২০০৭ সালে। স্থপতি কাশেফ মাহবুবের সৃষ্ট অনন্য এ স্থাপনাটি দেখতে দূর-দূরান্ত থেকে প্রতিনিয়ত দর্শনার্থীরা আসে এখানে। নামাজ আদায় শেষে অনেকেই ফিরে যায় মুগ্ধতা নিয়ে।

১০৪৮ বর্গমিটার এলাকা সমৃদ্ধ এই মসজিদের প্রবেশদ্বারেই রয়েছে সুবিশাল প্রবেশপথ। প্রবেশমুখখানা একদম সহজ-সরল এক আয়তক্ষেত্র। আয়তক্ষেত্রের নিরুপদ্রব ব্যবহার স্থপতির সুরুচির পরিচায়ক। কংক্রিটের কাঠিন্য ভেদ করে ভেতরে ঢোকার পরই মন হয় শান্ত। স্নিগ্ধ আলোয় আলোকিত জায়গাটায় দাঁড়িয়ে ইচ্ছে করে মিশে যাই প্রকৃতির মাঝে।

মসজিদের প্রবেশদ্বার। ছবি: আর্কডেইলি

মসজিদের স্থাপনার ক্ষেত্রে স্থপতি ভেবেছিলেন নতুন এক ধারার কথা। মূলত বাংলাদেশ ও মুসলিম বিশ্বে মসজিদের যে ধ্যানধারণা ও স্থাপত্য নকশা রয়েছে, তাতে ডোম ও কারুকাজের ব্যবহার বহুমুখী। এগুলো নিয়ে নতুন কাজ খুব কমই হয়েছে। পুরোনো কাজগুলোকেই এদিক-সেদিক করে স্থপতিরা ডিজাইন করে গেছেন। নতুন কোনো ইনোভেশন ছিল না। সৃষ্টিশীলতায় স্থবিরতা চলে এসেছিল এ দেশের স্থাপত্যেও। স্থপতি সেই স্থবির স্থাপত্যকলাকে দিয়েছেন গতিশীল রূপ। ১০০০ বছরেরও অধিক সময় ধরে বাংলায় চলমান মসজিদের স্থাপত্য ধারণাকে ভেঙেচুরে নতুন উপায় অবলম্বন করে নতুন কিছু করাটা স্থপতির জন্য ছিল বিরাট এক চ্যালেঞ্জ। যার ফলাফলের ওপর দাঁড়িয়েছে আছে মসজিদটি। স্থপতি মনোলিথিক গোলাকার চ‚ড়াকে ভেঙেছেন দুটি সাবলীল অংশে। যেখান দিয়ে অনায়াসে প্রবেশ করে সূর্যের আলো। মসজিদের প্রথম অংশটি অঙ্গন। বাকি পুরোটাই মসজিদ।

ছাদের ওপর চোখের মতো দুটো ফুটো দিয়ে প্রবেশ করে সূর্যালোক। রাতে চাঁদের আলোয় ভরে যায় পুরো মসজিদ। মসজিদের দ্বিতীয় অংশে মিহরাবের অংশটি কেটে ডোমের অংশ দিয়ে ব্যালেন্স করা হয়েছে, যা মসজিদটিকে একটি খোলামেলা, শান্তিময় ও আলোকোজ্জ্বল স্থাপনা হিসেবে প্রতিষ্ঠা দিয়েছে।

মসজিদের অভ্যন্তরস্থ কবরস্থান। ছবি: আর্কডেইলি

মসজিদের স্থাপত্যের ক্ষেত্রে ইসলামের কিছু মূলনীতিকে ধারণ করা হয়েছে। যার মাঝে সাম্য, শান্তি ও ভ্রাতৃত্ববোধ অন্যতম। মসজিদের ভেতরে প্রবেশ করলেই শান্ত হয় মন। সাম্যের বাণীকে প্রকাশ করতে একটি সুবিশাল গোলাকার ছিদ্রের নিচে দাঁড় করিয়ে দেওয়া হয়েছে কাতারকে। কাতারের ওপরের এই ছিদ্র দিয়ে সূর্যের আলো প্রবেশ করতেই জেগে ওঠে সাম্য ও ভ্রাতৃত্ববোধ। মানুষের মনকে নিয়ন্ত্রণের কাজটি সুচারুভাবেই করেছেন স্থপতি কাশেফ মাহবুব। মসজিদটিতে না গেলে, নিজের চোখে না দেখলে কখনোই এর সৌন্দর্য বোঝার নয়। ইসলামের পবিত্রতম বার্তা ধারণ করে জেগে থাকা শ্বেত-শুভ্র এই মসজিদে রইল আপনার নিমন্ত্রণ। গৌরবময় সৌন্দর্য নিয়ে বাংলাদেশে মাথা উঁচু করে দাঁড়ানো চান্দগাঁও আবাসিকের এ মসজিদটির সুশীতল স্নিগ্ধ ছায়াতলে আপনাকে সুস্বাগতম।

স্থপতি রাজীব চৌধুরী
[email protected]

প্রকাশকাল: বন্ধন ৭০ তম সংখ্যা, ফেব্রুয়ারি ২০১৬

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top