টেকসই ও গুণগত মানসম্মত একটি ভবন নির্মাণকাজ বাস্তবায়নকালে যে প্রধান চারটি বিষয় (মালামাল, যন্ত্রপাতি, লোকবল ও কাজের পদ্ধতি)-এর ওপর গুরুত্ব আরোপ করা হয়, তা ধারাবাহিকভাবে আলোচিত হলো-
যন্ত্রপাতি
বাংলায় একটা প্রবাদ আছে, ‘ঢাল নেই, তলোয়ার নেই, নিধীরাম সরদার’, অর্থাৎ যুদ্ধ জয় করতে হলে ঢাল, তলোয়ারের প্রয়োজন পড়ে। তদ্রুপ, নির্মাণকাজের গুণগত মান নিশ্চিত করার জন্য যন্ত্রপাতি দরকার হয়। যদিও আমাদের দেশে একসময় কোনো যন্ত্রপাতি ছাড়াই নির্মাণকাজ পরিচালিত হয়ে এসেছে। যেখানে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই কোনো ইঞ্জিনিয়ার বা আর্কিটেক্টের প্রয়োজন হতো না। একজন ভালো রাজমিস্ত্রি একাই নির্মাণসংক্রান্ত সব কাজ পরিচালনা করত। ভবন নির্মাণকল্পে সব মালামাল ও কাজ সম্পর্কে তারা যেটা বলত, সেটাই হতো। এমনকি ভবনের নকশাও অনেক ক্ষেত্রে তারাই সরেজমিনে করে দিত।
বর্তমানে, আমাদের শিক্ষা-দীক্ষা, কারিগরি সুযোগ-সুবিধা অনেক কিছুই বহুলাংশে বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে যেকোনো ভবন নির্মাণকাজের গুণগত মান নিশ্চিত করণার্থে প্রয়োজনীয় নির্মাণসামগ্রী জোগাড় করার পাশাপাশি এতদ্সংক্রান্ত যন্ত্রপাতি জোগাড় করার বিষয়টিও নিশ্চিত করা জরুরি। মনে রাখা দরকার, নির্মাণকাজে ব্যবহৃত যন্ত্রপাতি কাজের গুণগত মান বৃদ্ধি করার পাশাপাশি কাজকে সহজ করে দেয় এবং সময় ও খরচ সাশ্রয় করে।
ফলে, একটি ভবনের স্ট্রাকচার বা কাঠামো নির্মাণ করতে কংক্রিট মেশানো এবং কম্প্যাকশন করার জন্য ১. মিক্সার মেশিন ও ২. ভাইব্রেটর মেশিন থাকা অত্যাবশ্যকীয়। নইলে, নির্মিতব্য কংক্রিটের যথার্থ মান রক্ষা করা কঠিন হতে পারে। উল্লেখ্য, কংক্রিট ঢালাইয়ের কাজে কংক্রিট মেশানোর সময় এর প্রধান উপাদান সিমেন্ট, বালু ও খোয়া, এগুলো সর্বতো সমানভাবে মেশানো এবং নিয়মমাফিক ভাইব্রেটর চালিয়ে সমান ও সুষ্ঠুভাবে কম্প্যাকশন করার বিষয়গুলো নিশ্চিত করা জরুরি, অন্যথায় নির্মিত স্ট্রাকচার বা কাঠামোটি দুর্বল হয়ে পড়বে।
এ ছাড়া, নির্মিত কংক্রিটের গুণাগুণ বিশ্লেষেণকল্পে স্লাম্প কোণ এবং ল্যাবরেটরি টেস্টের স্যাম্পল নেওয়ার জন্য কংক্রিট মোল্ড থাকা অত্যাবশ্যক। একটি ভবনের মেইন স্ট্রাকচার বা কাঠামো নির্মাণে অন্যতম কাজ কংক্রিট ঢালাই করা, যেখানে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করা জরুরি। এ লক্ষ্যে, বালু-খোয়ার পরিমাণ ঠিক রাখার জন্য মিজারিং বক্স, পানি মাপার জন্য বালতি, ভালো মানের শাটারিং মালামাল ইত্যাদি থাকা অবশ্যই নিশ্চিত করতে হবে।
– প্রকৌশলী মোঃ হাফিজুর রহমান পিইঞ্জ, ভাইস চেয়ারম্যান,
লাইফ ফেলো, দি ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন, বাংলাদেশ
লাইফ সদস্য-বিএসটিকিউএম, বিএএএস, এওটিএস (জাপান)
লিড অডিটর, আইএসও-৯০০১:২০০৮ অ্যান্ড ২০১৫ (কিউএমএস)