প্রাক-কথন
ঢাকায় এখন বৃষ্টি না হতেই সর্বত্র জলজট ও জলাবদ্ধতা। ২০-২৫ মিলিমিটারের বৃষ্টিতেও অনেক জায়গায় জলজট বা জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। আগে এই সমস্যাটিকে জলাবদ্ধতা বলা হলেও অন্যান্য বিভিন্ন ‘জট’-এর মতো অনেকে ইদানীং একে রঙ্গ করে জলজট বলতেও শুরু করেছে। বিশেষ করে ঢাকা ওয়াসার বর্তমান ব্যবস্থাপনা পরিচালক তাকসিম এ খান তো ঢাকায় জলাবদ্ধতার বিষয়টি গ্রহণ করতে নারাজ। তাঁর দৃষ্টিতে ঢাকায় এখন আর জলাবদ্ধতা হয় না, জলজট হয় এবং তাও সাময়িক! কিন্তু বাস্তবতা কি তাই? নগরীর কিছু জায়গায় তো সারা বছরই থাকে জলজট বা জলাবদ্ধতা। ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ-ঢাকা ট্র্যাঙ্গেল সংক্ষেপে ‘ডিএনডি’ যার অন্যতম উদাহরণ। একদা বন্যার প্রকোপ থেকে জায়গাটিকে সুরক্ষার জন্য দেওয়া হয় বাঁধ, যার ফলে পানি নিষ্কাশনব্যবস্থা অকার্যকর হয়ে পড়ায় ডিএনডি এলাকা শিকার হয় জলাবদ্ধতার। যথাযথভাবে সড়ক ও ড্রেন নির্মাণ করায় দেশের আরও অনেক জায়গায় এই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। এ ছাড়া অপরিকল্পিতভাবে সড়ক নির্মাণ না করা, উপর্যুপরি খনন, নিয়মিত ড্রেন ও পয়োনিষ্কাশন লাইন পরিষ্কার না করা, যত্রতত্র ময়লা-আবর্জনার স্তূপ করে রাখা, সমন্বয়হীন উন্নয়ন ইত্যাদির কারণেও জলাবদ্ধতা দেখা দেয়।
আগে মানুষ এমনকি শহর এলাকায়ও সরাসরি শহরের পুকুর-নদী-ঝিল-ডোবার পানি পানের পাশাপাশি তা গৃহস্থালির কাজে ব্যবহার করত। প্রতিবছর বন্যা হতো অর্থাৎ ‘বন্যার সঙ্গে বসবাস’ বা Live with Floods ছিল বাংলার মানুষের জীবনদর্শন। খাল-নালা-নদী দিয়ে Gravity Flow তে বর্জ্য ও পয়োনিষ্কাশন হতো। সে সময় ঢাকায় প্রায় প্রতিবছর বন্যা হতো, যাতে শহরের ময়লা-আবর্জনা পরিষ্কার হতো। কিন্তু নগরীতে জনসংখ্যার নিয়ন্ত্রণহীনতা এবং অপরিকল্পিতভাবে ভরাট ও বসতবাটি তৈরির কারণে সর্বত্র ময়লা-আবর্জনায় স্তূপ ও খাল-নালা-জলাধারগুলো ক্রমেই বেদখল হতে শুরু করে। বিভিন্ন সময়ে এই প্রবণতা বন্ধ করার জন্য কিছু আইনকানুন ও পরিকল্পনা যে গ্রহণ করা হয়নি তা কিন্তু নয়, বাস্তবে এর কোনোটিরই যথাযথ প্রয়োগ না হওয়ায় কাঙ্খিত ফল পাওয়া যায়নি।

খাল-নদী-ঝিলের শহর ঢাকা
ধলেশ্বরী-শীতলক্ষ্যা-বুড়িগঙ্গা-বালু-টঙ্গী-তুরাগ নদী পরিবেষ্টিত ঢাকাকে অনেকে অন্তর্দ্বীপ বলে থাকে। একদা এর ওপর দিয়ে প্রবাহিত হতো অনেক খাল ও উপ-নদী। এসব খাল-বিলের মাঝে অনেক দ্বীপ-উপদ্বীপও ছিল, যেমন সে সময় পুরান ঢাকা ধোলাইখালের নিম্নাঞ্চলে নারিন্দা একটা দ্বীপই ছিল (যা ইতিহাসের পাতায় ‘নারায়ণের দ্বীপ’ নামে পরিচিত)। একইভাবে নগরীর উত্তর-পূর্ব ও পশ্চিম দিকের বিস্তৃতি নিম্নাঞ্চলে আরও বিভিন্ন আকৃতির অনেকগুলো দ্বীপ-উপদ্বীপ ছিল। পুরান ঢাকার লালবাগে পাশে ‘নসলামবাগ’ তো অল্প কিছুদিন আগ পর্যন্ত ছিল একটা দ্বীপ। কিন্তু দুঃখের বিষয়, আজ কোথাও এসব দ্বীপ-উপদ্বীপের অস্তিত্ব নেই। অনেকে বলেন, প্রথমদিকে ঢাকায় ৬০-৬৫টির মতো খাল-নদী ছিল। ধোলাই খাল বুড়িগঙ্গা নদী ও মতিঝিল-রামপুরা হয়ে বালু ও শীতলক্ষ্যা নদীর সঙ্গে সংযুক্ত ছিল। শহরের মধ্য দিয়ে পান্ডু নামে আরেকটি চওড়া নদী ছিল। সম্ভবত আরামবাগ-সেগুনবাগিচা খাল, রমনা-বেগুনবাড়ী ও পরিবাগ খাল দিয়ে এটি ধানমন্ডি-কলাবাগান-তেজগাঁও খালের সঙ্গে সংযুক্ত ছিল, যার এখন আর কিছুই অবশিষ্ট নেই।
বাস্তবে যুগে যুগে এভাবে ঢাকার প্রায় সব খাল ভরাট ও বেদখল হয়ে রাস্তা ও ঘরবাড়িতে পরিণত হয়েছে। অথচ একদা বিভিন্ন জীব-বৈচিত্র্যে পরিপূর্ণ এসব খাল-উপনদীগুলোই ছিল ঢাকার প্রধান পরিবহন পথ। তন্মধ্যে কিছু খাল-ঝিলের নামে তো স্থানীয় জায়গারও নাম হয়ে যায়। যেমন মতিঝিল, হাতিরঝিল ইত্যাদি। পুরান ঢাকায় ধোলাই খালের ওপর ‘লোহার পুল’ ও ‘কাঠের পুল’ বা তেজগাঁওয়ে কারওয়ান খালের ওপর ‘আম্বর সেতু’ ইত্যাদি তখন শহরবাসীর চিত্তবিনোদনের জায়গা ছিল। সে সময় বালু নদীর সঙ্গে রামপুরা-হাতিরঝিল-তেজগাঁও-বেগুনবাড়ী-কলাবাগান-ধানমন্ডি-ইব্রাহিমপুর-কল্যাণপুর খাল দিয়ে তুরাগ নদীর সংযোগ ছিল। প্রকাশমতে, ভাওয়াল রাজা ময়মনসিংহ এই খাল-নদীপথ দিয়ে ঢাকায় আসা-যাওয়া করতেন। পিলখানা ও হাতিরঝিলে তাঁর হাতিবহরের আস্তাবল ছিল। পর্তুগিজরাও নাকি ওই নৌপথ দিয়েই ঢাকায় প্রবেশ করে তেজগাঁওয়ে তাঁদের বসতি গড়ে তুলেছিল। সেই সময় এই নৌপথটি যে কত চওড়া ছিল, তা সা¤প্রতিককালে হাতিরঝিল-বেগুনবাড়ি খালের (সোনারগাঁও হেটেলের দক্ষিণে) পুনঃউন্নয়নকৃত অংশ দেখলে সহজেই অনুমান করা যায়।
ইতিহাসে দেখা যায়, হাতিরঝিল-তেজগাঁও-কলাবাগান-ধানমন্ডি এলাকায় তৎকালীন ঢাকা দ্বিখন্ডিত ছিল। বুড়িগঙ্গা-তুরাগ-বালু নদী থেকে বিভিন্নগুচ্ছে অনেক খাল-নালা ও উপ-নদী প্রবাহিত হয়ে শহরের মধ্যখানে এই জায়গাটায় মিশে ছিল। অনেকে এই হারিয়ে যাওয়া নৌপথটিকে পান্ডু নদী বলে থাকেন। যাকে কেন্দ্র করে সে সময় তৎকালীন ঢাকার উত্তর সীমানার নৌপথভিত্তিক তেজগাঁও শিল্প এলাকা, মোহাম্মদপুরে কৃষিপণ্যের বাজার, রায়ের বাজারে ট্যানারি শিল্প গড়ে উঠেছিল বলে শোনা যায়। বুড়িগঙ্গার মতো এই খাল-নদী পথের দুই ধারেও গড়ে উঠেছিল বিভিন্ন পেশার জনমানুষের বসতি ও ব্যবসা-বাণিজ্য। তন্মধ্যে মগবাজার, উলন, মালিবাগ, রামপুরা, দাসপাড়া, কামারপাড়া ইত্যাদি নামের জায়গাগুলো এখনো স্বমহিমায় দাঁড়িয়ে আছে, যদিও এসব জায়গায় এখন আর সংশ্লিষ্ট পেশার লোকজনের বসতবাটি নেই।

