উড সিজনিং
কাঠের নির্মাণে কেন উড সিজনিং দরকার

অধুনা নগরজীবনের পাশাপাশি গ্রামীণ বাড়ির ড্রয়িংরুমেও স্থান করে নিয়েছে কাঠের কারুকাজ করা সোফা সেট, আলমারির মতো গৃহস্থালির আসবাব। কাঠের তৈরি আসবাবে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করার পাশাপাশি রয়েছে ভিন্ন রকম আভিজাত্য। অতীতে রাজা-বাদশাহদের বসার শাহি রাজসিংহাসন ছিল কাঠের নির্মিত। তা ছাড়া বৈচিত্র্যময় ডিজাইন সম্ভব একমাত্র কাঠের তৈরি আসবাবের ওপরেই। প্রাচীনকালে কাঠের ব্যবহার যেমন ছিল এখনো তেমনিই আছে। অথচ এটি ব্যবহৃত হচ্ছে দুই-তিন পুরুষ ধরে। কাঠের সিজনিং অর্থাৎ শুষ্ককরণ বলতে বোঝায় কাঠ শুকিয়ে দীর্ঘদিন ব্যবহারের উপযোগী করে তোলাকে।

কাঠ শুকানো

উড ড্রাইং বা কাঠ শুকানো বলা হয় শুকানোর পর আয়তনে কমায় কাঠের যে মাপটি থাকে সেটিকে। সত্যিকার অর্থে কাঠ শুকানো হয় যাতে এতে জলীয় বাষ্প না থাকে বা পারিপার্শ্বিক আবহাওয়ায় যে পরিমাণ জলীয় বাষ্প থাকে, কাঠটিতেও যেন সেই পরিমাণ জলীয় বাষ্প থাকে। পরে কাঠের আয়তন কম-বেশি হলেও পরিমাণে তা নিতান্তই নগণ্য।

কাঠ শুকানোর পর এর মাপ ঠিক রাখা কঠিন। কিন্তু মাপের মাত্রাটি কম-বেশি হতে পারে রাসায়নিক পরিবর্তনে। কাঠ শুষ্ককরণের যত ধরনের ব্যবস্থা রয়েছে, তার মধ্যে সবচেয়ে ভালো এসেটিক এন হাইড্রাইটের মিশ্রণ, যার মাধ্যমে কাঠের স্ক্রিংকেজ কমানো যায় সহজেই। এটা কাঠকে নষ্ট হওয়া থেকে সুরক্ষা করে। 

মেশিনের সাহায্যে কাঠ শুষ্ককরণ

উড ড্রাইংয়ের জন্য সবচেয়ে উত্তম সময় গাছ থেকে গুঁড়ি কাটার পর। এতে প্রাথমিকভাবে টিম্বারের ক্ষয় রোধ করা যায়। এতে রক্ষা পাওয়া যায় ছত্রাকসহ বিভিন্ন ধরনের পোকামাকড়ের সংক্রমণ থেকে। কাঠে যদি ২০ শতাংশের নিচে জলীয় বাষ্পের মজুদ থাকে, তবে বিভিন্ন ধরনের পোকামাকড় সবুজ টিম্বারে বাস করতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে। শুষ্ক কাঠ অপেক্ষাকৃত কম ক্ষয়প্রাপ্ত হয় জীবন্ত গাছের তুলনায়। কেননা সবুজ কাঠে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ সাধারণত ২০ শতাংশের ওপর থাকে।

যে কারণে উড ড্রাইং

প্রধানত দুইটি কারণে কাঠকে শুকানোর প্রয়োজন।

কাঠের দ্বারা কাজ করতে

স্ট্রাকচারাল সাপোর্ট হিসেবে কাঠ ব্যবহার করা হয়। কাঠ শুকানোর জন্য জলীয় বাষ্পের সমতা পারিপার্শ্বিক বাতাসের জলীয় বাষ্পের সমান না হলে কাঠ শুকানোর পর আয়তনে তা কম-বেশি হতে পারে।

