ঘরবাড়ি সাজাতে আর প্রয়োজনের তাগিদেই প্রচলন হয় আসবাবপত্রের। প্রথমে কাঠের আসবাব দিয়েই ঘরবাড়ি সাজানো আর প্রয়োজন মেটানো শুরু হলেও দিনে দিনে মানুষের চাহিদা ও পছন্দের পরিবর্তন এসেছে। জন্মগতভাবেই মানুষ সৌন্দর্যপ্রিয়। সুন্দর কিছু পেলেই মানুষ তা গ্রহণ করতে চায়। চাহিদা ও সৌন্দর্য্যরে সাথে তাল মেলাতেই কাঠের ফার্নিচারের পাশাপাশি জনপ্রিয় হয়ে উঠছে স্টিল, লোহা ও লেদার অ্যাকসেসরিজের ফার্নিচার। তবে ব্যবহারে আরামদায়ক ও নকশাগত সৌন্দর্য্যরে কারণে প্রতিনিয়তই লেদার ফার্নিচারের চাহিদা বাড়ছে। লেদার ফার্নিচারের মধ্যে সোফা সেট, চেয়ার, বসার মোড়া, বেঞ্চ, টুল, খাট, আলমারি ইত্যাদি বেশ জনপ্রিয় এখন। আবার স্টিল ও কাঠের অনেক ফার্নিচারেই ব্যবহৃত হচ্ছে লেদার অ্যাকসেসরিজ। আবার কেউ বা পুরনো আসবাবের উপরে বসিয়ে দিচ্ছেন লেদারের প্রলেপ। তাই বর্তমানে আধুনিক আসবাবগুলোর মধ্যে লেদার অ্যাকসেসরিজের আসবাবগুলো বেশ জনপ্রিয়। বর্তমান সময়ে তাই এ ফার্নিচারের উৎপাদন ও বিকিকিনিও বেশ ভালো।
কাঠের ও স্টিলের যেসব ভালো ব্র্যান্ডের ফার্নিচার বাজারে রয়েছে তারাও লেদার অ্যাকসেসরিজের ফার্নিচারের নতুন নতুন ডিজাইন বাজারে আনছে। রাজধানীর বড় ব্র্যান্ডের ফার্নিচার হাউসের আউটলেট ঘুরে দেখা যায় প্রায় প্রতিটিতেই লেদার অ্যাকসেসরিজের ফার্নিচারের বেচাকেনা হচ্ছে। অটবি, হাতিল, ব্রাদার্সসহ সব ফার্নিচার হাউসগুলো লেদার অ্যাকসেসরিজের ফার্নিচার বাজারজাত ও উৎপাদন করছে। অটবির ধানমন্ডি শাখার বিক্রয়কর্মী শাহেদ খান বলেন, ‘আমরা প্রত্যেকেই নতুন কিছু দেখতে পছন্দ করি। সে রকমই কিছু ফার্নিচার হল লেদার অ্যাকসেসরিজ ফার্নিচার। মানুষের ভালোলাগার কথা চিন্তা করেই আমাদের অন্যান্য আসবাবের সাথে নতুন ধরনের এসব আসবাবপত্র যোগ করছি। আর ক্রেতাদের আগ্রহও বেশ ভালো লক্ষ্য করা যাচ্ছে। রাজধানীর মগবাজার, পান্থপথ, শেওড়াপাড়া, বনানী, গুলশান, ধানমন্ডিসহ প্রায় সব মার্কেটের আসবাবপত্রে দোকানগুলোতে লেদার অ্যাকসেসরিজ আসবাবের চাহিদা লক্ষণীয়। এছাড়া দেশের সব জেলা শহরে এ ধরনের আসবাব জনপ্রিয় না হলেও বিভাগীয় শহর ও বড় বড় জেলা শহরগুলোতে এ আসবাবগুলো প্রচলিত রয়েছে। আবার নিজ এলাকায় না থাকায় ঢাকা থেকে কিনে নিয়েছেন অনেকেই। বরিশালের মা ফার্নিশার্সের স্বত্বাধিকারী আবদুস সাত্তার বলেন, ‘কয়েক মাস আগেও বরিশালে ফার্নিচার মানেই ছিল কাঠ আর স্টিল। কিন্তু বেশ কয়েক মাস ধরে এগুলোর সাথে যুক্ত হয়েছে চামড়া সম্বলিত আসবাব বা লেদার অ্যাকসেসরিজ ফার্নিচার। ক্রেতাদের চাহিদার কারণে আমরা এখন কাঠ ও স্টিলের আসবাবপত্রের পাশাপাশি এসব আসবাবও আমদানি করছি।’