মোগল তথা ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনামলে ঢাকায় অনেক স্থাপনা নির্মিত হয়েছিল এসব খাল-নদী ও জলাশয়ের সৌন্দর্যকে ভিত্তি করে। প্রায় প্রতিটা স্থাপনের আশপাশে ছিল বিভিন্ন ধরনের জলরাশি। ‘শহর ঢাকা’ খ্যাত জায়গায় ‘সাত গম্বুজ মসজিদ’টি নির্মিত হয়েছিল ধানমন্ডি-রায়েরবাজার এলাকার বিস্তীর্ণ জলরাশির ধারে, যা পশ্চিমে তুরাগ নদী পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল। পাকিস্তান আমলে এর পশ্চিম ও আশপাশের ধানক্ষেত ও নিচুজমিতে ‘ধানমন্ডি’ শহরটির পরিকল্পনা করা হয়। একইভাবে ভোলা খালের উপকণ্ঠে গুলশান-বনানী মডেল টাউন প্রতিষ্ঠা করা হয় এবং এসব খালের শাখা-প্রশাখাকে গড়ে তোলা হয় রমনা, ধানমন্ডি ও গুলশান-বনানী-বারিধারার লেক আকারে। আগে এসব লেকসমূহ অনেক চওড়া ছিল, যা আজ (বিভিন্ন সময়ে লেকসমূহের ধারে বাড়তি প্লট সৃষ্টির কারণে) আর নেই। এটি বলার অপেক্ষা রাখে না যে যদি তখন ঢাকার এসব খাল-নদী-ডোবা ও লেকের ধারে সড়ক বা ফুটপাত এবং ব্রিজ ও সেতু নির্মাণ করে যোগাযোগব্যবস্থার স¤প্রসারণ ও রক্ষণাবেক্ষণ করা হতো, তাহলে আজ ঢাকা হয়তো কম-বেশি প্রাচ্যের ‘ভেনিস’ শহরের মতো হতো।
বন্যা নিয়ন্ত্রণ পরিকল্পনা
শুরু থেকেই এ দেশের মানুষ বন্যার সঙ্গে বসবাস করলেও পাকিস্তান আমলে বিশেষ করে সামরিক শাসক আইয়ুব খানের শাসনামল থেকে বন্যা নিয়ন্ত্রণের রাজনীতি শুরু হয়। বিচ্ছিন্নভাবে নদী শাসন ও বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ নির্মাণের মাধ্যমে কোনো কোনো জায়গায় সামান্য কিছু উপকারিতা পাওয়া গেলেও বেশির ভাগ ক্ষেত্রে হীতে বিপরীত হয়। রাজধানী ঢাকার দিকে লক্ষ করলে দেখা যায়, ১৯০০ শতাব্দীর শুরুতে ঢাকাকে পুনরায় পূর্ব বাংলার রাজধানী করার পর ক্ষয়িঞ্চু শহরটির পরিবেশগত উন্নয়নের লক্ষ্যে বিশিষ্ট ব্রিটিশ জীববিজ্ঞানী ও পরিকল্পনাবিদ স্যার প্যাট্রিক গ্যাডেসকে নিযুক্ত করা হয়। ১৯১৭ সালে তাঁর রচিত প্রতিবেদনে ঢাকার ভৌগোলিক ও সামাজিক প্রেক্ষিত বিশ্লেষণপূর্বক শহরের উন্নয়ন ও স¤প্রসারণ, নতুন আবাসন ও শিল্পায়ন সম্ভাবনা এবং বিদ্যমান খাল-নালা ও উন্মুক্ত স্থানাদি সংরক্ষণ বিষয়ে অনেক সুপারিশ ছিল। কিন্তু রমনা এলাকার উন্নয়ন ব্যতীত এসব সুপারিশমালার আর কোনোটিরই তেমন বাস্তবায়ন হয়নি। এর পেছনে অন্যতম কারণ- সমন্বিত প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোর অভাব। প্রসঙ্গক্রমে তখন শহরের উন্নয়ন, রাস্তাঘাট ইত্যাদির নির্মাণ হতো কেন্দ্রীয় সরকারের আওতায়; খাল-নদীর রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে ছিল সেচ বিভাগ; শহরে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নকরণসহ ড্রেনেজের দায়িত্বে ছিল স্থানীয় পৌর কমিটি ও জনস্বাস্থ্য বিভাগের ওপর। একইভাবে অন্যান্য উন্নয়নমূলক কাজেও কোনো ধরনের সমন্বয় ছিল না। বস্তুতপক্ষে, ১৯৬২ সালে ঢাকা ওয়াসা প্রতিষ্ঠার আগ পর্যন্ত শহরের খাল-নালা সংরক্ষণ বা সংস্কারের জন্য সুস্পষ্টভাবে কারও কোনো ধরনের দায়বদ্ধতাই ছিল না।
