কম করে হলেও পাঁচ হাজার বছর আগে ভারতীয় এ উপমহাদেশের কোনো এক শহরে এসেছিল অচেনা এক আগন্তুক। নতুন শহরের কিছুই চেনে না। পরিবারের কাছে পাঠাতে হবে চিঠি। ঘোড়ায় চড়া ডাকের প্রচলন তখন শহরে। ডাকে চিঠি পাঠাবে সে। কিন্তু চেনা নেই ডাক ভবন। শহরের মাঝেই বিশাল বাজার। বাজারকে ঘিরে বড় বড় দালান। দালানগুলোতে বড় অক্ষরে নাম লেখা। সেসব নামের ভিড়ে সাওয়ারিসহ ঘোড়ার আঁকা একটি ছবি দেখতে পেল সে। সাওয়ারির পিঠে ঝোলা। নিচে লেখা পড়ার আগেই সে বুঝল ঠিক জায়গায় এসেছে। চট করে ভবনে ঢুকে প্রিয়জনের কাছে চিঠিটা পোস্ট করে চলে এল নিজ ডেরায়। তার কাজ শেষ। কিন্তু সে যা করেছে, যা দেখেছে মানবসভ্যতা কিন্তু তা দেখেছে আরও আগেই। সেই প্রস্তর যুগের কথাই ধরুন না। আমি আর আপনি। কল্পনায় আমরা দুজন খুব ভালো বন্ধু। দুই বন্ধু মিলে শিকারে গেলাম বনে। আমি মারলাম দুটো মোষ। আর আপনি তিনটে হরিণ। তো আপনি বললেন, ‘চলো, দুজনে হিসাব রাখি। কে কটা মেরেছি হিসাব না রাখলে মাংসের ভাগটা ঠিকমতো হবে না।’ দুজনেই থাকার নিজ নিজ গুহায় এঁকে রাখলাম কী কী মেরেছি। পুরো এক মাস পর নিজেদের মাঝে মাংস নিয়ে ঝগড়া হলো। আপনি সামান্য খরগোশ মেরে আমার মোষের ভাগ চাইছেন! গেলাম দুজনেই গোত্রপতির কাছে। গোত্রপতি আমাদের গুহায় এসে দেখলেন আপনি আসলেই অন্যায় করেছেন! ফলে শাস্তি হলো আপনার। আর পুরস্কৃত হলাম আমি!
ভাষার আদান-প্রদানে সেই শুরু চিহ্নের ব্যবহার। আদিম গুহামানবেরা লিখতে জানত না। ছবি আঁকত বিভিন্ন প্রাণী দেখে দেখে। সেই শুরু মানব ইতিহাসের সবচেয়ে আদিমতম ভাব বিনিময় প্রথার, যা এখনো চলছে। প্রাচীন ভাবের সেই নদী হয়েছে এখন বিশালাকার। খরস্র্রোতা সময়ের তালে আমরা সবাই হয়েছি আধুনিক। তবু সেই প্রাচীন চিহ্নতত্ত্ব কি ভুলতে পেরেছি? কখনোই না। কিন্তু…চিহ্ন কী? চিহ্ন দিয়ে কী হয়? ভাবছেন আমার মাথাটা গেছে! আজকের জামানায় চিহ্ন দিয়ে কী হয়?
আসলে আজকের এই ব্যস্ততম দিনে চিহ্ন ছাড়া আমাদের গতি কই! যা করছি তার সব কিছুতেই সংক্ষেপ। যা ভাবছি সংক্ষেপে ভাবছি। এই যেমন আপনি আগে ভাবতেন ল্যাপটপ। এখন ভাবনায় ‘ল্যাপি’ শব্দটা। আবার আগে ভাবতেন ‘ইন্ট্রোডাকশন’। কারও সঙ্গে পরিচিত হওয়ার সময় এখন আপনি নিজেই একে কেটে ছেটে বলেন, ‘আসেন ইন্ট্রো হয়ে যাক!’

