বাড়ি নির্মাণের জন্য বাজারের একটি দোকান থেকে সিমেন্ট কিনেছিলেন তিনি। কিন্তু বিক্রেতা প্রতারণার মাধ্যমে তাঁর প্রতিশ্রুতি দাম থেকে রাখেন বাড়তি দাম, যা ছিল একধরনের প্রতারণা! তাই সিদ্ধান্ত নেন নিজেই করবেন সিমেন্ট ব্যবসা। পণ্য বিক্রি করবেন ন্যায্য ও প্রতিশ্রুতি মূল্যে। মাত্র এক মাসের মধ্যেই দোকান নিয়ে শুরু করেন সিমেন্ট ব্যবসা। ব্যবসায়িক কৌশল, পরিশ্রম ও দূরদর্শিতায় নিজেকে একজন সফল নির্মাণপণ্য ব্যবসায়ী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন বরিশালের বানারীপাড়া চাখার বাজারের ‘মা বাবার দোয়া ট্রেডার্স’-এর স্বত্বাধিকারী মো. আব্দুর রহিম মোল্লা। বানারীপাড়ায় মো. আব্দুর রহিম মোল্লার প্রতিষ্ঠানে বসে তাঁর সাফল্যের গল্প জেনে এসে বন্ধন পাঠকদের জানাচ্ছেন মাহফুজ ফারুক।
সহযোগিতায় ছিলেন আকিজ সিমেন্ট কোম্পানির সিনিয়র টেরিটরি সেলস অফিসার রবিউল হাসান রবিন।
নদীমাতৃক জনপদ বরিশাল। চাখার বাজারের পাশ দিয়ে বয়ে চলেছে বৈচিত্র্যময় প্রমত্তা নদী সন্ধ্যা। বর্ষায় অনেকাংশই থাকে পানিতে পূর্ণ। ফলে এখানে নির্মাণপণ্য ব্যবসায় হতে হয় কিছুটা কৌশলী। এ জন্য প্রথমে তিনি স্বল্প পরিসরে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের সিমেন্ট বিক্রি করতেন। পরবর্তী সময়ে একজন শুভাকাক্স্ক্ষী প্রকৌশলীর পরামর্শে শুরু করেন আকিজ সিমেন্ট বিক্রি। স্বল্প সময়ে গুণগতমানের এ পণ্যটি বিক্রিতে পান ব্যাপক সাফল্য। প্রথম মাসেই প্রত্যাশার থেকে অনেক বেশি পরিমাণ সিমেন্ট বিক্রি করেন। এরপর প্রতি মাসেই বাড়তে থাকে বিক্রির পরিমাণ। ফলে দ্রæতই এলাকায় হয়ে ওঠেন একজন সেরা বিক্রেতা। বেশ কিছুদিন খুচরা বিক্রির একপর্যায়ে কোম্পানির এক প্রতিনিধির পরামর্শে গ্রহণ করেন ডিলারশিপ। শুরুতে প্রাইম ডিলার হলেও পরে হন পূর্ণাঙ্গ ডিলার। ডিলার ভিত্তিতে মুনাফার পরিমাণ অধিক হওয়ায় বড় পরিসরে ব্যবসা করার উৎসাহ বেড়ে যায়।
ব্যবসায়ী মো. আব্দুর রহিম মোল্লা ১৯৮৪ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি চাখার, বরিশালে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর বাবা রহমান মোল্লা ও মা নাসিমা বেগম। বাবা ধান-চালের ব্যবসা করতেন। সে সূত্রেই বাল্যকাল থেকেই ওই ব্যবসাটিতে তিনি সময় দিতেন। ব্যবসার প্রতি ঝোঁক থাকার কারণে স্কুলের গন্ডি পেরোনো হয়নি তাঁর। পেশাগতজীবনের শুরুতে তিনি নিজেও ধান-চালের