অবশ্য এর মধ্যে (১৯৫৬ সালে) পূর্ব পাকিস্তানের প্রাদেশিক রাজধানী ঢাকার নগর পরিকল্পনা প্রণয়ন ও উন্নয়ন নিয়ন্ত্রণের জন্য ঢাকা ইমপ্রুভমেন্ট ট্রাস্ট (ডিআইটি) প্রতিষ্ঠা করা হয়। ১৯৫৯ সালে ডিআইটির অধীনে ঢাকার উন্নয়নের জন্য প্রথম মহাপরিকল্পনা প্রণীত হয়। ওই মহাপরিকল্পনাটির মুখ্য দর্শন ছিল Live with Floods এবং সে অনুসারে ঢাকার উভয় পার্শ্বে বিস্তীর্ণ নিচু জায়গার উন্নয়নের পরিবর্তে নগরীর উত্তর-দক্ষিণে যথাক্রমে টঙ্গী ও নারায়ণগঞ্জের দিকে সম্প্রসারণ ও নতুন শহর তৈরির জন্য সুপারিশ করা হয়। মিরপুর ও উত্তরা নতুন শহর ওই প্রস্তাবনার আলোকে পরিকল্পিত হয়। কিন্তু তখনকার দেশের অস্থিতিশীল রাজনীতিতে ডিআইটির পক্ষে এই পরিকল্পনাগুলোর কোনোটির বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়নি। বস্তুতপক্ষে ডিআইটি বা আজকের রাজউককে কখনো সেভাবে গঠনও করা হয়নি। অতঃপর স্বাধীনতার পর থেকে জনসংখ্যার চাপ ও অপরিকল্পিত নগরায়ণের দাপটে দীর্ঘদিন ধরে ঢাকায় খাল-নালা-জলাশয় দখলের মচ্ছব চলছে, যার পরিপ্রেক্ষিতে খাল-বিল ভরাট ও সবুজ জায়গা কমে গিয়ে আজকের এই জলাবদ্ধতার সূত্রপাত।

এমনি অবস্থায় আশির দশকে উপর্যুপরি বন্যা এবং ১৯৮৮ সালের ভয়াবহ বন্যার পর নগরীর পয়োনিষ্কাশন ও ড্রেনেজ ব্যবস্থার সমন্বিত দায়িত্ব দেওয়া হয় ঢাকা ওয়াসার ওপর, নদী ও মহাপরিকল্পনায় চিহ্নিত Flood Flow Zone/Regulating Ponds সংরক্ষণের দায়িত্ব অর্পিত হয় পানি উন্নয়ন বোর্ডের ওপর, আর নৌপথ ড্রেজিং ও পরিচালনার দায়িত্ব বিআডব্লিউটিএর ওপর। কিন্তু কোনো প্রতিষ্ঠানেই এতসব দায়িত্ব পালনের জন্য পর্যাপ্ত জনবল ছিল না এবং তদুপরি ছিল না কোনো সমন্বয়কারীও। অন্যদিকে ব্রিটিশ শাসনামল থেকে এখনো দেশের খাল-নদীর পাড় বা জলাশয় বন্দোবস্ত প্রদান করে আসছে জেলা প্রশাসন। কাজেই সব মিলিয়ে এতগুলো সংস্থা ও মন্ত্রণালয়ের মধ্যে সমন্বয়হীনতায় আজকের এই দুরবস্থার কারণ।
স্বাধীনতা-উত্তর পরিকল্পনা
স্বাধীনতা-উত্তরকালে রাজধানী ঢাকার ভবিষ্যত পরিকল্পনার কর্মকৌশল নির্ধারণে ১৯৭৯-৮২ সালে ইউএন হ্যাবিটেটের সহায়তায় প্রথমে DMAIUDP শীর্ষক একটি সমন্বিত কৌশলগত সমীক্ষা হয়। কিন্তু সমীক্ষাটির বিভিন্ন সুপারিশমালা সামরিক শাসনামলে উপেক্ষিত হয়, বরং তাঁদের নিজস্ব দর্শনে ঢাকায় বিভিন্ন ধরনের কিছু উন্নয়নকাজ গৃহীত হয়, যার বেশির ভাগই ছিল ঢাকার পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর। যেমন ১৯৮৮ সালের বন্যার পর তড়িঘড়ি করে ঢাকার পশ্চিম দিকে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ নির্মাণ, কাঁঠাল বাগান-কলা-বাগান খাল ও সেগুনবাগিচা-আরামবাগ খাল ভরাট করে সড়ক নির্মাণ; ধানমন্ডি এবং গুলশান-বনানীর লেক ভরাট করে দলীয় লোকজনকে প্লট বরাদ্দ দেওয়া উল্লেখযোগ্য। তখন হাতিরঝিল-বেগুনবাড়ী-রামপুরা