ভাবুন তো একবার! আপনার মাথার উপর দিগন্ত বিস্তৃত নীল আকাশ যেখানে ভেসে বেড়াচ্ছে সাদা মেঘের পাল। আর আপনি দাঁড়িয়ে আছেন সম্পূর্ণ স্বচ্ছ গ্লাসের ওপর। উপর থেকেই স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে নিচের সবকিছু।
চোখটা আর একটু নিচে নামালেই আচমকা ভ্যাবাচ্যাকা খাবেন আপনি। হঠাৎ করেই নিজের চোখকেই কেন জানি অবিশ্বাসী মনে হবে আপনার। নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে হয়ত একবারের জন্য হলেও আপনি নিজ গায়ে চিমটি কাটবেন। কেননা আপনার পায়ের নিচে স্বচ্ছ গ্লাসের প্রায় ৬০ ফুট নিচ দিয়ে বইছে জলধারা।
বয়ে চলেছে অবিরাম ধারায়। পাঠক, এ পর্যন্ত শুনেই আপনার মনে হতেই পারে দূর এ আর এমন কি ? আর এতে চমকে ওঠার বা কি আছে ? এখানেই কিন্তু সব শেষ নয়! সবে তো শুরু। কারণ পায়ের নিচের স্বচ্ছ পানির স্রোতধারার মধ্য থেকে… উঠে আসছে আগুন।
এখানেই আপনি ভ্যাবচাকা খেতে বাধ্য। আর এতক্ষণ বলছিলাম নির্মিতব্য মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের নবনির্মিত ভবনের অভ্যন্তরস্থ পরিকাঠামোর কথা। ঢাকার আগারগাঁও এর ১,৭৯,৭৬০ বর্গফুট এলাকায় নির্মাণ কাজ চলছে নব নির্মিত মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের।
এর পুরোভাগ ঘুরে দেখার পর আপনি মুখোমুখি হবেন এমন এক পরিবেশের। সাধারণ দর্শকের মনের সহজাত কৌতুহল জাদুঘরে কি শুধুই ইতিহাসের স্মারক থাকে? এ প্রশ্নের উত্তর খোঁজা মানুষদের জন্যই নতুন এ স্থাপনাটির শেষ প্রান্তে রয়েছে এ রকম অভিনব আয়োজন।
প্রশ্নের উত্তরে বেছে নেয়া হয়েছে আকাশ, পানি আর অগ্নিশিলার সম্মিলিত প্রয়াসকে। কাঁচ দিয়ে বিশেষভাবে নির্মিত এ জায়গায় ইচ্ছে করলেই দাঁড়াতে পারবেন। যার চারপাশে লাল ইটের দেয়ালে আপনার জন্য অপেক্ষা করবে মুক্তিযুদ্ধের নানা স্মৃতি ও স্মারক উপকরন। যেটা একবারের জন্য হলেও আপনাকে ফিরিয়ে নিয়ে যাবে উত্তাল সেই দিনগুলোয়।
মনে করিয়ে দিবে ১৯৫২ এর ভাষা আন্দোলনে বুকের তাজা রক্ত দেয়া শহীদ সালাম, রফিক, জব্বার, বরকতদের। আর জানান দেবে ১৯৭১ এ দেশমাতৃকার জন্য প্রাণদানকারী ৩০ লক্ষ শহীদ ও নির্যাতিত মা বোনদের আত্নত্যাগের কথা।
‘আসলে দর্শকদের অনুভূতিকে একটু জাগিয়ে তুলতে স্থাপনাটির এ নকশা। যাতে আপনি কিছুক্ষণের জন্য হলেও মনে করতে পারেন আমাদের গৌরবময় অর্জন আর অতীত ঐতিহ্যের কথা।’ জানালেন মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের স্থপতি তানজিম হাসান। তিনি আরো বললেন প্রথমবারের মতই বাংলাদেশে এ রকম কোন স্থাপনা নির্মিত হচ্ছে। এ স্থাপনাটিতে রয়েছে এমন কিছু আয়োজন যা শুধু বৈচিত্র্যময় নয় বরং নান্দনিকও।’

মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে আরও যা আছে