কাঠ পোড়াতে

কাঠের অভ্যন্তরে জলীয় বাষ্পকে পারিপার্শ্বিক জলীয় বাষ্পের সঙ্গে সমতায় আনার জন্য কাঠকে প্রথমে তাপ প্রয়োগ করে এর ভেতরের জলীয় বাষ্পকে কমিয়ে বাইরের জলীয় বাষ্পের সমান করা হয়। সবচেয়ে ভালো হয় যদি কাঠকে প্রথমে শুকানো যায়। কাঠ থেকে জলীয় বাষ্প বের করার ফলে কাঠের আয়তন কমে যেতে পারে। এটা তেমন সমস্যা নয়, এতে দ্রুত কাঠকে ড্রাইং করা যায়। কাঠকে তাপ প্রয়োগে সিজনিং করার সময় কাঠের গুঁড়ি থেকে উচ্চমাত্রায় তাপ বের হতে পারে, যার তাপমাত্রা ১০০ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড। এতে শুধুমাত্র ৫ শতাংশ শক্তি অপচয় হয় কাঠের গুঁড়িকে জলীয় বাষ্পমুক্ত করতে। কনডেনসার ব্যবহার করে এর কার্যকারিতা আরও বাড়ানো যেতে পারে। কখনো কখনো কাঠে থাকা জলীয় বাষ্প পারিপার্শ্বিক আবহাওয়ার জলীয় বাষ্পের সঙ্গে সমতা রক্ষা করে। অবকাঠামো এবং আসবাবপত্র তৈরিতে এ কাঠ ব্যবহৃত হয়। কাঠকে বাতাস দ্বারা কিংবা চুলি­র সাহায্যেও শুকানো যায়। 

চুল্লির সাহায্যে তাপ প্রয়োগ করে কাঠ শুষ্ককরণ

কাঠের অভ্যন্তরস্থ জলীয় বাষ্পের সঞ্চারণ কৌশল

কাঠের ভেতর পানি সাধারণত উচ্চ স্তর থেকে নিম্ন স্তরে জলীয় বাষ্পের দিকে ধাবিত হয়। কাঠের শুষ্ককরণ প্রক্রিয়া শুরু হয় কাঠের ওপরের পৃষ্ঠদেশ থেকে ক্রমান্বয়ে যা অগ্রসর হয় কাঠের কেন্দ্রবিন্দুর দিকে। কাঠের উপরিভাগ শুকানো শেষ হলে কাঠের অভ্যন্তরীণ কেন্দ্রে জলীয় বাষ্প সরে যায়। কাঠের ভেতর থাকা জলীয় বাষ্প তখন কাঠের বাইরে জলীয় বাষ্পের সমান হয়ে সমতা আনে।

কাঠের ভেতরে জলীয় বাষ্পের গমন

কাঠের ভেতরে জলীয় বাষ্পের চালিকাশক্তি হিসেবে কাজ করে রাসায়নিক যৌগ, যার প্রচ্ছন্ন শক্তিতে তাপমাত্রা ও জলীয় বাষ্পের উপস্থিতির সম্পর্ক অনেক ক্ষেত্রে সঠিকভাবে নিশ্চিত হয় না। কাঠের জলীয় বাষ্পের গতিময়তা কাঠের অভ্যন্তরস্থ বিভিন্ন গমন পথের ওপর নির্ভর করে।কাঠের মধ্যকার গর্ত ফাইবার, রশ্মি সমৃদ্ধ মেমব্রেন, পিট চেম্বার এবং পিট মেমব্রেইনগুলো খোলার ওপর নির্ভর করে জলীয় বাষ্প কাঠের ভেতরে এক স্থান থেকে অন্যত্র চলাচল করে।