খালটি ভরাট করে সেখানে পুর্ব-পশ্চিম একটি সংযোগ সড়ক নির্মাণের জন্যও ঠিকাদার নিযুক্ত করা হয়েছিল, যা পরে (এরশাদ সরকারের পতনের পর) রহিত হয়ে যায়। ওই অবস্থায় ১৯৯২-৯৫ সালে বৃহত্তর ঢাকার উন্নয়ন ও স¤প্রসারণের জন্য ‘ঢাকা মেট্রোপলিটন ডেভেলপমেন্ট প্ল্যান’ অর্থাৎ DMDP (১৯৯৫-২০১৫) শীর্ষক নতুন মহাপরিকল্পনা গৃহীত হয়, যার আওতায় ছিল Structure Plan, Urban Area Plan ও Detailed Area Plan (DAP) | DMDP এর প্রধান আকর্ষণ ছিল ‘DAP’। কিন্তু এটির প্রণয়ন শেষ ও কার্যকর হতে অনেক সময় লেগে যায় এবং এর মধ্যে প্রস্তাবিত অনেক সুপারিশই প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়ে।
এর মধ্যে DAP-এর পাশাপাশি ঢাকার কৌশলগত পরিবহন পরিকল্পনা STP (Strategic Transport Plan) প্রণীত হলেও সেটির কাঙ্খিত বাস্তবায়ন হচ্ছে না। অথচ একটা দীর্ঘ সমীক্ষার (DITS) মাধ্যমে দেশ-বিদেশের নগর পরিকল্পনাবিদ ও পরিবহন বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে STP প্রণীত হয়। এতে নগরীর স্থল, নৌপথের উন্নয়ন এবং আধুনিক যোগাযোগব্যবস্থার (MRT, BRT, LRT ইত্যাদি) সমন্বয়ে বৃহত্তর ঢাকা ও আশপাশের জেলাসমূহের সার্বিক পরিবহনব্যবস্থার উন্নয়ন ও স¤প্রসারণে বিভিন্ন ধরনের অনেক সুপারিশ ছিল। কিন্তু আজ অবধি এসব প্রস্তাবনার তেমন কিছু বাস্তবরূপ লাভ করেনি। কারণ, ‘ঢাল নেই তলোয়ার নেই, নিধিরাম সরদার’-মার্কা DTCA (ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ) নামীয় একটি প্রতিষ্ঠান এই পরিকল্পনাটির নিয়ন্ত্রক। প্রতিষ্ঠানটির অধীনে রাজধানীর গণপরিবহনব্যবস্থার উন্নয়নে নগরীর উত্তর-দক্ষিণে মেট্রোরেল (MRT-6) এবং অন্য একটি কর্তৃপক্ষের (BBA) অধীনে একটি এলিভেটেড এক্সপ্রেস নির্মাণের দীর্ঘদিন ধরে পদক্ষেপ নেওয়া হলেও তা বিভিন্ন সমস্যায় পড়ে আজ অবধি তার বাস্তবায়নে তেমন কোনো অগ্রগতি নেই। পাশাপাশি DMDP/DAP ও STP-এর ব্যত্যয় ঘটিয়ে ইতিমধ্যে বিভিন্ন সংস্থার অধীনে স্ব-স্ব পরিকল্পনা ও উদ্যোগে বিচ্ছিন্নভাবে ফ্লাইওভার, ওভারপাশ ইত্যাদি কিছু অবকাঠামোগত কাজের বাস্তবায়ন হলেও নগরীর যানজট সমস্যা নিরসনের চেয়ে আরও অবনতি হয়েছে।

বিআইডব্লিউটির অধীনে ঢাকার চারদিকে বিদ্যমান নদী/নৌপথকে ব্যবহার করে ২০০৪-০৫ সাল থেকে একটি Circular Water-Ways গড়ে তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল, সেটির পেছনেও ইতিমধ্যে প্রায় হাজার কোটি খরচ হয়ে গেলেও তুরাগ-বুড়িগঙ্গা নদীর ড্রেজিং এবং নৌপথটিকে এখনো কার্যকরভাবে চালু করা যায়নি। স¤প্রতি এই নৌপথটিকে কার্যকরণে আবারও একটি প্রচেষ্টা শুরু হয়েছে, কিন্তু বিরাজমান পরিস্থিতিতে (বিভিন্ন সংস্থার মধ্যে সমন্বয়হীনতায়) এই উদ্যোগটি কতটুকু কার্যকর হবে তা নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা