উনিশ শতক ছিল পদার্থবিজ্ঞানের একুশ শতক জীববিজ্ঞানের। বিজ্ঞানের এই শাখায় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড বায়োটেকনোলজি। মানুষের দৈনন্দিন জীবনকে সমৃদ্ধ করতে এ ক্ষেত্রে নিরলসভাবে কাজ করছেন বিজ্ঞানীরা। খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা আনা, মৎস্য ও কৃষির পাশাপাশি গবাদিপশুর জাত উন্নয়নসহ সব ক্ষেত্রে অভ‚তপূর্ব এক বিবর্তন আনার প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন জৈবপ্রযুক্তিবিদেরা।
জেনেটিক্স ও জৈবপ্রযুক্তি
জেনেটিক্স হলো মেন্ডেলীয় জিনতত্ত্ব। কিন্তু জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড বায়োটেকনোলজি হচ্ছে, যেকোনো জীবন্ত জীবকে মানুষের কল্যাণে কম খরচে নিরাপদে সফলভাবে কাজে লাগানো। আর জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং হচ্ছে জিনের বিবর্তন মাধ্যম নিয়ে কাজ করা। যেমন- ছত্রাকরোধী যেকোনো জিন কোনো মাধ্যম থেকে নিয়ে জেনেটিক রূপান্তরের সাহায্যে অন্য একটি মাধ্যমে প্রবেশ করালে সেই জিনটি হবে ছত্রাকরোধী। এতে বাড়বে নতুন মাধ্যমটির উৎপাদনের সক্ষমতা। যদিও বিষয়টি এখানে নতুন, তেমন পরিচিত নয়; তবুও সময়ের সঙ্গে আগামীর পথে এগিয়ে যেতে বিজ্ঞানমনস্ক মেধাবী একদল শিক্ষার্থী ক্রমেই বিষয়টিতে আগ্রহী হচ্ছে।

জৈবপ্রযুক্তি ও গবেষণা
বাংলাদেশেও জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড বায়োটেকনোলজির কল্যাণে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ গবেষণা হচ্ছে। উল্লেখ করার মতো হলো, লবণাক্ত এলাকায় ধানের উৎপাদন বৃদ্ধি, বেগুনের জিনকে পরিবর্তন করে এমন প্রজাতির বেগুন উৎপাদন করা, যাতে উচ্চ পর্যায়ের রাসায়নিক সার দিতে না হয়। এ ছাড়া জমির উর্বরতা বৃদ্ধি, পানি পরিশোধন, আর্সেনিক প্রতিরোধ, থ্যালাসেমিয়া রোগ, ডেঙ্গু ভাইরাস, নকআউট মাউস, ব্যাকটেরিয়া, হিউম্যান ক্যানসার স্যালাইন, অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল প্রোটিন, এমনকি বাংলাদেশের সোনালি আঁশ পাট নিয়েও চলছে বিস্তর গবেষণা।
জৈবপ্রযুক্তি পরিপ্রেক্ষিত বাংলাদেশ
জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড বায়োটেকনোলজির কর্মপরিধি ব্যাপক। জিন প্রকৌশলবিদ্যা ব্যবহার করে উন্নত জাতের শস্য উদ্ভাবন, খাদ্যের মান বৃদ্ধি, খরা কিংবা লবণাক্ততা প্রতিরোধী শস্য উদ্ভাবনের কাজে জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারদের জন্য কৃষিক্ষেত্রে রয়েছে সম্মানজনক ক্যারিয়ার গড়ার সুযোগ। চিকিৎসা প্রযুক্তির ক্ষেত্রে হেপাটাইটিস বি-র প্রতিষেধক, ডায়াবেটিসের ইনসুলিন আবিষ্কারে ল্যাব রিসার্চ প্রতিষ্ঠানে, ড্রাগ কোম্পানিগুলোতে ভ্যাকসিন ডেভেলপমেন্টের কাজে জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড বায়োটেকনোলজিস্টরা প্রাধান্য পেয়ে থাকেন। দেশের বাইরে আমেরিকা, মধ্যপ্রাচ্য ও ইউরোপে এ বিষয়ে রয়েছে দক্ষ কর্মীর চাহিদা। এ ছাড়া উন্নত বিশ্বের মলিকিউলার ডায়াগনসিস ল্যাবগুলোতে সহজেই ক্যারিয়ার গড়া সম্ভব।

জৈবপ্রযুক্তির সঙ্গে পরিবেশের সম্পর্ক
জৈবপ্রযুক্তির সঙ্গে কৃষি ও পরিবেশের সম্পর্ক গভীর। কৃষিজ পণ্যের উৎপাদন বাড়ানো, রোগ প্রতিরোধক্ষম উন্নত জাত উদ্ভাবন, সেই সঙ্গে বন্যা ও খরা প্রতিরোধে সক্ষম জাতের ফসল উদ্ভাবনের ক্ষেত্রে জৈবপ্রযুক্তির অবদান অনেক। এ দেশে সমুদ্রতীরবর্তী অনেক নিচু জমি রয়েছে যেখানে জোয়ারের সময় লবণাক্ত পানি প্রবেশ করে, তাই বিআরআরআই লবণাক্ত পানিসহিষ্ণু জাতের ধান উদ্ভাবনের প্রক্রিয়া চালাচ্ছে। গবেষণা সফল হলে আমরা হাজার হাজার অব্যবহৃত জমিতে চাষাবাদ করতে পারব। পূরণ হবে দেশের খাদ্যের চাহিদা।
বি এম মাহ্দল হাসান (জুয়েল)
জিন প্রকৌশলী ও পুষ্টিবিদ, প্রভাষক, পাবলিক হেলথ বিভাগ, ফার্স্ট ক্যাপিটাল ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ, চুয়াডাঙ্গা।
প্রকাশকাল: বন্ধন ৫০ তম সংখ্যা, জুন ২০১৪