তো এই খুব চেনা জগতে অচেনাকে চেনানোর জন্য কিছু চিহ্ন প্রবর্তিত হয়েছে মানুষের ব্যবহারের সুবিধার্থেই। এসব চিহ্ন আমাদের দিকপ্রদর্শন করে। আমাদের শেখায় কীভাবে কোন দিকে যেতে হবে। কীভাবে কী করতে হবে। কোন পথে গেলে কী পড়বে। আবার চিহ্নের নিচে লেখাও থাকে (যদি চিহ্ন না বোঝেন এই ভয়েই হয়তো!)। আবার অন্ধদের জন্য হাতে ছুঁয়ে দিক চেনার ব্যাপারও থাকে। এসব ব্যাপারকে একত্রে বলা হয় চিহ্নবাহার বা ইংরেজিতে সাইনেজ। চিহ্নবিদ্যার ইংরেজি টার্মটাই আমাদের দেশে বহুল প্রচলিত। আগে এটাকে হাতে বা কাগজে এঁকে কিংবা প্রিন্ট করে সাঁটিয়ে দেওয়া হতো। আজকাল এটাই রূপ নিয়েছে শিল্পে। অবশ্যই সেটা উন্নত দেশের হাত ধরে। কিন্তু আমাদের দেশে এটা এতটাই জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে যে স্থপতি বা ইন্টেরিয়র ডিজাইনারদের সঙ্গে সঙ্গে সাইনেজ এক্সপার্টদেরও ডাকা হয় প্রতিষ্ঠানের সাইনেজ ডিজাইনের জন্য। এটি কিন্তু ১০ বছর আগেও এমন ছিল না। খুব পয়সাওয়ালা না হলে এই সাইনেজ ব্যাপারটা ঘটতই না কোনো প্রতিষ্ঠানে। কিন্তু আজকে হচ্ছে। প্রথমেই একটা বিশালাকার নাম বসিয়ে দেওয়া হচ্ছে ভবনের শরীরে। সেটা দেখাচ্ছে বিশাল, তবে অনেক দূর থেকে পড়া যাচ্ছে। রাতের বেলা নিয়ন বাতি জ্বলছে। দিনেও সমানভাবে দেখা যাচ্ছে।
এরপরেই নানা স্থানে ভবনের নাম লেখা হচ্ছে। একই রকম থিমে বিভিন্ন সাইন ডিজাইন করা হচ্ছে। এমন বাড়ি বা প্রতিষ্ঠানে আপনি প্রথমবার গেলেও নিজে থেকে চিনে নিতে পারবেন সবকিছু। কাউকেই আপনার সাহায্যের জন্য এগিয়ে আসতে হবে না। আপনাকেও কারও সাহায্যের আশায় দাঁড়িয়ে থাকতে হবে না। সব আপনি পেয়ে যাবেন হাতের নাগালে। শুধু কিছু সাইনেজ ব্যবহারের কারণেই। আজকে বিশদভাবে এই সাইনেজ বিষয়টাকে জানাব এখানে। প্রকারভেদ অনুযায়ী সাইনেজ
হাই লেভেল সাইন
মূলত একটা ভবন বা প্রতিষ্ঠানের ছাদে বা দেয়ালে বিশালাকৃতির এই সাইন বসানো হয়। সেখানে প্রতিষ্ঠানের লোগো বা পুরো নাম থাকতে পারে। এই সাইনেজগুলোতে ব্যবহার করা হয় নিয়ন বা আধুনিক এলইডি লাইট, যা জ্বলজ্বল করতে থাকে। আশপাশে দু-চার কিলোমিটার দূর থেকেও দেখা যায় এই সাইনেজ। হাই লেভেল সাইনের মাঝে আমরা আ্যক্রেলিক থেকে শুরু করে মেটাল শিট, অ্যালুমিনিয়াম চ্যানেলসহ নানা রকম ম্যাটেরিয়ালসের ব্যবহার করা যায়। এই সাইনগুলোতে ব্যবহৃত হচ্ছে নানা রকম আ্যক্রেলিক শিট। কোনো কোনো সাইন দিনে কালো আবার রাতে সাদা হয়ে যায়; এদের ফটোক্রোমাটিক অ্যাক্রেলিকের জন্য। কোনোটা আবার নিয়ন সাইনে জ্বলজ্বল করে। কোনোটা আবার ডিজিটালি ডিজাইন করা থাকে, যা আবার বারবার রং পরিবর্তন করে নিজে নিজেই।

মিড লেভেল সাইনেজ