চলছে। এ ধরনের আরেকটি বহুল আলোচিত পরিকল্পনা হলো ঢাকার Eastern Flood Embankment Cum Bypass নির্মাণ প্রকল্প। ১৯৮৮ সালের বন্যার পর নগরীর পশ্চিম দিকে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ কাম Circular Road টি (টঙ্গী ব্রিজ থেকে লালবাগ পর্যন্ত) মোটামুটিভাবে চালু হলেও অদ্যাবধি নগরীর পূর্বদিকে বন্যানিয়ন্ত্রণ বাঁধ কাম বা সড়ক নির্মিত হয়নি। ১৯৯৮ সালে অপর এক ভয়াবহ বন্যার পর ২০০০ সালে তৎকালীন সরকারের আমলে এই বহুল আলোচিত প্রকল্পটির প্রকল্প সারপত্র DPP (Development Project Performa) অনুমোদিত হলেও অদ্যাবধি অর্থের অভাবে এটির বাস্তবায়ন ঝুলে আছে। এই অবস্থায় নগরীর পূর্ব পাশে বিস্তীর্ণ জলাভূমি আবাসন সমস্যার উন্নয়নের নামে ভূমিদস্যুদের নিয়ন্ত্রণে চলে যায়।
বর্তমান বাস্তবতা
বর্তমানে ঢাকায় জমির অত্যাধিক মূল্য বৃদ্ধিতে কোনো উন্নয়ন প্রকল্পই সময়মতো বাস্তবায়ন হচ্ছে না এবং নতুন কোনো প্রকল্পও হাতে নেওয়া সম্ভবপর হচ্ছে না। বহুল আলোচিত MRT-6 ও Elevated Expressway নির্মাণের কাজও এ কারণে তেমন এগোয়নি। DMDP ও STP-তে প্রস্তাবিত অন্যান্য আরও অনেক অবকাঠামোগত প্রকল্পের বাস্তবায়নও একই কারণে এগোচ্ছে না। সরকারের পক্ষ থেকে এসব কিছু প্রকল্পের বাস্তবায়নে Fast Track Development-এর ব্যবস্থা করা হলেও তাতে তেমন কোনো অগ্রগতি নেই। সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগের PPP (HYPERLINK “http://www.pppo.gov.bd/” Public Private Partnership) মাধ্যমে বাস্তবায়িতব্য কিছু প্রকল্পের জন্য সরকারের পক্ষ থেকে বিভিন্ন ধরনের Concessions প্রদানের আশ্বাস দিয়েও বিনিয়োগকারী পাওয়া যাচ্ছে না। এহেন পরিস্থিতিতে ঢাকার নতুন মহাপরিকল্পনা অর্থাৎ ‘সিটি রিজিওনাল ডেভেলপমেন্ট প্ল্যান’ (CRDP) এর আওতায় ‘মেট্রো ঢাকা’র নতুন মহাপরিকল্পনা (RDP) প্রণয়নের কাজ শেষ হয়েছে, যা হয়তো অচিরে কার্যকরও হয়ে যাবে। বরাবরের মতো এবারও এই পরিকল্পনাটির মুখ্য উপদেষ্টারা বহিরাগত। তবে আগের সব পরিকল্পনা প্রণয়নে কাজ করেছিল ব্রিটিশ, আমেরিকান ও অন্যান্য ইউরোপীয় দেশের বিশেষজ্ঞ, আর এবার কাজ করেছে এশিয়ান উপদেষ্টারা, দক্ষিণ কোরিয়ার ‘স্যামওয়াং করপোরেশন’ অ্যান্ড ‘হ্যান আরবান ইনস্টিটিউট’।
প্রসঙ্গক্রমে ঢাকার এই পরিবেশগত এ বিপর্যয়কে অনেকে ১৯৮৮ সালের বন্যা-উত্তর Flood Action Plan-কে দায়ী করেন। ওই পরিকল্পনায় (FAP-8) ঢাকাকে পূর্ব-পশ্চিমে FAP-8A ও FAP-8B-তে বিভক্ত করে বিভিন্ন ধরনের অবকাঠামোগত উন্নয়নের সুপারিশ করা হয়েছিল। তন্মধ্যে FAP-8B-এর আওতায় বাস্তবায়িত জঘন্য কাজটি ছিল, নগরীর অভ্যন্তরস্থ খালগুলো ভরাট করে বক্স কালভার্ট ও তার ওপরে সড়ক নির্মাণ করা। কাঁঠালবাগান-কলাবাগান খাল, পরিবাগ-সেগুনবাগিচা ও আরামবাগ খাল ভরাট করে বক্স