ইলন মাস্কের ছোট্ট নীড় ক্যাসিটা

পৃথিবীর সবচেয়ে ধনী ব্যক্তিদের একজন ইলন মাস্ক। ভাবতে পারেন তাঁর বাড়িও নিশ্চয়ই খুবই বিলাসবহুল। এমন ধারণা পোষণ করা অমূলক নয়। তবে অবাক করা ব্যাপার, মাস্ক আসলে বাস করেন মাত্র দুই কামরার একটি বাড়িতে। যার আয়তন মাত্র ৩৭৫ বর্গফুট। চোখ নিশ্চয় কপালে উঠেছে! মাত্র ৫০ হাজার ডলার দিয়ে বাড়িটি কেনেন তিনি। লাস ভেগাসের নির্মাণ সংস্থা বক্সাবল এ ফ্ল্যাটটি তৈরি করেছে। বাড়িটির অবস্থান মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাস অঙ্গরাজ্যের বোকা চিকায়। যে ছোট্ট ফ্ল্যাট প্যাক হাউসে এখন তিনি থাকছেন, তার পোশাকি নাম ক্যাসিটা। ছোট হলেও বাড়িটি বেশ ছিমছাম।

ইলন মাস্কের এই ছোট্ট নীড়ের সাতকাহন তুলে ধরেছেন মোহাম্মদ রবিউল্লাহ

আধুনিক সরঞ্জামসংবলিত বাড়ি
অঢেল সম্পদের মালিক ইলন মাস্কের নতুন বাড়ির অন্দরমহলে রয়েছে একটি বেডরুম ও একটি বসার ঘর। রয়েছে ছোট্ট একটি শৌচালয়, একটি গোসলের জায়গা ও একটি রান্নাঘর। রান্নাঘরে রয়েছে রেফ্রিজারেটর, ডাবল সিঙ্ক, মাইক্রোওয়েভ ওভেন, ডিশওয়াশার। কেতাদুরস্ত শেকার স্টাইল কিচেন ক্যাবিনেটে সাজানো সেই রান্নাঘর। রয়েছে আগুন পোহানোর জায়গা, জামাকাপড় রাখার জন্য ওয়াক-ইন ক্লোজেট। টেবিলের ওপর সাজানো রয়েছে একটি রকেটের প্রতিকৃতি, এতে স্পেস রকেটের মডেলে মহাকাশ গবেষণায় তাঁর চরম আগ্রহের বিষয়টিই উঠে এসেছে। রয়েছে দুটি চেয়ার। বৈঠকখানায় আলো-বাতাস খেলে যাওয়ার সুব্যবস্থা আছে। দেয়ালে রয়েছে একটি ছবি। একটি বিখ্যাত বিজ্ঞান পত্রিকার প্রচ্ছদ ফ্রেমে বাঁধানো। বাড়িটি ছোট হলেও সব আধুনিক সরঞ্জাম ও শৌখিনতায় ভরপুর। বাড়িটি আগুন ও ভূমিকম্প নিরোধক।

ইলন মাস্মাক। ছবি: ফার্স্টপোস্ট

পাঁচটি বড়সড় বাড়ি বিক্রি করেন ইলন মাস্ক
বৈদ্যুতিক গাড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠান টেসলা ও মহাকাশ গবেষণা প্রতিষ্ঠান স্পেসএক্সের মালিক ইলন মাস্ক। তাঁর বর্তমান সম্পদের পরিমাণ ১৪৬ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলার। ২০২০ সালে ইলন মাস্ক ঘোষণা করেছিলেন, তিনি তাঁর সব দৃশ্যমান সম্পদ বিক্রি করবেন। ঘোষণা দেন সাদাসিধে জীবনযাপনের, থাকবে না কোনো প্রাচুর্য। এর পরেই একে একে সম্পত্তি বিক্রি করতে শুরু করেন। সেই বছর পাঁচটি বড়সড় বাড়ি বিক্রি করেন টেসলাকর্তা। ২০২১ সালে নিজের শেষ বাড়িটি ৩ কোটি ডলারে বিক্রি করেন। শেষে ৫০ হাজার ডলার দিয়ে কেনেন বোকা চিকার দুই রুমের এই ছোট ফ্ল্যাটটি।

