হ্যাবিটাটের গল্প স্রষ্টার বয়ানে

মোশেহ সাফদি ফিলিস্তিনের হাফিয়া শহরে জন্ম নেওয়া একজন স্থপতি, যিনি পুরো পৃথিবীতে হ্যাবিটেট স্থাপনার জন্য বিখ্যাত। কিংবদন্তি এই স্থপতির জন্ম সিরিয়ান ইহুদি পরিবারে, ১৯৫৩ সালে। এরপর উদ্বাস্তু হিসেবে ঠাঁই হয় কানাডার মন্ট্রিলে। এখানকার ম্যাকগিল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্থাপত্যে পড়াশোনা শেষে একই বিষয়ে প্র্যাকটিস শুরু করেন। ১৯৬৭ সালে প্রথম আবির্ভাব মন্ট্রিল এক্সপোতে, অভিনব গুচ্ছ প্রিফ্যাব্রিকেটেডের মতো আবাসন প্রকল্পের পরিকল্পনা নিয়ে, নাম যার হ্যাবিটাট (Habitat 67)। সাফদি ম্যাকগিল ইউনিভার্সিটির স্থাপত্যবিদ্যার গ্র্যাজুয়েট থাকাকালীন ছিলেন আমাদের জাতীয় সংসদ ভবনের স্থপতি লুই আই কানের ছাত্র।
১৯৭৮-৮৪ সাল পর্যন্ত হার্ভার্ড গ্র্যাজুয়েট স্কুল অব ডিজাইনের ‘আরবান ডিজাইন প্রোগ্রাম’ চালাতেন, কানাডার অটোয়ার ন্যাশনাল গ্যালারিসহ এমন সব কাজের পর তাঁর অফিস তিনি বোস্টনে সরিয়ে নেন। এখনো অবশ্য আছেন বোস্টনেই। এ ছাড়া তাঁর অফিস আছে জেরুজালেম, সাংহাই আর সিঙ্গাপুরে।

মহান এ স্থপতির উল্লেখযোগ্য কিছু কাজ হচ্ছে জেরুজালেমের Yad Vashem হলোকাস্ট হিস্টোরি মিউজিয়াম (১৯৭৬-২০০৫), বেনটনভিল (আরকানসাসের) ক্রিস্টাল ব্রিজ, মিউজিয়াম অব আমেরিকান আর্ট (২০০৫-২০১১) এবং সিঙ্গাপুরের মেরিনা বে স্যান্ড (২০০৬-২০১১)। তিনি এখনো বড় ধরনের মিক্সড ম্যাটেরিয়ালের কাজ করছেন এশিয়া ও মধ্যপ্রাচ্যে। ভবিষ্যতে প্ল্যান আছে লোয়ার ম্যানহাটনে একটি আবাসিক ভবন নির্মাণের। ব্যক্তিগত জীবনে তিনি মিশেল রনেনের স্বামী, যিনি একজন সমাজকর্মী ও ফটোগ্রাফার।

আপনি তো ৫০ বছর ধরে আপনার নিজের অফিস চালাচ্ছেন আর আপনার ডিজাইনকেও আন্তর্জাতিক মানের বড় বড় কাজে নিয়ে গেছেন। এটাকে অভ্যাসে পরিণত করলেন কীভাবে?
দেখুন, এটা ক্রমবর্ধমান কর্মকান্ড। আমি আবাসন ও নগরায়ণের ওপর হ্যাবিটাট বা একই রকম কিছু প্রজেক্টের মতোই মৌলিক কনসেপ্ট নিয়ে কাজ করি। প্রথম দিকে ডেভেলপাররা আমাকে নিয়ে কাজ করতে ভয় পেতেন, তাঁরা আমাকে দেখতেন একজন স্বপ্নদ্রষ্টা হিসেবে। তারপর আমরা নিজেদের প্রতিষ্ঠা করি কালচারাল বিল্ডিংয়ের স্থপতি হিসেবে। এবং পরে ১৯৮৩-৮৮ সালে করা কানাডার ন্যাশনাল গ্যালারির মতো কাজের গতিবিধির ওপর খেয়াল রাখলে দেখা যায়, আমরা বিশ্বব্যাপী কালচারাল রিলমে কাজের ভার পেতে শুরু করেছি। কিন্তু মিক্সড ইউজড এবং নগরায়ণের কাজে প্রবেশপথ হিসেবে আমাদের প্রবেশদ্বার ছিল সিঙ্গাপুরের মেরিনা বে স্যান্ডস। এটার সাফল্যের পর নিয়মিতভাবে আমরা এ ধরনের আর্কিটেকচার করতে শুরু করি। এখন আমরা কল্পনায় ৫০ বছর আগে ফিরে যেতে পারি এবং হ্যাবিট্যাট-পরবর্তী পুষে রাখা আইডিয়াগুলোকে স্মরণ করতে পারি।