কালভার্ট নির্মাণ করা ছিল সবচেয়ে জঘন্যতম কাজ। অন্যদিকে FAP-8A-এর আওতায় নগরীর পূর্ব পাশে প্রস্তাবিত বাঁধের ভেতর ৩-৪টি Retention Basin বিনির্মাণের সুপারিশ ছিল। কিন্তু ঢাকার উত্তর-পশ্চিমে ‘গোরান চাঁদবাড়ী’ এলাকা ব্যতীত আর কোনো স্থানে Retention Basin করা হয়নি বা যায়নি। আর সময়ের প্রেক্ষাপটে Retention Basin-এর জন্য চিহ্নিত প্রায় জায়গাগুলোই ভূমিদস্যুদের কবলে চলে যায়। এসব লোকজন এত প্রভাবশালী যে আজ অবধি তাঁদের কাউকে এই অপকর্ম থেকে কোনো সরকারই বিরত রাখতে পারেনি। আবার অনেক ক্ষেত্রে এদের সঙ্গে যোগ হয়েছে কিছু সরকারি প্রতিষ্ঠান বা তাদের ছায়া সংগঠন, যেখানে গড়ে তোলা হচ্ছে স্ব স্ব প্রতিষ্ঠান বা পেশার মানুষের জন্য আবাসন প্রকল্প।

আজ এটি অবিশ্বাস্য মনে হলেও সত্যি যে মাত্র দুই দশক আগেও তেজগাঁও-বেগুনবাড়ী খাল ও হাতিরঝিলের সঙ্গে ভোলা খালের শাখা-প্রশাখার মাধ্যমে শাহজাদপুর-কুড়িল এলাকার বিস্তীর্ণ জলাভ‚মি দিয়ে বোয়ালিয়া খাল হয়ে বালু নদীর যোগাযোগ ছিল এবং ওই পথ দিয়ে প্রাকৃতিক প্রক্রিয়ায় আশপাশের পয়ো ও বর্জ্য পানি নিষ্কাশন হতো। কিন্তু আজ বোয়ালিয়া খালটি সম্পূর্ণ অস্তিত্বহীন। আশির দশকে চোখের সামনে তখনকার বিশিষ্ট শিল্পপতি জহুরুল ইসলাম কর্তৃক গুলশানের দক্ষিণ-পশ্চিমে বিস্তীর্ণ জলাভ‚মি ভরাট করে ‘নিকেতন’ এলাকাটি গড়ে তোলা হয়। ‘নিকেতন’ এলাকাটি প্রতিষ্ঠার পর ক্যান্টনমেন্ট-মহাখালী এলাকাসহ আরও অনেক এলাকার পয়োনিষ্কাশন বাধাগ্রস্ত হয়। তথাপি ওই ধারাবাহিকতায় জহুরুল ইসলাম কর্তৃক বনশ্রী-আফতাবনগর গড়ে তোলা হয়। ফলে ঢাকার পূর্বদিকের অনেক খাল প্রায় বিলীন হয়ে যায়। অনুরূপভাবে নগরীর উত্তর-পূর্বদিকে বিস্তীর্ণ নিচুভূমি ও খাল-নালা ভরাট করে ‘বসুন্ধরা’ প্রকল্পটি গড়ে তোলা হচ্ছে। পরিবেশবিদ ও সচেতন জনসমাজের আপত্তির মুখেও অতি স¤প্রতি বসুন্ধরা প্রকল্পটির মহাপরিকল্পনা অনুমোদন হয়ে গেছে বলে শোনা যাচ্ছে। বিষয়টি সত্যি হলে, নগরীর পূর্বদিকের বিস্তীর্ণ নিচুজমিতে কংক্রিট জঙ্গলের সৃষ্টি হয়ে অচিরে আরও ভয়াবহ পরিস্থিতির সৃষ্টি হবে।
উপসংহারে কিছু সুপারিশ
ব্রিটিশ-পাকিস্তান আমলে বাংলাদেশের পরিবেশ, জলবায়ু ও জীবনপদ্ধতির বিবেচনায় ঢাকার উন্নয়নের জন্য প্রণীত পরিকল্পনাগুলোর দর্শন ‘Live with Floods’ হলেও স্বাধীন বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকায় বিশাল জনস্রোতের প্রবাহে ওই দর্শনটি আর থাকেনি। নগরীর পূর্ব-পশ্চিমে বিস্তীর্ণ জলাভূমি ও খাল-নালাগুলোর অনেকাংশ ইতিমধ্যে ভরাট হয়ে সেখানে বসতি গড়ে উঠেছে। এর জন্য যে বিষয়টি সবচেয়ে বেশি দায়ী তা হলো, দেশের সবকিছুকে ঢাকামুখী করে ফেলা। ফলে ঢাকার প্রথম মহাপরিকল্পনার অকাল মৃত্যুর পর দ্বিতীয় মহপরিকল্পনাটিরও একই পরিণতি ঘটে। হয়তো-বা একই পরিণতি ঘটবে নতুন