ব্যবসায় জড়িয়ে পড়েন। দীর্ঘ আট বছর এই ব্যবসা করেছেন। পাশাপাশি করেছেন পাটকাঠির ব্যবসা। ২০১৫ সালে শুরু করেন নির্মাণপণ্য ব্যবসা। যদিও ওই দোকানি তাঁকে দুই মাসের বেশি টিকতে পারবে না বলে তাচ্ছিল্য করেছিলেন। কিন্তু তিনি দমে যাননি। বরং চ্যালেঞ্জ হিসেবে নেন। বর্তমানে তিনি আকিজ সিমেন্ট কোম্পানির বানারীপাড়া, বরিশাল টেরিটরির একজন বিজনেস অ্যাসোসিয়েট। নির্মাণপণ্যের মধ্যে রয়েছে সিমেন্ট ও রড।
প্রতিটি ব্যবসায়ীর সফলতার পেছনে থাকে নানা মাধ্যম। রহিম মোল্লার উত্থানের পেছনে রয়েছে এমন এক মাধ্যম, যা তাঁর ব্যবসা উন্নয়নে রেখেছে দারুণ ভূমিকা। আর সেটি হচ্ছে তাঁর বাইসাইকেল! বাজারের অদূরেই তাঁর গ্রাম। প্রতিদিন গ্রাম থেকে সাইকেল চালিয়ে তিনি বাজারে আসতেন। এরপর দোকান খুলে কিছুক্ষণের মধ্যেই বেরিয়ে পরতেন সাইকেল নিয়ে। দোকানে তখন বসত তাঁর ছেলে। তিনি বিভিন্ন নির্মাণ সাইটে ঘুরে আকিজ সিমেন্টের গুণাগুণ তুলে ধরতেন। চেষ্টা করতেন পুরো প্রকল্পে সিমেন্ট সরবরাহ করতে। এভাবে স্থানীয় প্রকৌশলী, ভবন নির্মাতা ও রাজমিস্ত্রিদের সঙ্গে গড়েন দারুণ সম্পর্ক। তা ছাড়া ব্যবসায় প্রচুর শ্রম ও সময় দেওয়ায় ক্রমেই বাড়ে প্রসার। পরিবেশক পর্যায়ে ব্যবসা শুরুর পর থেকে এখন পর্যন্ত ১৯ জন খুচরা বিক্রেতা রয়েছে তাঁর আওতায়, যা বাড়ছে প্রতিনিয়তই।

ব্যবসায়ী মো. আব্দুর রহিম মোল্লা বিয়ে করেন ২০০৭ সালে। স্ত্রী রিক্তা বেগম। এ দম্পতির দুই ছেলে। বড় ছেলে রুমান ইসলাম, চাখার শের-ই-বাংলা ফজলুল হক ইনস্টিটিউট থেকে মাধ্যমিক পরীক্ষা দেবে। ছোট ছেলে রবিউল ইসলাম রহম আলী দরবার মাদ্রাসায় ৩য় শ্রেণিতে অধ্যয়নরত। ব্যবসার পাশাপাশি সামাজিক ও ধর্মীয় অঙ্গনের সঙ্গেও জড়িত। তিনি তাঁর গ্রামের মসজিদের সভাপতি। এ ছাড়া স্থানীয় উন্নয়নমূলক কাজে রয়েছে তাঁর সরব উপস্থিতি।
ব্যবসায় কখনো কোনো সমস্যা দেখা দিলে রহিম মোল্লা বুদ্ধিমত্তার সঙ্গেই তা সমাধান করেন। তাঁর মতে, ব্যবসার সফলতায় চাই পরিকল্পনা; পরিকল্পনামাফিক এগোলে ব্যবসায় উন্নতি সম্ভব!
একনজরে
ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের নাম: মা বাবার দোয়া ট্রেডার্স
স্বত্বাধিকারীর নাম: মো. আব্দুর রহিম মোল্লা
অবস্থান: চাখার বাজার, বানারীপাড়া, বরিশাল
ব্যবসা শুরু: ২০১৫ সালে
নির্মাণপণ্য: রড, সিমেন্ট
মাহফুজ ফারুক
প্রকাশকাল: বন্ধন ১৫০ তম সংখ্যা, ফেব্রুয়ারি ২০২৩