মেরিনা বে স্যান্ডস, সিঙ্গাপুর

এতে কি আপনার কোনো পরিকল্পনা ছিল?
না! আমি একটামাত্র কৌশলই অবলম্বন করেছিলাম, সেটা হলো কোনো স্পেশালাইজড কাজ না করা। আমরা অনেক মিউজিয়ামের কাজ পেতে শুরু করলাম, আমি তখন একটা লাইব্রেরি করারও চেষ্টা করলাম এবং করেও ফেললাম। একটা এয়ারপোর্টের কাজ নেওয়ারও চেষ্টা করলাম। এবং আমরা যে ধরনের শহরায়ন বা স্থাপত্য ব্যবহার করতাম, তার সঙ্গে খুব কম অফিসই পরিচিত ছিল।


কীভাবে মেরিনা বে স্যান্ডস প্রজেক্টটা পেলেন?
আমাকে কাজটা করতে হয়েছিল কারণ, মেরিনা বে স্যান্ডের নির্মাতা প্রতিষ্ঠান সেলডন অ্যাডেলসন ওপেনিং নাইটেই (উদ্বোধনী অনুষ্ঠানেই) আমাকে কাজটা নিতে অনুরোধ করেছিল। এটা একটি মুক্ত প্রতিযোগিতা ছিল। আমি এটাই বলতে চাই, প্রতিযোগিতায় গেলে আমরা যা করি তার অর্ধেকেরও বেশি আইডিয়া নরমালি বেরিয়ে আসে।

আপনার তো এখন অন্তত তিনটা মহাদেশে কাজ চলছে। কিন্তু আপনার অফিসের ১০০ জনের বেশি কখনোই একসঙ্গে তেমন একটা এদিক-সেদিক মুভ করেন না। এটা আপনি কীভাবে ম্যানেজ করেন?
প্রথমে আমাকে এটা বলতে হবে যে এটা এসেছে ষাটের দশকে লুই কানের সঙ্গে কাজ করার সময় থেকে। কান আমাকে শিখিয়েছিলেন তোমাকে কাজের প্রতিটা অংশের সঙ্গেই সমান প্যাশন নিয়ে ইনভলভ হতে হবে, স্কেচিং থেকে শুরু করে দরজার হাতলে স্ক্রু লাগানো পর্যন্ত। আমি সেটাকেই আমার স্থাপত্য নির্মাণের উপায় হিসেবে বেছে নিয়েছি। সেটাই আমাকে দেখিয়ে দেয় কোথায় আমাকে নিজে ইনভলভ হতে হবে আর কোথায় নয়।

চোংকিং ছাওতিয়ানমেন, চীন

তো, আপনি নিজেই ডিজাইন-সংক্রান্ত সব সিদ্ধান্ত নেন?
হ্যাঁ, অবশ্যই তা কখনোই আমার মেধাবী সহকর্মীদের অবদানকে ছোট করে না, তাঁদের অনেকেই আমার সঙ্গে ২০/৩০/৪০ বছর পর্যন্ত আছেন। আর দ্বিতীয় বিষয়টি হচ্ছে, স্থানীয় সহকারী স্থপতিদের সঙ্গে খুব ভালো সম্পর্ক গড়ে তোলা।

এটা কীভাবে কাজ করে?
আমরা তাঁদের বোস্টনে আমাদের অফিসে নিয়ে আসি। সেখানে আমরা ডিজাইনের কাজ করি। তাঁরা আমাদের সঙ্গে ডিজাইনের পর্যায়ে থাকেন, যাতে তাঁরা ডিজাইনের অংশ হতে পারেন। আর আমাদের অফিসের সামনের বাড়িটাই আমাদের হোটেল। কাজ শেষ হয়ে গেলে আমরা আবার তাঁদের সাইটে ফেরত পাঠাই এবং তাঁদের সঙ্গে আমাদের লোকজনকেও পাঠাই, যাঁরা প্রোডাকশন শেষ না হওয়া পর্যন্ত তাঁদের সঙ্গে তাঁদের অফিসে কাজ করেন। অবশ্যই পাঠাই, কোনোক্রমেই বাদ দিই না। আর এভাবেই আমাদের মধ্যে একটি সুসম্পর্ক গড়ে ওঠে এবং তা বজায় থাকে।