মহাপরিকল্পনাটিরও! অবশ্য এর জন্য দেশের রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং উন্নয়ন প্রকল্পের বাস্তবায়নে ধারাবাহিকতার বিষয়টিও সমভাবে দায়ী। স্বাধীনতার আগে ঢাকায় যেখানে প্রায় ৫ লাখ জনসংখ্যা ছিল, সেখানে অনিয়ন্ত্রিত পরিস্থিতিতে বর্তমানে ঢাকায় জনসংখ্যা দাঁড়িয়েছে দেড় কোটির ওপর। ইদানীং অনেকে এই সংখ্যা দুই কোটির দ্বারপ্রান্তেও বলছেন। ফলে নগরীর স্বতঃস্ফূর্ত সম্প্রসারণ অব্যাহত রয়েছে। অন্যদিকে অসমন্বিত অবস্থায় নগরীর প্রান্তে পরিকল্পিত নতুন শহরগুলোর (পূর্বাচল/উত্তরা ৩য় পর্ব/ঝিলমিল) উন্নয়নেও তেমন গতি নেই। ফলে মূল শহরের ওপর আগের মতো চাপ অব্যাহত রয়েছে। এসব বিভিন্ন কারণে, স¤প্রতি এক আন্তর্জাতিক সমীক্ষায় ঢাকাকে ‘বসবাসের অযোগ্য’ শহর হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে।

তাই বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার এই দুর্নাম ঘোচাতে সার্বিক বিবেচনায় যে যে পদক্ষেপসমূহ গ্রহণ করা যেতে পারে-
- ঢাকার নতুন মহাপরিকল্পনা (RDP) কার্যকর হওয়ার আগেই নগর উন্নয়ন আইনকে যথাযথভাবে সংশোধন করে সংশ্লিষ্ট ধারা-উপধারায় প্রয়োজনীয় সংশোধন ও পরিবর্তনসহ নগরীর পরিকল্পিত উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণে একটি শক্তিশালী মনিটরিংয়ের ব্যবস্থা গড়ে তোলা।
- ঢাকার অভ্যন্তর হতে অনেক কিছুকে Decentralized করে দেওয়া। ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট, বিমান-নৌবাহিনী, রাইফেলস বাহিনী (বিজিবি) ইত্যাদি নগরীর বাইরে স্থানান্তর করে জায়গাগুলোর Re-Planning/Re-Development করা উচিত।
- STP-এর প্রস্তাবনা মোতাবেক ঢাকায় পরিবহনব্যবস্থা সচল করার জন্য MRT, BRT, LRT চালুর বিকল্প নেই। বিচ্ছিন্নভাবে ফ্লাইওভার নির্মাণের পরিবর্তে সমন্বিতভাবে ফ্লাইওভার ও এলিভেটেড রোড নির্মাণের ব্যবস্থা করতে হবে। সে সঙ্গে ঢাকায় পাতালরেল (Underground Rail) নির্মাণেরও ব্যবস্থা করা প্রয়োজন।
- ঢাকার চারদিকের নদীগুলোর বেদখলকৃত জায়গা উদ্ধার ও ড্রেজিং করে Circular নৌপথটি সক্রিয় করতে হবে।
- নগর অভ্যন্তরে হাতিরঝিলের মতো আরও অনেক Water Bodies সৃষ্টি করতে হবে।
সত্যিকার অর্থে, মেগাসিটি বিবেচনায় ঢাকার পরিকল্পনা ও উন্নয়ন সমন্বয়ের দায়িত্ব এখন সরাসরি প্রধানমন্ত্রীর নিয়ন্ত্রণে নেওয়া প্রয়োজন। এ জন্য একজন সিনিয়র মন্ত্রীর নেতৃত্বে একটি Apex Body প্রতিষ্ঠা করা যায়। এ ব্যাপারে সমসাময়িক বিশ্বের নগরসমূহ পরিকল্পনা পর্যবেক্ষণ এবং যথোপযুক্ত প্রকল্প ও সিদ্ধান্ত গ্রহণে অভিজ্ঞ পেশাজীবীদের নিয়ে একটি Think-Tank গঠন করাও অত্যাবশ্যক হয়ে দাঁড়িয়েছে।
প্রকৌশলী মো. এমদাদুল ইসলাম, নগর ও উন্নয়ন বিশ্লেষক, সাবেক প্রধান প্রকৌশলী, রাজউক
প্রকাশকাল: বন্ধন ৭৫ তম সংখ্যা, জুলাই ২০১৬