কংক্রিট ইমারত নির্মাণের প্রধান নির্মাণ উপকরণ। কেননা কংক্রিটের কম্প্রেহেনসিভ স্ট্রেন্থ অনেক। তবে কংক্রিট নির্মিত স্থাপনার স্থায়িত্ব ও গুণগতমান নির্ভর করে উপকরণটির শক্তিমাত্রার ওপর। এ জন্য কংক্রিট ঢালাইয়ে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিলে ইমারতের স্থায়িত্ব ও কংক্রিটের আদর্শ শক্তিমাত্রা নিশ্চিত করা যায়। তবে নানা প্রতিবন্ধকতায় কংক্রিট ঢালাই কাজে দেরি হয়। কংক্রিট সিমেন্ট-বালু-খোয়া ও প্রয়োজনীয় পানির সুষম মিশ্রণ। সাধারণত নির্মাণ সাইটে কংক্রিট মিশিয়ে ঢালাইয়ের কাজ করা হয়। তবে বড় প্রকল্পে ব্যবহার করা হয় রেডিমিক্স কংক্রিট। অনেক সময় কংক্রিটের গুণগতমান পরিবর্তন করে এর কর্মদক্ষতা ও স্থাপন সময় বাড়াতে অ্যাডমিক্সার যোগ করা হয়, যাতে একটি নির্দিষ্ট সময় পর কংক্রিট জমাট বাঁধতে পারে। তা সত্তে¡ও নির্দিষ্ট সময় ও সঠিক পদ্ধতিতে অনেক সময় ঢালাই করা সম্ভব হয় না। কারণ-
- বেশির ভাগ ক্ষেত্রে রেডিমিক্স প্লান্ট থেকে কংক্রিট দূরবর্তী নির্মাণ সাইটে পাঠানো হয়। নির্ধারিত সময় শেষে কংক্রিট জমাট বাঁধতে শুরু করে, যা কংক্রিটের শক্তিমাত্রায় প্রভাব ফেলে। অনেক সময় কংক্রিটকে নির্দিষ্ট স্থানে ও আকৃতিতে প্রয়োগ করা সম্ভব হয় না। কারণ, রেডিমিক্স কংক্রিটে পানি দেওয়ার নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে ব্যবহার করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। তা না হলে এটি গুণাগুণ হারিয়ে ফেলে। যদিও বিশেষ কেমিক্যাল ব্যবহার করে এটি ছয় ঘণ্টা পর্যন্ত ব্যবহার করা যায়।
- সড়কে মাত্রাতিরিক্ত যানজটের কারণে অথবা কংক্রিটবাহী গাড়ি দুর্ঘটনা বা যান্ত্রিক ত্রæটিতে পড়লে যথাসময়ে রেডিমিক্স কংক্রিট নির্মাণ সাইটে পৌঁছাতে দেরি হয়।
- প্রকল্প ব্যবস্থাপনার যথাযথ অভাব
- প্রকল্পে কার্য ব্যবস্থাপনার ঘাটতি
- নির্মাণ উপকরণ ভেঙে গেলে কিংবা ক্ষতিগ্রস্ত হলে।