এই সাইনেজ দেখা যায় বাড়ির মাঝামাঝি যেন খানিকটা দূর থেকে বাড়ির নাম সহজেই পড়া যায়। এটাতেও হাই লেভেল সাইনের মতোই মেটাল ও অ্যাক্রেলিক থেকে শুরু করে নানা রকম ম্যাটেরিয়াল ব্যবহার করা হয়। কিন্তু এটা সাইজে খানিকটা ছোট। দূর থেকে দেখা যায়। কিন্তু অনেক দূর থেকে হাই লেভেল সাইনের মতো এতটা ভালো দেখার জন্য এটি নয়। বাড়ির সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় দেখতে হয়। মূলত এর পজিশন ৪০ ফুট পর্যন্ত। পরিষ্কার দেখার জন্য এতেও এলইডি থেকে শুরু করে নানা রকম লাইটের ব্যবহার করা হয়। আগে টিউব বেশি ব্যবহার করা হতো। কিন্তু এলইডির প্রচলন শুরু হওয়ার পর থেকে বিশেষ করে সাদা এলইডির আবিষ্কারের সঙ্গে এই সাইনে ঘটেছে নীরব বিপ্লব।
পাইলন সাইনেজ
এটি মূলত বাড়ির আঙিনায় বা একেবারে ঢোকার খানিকটা সামনে থাকে। নিজে দাঁড়ানো একটা সাইন, যাকে দাঁড় করিয়ে রাখার জন্য কংক্রিটের বেইজ ব্যবহার করা হয়। এর ওপর দাঁড় করিয়ে দেওয়া হয় শক্ত মেটাল স্ট্রাকচারের পাইলন সাইনেজ। এতেও কিন্তু এলইডির জয়জয়কার। অনেক সাইনেই এসিপি (অ্যালুমিনিয়াম কম্পোজিট প্যানেল) ব্যবহার করা হয়। এসিপি কাটায় তার ভেতর দিয়ে অ্যাক্রেলিকে জ্বলজ্বল করে বাড়ির নাম কিংবা প্রতিষ্ঠানের নাম। অনেকখানেই আবার পুরো ভবনে যে কয়টা প্রতিষ্ঠান আছে সব কটার লোগো জ্বলজ্বল করে রাতের আলোতে। পাইলন সাইনগুলো সাইনেজ ডিজাইনারদের মুন্সিয়ানা দেখানোর বড় ক্ষেত্র বটে। নানা রকমভাবে একে সুন্দর করে তোলা যায়। নানা রকমের ম্যাটেরিয়ালস ইউজ করা হয়। ফলে এটা হয়ে যায় ভবনের একটি অংশ।
মেইন সাইন বা অ্যান্ট্রি সাইন
ভবনের প্রবেশমুখে যে সাইনেজ ব্যবহার করা হয়, তাকে বলে অ্যান্ট্রি সাইন বা বিল্ডিং মেইন সাইন। এই সাইনে আলোর ব্যবহার ততটা তীব্র নয়। খুব সামান্য আলোতে চোখ ধাঁধানো উজ্জ্বলতায় এই সাইন সবার নজর কাড়ে। এই সাইনে ব্যবহার করা হয় নানা রকম ম্যাটেরিয়ালস। যখন এসিপি ব্যবহার করা হয়, তখন এটা হয়ে যায় এসিপি এজলিট সাইন (অক্ষরের কিনার থেকে আলো বের হয় যে সাইনে), আবার যেগুলো এজলিট হয় না সেগুলোকে ডাকা হয় ব্যাকলিট নামে (অক্ষরের পাশ থেকে বা পেছন থেকে আলো বের হয়)।
আবার মেটাল চ্যানেলিয়াম সাইন ব্যবহার করা হয়। কোনো কোনো সাইন মেটাল কেটে ভেতর থেকে অ্যাক্রেলিক শিট দিয়ে আলো দেখানো হয়। একটা ভবনের মার্জিত রূপ যেন সাইনেজ ছাড়া অসম্পূর্ণই থেকে যায়।

বিল্ডিং ডিরেক্টরি
ভবনের বাইরে ছিলাম এতক্ষণ। এবার ঢুকি ভেতরে। ভেতর ঢুকেই আপনাকে কাউকে না কাউকে জিজ্ঞাসা করতে হবে প্রত্যাশিত কোম্পানিটি কোন তলায়। কিন্তু কাউকে জিজ্ঞাসা না করে একেবারে নিজে যাচাই করে চলে যেতে পারেন নির্দিষ্ট ভবনে যথাযথ সাইন লাগানো থাকলে। অনেক সময় পাইলনেই এই সাইন লাগানো হয়। আবার অনেক সময় ভবনের ভেতরে এটা সারি সারি প্রতিষ্ঠানের নামের সঙ্গে ফ্লোর নম্বরসহ লাগিয়ে দেওয়া হয়। আপনাকে কাউকে জিজ্ঞাসা করতে হবে না। কোন কোন সাইনে থাকে ব্রেইল। আপনি অন্ধ হলে শুধু হাতে ছুঁলেই বুঝে যাবেন আপনাকে লিফটে কোন বোতাম টিপতে হবে। এই ডিরেক্টরি আবার লিফটের ভেতরেও ছোট আকারে লাগানো থাকে, যেন আপনি ভুল ফ্লোরে গিয়ে বিরক্ত না হন।