আর সেটাই হলো লুই কানের সঙ্গে আপনার পার্থক্য যে আপনি কখনোই ভেঙে পড়েন না!
একদম সত্যি।

আপনি আপনার কাজের মডেলটাকে খুব সাফল্যময় করেছেন কীভাবে?
আমি মনে করি, ডিজাইন ফেইজে আমরা খুব পটু। আমাদের দলগত সাফল্য রয়েছে। আমরা দলীয়ভাবে কাজ করলে খুব তাড়াতাড়ি শেষ করতে পারি। আমি খুব দ্রæত সিদ্ধান্ত নিতে পারি। আমি মজা করছি না। জেনে রাখুন, আমার ভেতর সেটা নেই। আর একটা বড় ফার্মে অনেক আমলাতান্ত্রিক জটিলতা এবং অনেক জটিল কাজ থাকে।

হ্যাবিট্যাটের বয়স তো এখন প্রায় ৫০ হয়ে গেল। আপনার করা প্রথম কাজটাই আপনাকে আন্তর্জাতিক পর্যায়ের সাফল্য এনে দিয়েছে এবং সর্বশেষ আপনাকে নিউজউইকের কাভারেও এনেছে… এবং কিছু কিছু সমালোচকদের মতে, আপনার কাছে গোপন নেই অবশ্য, এটাই আপনার সর্বশ্রেষ্ঠ কাজ। আপনার চিন্তাকে প্রসারিত করতে হ্যাবিটাটের ভূমিকা কী? খুব পরিষ্কারভাবে দেখা যায়, আপনার সা¤প্রতিকতম কিছু কাজে হ্যাবিটাটের ছাপ রয়েছে।
আমি নিজেও বুঝে উঠতে পারি না যে মাত্র ২৫ বছর বয়সে, কোনো ভবন নির্মাণের আগে কোনো অভিজ্ঞতা ছাড়াই এত জটিল কিছু এ রকমভাবে একসঙ্গে খাপ খাবে। এটা ছিল টেকনিক্যালি এবং ধারণাগত দিক দিয়ে চরম মাত্রায় সফিস্টি কেটেড। অনেক লোকই চাইছিল টেরেসওয়ালা/বারান্দাওয়ালা ভবন এবং দৃঢ় স্থাপনা। ভেসে বেড়ানো হাজারো আইডিয়া এবং কিছু নতুন আইডিয়া এই ভবন নির্মাণে এক হয়েছিল, যেগুলো ছিল প্রিফেব্রিকেশনের প্রযুক্তিসম্পন্ন এবং জায়গার নতুন ধরনের ত্রিমাত্রিক ব্যবহার যাকে বলে ‘আরবান জোনিং’। এটা ছিল একটা পূর্ণাঙ্গ নতুন চিন্তাধারা, একাধিক বহুতল ভবনবিশিষ্ট কমপ্লেক্সের ক্ষেত্রে। এটা আমার এবং অন্যদের ক্ষেত্রেও নতুনভাবে চিন্তাভাবনা করার দ্বার খুলে দেয়। এটাই এই আইডিয়ার শক্তি। সাধারণ জনগণের জন্য এটি ছিল একটা ঝুলন্ত উদ্যানে পরিপূর্ণ শহর এবং গ্রামের মিশেল, যেটা সেই সময়ে চিন্তারও বাইরে ছিল। তখন অনেকেই আমার চিন্তাভাবনা পড়তে পারেননি। এবং এটা অনেকের জন্য অসম্ভব মনে হয়েছিল।

মোশেহ সাফদির ডিজাইন স্টুডিও

ব্যক্তিগতভাবে আমি মনে করি, আমার জীবনের প্রথম দিকে আমি এমন কিছু অর্জন করি, যা আমাকে বাকি জীবন চলতে অনুপ্রেরণা জোগায়। এতে দোষের কিছুই নেই। এই পথে চলতে গিয়ে আমি দেখি, আরও অনেক ব্যাপারই আছে, যেটা হ্যাবিটাট বানানোর সময় উপেক্ষিত হয়ে এসেছে। যেমন regionalism এবং contextualism। আমি জেরুজালেমে ভবন বানানোর সময় সেটা লক্ষ করি আর সেটা প্রয়োগ করি কানাডিয়ান কাজে, যখন যেখানে কাজে লাগে।