এসব কারণে যদি কংক্রিট ঢালাইয়ে সমস্যা বা দেরি হয়। তবে দেখা যায় যে কংক্রিটের কার্যক্ষমতা কমে গিয়ে কংক্রিট শুকিয়ে যেতে থাকে। যার ফলে কংক্রিট ঢালাই করতে নির্মাণকর্মীদের পরিশ্রম করতে হয় বেশি। যদিও সেখানে ভাইব্রেটর মেশিন ব্যবহার করতে হয় বা ভাইব্রেটর মেশিন ব্যবহার হয়ে পড়ে অপরিহার্য। সেক্ষেত্রে দেখা যায়, শ্রমিকেরা কাজের সুবিধার জন্য কংক্রিটে অতিরিক্ত পানি মিশিয়ে কংক্রিট ঢালাই করে। এ ক্ষেত্রে কংক্রিট স্ট্রেন্থের ব্যাপক তারতম্য ঘটে। যদি কংক্রিট ঢালাইয়ে সিমেন্টের প্রাথমিক এবং ফাইনাল সেটিং টাইমের তথা সময়সীমার মধ্যে ঢালাইয়ে দেরি হয়, সেক্ষেত্রে কংক্রিটে অতিরিক্ত পানি না মিশিয়ে একটু বাড়তি পরিশ্রম দিয়ে কংক্রিট ঢালাই করা উচিত।
দেরি বলতে আসলে কত সময় দেরি বোঝায়? আমরা জানি, সিমেন্টের একটা নির্দিষ্ট ইনিশিয়াল সেটিং টাইম এবং ফাইনাল সেটিং টাইম থাকে। এখানে বিশ্লেষণ করব ইনিশিয়াল ও ফাইনাল সেটিং টাইমের মধ্যে বিভিন্ন সময়ে কংক্রিট ঢালাই করলে অর্থাৎ ইনিশিয়াল সেটিংয়ের পরে কত দেরি করে কংক্রিট ঢালাই করলে কংক্রিট স্ট্রেন্থের কী তারতম্য ঘটে তা লেখচিত্রে দেখানো ও বোঝানো হয়েছে। এখানে আরও দুটি বিষয়ের লেখচিত্র রয়েছে-
- কিউরিং এইজ (Curing Age)-এর ওপর কংক্রিটের স্ট্রেন্থের তারতম্য
- দ্বিতীয়ত, দেরি করে ঢালাই করলে কংক্রিটের কার্যক্ষমতা কমে যায়। সেক্ষেত্রে কার্যক্ষমতা বাড়াতে অনেকেই কংক্রিটে অতিরিক্ত পানি মিশিয়ে ঢালাই করে। সেক্ষেত্রে কংক্রিটের স্ট্রেন্থে ব্যাপক তারতম্য ঘটে, যা আমরা লেখচিত্রে দেখিয়ে বিশ্লেষণ করব।

চিত্র-০১ দেখানো হয়েছে কাস্টিং ডিলে টাইম VS কমপ্রেসিভ স্ট্রেন্থ এবং সেই সঙ্গে দেখানো হয়েছে বিভিন্ন কিউরিং এইজে কংক্রিটের স্ট্রেন্থ।
চিত্রে দেখা যাচ্ছে, যত দেরিতে কংক্রিট কাস্টিং করা হয়েছে, কংক্রিটের স্ট্রেন্থ তত বেড়েছে। অর্থাৎ আমরা যদি কংক্রিটকে দেরি করে অর্থাৎ ইনিশিয়াল সেটিং টাইমের আগে ঢালাই করি, তবে কংক্রিট স্ট্রেন্থ কমে না গিয়ে বরং বাড়ে। এর প্রধান কারণ হলো, কংক্রিটের আর্দ্রতা বাষ্পায়ন হয়ে কংক্রিটের Slump Value কমানোর মাধ্যমে কংক্রিটের স্ট্রেন্থ বাড়ায়। যদিও আপাতত দৃষ্টিতে মনে হচ্ছে স্ট্রেন্থ মান কমে যাওয়ার কথা, বাস্তবতা কিন্তু তা নয়। এর কারণ, কংক্রিটকে যদি আমরা দেরি করেও ঢালাই করি তাহলে সিমেন্ট ঢালাইয়ের আগেই বিক্রিয়া শুরু করবে। তবে সেক্ষেত্রে কংক্রিটের স্ট্রেন্থের কোনো সমস্যা হবে না। তার কারণ, সিমেন্ট তো পানির সঙ্গে বিক্রিয়া এরই মধ্যে শুরু করে দিয়েছে। যদিও মনে হবে কংক্রিটের কার্যক্ষমতা কমে যাচ্ছে। হ্যাঁ, তা হয়তো যাবে, তবে সেক্ষেত্রে বরং কংক্রিটের স্ট্রেন্থ গেইন করতে বেশি সুবিধা হবে। কারণ, তখন কংক্রিটের Slump Value কমে যাবে, যা বাড়তি স্ট্রেন্থ অর্জনে সাহায্য করবে।
সেক্ষেত্রে একটা প্রশ্ন থাকতে পারে, তাহলে কেন আমরা তাড়াতাড়ি কংক্রিট ঢালাই করতে চাই। এর কারণ হলো, শুরুতেই কংক্রিটের কার্যক্ষমতা বেশি থাকে, যাতে কংক্রিট ঢালাই করতে শ্রমিকদের বেশি পরিশ্রম না হয় বরং ঢালাই তাড়াতাড়ি করা যায়। যদি ঢালাই কাজে দেরি হয় তাহলে কংক্রিটের স্ট্রেন্থ তেমন একটা হেরফের হয় না। তবে স্ট্রেন্থ যে কমে যায় না তা সত্য, সঠিক এবং প্রমাণিত।