রাজধানীর শ্যামলীতে থাকেন মুসবাহ আহমেদ ও তানিয়া সুলতানা। তারা বিয়ে করেছেন বেশকিছু দিন হলো। তাই নতুন ঘর সাজাতে আসবাব কিনতে এসেছেন তারা। নতুন ঘরের আসবাবের ক্ষেত্রে লেদারের আসবাবগুলোকেই প্রাধান্য দিলেন তারা। এ প্রসঙ্গে মুসবাহ আহমেদ বলেন, ‘মানুষ প্রতিনিয়তই নতুন কিছুর স্বাদ নিতে চায়। সে হিসেবে লেদারের এসব ফার্নিচারগুলো বেশ মানানসই। এ কারণে নতুন ঘর সাজাতে লেদারে আসবাবকেই গুরুত্ব দিলাম।’
লেদার আসবাবের কিছু কথা
দেশের তরুণ প্রতিভাবান ইন্টেরিয়র ডিজাইনার ও ফারজানা’জ ব্লিজ এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফারজানা গাজী জানালেন, লেদার ফার্নিচার মূলত কাঠের সাথেই ব্যবহৃত হচ্ছে। কাঠের মূল কাঠামোর ওপরে কাপড় অথবা অন্য কিছুর বদলে এখন লেদার বেশ জনপ্রিয় হচ্ছে। তবে পাশাপাশি শুধু লেদারের ফার্নিচার যোগ হচ্ছে আমাদের চাহিদার মাত্রায়। মূলত বিদেশে লেদারের ফার্নিচারগুলো বেশ জনপ্রিয়। এ ধরনের ফার্নিচারে মূল কাঠামো ছাড়া বাকি সবই লেদারের হয়ে থাকে। আর ভিন দেশের জনপ্রিয় এ ধরনের আসবাবগুলো এখন আমাদের দেশেও জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। লেদারের এসব ফার্নিচার দেখতে আকর্ষণীয়, জমকালো এবং নান্দনিক হওয়ায় খুব দ্রুত জনপ্রিয় হচ্ছে।
লেদার ফার্নিচারের মূল কাঠামোই হলো চামড়া। আগেকার কাপড়, ফোমের জায়গাটা এখন চামড়ার দখলে, তাই এগুলোর নাম লেদার অ্যাকসেসরিজ ফার্নিচার। লেদার অ্যাকসেসরিজ ফার্নিচারগুলোর মধ্যে রয়েছে সোফা, বসার টুল, খাট, আলমারি ইত্যাদি।
লেদার অ্যাকসেসরিজ ফার্নিচারের সুবিধা
লেদার অ্যাকসেসরিজের আসবাব দেখতে আকর্ষণীয় হওয়ায় এটি সহজেই যে কারো নজর কেড়ে নেয়। তাই বসার ঘর, ডাইনিং রুম ইত্যাদি জায়গায় এ ধরনের ফার্নিচার ব্যবহারে আপনার ব্যক্তিত্বের নান্দনিকতা প্রকাশ পায়।
এ ধরনের আসবাব কাঠ বা স্টিলের আসবাবের কাপড় বা অন্য উপাদানের মতো দ্রুত ময়লা হয়ে যায় না। তাই লেদার অ্যাকসেসরিজের আসবাব পরিষ্কার করতে খুব বেশি ঝামেলা পোহাতে হয় না।
লেদার অ্যাকসেসরিজের আসবাবপত্র কাঠ বা স্টিলের আসবাবপত্রের মতো এতো ভারি হয় না। তাই লেদারের আসবাব ব্যবহারে কোনো ঝামেলা থাকে না। বাসাবাড়ি বদলানোর সময় লেদার ফার্নিচার নিয়ে খুব বেশি দুর্ভোগ পোহাতে হয় না।