আপনার সা¤প্রতিকতম নির্মাণকাজের মধ্যে শ্রীলঙ্কার কলম্বোতে কিংবা ২০১০ সালে চায়নার ড্রিম বের নির্মাণে আপনি হয়তো বাগান, টেরেস, ভেতরে-বাইরের স্পেস এগুলোর সঙ্গে হ্যাবিট্যাটের ব্যাপক ছায়া পাবেন। কিন্তু এখানে একটি ব্যাপকতার বিষয় আছে। আপনার মিশ্র মাধ্যমে নির্মিতব্য আবাসিক কাজগুলোর মধ্যে চায়নার চোংকিংয়েরটাই সম্ভবত আপনার বৃহত্তম কাজ হতে যাচ্ছে, তাই নয় কি? আপনি প্রায়ই স্থাপত্যে শহরায়নের এবং মানবিক ছাপ রাখার কথা বলেন। আপনি কীভাবে চোংকিংয়ের মতো এত বিশাল একটা ডিজাইন করলেন?
আমরা আলো-বাতাসের প্রবেশপথের শ্রেণিবিন্যাস নিয়ে যে কেরামতি করেছি, সেটাই এ রকম জটিল একটা প্রজেক্টকে সর্বজনীন গ্রহণযোগ্যতা দিয়েছে। এ রকম সমস্যা প্রায় সব প্রকল্পেই হয় কিন্তু যখন আপনি চোংকিংয়ের কথা বলেন তখন অবশ্যই এটা গায়ে লাগানোর মতো একটা ব্যাপার, এটা আরও চ্যালেঞ্জিং হয়। কেবল পোডিয়ামটাই প্রায় ১০ লাখ স্কয়ার ফিটের। অনেক দরজাপথবিশিষ্ট আটটি টাওয়ার আছে, আর আছে পাতাল রেল এবং বাসস্টেশন। এটাকে তাই এমন গঠন দিতে হবে, যাতে মানুষ বুঝতে পারে যে সে কোনখানে আছে। আপনাকে দিনের বেলায় সূর্যালোক প্রবেশ করা নিশ্চিত করতে হবে এবং প্রতিটি লেভেলের সঙ্গে বাইরের অংশের সংযোগ নিশ্চিত করতে হবে। আলো এবং দিক দুটোর কথা চিন্তা করেই আপনাকে টাওয়ার বসাতে হবে। ওরিয়েন্ট ফ্যাংশন করতে হবে বাড়িগুলো যাতে দক্ষিণমুখী হয়। শহরায়নের সমাবেশ করতে হলে একগাদা জিনিসের একীভূতকরণ আবশ্যিক। আফসোসের বিষয় এটাই যে এগুলোর অনেক কিছুই এখন আর লোকের দৃষ্টি আকৃষ্ট হয় না। যদিও আনুষ্ঠানিকভাবে এগুলোর প্রয়োগ বেশি, তারপরও আপনি যখন টাওয়ারকে আলো প্রবেশ বা দেখার মতো করতে কলাকৌশল প্রয়োগ করবেন, তখন আপনি খুব আশ্চর্যজনক কোনো কিছু দেখতে পাবেন!

খালসা হেরিটেজ মেমোরিয়াল কমপ্লেক্স, ভারত

চোংকিংয়ের মতো দ্রæত বর্ধনশীল মেগা স্ট্রাকচারের সঙ্গে নির্মিতব্য জায়গার সম্পর্ক কী? যেখানে জায়গাটার তেমন ঐতিহাসিক গুরুত্ব বেশ কমই রয়েছে?
চোংকিংয়ের একটাই ইতিহাস আর সেটা হলো, এটা আগাছার মতো বেড়ে ওঠা একটা গতানুগতিক শহর। তো এটাকে আরও গভীর অর্থ প্রদান করতে আমি ভালোভাবে চিন্তা করে দেখলাম, এটাই এই শহরের উৎপত্তিস্থল, যেখানে বিশাল একটি পরিবহনশিল্প/জাহাজ ব্যবসা গড়ে উঠেছিল, ইয়াংযেতে। তাই এটার অনুপ্রেরণা ছিল ‘বন্দর/প্রবেশদ্বার’ এবং ‘পরিবহন’। প্রজেক্টটা দেখতে হয়েছিল অনেকটা পালতোলা জাহাজের মতো, সানক্রিনটাকে ব্যবহার করেছিলাম পালের অনুরূপ হিসেবে। ভবনগুলোর আকৃতি নদীর দিকে এমনভাবে ঝোঁকানো ছিল যে দেখে মনে হচ্ছিল এটা শহরটাকে নদীর দিকে টেনে নিয়ে যাচ্ছে।