চিত্র-০২ থেকে আমরা দেখতে পাচ্ছি বিভিন্ন কিউরিং এইজে স্ট্রেন্থের ভিন্নতা। তবে এ ক্ষেত্রে কংক্রিট এবং সিলিন্ডারকে নিরবচ্ছিন্ন কিউরিং করা হয়েছে। অর্থাৎ সিলিন্ডারকে পানিতে ডুবিয়ে রেখে কিউরিং করা হয়েছে। সেক্ষেত্রে দেখা গেছে যে প্রায় ২০ শতাংশ স্ট্রেন্থ বেশি অর্জন করে বিভিন্ন কিউরিং এইজের কংক্রিট। অর্থাৎ এখান থেকে স্পষ্ট বোঝা গেল যে কংক্রিটকে যত বেশি কিউরিং করা যাবে, কংক্রিট তত বেশি শক্তিশালী হবে।

চিত্র-০৩ থেকে আমরা দেখতে পাচ্ছি যে পয়েন্ট (A, B)-এ কাস্টিং ডিলে টাইমের ২৫০তম মিনিটে হঠাৎ করে কংক্রিট স্ট্রেন্থ হ্রাস পাচ্ছে, যেখানে আমরা কংক্রিটের কার্যক্ষমতা বাড়ানোর জন্য কিছু পানি মিশিয়ে ঢালাই করি। যার দরুন A, B পয়েন্টে স্ট্রেন্থ হ্রাস পাচ্ছে তা নির্দেশ করছে। মূলত পানি মেশানোর কারণে এ ধরনের প্রভাব পড়ছে। কংক্রিট স্ট্রেন্থে পানি মেশানোর ফলে কিছু পানি সিমেন্টের হাইড্রেশন কাজে লাগছে আর অবশিষ্ট পানি কংক্রিটের Pore Space সৃষ্টি করছে, যা পরে কংক্রিটে শূন্যতা বা ফাপার সৃষ্টি করছে, যার ফলে কংক্রিটের স্ট্রেন্থ হ্রাস পাচ্ছে। যদি পানি না মেশানো হতো তাহলে আমরা বরং এর চেয়ে অনেক ভালো রেজাল্ট পেতাম। তাই যত দূর পর্যন্ত কংক্রিটকে ভালোভাবে ঢালাই করা যাবে, তত দূর পর্যন্ত কংক্রিটে পানি না দিয়ে অর্থাৎ Re-tempering (Addition & extra water is known as Re-temporary with water) না করে ঢালাই করা ইমারতের ক্ষেত্রে কংক্রিটের জন্য হবে দারুণ কার্যকরী।

সুকদেব বিশ্বাস, ইঞ্জিনিয়ার (প্রোডাক্ট সার্ভিস)
আকিজ সিমেন্ট কোম্পানি লি.
সংকলন: থিসিস রিপোর্ট
০৭ ব্যাচ, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট)
প্রকাশকাল: বন্ধন ৭৬ তম সংখ্যা, আগস্ট ২০১৬