বাড়ির নির্মাণ উপকরণ
সাধারণ বাড়ি ইট, সিমেন্ট ও কংক্রিট দিয়ে বানানো হলেও ইলন মাস্কের বাড়ি ব্যতিক্রমী প্যানেলে তৈরি। উচ্চ ঘনত্বের ফোম, স্টিল, কংক্রিট ও তাপমাত্রা নিরোধক উপকরণকে ১১৪ টন ওজনে চাপ প্রয়োগ করে ব্যতিক্রমী এক প্যানেল তৈরি করা হয়। ড্রাই ওয়ালের বদলে সিরাসিক কংক্রিট প্যানেল ব্যবহার করা হয়েছে বাড়িটির দেয়ালে। ড্রাইওয়াল স্থানান্তর করা যায় না কিন্তু সিরামিক কংক্রিট প্যানেল বহনযোগ্য। প্যানেলগুলো খুবই শক্তিশালী, ব্যবহারিক ও জিরো ফায়ার রেটিং অর্থাৎ আগুন ধরে না।

প্রিফেব্রিকেশন পদ্ধতিতে নির্মিত স্থাপনা ক্যাসিটা। ছবি: মোভো

পুরো ঘরেই থার্মাল সিস্টেম
এ ছাড়া ব্যতিক্রমী গঠনপ্রণালি রয়েছে ইন্টেরিয়ার ডিজাইনেও। ভেতরে ফ্লোর থেকে ছাদ পর্যন্ত পুরো ঘরেই থার্মাল সিস্টেম ব্যবহার করা হয়েছে। ফলে গরম ও ঠান্ডা উভয় অনুভূতি পাওয়া যায়। এই বাড়িটি এমন উপকরণে তৈরি যে চারদিকে বরফে আবৃত থাকলেও এর ভেতওে গরমকালের পূর্ণ অনুভূতি পাওয়া যায়। আবার চাইলেই ভেতরে তীব্র ঠান্ডা পরিবেশও তৈরি করা যায়।

বাড়িটি রূপান্তরযোগ্য ও পরিবর্তনশীল
ইলন মাস্কের বাড়ির প্যানেল ২০ বাই ২০ ফুট। এই প্যানেল বসে থাকে বড় ছয়টি আই ভিমের ওপর। পুরো বাড়িটি ফোল্ডিং প্যানেলে তৈরি, যা হাজারবার খুলে আবার লাগানো যাবে। এটি রূপান্তরযোগ্য ও পরিবর্তনশীল অনেকটা বাচ্চাদের খেলার লেগোর মতো। চাইলেই এক জায়গা থেকে খুলে অন্য জায়গায় নিয়ে ব্যবহার করা যায়।

এই বন্দোবস্ত দারুণ লাগে মাস্কের
ইলন মাস্ক চাইলে পৃথিবীর যেকোনো প্রান্তের যেকোনো প্রাসাদ কিনে বসবাস করতে পারেন। কিন্তু সেই বিলিওনিয়ার থাকেন মাত্র দুই কামরার ৫০ হাজার ডলারের ছোট একটি ফ্ল্যাটে। মাস্ক নিজেই তাঁর নতুন বাড়ির কথা জানিয়েছেন। স্পেসএক্সের কাছ থেকে ভাড়া করা জায়গায় বসতি গড়ছেন তিনি। তবে বাড়ি ছোট হলেও সেটিকে চমৎকার হিসেবে উল্লেখ করেন টুইটারে (বর্তমানে এক্স)। ইলন মাস্ক জানিয়েছেন যে বাড়িতে এখন তিনি থাকছেন, এই বাড়ির বন্দোবস্ত তাঁর দারুণ লাগে।