এতে যতটুকু সম্ভব প্রাকৃতিক আলো ব্যবহারের চেষ্টা করা হয়েছে। পর্যাপ্ত আলো আসার জন্য রয়েছে বিশেষায়িত দুই স্তর বিশিষ্ট কাঁচের দেয়াল যা ভেদ করে অবাধেই চলবে আলো আধাঁরির খেলা। আর বিশেষায়িত কাঁচ ব্যবহারের আরেকটি লক্ষ্য অতিবেগুনি রশ্মি ও আলোর অন্যান্য ক্ষতিকর উপাদান যাতে স্থাপনার ভেতরে প্রবেশ করতে না পারে।
বিদ্যুৎ স্বল্পতার কথা মাথায় রেখে এ স্থাপনায় নিশ্চিত করা হয়েছে তুলনামূলক টেকসই ও বিদ্যুত সাশ্রয়ী বাতি। এতে বিদ্যুতের অপচয়ও কমবে এবং বাতিগুলোও টিকবে বহুদিন।
ভারসাম্যপূর্ণ তাপমাত্রা পাবার জন্য মাটির নিচে নির্মাণ করা হচ্ছে সংরক্ষনাগার।
অগ্নিকান্ড বা আগুনজনিত দুর্ঘটনা এড়ানোর জন্য বহুল প্রচলিত পদ্ধতির বিপরীতে তুলনামূলক আধুনিক ও যথাসম্ভব নতুন বিশেষায়িত প্রযুক্তি ব্যবহার করা হচ্ছে। আর এ পদ্ধতিতে উচ্চচাপে পানিকে রূপান্তর করে নেভানো যাবে আগুন।
পুরো ভবন জুড়ে রয়েছে সর্বাধুনিক নিরাপত্তা ও তথ্য স্থাপনা পদ্ধতি। যা সাধারণত এর আগে বাংলাদেশে কোন স্থাপনায় ব্যবহৃত হয়নি।
থাকছে বর্জ্য পানি ও নবায়নযোগ্য শক্তি উৎপাদনের সর্বাধুনিক পদ্ধতি।
মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে ব্যবহৃত নতুন ও অত্যাধুনিক সব প্রযুক্তির খবরাখবর জানার পর আসুন এবার জেনে নেই পুরো ভবনজুড়ে কি থাকছে ? কেমনই বা হচ্ছে এর বিশেষ ধরনের নকশা ?
মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের নতুন ভবনের সম্মুখভাগে দাঁড়াতেই আপনাকে স্বাগত জানাবে বে অব বেঙ্গল। ঘাবড়ানোর কোন কারণ নেই। সত্যি সত্যি বঙ্গোপসাগরকে তুলে আনা হয়নি। স্থাপনাটির রাস্তা বঙ্গোপসাগরের মানচিত্রের অলংকরনে তৈরি করা হয়েছে সবুজ রংয়ের টাইলসের সমন্বয়ে।
রাস্তার একপাশে রয়েছে উন্মুক্ত জায়গা যেখানে একই সঙ্গে রয়েছে সময় কাটানোর জন্য আধুনিক ডিসপ্লে সেন্টার। স্থাপনার সম্মুখে ইচ্ছে করেই রাখা হয়েছে মুক্তিযুদ্ধের স্বাক্ষী অসংখ্য গুলির চিহ্ন আর এরই মাঝ থেকে বেরিয়েছে প্রজ্বলিত আলো।
এ যেন যুদ্ধেরই এক প্রতিচ্ছবি। এর মাধ্যমে দেখানো হয়েছে লাখো প্রাণের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতার স্থাপত্যিক রূপ। ভার্টিকলি ও লিনিয়ার স্তম্ভ হয়ে দাঁড়িয়ে ফাঁকা স্টিলের তৈরি লাঠিসদৃশ কংক্রিট যার গায়ে অ্যামবুশ প্রিন্ট করা বিশেষ ধরনের স্থাপত্যকাঠামো। যেটা আসলে শ্বাশত, বিপ্লবী, বিদ্রোহী বাঙ্গালির সৃষ্টিময় হাতের রূপক।
বাঙালির মুক্তি সংগ্রামের স্মারক। ‘এতে স্টিলের ফাঁকা দন্ড দিয়ে লাঠির মত কাঠামো রয়েছে যার মাধ্যমে মানুষের রাগ, ক্ষোভ ও প্রতিবাদের ভাষাকে তুলে ধরা হয়েছে। মানুষ যখন কোন কিছুতে প্রতিবাদ জানায় বা বিরোধিতা করে তখন সর্বাগ্রে তার ডান হাতটি মুষ্টিবদ্ধ করে উপরে তোলে।