লেদার অ্যাকসেসরিজের আসবাবপত্রগুলো পানি বা তরল কোনো পদার্থে সহজে নষ্ট হয় না।
লেদারের অ্যাকসেসরিজের আসবাবগুলোর বাহ্যিক মূল উপাদান চামড়া হওয়ায় ধূলাবালি খুব একটা জমতে পারে না।
লেদার অ্যাকসেসরিজের আসবাবপত্রে পোকামাকড় আক্রমণের সম্ভাবনা খুবই কম।
লেদার ফার্নিচার ব্যবহারে অসুবিধা
এ ধরনের আসবাবগুলোতে চামড়া থাকায় ধারালো কোনো বস্তু বা কোনো কিছুর জোরালে আঘাতে খুব সহজেই ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
চামড়া জাতীয় পদার্থ খুব সহজেই আগুনের সংস্পর্শে আসে। তাই লেদার অ্যাকসেসরিজের আসবাবগুলো তাপ ও আগুনের হালকা সংস্পর্শে এসে খুব সহজেই নষ্ট হয়ে যেতে পারে।
এ ধরনের আসবাবপত্র কাঠ বা স্টিলের আসবাবের মত দীর্ঘস্থায়ী হয় না।
দালানঘর ছাড়া এ ধরনের আসবাব অন্য ঘরবাড়িতে ব্যবহার করা যায় না।
অনেক সময় চামড়া ভালো না হলে লেদার আসবাবের লেদার খুব তাড়াতাড়ি নষ্ট হয়ে সৌন্দর্য ম্লান করে দেয়।

সতর্কতা
লেদার অ্যাকসেসরিজের আসবাব ঘরের আকার ও দেয়ালের রং অনুযায়ী কেনা উচিত। যেমন- অফ হোয়াইট রংয়ের দেয়াল হলে কালো রংয়ের লেদার আসবাব ঘরের সৌন্দর্য বাড়িয়ে দেয়। তাই এ ধরনের আসবাব কেনার সময় রংয়ের ওপর গুরুত্ব দেয়া উচিত।
লেদার অ্যাকসেসরিজ আসবাব সব সময় তাপ ও আগুন থেকে দূরে রাখতে হবে। কারণ তাপ ও আগুন লেদার অ্যাকসেসরিজ আসবাবের ক্ষতি সবচেয়ে বেশি করে।
এ ধরনের আসবাব ব্যবহারের সময় ধারালো বস্তু ব্যবহারে সতর্ক থাকতে হবে।
লেদার অ্যাকসেসরিজ আসবাব শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কক্ষে সবচেয়ে ভালো থাকে। তাই সম্ভব হলে লেদার অ্যাকসেসরিজ আসবাব এসির সুবিধা আছে এমন ঘরে রাখতে হবে।
লেদার আসবাব কেনার সময় ভালো মানসম্পন্ন চামড়া দেখে কিনতে হবে।
এ ধরনের আসবাব ঘরের কোণায় বা সামনের কক্ষে ভালো মানায়।
যেখানে পাবেন
লেদার অ্যাকসেসরিজের এসব আসবাব রাজধানীর বসুন্ধরা, পান্থপথ, গুলশান, বারিধারা, শ্যামলী, রোকেয়া সরণিসহ দেশের সব বড় বড় শহরের ফার্নিচার দোকানগুলোতে পাওয়া যাবে।
দরদাম
এ ধরনের আসবাবের দাম এর আকার ও রংয়ের ওপর নির্ভর করে। ৫০০০ টাকা থেকে ৫২০০০ মধ্যে সোফা সেট, খাট, আলমারি ইত্যাদি পাওয়া যাবে। আর চেয়ার ও টুলের জন্য খরচ করতে হবে ২৫০০ টাকা থেকে ৭০০০ টাকা।
– জিয়াউর রহমান চৌধুরী
প্রকাশকাল: বন্ধন ২৫ তম সংখ্যা, মে ২০১২