ওয়ে ফাইন্ডিং সাইনেজ
আপনি লিফট থেকে বের হলেন। হয়তো সেই তলায় আছে আরও দুটো প্রতিষ্ঠান কিংবা আরও দুজন মানুষ, যাঁদের আপনি নক করে বিরক্ত করতে চান না। এ জন্য আছে ওয়ে ফাইন্ডিং সাইন। আপনি যাঁর কাছে বা যেখানে যাবেন, সেদিকে মুখ করে তির চিহ্ন দিয়ে বুঝিয়ে দেওয়া হবে আপনাকে। আপনি সোজা চলে যেতে পারেন। এটি আবার লাগানোও থাকে ঘরের বিভিন্ন স্থানে। আপনি একেবারে আনকোরা হলেও পৌঁছে যেতে পারবেন টয়লেটে। কিংবা নামাজ ঘরে। চিহ্ন দিয়ে বুঝিয়ে দেওয়া হবে। আপনাকে কিছুই করতে হবে না। শুধু দেখবেন আর বুঝে নেবেন। বোবা চিহ্নগুলো আপনার মস্তিষ্কে পৌঁছে দেবে সিগন্যাল। কোন কক্ষ কোন দিকে, কীভাবে যেতে হবে অথবা কী করতে হবেÑ সবই এ সাইন বুঝিয়ে থাকে সহজেই। এই সাইন হরেক পদের ও হরেক রকমের হয়ে থাকে। কোনোটা দেয়ালে আড়াআড়ি লাগানো থাকে, কোনোটা থাকে ছাদ থেকে ঝুলে। অনেকে ডিজাইন করে একে মাটিতে টাইলসের সঙ্গেও জুড়ে দেয়। অনেকেই দেয়ালে প্রিন্ট লাগিয়ে বোঝায়। নানা রকমের ম্যাটেরিয়াল ব্যবহার করা হয়। আলোর ব্যবহার এতে হয় অল্প। হলেও এলইডি ছাড়া কোনো গতি নেই এ সাইনে।
নামফলক
রুম বা কক্ষে যিনিই থাকুন না কেন একটা পদবি আছে। একটা নাম আছে। সেই নাম ও পদবি দিয়েই হয়ে যাচ্ছে নামফলক। এই নামফলক নির্দেশ করছে লোকের পদমর্যাদা। এতে রঙের ব্যবহার হচ্ছে। হচ্ছে নানা রকম ম্যাটেরিয়ালস। আবার শিফট ভাগাভাগিতে সেই কক্ষেই এসে বসছেন অন্য কেউ। ফলে নাম পরিবর্তনের একটা ব্যবস্থাও থেকে যাচ্ছে।
ফেনসিং
নতুন ভবন বানানোর আগে বর্তমানে অনেকেই ফেনসিং করছেন। কী হবে নতুন ভবন সেটা সবাইকে দেখাচ্ছেন। ব্র্যান্ডিং হচ্ছে। মানুষ দেখছে। কিনছে নতুন কোনো ফ্ল্যাট শুধু ফেনসিং দেখেই। নানা রকমের চিহ্ন ব্যবহার হচ্ছে এতে। রংবেরঙের ছবি ব্যবহৃত হচ্ছে। একটা সীমানা প্রাচীর, যা ঢেকে রাখছে নতুন কনস্ট্রাকশন সাইটকে। আবার সবাইকে পরিচয় করিয়ে দিচ্ছে বিশ্বের বুকে মাথা তুলতে চাওয়া নতুন ভবনটিকে। সেটি দিনের আলোয় কেমন, রাতের অন্ধকারে কেমন দ্যুতিপূর্ণÑ সব জানা যাচ্ছে এটা দেখে। ১০ ইঞ্চি ইট বা কংক্রিটের গাঁথুনির ওপর দাঁড়িয়ে থাকা মেটাল শিটের ওপর প্রিন্ট লেগে যাচ্ছে। কোথাও ব্যবহৃত হচ্ছে নানা রকমের সাইনের কাজ। মেটাল সাইন থেকে শুরু করে নানা পদের সাইনেজ। সব মিলিয়ে ব্যাপারটা এখন আর বিলাসিতা নয়, হয়ে যাচ্ছে প্রয়োজনীয়তা।
পার্কিং সাইন
ভবনে পার্কিং করার জন্য গাড়ি নিয়ে এসেছেন কিন্তু বুঝতে পারছেন না কোথায় গিয়ে পার্ক করবেন। তখন আপনার জন্য আছে পার্কিং সাইন। আপনি গাড়ি কোন বেইজমেন্টে রাখবেন, কোনখানে রাখবেন, সব আপনাকে চিনিয়ে দেবে পার্কিং সাইন। পার্কিং সাইন আপনাকে দেখিয়ে দেবে আপনি কোন পথে গাড়ি বের করবেন। কীভাবে, কত গতিতে গাড়ি চালাবেন। কোন পথে বের হবেন রাস্তায়। এসব না থাকলে কি আজকাল চলে?