আর আমাদের মহান ভাষা আন্দোলন কিংবা ১৯৭১ এর মুক্তিযুদ্ধ সব আন্দোলনের প্রতীকী চিত্র মুষ্টিবদ্ধ প্রতিবাদী হাত। মূলত এ ভাবনাটা ধরে রাখতেই কাঠামোটির এ রকম রূপ দেবার চেষ্টা। আর স্বাধিকার এ আন্দোলনের আরেকটি প্রতীক লাঠি বা বাঁশি।
মূলত এটি বিপ্লব আর প্রতিবাদের প্রতীকী রূপ। ফাঁকা স্টিলের কাঠামোগুলো এরই প্রতিনিধিত্ব করছে।’ জানালেন মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের নবনির্মিত ভবনের স্থপতি তানজিম হাসান। স্থাপনাটির মাঝামাঝি রয়েছে প্রজ্বলিত আলোকশিখা, যার নিচে পানির স্রোতধারা আর উপরে খোলা আকাশ। অথ্যাৎ সীমানা নির্ধারণের অদম্য স্পৃহা প্রকাশের এ এক অসামান্য প্রচেষ্টা।

মুক্তিযুদ্ধের বিশালতা বর্ণনার উর্ধ্বে। মুক্তিযুদ্ধের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে জাতির অস্তিত্বের বন্ধন আর কিছু নাম। আর তাই প্রথমেই স্মরণ করা হয়েছে এ আন্দোলনের রূপকার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আর সাত শহীদ বীরশ্রেষ্ঠকে।
আমাদেরকে মাথা উচু করে বাঁচার অনন্ত প্রেরণা উৎস যেন মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের সাতটি সুউচ্চ স্মম্ভ। আর জাদুঘর ভবনটির দেয়ালজুড়ে রয়েছে স্বাধিকার আন্দোলনের ধারাবাহিক ঘটনার চিত্রিত প্রকাশ। থাকছে নয়টি আলাদা বিশেষ অঞ্চলে ভাগ করে স্বাধীনতা যুদ্ধের পর্যায়ক্রমিক উপস্থাপনা।
এগুলো প্রতিনিধিত্ব করছে মুক্তিযুদ্ধের নয় মাসকে। সম্পূর্ণ কংক্রিটের তৈরি দেয়াল যাতে সহজেই সময়ের সঙ্গে নিজের স্বকীয়তা জানান দিতে পারে সে ব্যবস্থাই করা হয়েছে স্থাপনাটির নকশা ও এর নান্দনিক উপস্থাপনায়।
স্থায়িত্ব ও ভৌগলিক পরিবেশের পাশাপাশি প্রাধান্য দেয়া হয়েছে সৌন্দর্যকেও। আধুনিক ও সময়োপযোগী জাদুঘরের অভ্যন্তরীণ বিন্যাসে অডিটোরিয়াম, ডিসপ্লে সেন্টার, সংরক্ষানাগার সাথে প্রাধান্য পেয়েছে অফিসকক্ষও।
নানা ধরনের এমন সব আয়োজনের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে লাইব্রেরি। এছাড়াও রয়েছে নয় মাসভিত্তিক প্রদর্শনী স্থান, নিজেকে উপলব্ধি করার স্থান চেম্বার অব রিম্বেরেন্স এবং ক্যাফেটেরিয়া।
শুধু বিশ্বমানের নয় সর্বকালীন ব্যবহার ও সহজ রক্ষনাবেক্ষণ নিশ্চিত করতে যথেষ্ট আন্তরিক হয়ে কাজ করছেন তরুণ এ স্থপতি দম্পতি। তানজিম হাসানের ভাষায়, ‘প্রজেক্টটি পাস হবার পর আমাকে অনেকবার নির্মিতব্য প্রজেক্টটি দেখতে যেতে হয়েছে। যখন দেখেছি ছোট ছোট ছেলে-মেয়েরা তাদের টিফিনের জমানো পয়সা জাদুঘরের ফান্ডে জমা দিচ্ছে তখন আমার মনে নতুন ভাবনার জন্ম নিয়েছে। আগে এটিকে শুধু একটি জাতীয় কাজ হিসেবে মনে করলেও এ ঘটনার পর থেকে এটিকে নিজের কাজ হিসেবেই নিয়েছি। তাই এ কাজটি সফলভাবে বাস্তবায়ন করতে আমি আর কোন কাজ করছি না। আশা করছি এটি শেষ না হওয়া পর্যন্ত আর কোন কাজ করব না। আমার কাছে এটিকে এখন নিজের সন্তান লালনের মতই মনে হচ্ছে।’