কাঠের ভেতরে পানি চলাচল যেকোনো দিকে হতে পারে, তবে সাধারণত লম্বালম্বিভাবে প্রবেশ করে কাঠের কোষের মধ্যে এবং আড়াআড়িভাবে প্রবেশ করে একটি কোষ থেকে অন্য কোষে। পরিশেষে পানি আড়াআড়িভাবে কাঠের মসৃণ দেয়ালে পৌঁছায়। বেশির ভাগ পানির ধারণক্ষমতা নির্ভর করে কাঠের দৃঢ়তার ওপর। শক্ত কাঠের কোষগুলো মাঝে মাঝে টাইলোসিসের জন্য ব্লক হয়ে যায়। অর্থাৎ আঠালো পদার্থের উদ্গিরণে এবং রেজিনের জন্য অনেক সময় কাঠের ভেতর পানি সমভাবে ছড়িয়ে যেতে পারে না। আঠালো-জাতীয় পদার্থ এবং রেজিন মূলত গাছকে ক্ষত থেকে রক্ষা করে, যা ইউক্যালিপটাস গাছে প্রায়ই দেখা যায়।

জলীয় বাষ্প যেভাবে কাজ করে

কাঠের ঘনত্ব এবং ছিদ্রময়তার ওপর নির্ভর করে বাতাস এবং জলীয় বাষ্পের অবস্থান কাঠটিতে কতটুকু। ছিদ্রময়তা কোনো কঠিন বস্তুর ঘনফলের একাংশ। কোনো শুষ্ক কাঠের দেয়ালে ছিদ্রময়তা হচ্ছে ১.২ থেকে ৪.৬ শতাংশ। কঠিন পদার্থের মধ্যে তরল পদার্থ প্রবেশের জন্য থাকতে হয় ছিদ্রময়তা। প্রবেশপথটি খোলা থাকে যদি সেখানে পর্যাপ্ত পরিমাণ খালি জায়গা থাকে, যা নির্গমন পথের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করতে পারে। যদি কাঠের বহিরাবণে ক্ষতের সৃষ্টি হয় অথবা এর বাইরের আবরণের আচ্ছাদন মৃত হয়, তবে কাঠের প্রবেশপথ রুদ্ধ হয়ে যায় পারিপার্শ্বিক জলীয় বাষ্প গ্রহণের জন্য। যদি কাঠের পাতলা পর্দাটি অজ্ঞাত কারণে কঠিন আবরণে আবৃত থাকে, এতে বহিরাবণের কোষগুলো বন্ধ হওয়ায় জলীয় বাষ্প ভেতরে প্রবেশ করতে পারে না। সে জন্য এই কাঠকে বলা হয় বন্ধ কোষের অবকাঠামো। বাস্তবে তা অপ্রবেশ্য পর্দাবিশিষ্ট কাঠের গুঁড়ি। তাই হালকা কাঠ সাধারণত শুকায় তাড়াতাড়ি এবং ভারী কাঠ শুকাতে সময় লাগে বেশি।

ফ্যাক্টরিতে কাঠ শুষ্ককরণ ও রোদে শুকিয়ে কাঠ শুষ্ককরণ

জলীয় বাষ্পের অবাধ চলাচল

মোট তিনটি চালিকাশক্তি রয়েছে কাঠের ভেতরে জলীয় বাষ্প প্রবেশের জন্য। এটা নির্ভর করে পারিপার্শ্বিক জলীয় বাষ্পের পরিমাণ, পানির চাপ এবং রাসায়নিক পদার্থের প্রচ্ছন্ন শক্তিসহ কৈশিক নালির কার্যক্রমের ওপর। কৈশিক নালির প্রধান কাজ পানি নরম কাঠের পাতলা পর্দা ভেদ করে কাঠের অভ্যন্তরে প্রবেশ করানো।

কাঠ শুকানোর কারণ ও নিয়ন্ত্রণ

কাঠ শুকানোর সময় সবচেয়ে অসুবিধা হচ্ছে কাঠের উপরিভাগ, যা সাধারণত আবহাওয়ার সংস্পর্শে থাকে। অর্থাৎ কাঠের বহিরাদেশ তাড়াতাড়ি শুকিয়ে যায় কিন্তু কাঠের অভ্যন্তর ভাগ শুকাতে অনেক দেরি হয়, যদি এই স্তরগুলোকে আরও বেশি করে শুষ্ক হতে দেওয়া হতো এবং যদি কোষগুলোর পরিনিষিক্ত স্তরের নিচে থাকে তাহলে দেখা যায় কাঠের অভ্যন্তরীণ কোষগুলো তখনো পরিনিষিক্ত অবস্থায় থাকে। এতে দেখা যায় কাঠের অভ্যন্তরীণভাগে জলীয় বাষ্পের উপস্থিতি রয়ে গেছে এবং কাঠের উপরিভাগ শুকিয়ে গেছে, যার ফলে কাঠের মধ্যে প্রচণ্ড একটি স্ট্রেংস হয়। অর্থাৎ কাঠের ফাইবার বন্ডিংগুলো একটি অপরটিকে ধরে রাখতে না পারায় ফেটে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে।