এসব সাইনেজ আমাদের প্রতিনিয়ত সাহায্য করছে নীরবে-নিভৃতে। প্রতিদিন আমরা এসব সাইনেজ দেখে পথ চলছি। নিজেদের কাজের টেবিল থেকে শুরু করে রাস্তাঘাট থেকে শুরু করে বাথরুম পর্যন্ত এই সাইনেজের জয়জয়কার। মানুষ সেই প্রাচীন কাল থেকে কবরখানায় সাইনেজ দিয়ে নাম লিখে দেওয়ার জন্য এপিটাফের ব্যবস্থা করেছে। এই এপিটাফই মূলত প্রাচীনতম সাইনেজ, যা প্রথম মানুষের মাথায় তৈরি করার প্রয়োজনীয়তা এনেছিল। মানুষ প্রতিনিয়ত এই সাইনেজ ও ব্র্যান্ডিংয়ের মাঝে চলাচল করছে। আজ থেকে হাজার বছর আগেও যা কল্পনা করা যেত না, আজকে সেটা করা যাচ্ছে। টেবিলের পেপারওয়েটেও এখন প্রতিষ্ঠানের নাম লিখে দেওয়া হচ্ছে। হাতের কলমের ওপর প্রিন্টের ব্যবস্থা হয়েছে। আর এসব করার জন্যই উদ্ভাবিত হয়েছে নানা যন্ত্রপাতির। যেমন রাউটার দিয়ে যেকোনো বস্তু খুব সুন্দর করে কেটে ফেলা যাচ্ছে। যেকোনো ডিজাইন যা আপনি কল্পনায় দেখতে পান তা খানিক পরেই চোখের সামনে দেখতে পারছেন। সূক্ষ্নাতিসূক্ষ্ন ডিজাইন কেটে ফেলা হচ্ছে নানা রকম প্লাস্টিক, অ্যাক্রেলিক ম্যাটেরিয়ালস আর লেজার মেশিন দিয়ে। লোহা থেকে শুরু করে পাতলা অ্যাক্রেলিক কেটে ফেলছে প্লাজমা কাটার। নানা রকম প্রিন্ট মেশিন আবিষ্কৃত হয়েছে। বিশালাকার বিলবোর্ড থেকে শুরু করে ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র ডিজাইন প্রিন্ট দেওয়া হচ্ছে প্রতিদিন। এই বাংলাদেশেই এই মুহূর্তে প্রবহমান সাইনেজ প্রতিষ্ঠানগুলোতে লাখ লাখ স্কয়ারফুট প্রিন্ট হচ্ছে। দাঁড়িয়েছে ওয়ান্ট অ্যাড লিমিটেড, সাইনেজ, স্টেপ মিডিয়ার মতো প্রতিষ্ঠান। এসব প্রতিষ্ঠান করছে নানা রকম কাজ। সবগুলো একত্র করলে বোধ করি মহাভারতের চেয়ে বড়সড় একটা মহাকাব্য লেখা হয়ে যাবে। তাই সেই পথে না গিয়ে আপাতত আজ এখানেই থামতে হচ্ছে। ভালো থাকবেন সবাই। সাইনেজ দেখে পথ চলবেন। সামনেই বর্ষাকাল। পথের মাঝে কোথাও যদি ‘Caution-Wet Floor’ লেখা কোনো সাইন পেয়েই যান, তাহলে সাবধানে পা ফেলুন। মানুষের উপকারের জন্য যার জন্ম; সেই সাইনেজ কি আপনার উপকার না করে পারে?
স্থপতি রাজীব চৌধুরী
[email protected]
কৃতজ্ঞতায়: ফরিদ উদ্দিন আহমেদ, পরিচালন অধিকর্তা, ওয়ান্ট অ্যাড লিমিটেড
প্রকাশকাল: বন্ধন ৭৩ তম সংখ্যা, মে ২০১৬