ক্যাসিটার ছিমছাম ইন্টেরিয়র। ছবি: ইন্সটাগ্রাম

প্রতিটি ইঞ্চির সর্বাধিক ব্যবহার
পুরো অ্যাপার্টমেন্টটি এমনভাবে ডিজাইন করা হয়েছে, যাতে ঘরের প্রতিটি ইঞ্চি সর্বাধিক ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে। এটি ছোট হলেও আরামদায়ক ও দৃষ্টিনন্দন ইন্টেরিয়র ব্যবস্থাপনা রয়েছে।

যে কারণে এত ছোট বাড়িতে বসবাস
মাস্কের রিয়েল এস্টেট সম্পদের মূল্য ১০০ মিলিয়ন ডলারের বেশি। রিয়েল এস্টেট হোল্ডিংগুলো শেষ পর্যন্ত সম্পদের পরিবর্তে দায় হয়ে যায়। তাই সান ফ্রান্সিসকোতে একটি ও বোকা চিকাতে তার বক্সাবল বাড়ি বাদ দিয়ে ২০২২ সালে সব রিয়েল এস্টেট বিক্রি করার সিদ্ধান্ত নেন। এ ছাড়া মাস্ক বিশ্বাস করেন যে বক্সাবল থেকে প্রস্তাবিত প্রিফ্যাব হাউসগুলো ক্লাসিক পারিবারিক বাড়ির বিপরীতে আবাসনের ভবিষ্যৎ। এর সঙ্গে স্পেসএক্সের উচ্চাভিলাষী চন্দ্র ও মঙ্গল মিশনে সফল হওয়ার জন্য প্রিফ্যাব হাউজিং প্রযুক্তির প্রয়োজন হবে। প্রিফ্যাব হাউজিং প্রযুক্তিতে মাস্কের নিজের উল্লেখযোগ্য বিনিয়োগ থাকলে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না।

বাবার টালমাটাল সম্পর্ক
বাড়িটির ছবি শেয়ার করেছেন ইলন মাস্কের জীবনী লেখক ওয়াল্টার আইস্যাকসন। চলতি বছরের ১২ সেপ্টেম্বর থেকে বাজারে পাওয়া যাবে তাঁর জীবনী। ইতিমধ্যে আমাজনে শুরু হয়েছে প্রি-অর্ডার। বইতে মাস্কের সঙ্গে তাঁর বাবার টালমাটাল সম্পর্ক উঠে আসতে পারে। মাস্কের জীবনের শুরুটা কেটেছে দক্ষিণ আফ্রিকায়। সেই সময়টা প্রভাব ফেলেছে তাঁর পরবর্তী জীবনে। সে সবই থাকবে জীবনীতে। এ ছাড়া অল্প বয়স থেকে ঝুঁকি নেওয়ার প্রতি ঝোঁক ছিল তাঁর। ঝুঁকি নিয়েই তৈরি করেছিলেন ব্যাটারিচালিত গাড়ি তৈরির সংস্থা টেসলা ও স্পেস এক্স। কীভাবে, তাও থাকবে বইতে।

সাধারণ মানের কিচেন ও বেসিন। ছবি: প্যারামেট্রিক আর্কিটেকচার

বরাদ্দ সান ফ্রান্সিসকোর বাড়ি
ইলন মাস্কের জীবনযাপনের যে ধারা ইদানীং দেখা যাচ্ছে, তিনি সব সময় এমন ছিলেন না। দামি বাড়ি-গাড়ি নিয়েই থেকেছেন। তবে বাড়িগুলো একে একে বিক্রি করে দিয়েছেন। এখন যুক্তরাষ্ট্রের সান ফ্রান্সিসকো বে এরিয়ায় তাঁর বিলাসবহুল একটি বাড়ি আছে ঠিকই, তবে সেটি বিশেষ অনুষ্ঠানের জন্য বরাদ্দ। সেখানে তিনি থাকেন না।

প্রকাশকাল: বন্ধন ১৬৫ তম সংখ্যা, মে ২০২৪

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top