এ অবস্থা থেকে নিষ্কৃতি পেতে হলে কাঠের জলীয় বাষ্পের শুষ্ককরণের প্রক্রিয়ায় নিয়ন্ত্রণ প্রয়োজন। অর্থাৎ যে হারে টিম্বারের বহিরাদেশ থেকে জলীয় বাষ্প শুকাবে ঠিক সেই হারে কাঠের অভ্যন্তরের জলীয় বাষ্প শুকাতে হবে। সবচেয়ে সার্থকভাবে কাঠ শুষ্ক করার পদ্ধতি হচ্ছে কাঠকে চুল্লিতে শুকানো। গাছ থেকে কাঠ কেটে যে যে সাইজের প্রয়োজন তা থরে থরে রেখে নিচ থেকে স্টিমিং করে শুকাতে হবে। যখন প্রয়োজন ধীরে ধীরে স্টিমিং কমিয়ে ফেলতে হবে। এভাবে কাঠকে স্টিমিংয়ের মাধ্যমে সিজনিং করা হয়। কাঠ শুকানোর ক্ষেত্রে যে বিষয়গুলো প্রভাবিত করে, তা হচ্ছে তাপমাত্রা, বাতাসের আপেক্ষিক আর্দ্রতা এবং বায়ু চলাচলের হার।

কাঠ শুকানোর পদ্ধতি

বাতাস প্রয়োগে কাঠ শুষ্ককরণ

কাঠ শুকানোর জন্য প্রথমে উন্মুক্ত স্থানে কাঠ থরে থরে সাজিয়ে রাখা হয়। তারপর বাতাসের মাধ্যমে কাঠ শুকানো হয়। সাধারণত বন থেকে গাছ কাটার পর সাইজ অনুযায়ী লগ তৈরি করে একটা ঠান্ডা, পরিষ্কার, ছায়াঘেরা জায়গায় রাখা হয়। এই পদ্ধতিতে কাঠ শুকানোর জন্য নিরবচ্ছিন্ন বাতাস দেওয়া হয়, যাতে প্রতিটি টিম্বারের পাইলে সমভাবে বাতাস প্রবেশ করতে পারে। বাতাসের আর্দ্রতা আয়ত্তের মধ্যে রাখা হয়। প্রতিটি লগে খনিজ তেলের প্রলেপ অথবা গাঢ় ঘন পেইন্ট দিলে টিম্বারের গুণগত মান ভালো হয়। টিম্বারকে কোনো কিছু দ্বারা মোড়ানো হলে বাতাসের আর্দ্রতা কাঠের চারদিকে প্রবেশ করতে পারে না। কাঠকে ছত্রাক থেকে রক্ষা করার জন্য গ্যাসোলিন বা পেট্রল ওয়েলের প্রলেপ দিয়ে প্রাথমিকভাবে ছত্রাকমুক্ত করা হয়। খনিজ তেল কাঠে এক থেকে দুই মি. মিটার নিচে ডুবিয়ে রাখলে পরবর্তী সময়ে সেই টিম্বারটি খুব ভালোভাবে শুকায়। এই পদ্ধতিতে কাঠ শুষ্ককরণে অপেক্ষাকৃত কম খরচ হয়। যদিও মন্থর গতিতে কাঠ শুকানো হয় এবং স্টোরে রাখার পর তা ধীরে ধীরে বাজারজাত করতে হয়, তাই কাঠের দাম অনেক সময় বেড়ে যায়। বাতাস প্রয়োগে কাঠ শুষ্ককরণে কাঠের গুণগতমান অনেক বাড়ে। এই কাঠ দ্বারা কাজ করতে খুবই সহজ হয়। এই পদ্ধতিতে কাঠ শুকানোর প্রধান বাধা আবহাওয়া। অর্থাৎ বাতাসের আর্দ্রতা বেশি থাকলে কাঠ শুকাতে অনেক সময় মাস কিংবা বছর লেগে যায়।