শারীরিক প্রতিবন্ধীদের প্রবেশ ও ঘুরে দেখার জন্য এই জাদুঘরে রাখা হয়েছে বিশেষ ব্যবস্থা। স্থাপনাটির একটি বড় অংশের প্রযুক্তিগত সহায়তায় কাজ করছে ভিসতারা আর্কিটেক্ট। জাদুঘরের অফিস ও এর কার্যক্রম যেন সম্পূর্ণভাবে আলাদা থাকে ও চলতে পারে নিবিঘ্নে ব্যবস্থাও রয়েছে এখানে।
এ যাবৎকালের সবার্ধিক প্রায় ৭০টি ডিজাইন থেকে নির্বাচিত নকশায় তৈরি হচ্ছে স্বপ্নের মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর। প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে ইট-কংক্রিটের স্বাধীনতার ক্যানভাস।
রাজউকের নির্মাণ বিধিমালা ২০০৮ এর সব ধরনের নীতিমালা অনুসরন করেই বিশেষায়িত স্থাপনা হিসেবে নির্মিত হচ্ছে আমাদের গৌরবময় ইতিহাসের স্মারক মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের নতুন ভবন।

স্থাপত্য হচ্ছে ত্রিমাত্রিক ভাষা, যা একই সাথে দেখা, লেখা ও চর্চার পথ তৈরি করে। আর এটি যেন সত্যিকারে অর্থেই ফুটে উঠেছে এ স্থাপনা ও এর দুই স্থপতি তানজিম হাসান ও নাহিদ ফারজানার কাজের মধ্য দিয়ে। তাদের হাত ধরে বাংলার ইতিহাস, কৃষ্টি, সংস্কৃতি, আবহাওয়া, পরিবেশ ও জীবনধারার সমন্বয় ঘটিয়ে তৈরি হচ্ছে স্বপ্নের জাদুঘর। কোটি বাঙ্গালীর প্রাণের স্পন্দন জাগিয়ে তুলছেন এ স্থপতি দম্পতি।
মেধাবী এক স্থপতি দম্পতি
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) এর স্থাপত্য বিভাগ থেকে পাস করেছেন তানজিম হাসান ও নাহিদ ফারজানা। মেধাবী দুই শিক্ষার্থী। ফলও হয়েছে আশানুরূপ। দুজনেই ভালোলাগার সম্পর্ক থেকে পৌঁছেছেন আত্মার বন্ধনে। এর মাঝেই ঘর আলো করে এসেছে পুত্র ফারদিন।
কিন্তু তানজিম আর নাহিদের সংসারটা যতটা স্বচ্ছন্দে চলার কথা ছিল চলছিল না ততটা স্বচ্ছন্দে। দেশে ভালো কোন চাকরি বা কাজ না পাওয়ায় তানজিম যোগাযোগ করেন তার দুবাই প্রবাসী সহপাঠি বন্ধুর সাথে। যোগাযোগের এক পর্যায়ে দুবাই থেকে একদিন প্রবাসী বন্ধু ফোনে জানায় ‘বন্ধু’ আমার অফিসে পদ খালি আছে তুই তাড়াতাড়ি কাগজপত্র পাঠা।
এতদিন দেশের বাইরে যেতে চাইলেও বন্ধুর প্রস্তাবে সেদিন একটু অন্যরকম হয়ে যায় তানজিম। স্ত্রী, পুত্রকে রেখে হাজার মাইল দূরে কিভাবে থাকবেন তানজিম? এমন প্রশ্নে মুখোমুখি হন স্ত্রী নাহিদের। কিন্তু তানজিমের এমন সময়ে স্ত্রী নাহিদ উৎসাহ দেন স্বামীকে। আর স্ত্রীর সাহসে তানজিমও মনস্থির করে ফেলেন। বিদেশ যেতেই হবে।