সিঙ্গাপুরের জুয়েল চাঙ্গি এয়ারপোর্ট সম্বন্ধে কিছু বলুন, যেটাকে আসলে এয়ারপোর্ট বলে মনেই হয় না, মনে হয় একটা গ্লাস ডোমের বিশাল ডেস্টিনেশন পার্ক…
এটা ২০ লাখ স্কয়ার ফিটের একটা বাসস্টেশন, রেললাইন এবং দোকানের কম্বিনেশন। কিন্তু আমরা এটাকে খুব স্পেশাল বানাতে চেয়েছিলাম, তাই আমরা একটা বিশাল বাগান বানানোর প্রস্তাব দিয়ে বসলাম।

এটা তো একটা এয়ারপোর্টের সাপেক্ষে একেবারেই অন্য রকম। আচ্ছা, আপনি কি অনুভব করেন, প্রাচ্যে উত্তর আমেরিকার/আমেরিকা-কানাডার চেয়ে বেশি কাজের স্বাধীনতা রয়েছে? তারা কি আরও উদার? অবশ্য চীনের প্রেসিডেন্ট বলেছিলেন আর কোনো উদ্ভট বিল্ডিং নয়, এ কথা বাদ দিয়ে??
এশিয়ায় ওরা অনেক উদার। ওরা আধুনিক এবং সনাতনী দুই রকমকেই একীভূত করে। এটারও ভালো-খারাপ দিক আছে। আমার ক্ষেত্রে আমি আমার আধুনিক আইডিয়াগুলোকে ব্যবহার করতে পেরেছিলাম, যেগুলো আমি নর্থ আমেরিকায় পারিনি। খারাপ দিকটা হচ্ছে, সনাতনী যেকোনো কিছুই যখন অপ্রচলিত কোনো কিছুর সঙ্গে একসঙ্গে ব্যবহার করা হয়, তখন এটার অপব্যবহার হতে পারে। সুতরাং, তাদের নতুনত্বের প্রতি উদারতা ডিজাইনারকে আরও বেশি দায়িত্বশীলতার পরীক্ষার মধ্যে ফেলে বা বয়ে নিয়ে আসে।

সল্ট লেক সিটি পাবলিক লাইব্রেরী, যুক্তরাষ্ট্র

অফিসে আপনার ডিজাইনের সবকিছুর ওপর আপনার নিয়ন্ত্রণ দেখে যা মনে হলো, আপনার কি ধারাবাহিক পরিকল্পনা আছে?
হ্যাঁ। গত পাঁচ বছরে আমি নতুন প্রজন্মকে এই পেশায় এনেছি, যাকেই আমি মনে করেছি ভেতরে মৌলিকত্ব আছে, তাকেই আমি প্রতিষ্ঠানের একটা অংশীদারি দিয়ে দিয়েছি (বা বিক্রি করেছি, অনেক কম দামে)। আমি এটা গতানুগতিকভাবে না করে একটু ভিন্নভাবে করেছি, যাতে তারা মনে করে তাদের ভেতরে যে মৌলিকত্ব আছে, সেটার চর্চা চালিয়ে যাওয়া উচিত। অবশ্যই, আমি আশা করব, আমাদের যে প্রজেক্টগুলো আছে, সেগুলো তারা যথাসময়ে শেষ করবে। কারণ, তারা ইতিমধ্যে আমার অফিসে পাঁচ বছর সময় পার করেছে। কিন্তু আমি চাই সবাই তার স্বরূপে আসুক, সেটা যে রকমই হোক না কেন। তাই আরও পাঁচ বছর আমার নামেই কাজগুলো চলবে, তারপরে দরকার পড়লে তারা নাম পরিবর্তন করবে।

যা হোক, আপনার চর্চা এবং আপনার প্রকল্প অন্য রকমভাবে বেড়ে উঠেছে কিন্তু কিছু জিনিস কোনো দিনও পরিবর্তন হয় না।

আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।
ধন্যবাদ আপনাকে ও পাঠকদের।

অনুবাদ: স্থপতি রাজীব চৌধুরী

প্রকাশকাল: বন্ধন ৭১ তম সংখ্যা, মার্চ ২০১৬

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top