চুল্লিতে কাঠ শুষ্ককরণ

চুল্লিতে কাঠ শুকানো হয় মূলত তাপের মাধ্যমে। এই তাপ প্রয়োগ করা হয় প্রাকৃতিক গ্যাস অথবা প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে বৈদ্যুতিক ব্যবহারের মাধ্যমে অথবা বাষ্পচালিত হিট এক্সচেঞ্চারের সাহায্যে। যদিও সোলার এনার্জি দ্বারাও এটি করা সম্ভব। এই পদ্ধতিতে সঠিকভাবে কাঠ শুকানোর জন্য প্রয়োজন তাপমাত্রা, যা আয়ত্তের মধ্যে থাকে। এ জন্য বাতাসের আপেক্ষিক আর্দ্রতা এবং বায়ুর গতিবেগ যাতে সমানভাবে কাঠের সকল স্তরে পৌঁছায় সেদিকে লক্ষ রাখতে হবে। এসব কার্যক্রম সঠিকভাবে করার জন্য কাঠকে থরে থরে চেম্বারে রাখা হয়। যাকে আমরা বলতে পারি কাঠ শুকানোর চুিল্ল। তারপর সঠিক ইকুইপমেন্টের দ্বারা তাপমাত্রা আয়ত্তের মধ্যে রাখা, কাঠ শুকানোর জন্য বাতাসের আপেক্ষিক আর্দ্রতা ঠিক রাখা এবং কাঠ সিজনিংয়ের জন্য কী পরিমাণ বাতাসের প্রয়োজন হবে ইত্যাদি সঠিকভাবে সম্পন্ন করলে সহজেই কাঠ সিজনিং করা সম্ভব।

একটার ওপর আরেটি সাজানো কাঠ শুষ্ককরণ

কাঠ শুষ্ককরণ চুলি­র প্রধান প্রধান অনুষঙ্গ 

চুল্লি তৈরি করা

চুল্লি তৈরি করা হয় ইট দিয়ে। মাঝখানে ফাঁপা থাকে, যার দেয়ালঘেঁষে সিমেন্ট-কংক্রিটের স্লাব দ্বারা অনেকটা বাক্সের মতো করা হয়। এতে শিট মেটালে তৈরি অথবা প্রিফেব্রিকেটেট অ্যালুমিনিয়াম দিয়ে দ্বৈত দেয়াল করা হয়, যাতে ইটের দেয়াল এবং শিট মেটালের মাঝামাঝি গ্লাসউল বা পলিইথেন ফোম বসানো যায়। এটা করা হয় যাতে বাইরের তাপ ভেতরে প্রবেশ করতে না পারে, তেমনি ভেতরের তাপ বাইরে যেতে না পারে। যদিও ব্রিক মেসোনারি চেম্বারটি লাইম এবং (মর্টার) প্লাস্টার করা হয় ভেতরের দিকে এবং দেওয়া হয় রঙের প্রলেপ। এই পদ্ধতিতে বর্তমানে অনেক স্থানেই সিজনিং করা হচ্ছে এবং তাতে ভালো ফলও পাওয়া যাচ্ছে।

উত্তপ্তকরণ

কাঠকে উত্তপ্ত করা হয় স্টিম হিট এক্সচেঞ্চারের মাধ্যমে। হিট এক্সচেঞ্চারের জন্য প্লেইন অথবা ফিনড টাইপ টিউব ব্যবহার করা হয়, যাতে অধিক পরিমাণ গরম ফ্লু গ্যাস পাইপের মধ্য দিয়ে বেরিয়ে থরে থরে সাজানো কাঠের চারদিকে প্রবেশ করে বেরিয়ে যায়।