এরই মাঝে বন্ধুর ফোন এলে সব গোছগাছ করে তানজিম পাড়ি জমান দুবাইতে। দেশে রেখে যান স্ত্রী আর ছেলে ফারদিনকে। দুবাইতে বেতন ও চাকরি দুটোই ভাল; সবমিলিয়ে বলা যায় সোনায় সোহাগা। ভালো বেতন ও চাকরি পেলেও নিজের ভেতরে রয়ে যায় একরাশ শূন্যতা।
আসলেই স্ত্রী-সন্তান আর প্রিয় দেশ যে বহু দূরে! কিছুই আর ভালো লাগে না। তানজিমের দেশে আসার সুযোগ তৈরি হয় মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের নকশা আহ্বানের মধ্য দিয়ে। মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর তৈরির জন্য নকশা আহ্বানের খবরটি তানজিমের কাছে পৌঁছায় স্ত্রী নাহিদ ফারজানার সুবাদে।
সম্মান ও বড় প্রকল্পের এ কাজটি দেশে ফেরার একমাত্র সহজ পথ হিসেবে বেছে নেন তানজিম। বিদেশের মাটিতেই প্রস্তুতি ও ভাবনা শুরু হয় মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের নকশাকে ঘিরে। এরই মাঝে জার্মানিতে একটি আন্তর্জাতিক মানের মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর দেখে আসেন এ তানজিম দম্পতি।
এ অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে স্থপতি এ দম্পতি তৈরি করেন ডিজাইন ওয়ার্কস গ্রুপ। বিদেশ থেকে স্বামীর পাঠানো ভাবনা আর নকশাকে দেশে বসে বাস্তবে রূপ দিতে থাকেন নাহিদ। আর দুজনের প্রচেষ্ঠায় এভাবেই শেষ হয় মুক্তিযুদ্ধ যাদুঘরের নির্বাচিত নকশার কাজ।
আন্তর্জাতিকমানের এ প্রতিযোগিতায় প্রথমবারের মত বিভিন্ন দেশের প্রায় ৭০টি প্রতিষ্ঠান নকশা জমা দেয়। প্রায় বাঘা বাঘা সব নকশাকে পেছনে ফেলে সেরার খেতাব জিতে নেন তানজিম আর নাহিদের ডিজাইন ওয়ার্কস গ্রুপ। অবশ্য এর আগে বহু প্রতিযোগিতায় অংশ নিলেও বড় ধরনের সাফল্য এল এ প্রতিযোগিতায়।
প্রথম হন প্রথম বারের মত। আর এভাবেই নাহিদ ও তানজিমের সততা, পরিশ্রম আর ধৈর্য্যে রচিত হয় একটি স্বপ্ন। শুরু হয় নতুন কাজ। দেশে ফিরে আসেন তানজিম। আর এর মাধ্যমেই শুরু হয় মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের নির্মাণ সংশ্লিষ্ট কাজের প্রাথমিক প্রক্রিয়া।

সংগ্রাম ও সফলতায় বার বার পৃথিবীর বুকে ইতিহাস হয়ে দাঁড়িয়েছে বাংলাদেশ। মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের নকশা নির্বাচন এ ধারাবাহিকতারই ফল। এরই মাধ্যমে তৈরি হচ্ছে স্বাধীনতার ইতিহাসের সাথে তরুন প্রজন্মের ভাবনার মেলবন্ধন। এ কৃতিত্বের অধিকারী তরুন স্থপতি তানজিম হাসান ও নাহিদ ফারজানা।
‘আমরা মুক্তিযুদ্ধ দেখিনি, অংশ নিতে পারিনি অথচ সেই উপলব্ধি, আনন্দ, বেদনা, গৃহহীনতা, আত্মপরিচয়, স্বাধীনতা এক কথায় প্রজান্মান্তরে সেই সব অনুভূতির ভূমিকা রাখতে পেরে সত্যিই আমরা ভাগ্যবান। আমাদেও কাজের সাথে যুক্ত হয়েছে নিজস্ব দেশমাতৃকার পরিচয়।’ গর্বিত আত্মোপলদ্ধি মেধাবী এ স্থপতি দম্পতির।
জিয়াউর রহমান চৌধুরী
প্রকাশকাল: বন্ধন ২৩ তম সংখ্যা, মার্চ ২০১২