আর্দ্রতা

চুল্লির ভেতরের বাতাসের আর্দ্রতা ঠিক রাখার জন্য সাধারণত পাইপের মাধ্যমে স্টিম (জলীয় বাষ্প) স্প্রে করা হয়, যাতে বাতাসের আর্দ্রতা আয়ত্তের মধ্যে সঠিক থাকে। এ জন্য প্রতিটি চুল্লিতে রয়েছে একটি নির্গমনের ব্যবস্থা। এটা সাধারণত সংঘটিত হয় যখন কাঠের উপরিভাগ থেকে বৃহৎ আকারের জলীয় বাষ্পের উদ্গিরণ হয়।

বাতাস প্রদক্ষিণ

চুল্লিতে বাতাস এমনভাবে দিতে হয়, যাতে কাঠের সব স্তরে সমভাবে তাপ পৌঁছাতে পারে এবং সেই সঙ্গে কাঠের জলীয় বাষ্প যাতে সব কাঠ থেকে বেরিয়ে যেতে পারে। বাতাসের গতিবেগ বাড়িয়ে তা চুল্লির ভেতরে প্রদক্ষিণ করতে পারে। চুল্লিতে বাতাসের প্রবাহ বাড়ানোর জন্য ফ্যান বা ব্লেয়ার ব্যবহার করা হয়। এটা চুল্লির বাইরে অথবা ভেতরেও রাখা যেতে পারে।

কাঠ শুকানোর জন্য সার্বক্ষণিক আর্দ্রতা দেখার জন্য ময়েসচার মিটারের ব্যবস্থা রয়েছে, যা ইঙ্গিত দেবে কখন কাঠের শুষ্ককরণ প্রক্রিয়া শেষ হয়েছে। অনেক স্থানে স্বয়ংক্রিয়ভাবে বন্ধ হয়ে যাবে এমন কিল্ন ময়েসচার মিটারও স্থাপন করা হয়। বেশির ভাগ দেশে বাণিজ্যিকভাবে কাঠ শুষ্ককরণ বা সিজনিং করা হয় চুল্লির উত্তপ্ত বাতাস ব্যবহার করে।

শুষ্ককরণ প্রক্রিয়াসম্পন্ন কাঠ

আরও যা লক্ষণীয়

  • শুষ্ক কাঠ সাধারণত হালক। হালকা হওয়ায় এক স্থান থেকে অন্য স্থানে স্থানান্তর বাবদ যাতায়াত ভাড়াও কম লাগে।
  • শুষ্ক কাঠ বেশ শক্ত ও মজবুত সজীব কাঠের তুলনায়।
  • টিম্বার সংরক্ষণে ব্যবহৃত পদার্থ সহজেই শুষ্ক কাঠের ভেতরে প্রবেশ করানো যায়। এটি মূলত তেলজাতীয় প্রিজারভেটিভের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য।
  • কাঠে রাসায়নিক বিক্রিয়ার সাহায্যে ড্রাইং করা হলে সেখানে রাসায়নিক পদার্থ সঠিকভাবে শুষ্ক করে নেওয়া দরকার, যাতে স্ট্যান্ডার্ড জলীয় বাষ্প থাকে। এবং এটি টিম্বারে প্রয়োগ করলে সঠিক বিক্রিয়ার মাধ্যমে উড ড্রাইং ভালোভাবে সম্পন্ন হয়।
  • শুষ্ক কাঠ সহজেই মেশিনিং, মসৃণ এবং আঠা দ্বারা জোড়া লাগানো যায়। পেইন্টিং এবং ফিনিশিং শুষ্ক কাঠে দীর্ঘদিন বজায় থাকে।
  • কাঠ শুকানোর মাধ্যমে বৈদ্যুতিক তাপ পরিবাহী গুণাগুণ উন্নত করা সম্ভব।

প্রকৌশলী মহিউদ্দীন আহমেদ

তথ্যসূত্র : ইন্টারনেট

প্রকাশকাল: বন্ধন ৪১ তম সংখ্যা, সেপ্টেম্বর ২০১৩

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top